কুকুরের “প্রাণ” আছে বলে সে প্রাণী আর মানুষের “মন” বা “আত্না” আছে বলে সে মানুষ; কিন্তু এই আত্না আসলে কি?? এই আত্মা শরীরের ভেতর কিভাবে থাকে? আত্মার সাথে ব্রেইনের কি সম্পর্ক? আত্মা কিভাবে শরীর হয়ে বের হয়ে যায়?
এইসকল প্রশ্নের উত্তরে ১৯০৭ সালে একটি সন্দিগ্ধ পরীক্ষা করেন ম্যাসাচুসেটসের হাভারহিলের চিকিৎসক ম্যাকডোগাল ডানকান; তিনি একজন মানুষের মৃত্যুর আগের ওজন পরিমাপ করেন এবং মৃত্যুর পরের ওজন পরিমাপ করে ২১.৩ গ্রাম ওজনের তারতম্য খেয়াল করেন; এ থেকেই একটি হাইপোথিসিস পাওয়া যায় যে আত্নার ওজন ২১.৩ গ্রাম। একইসাথে তিনি কুকুকের বেলায় এমন পরীক্ষা করলেও সেখানে ওজের তফাত পাওয়া যায়নি। সুতরাং আপাতভাবে এটা ধারনা করা যেতে পারে যে “আত্নার ভর বা ওজন আছে যা ২১.৩ গ্রাম”।
[লেখনীর এই অংশের জন্য কেবলমাত্র আমিই নিশান আহম্মেদ নিয়ন দায়ী; এর সহিত সরাসরি সায়েন্সের কোন প্রুফ নেই, বিষয়টা সায়েন্স ফিকশনের মতোই কল্পনা প্রসূত যৌক্তিক সমীকরণ প্রতিষ্ঠার চেস্টা মাত্র]
আচ্ছা এই ২১.৩ গ্রাম ওজন আসলে কি?
এটা ভরটুকু কি ব্রেইন অর্থাৎ মাথার দিকে থাকে নাকি হার্ট অর্থাৎ বুকের দিকে থাকে নাকি সারা শরীর জুড়েই এর অবস্থান?
মানুষ জীবিত এবং মৃত অবস্থায় এক্সরে বা স্ক্যানারে এমন কোন ২১.৩ গ্রাম ভরের নির্দিষ্ট বস্তু খুজে পাওয়া যায়না যা মৃত্যুর পর শরীর হতে মিসিং হয়ে যায় তাহলে এটা কি?
এখন একটা ডেড বডিকে মৃত্যুর পর কেটে কেটে এক্সপেরিমেন্ট করা এবং ইউনিক তথ্যের একাধিকবার পুনরাবৃত্তি করা যেমন অমানবিকতা তেমনি অনেকের নিকটই অযৌক্তিক মনে হবে, যদিনা আপনি Mad Scientist হয়ে থাকেন।
আবার এটাও হতে পারে এই ২১.৩ গ্রাম শরীরের ভেতর হার্টের প্রকোষ্ঠে জমা থাকা কার্বন-ডাই-অক্সাইড বা অক্সিজেন কিংবা তদ্রুপ গ্যাসীয় পদার্থ। কিন্তু তাহলে এই বিষয়টা কেন কুকুরের ক্ষেত্রে খাটে না??
এখানেই বিষয়টি জটিল রহস্যময় হয়ে যায়!!!!
তাহলে এই আত্মারূপী ২১.৩ গ্রাম এমন হতে পারে:
(১) কোন তরল পদার্থ যা মৃত্যুর সাথে সাথে বায়বীয় পদার্থ আকারে উদগিরিত হয়।
(২) কোন কঠিন পদার্থ যা সরাসরি তরল অবস্থা এড়িয়েই বাষ্প হয়ে যায় ( যেমন ন্যাপথলিন,কর্পূর ইত্যাদি পদার্থ তাপের প্রভাবে কঠিন হতে সরাসরি সাবলিমেশন প্রক্রিয়ায় বাষ্পে রূপান্তরিত হয়)
উপরের (১) এবং (২) নং সম্ভাব্য পয়েন্টে তাপের একটি বিশেষ বিষয় পরিলক্ষিত হয়; মানুষের মৃত্যুর পর শরীর ঠান্ডা হয় অর্থাৎ শরীরের উত্তাপ হারানো বিষয়টিও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হতেই পারে। আর (৩) নং পয়েন্টে অবশ্য তাপের কোন প্রভাব প্রত্যক্ষভাবে পরিলক্ষিত হয়না।
আচ্ছা এবার যদি আত্মাকে অশরীরী বিবেচনা করা হয় এবং শক্তির একটি বিশেষ রূপ ( Special Stage Of Energy) বিবেচনা করা হয় তবুও তার সাথে ভরের (Mass) একটি সম্পর্ক বা সমীকরণ পাওয়া যায় আইনাস্টাইনের E=mc^2 যেখানে ধ্রুবক c এর সমানুপাতে E (এনার্জি) নির্ভর করে m (ভর) এর উপর; অর্থাৎ ভর একটি বিশেষ অবস্থায় (সমীকরণ মতে অবশ্য তা যখন আলোর গতির বর্গের সমান গতি প্রাপ্ত হয়) শক্তিতে রূপ নিতে পারে; আবার উক্ত শক্তিও এনার্জি উদগীরন করে পদার্থে পরিণত হতেই পারে।
এখন এমনটা হতেও পারে যে এই আত্মারূপী ২১.৩ গ্রাম পদার্থ মানুষ শরীরে জীবিত অবস্থায় একটি অনাবিষ্কৃত পদার্থ (matter) হিসেবে থাকে যা মৃত্যুর পর শক্তি হিসেবে উদগীরিত হয় (এখানে পদার্থের শক্তিতে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে হয়তো তাপ শক্তি কাজ করে)।
আবার পদার্থ ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে অনু>পরমাণু>ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন সহ মৌলিক কণিকা>ফোটন পাওয়া যায়; এখানে ফোটন হলো শক্তির একটি প্যাকেট বা প্যাকেজ যা কোয়ান্টাম থিউরির দ্বারা উপলব্ধ হয়; এই কোয়ান্টাম বিষয়টিও আবার বহু রহস্যঘেরা সমস্যা সমাধানের একমাত্র সলুউশান হিসেবে বিভিন্ন সায়েন্টিফিক থিউরি ব্যাখ্যা করতে ব্যবহার করা হয়।
এখন এই ২১.৩ গ্রাম আত্মা যদি আদতে বিশেষ পদার্থ হয় তবে সেটা মৃত্যুর সময় কোয়ান্টাম থিউরি মতে সর্বনিম্ন ফোটন এবং সর্বোচ্চ আরও ক্ষুদ্রতম রূপে শক্তি হিসেবে শরীর হতে নির্গত হয় বা বেরিয়ে যায়।
এখন মানুষের মৃত্যুর বিভিন্ন কারন হতে পারে যেমন অসুস্থ হওয়া, এক্সিডেন্ট হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি; তাহলে মানব শরীর অসুস্থ হলেই এই ২১.৩ গ্রাম পদার্থ আস্তে আস্তে কমতে থাকে বা ধীরে শক্তিতে রূপান্তরিত হতে থাকে এমনটা মোটেই নয় কেননা এক্সিডেন্ট করলে সেটা তো সুস্থ সবল মানুষের শরীর হতেও ঐ ২১.৩ গ্রাম পদার্থ একইসাথে মিসিং হয়।
আবার ম্যাকডোগাল ডানকানের পরীক্ষাতে তিনি গিনিপিগ হিসেবে একজন অসুস্থ মানুষকেই বেছে নিয়েছিলেন বটে।
সুতরাং এটা অন্তত সুস্পষ্ট মানুষের অসুস্থ হওয়ার সাথে এই আত্মার বিনাশের কোন সম্পর্ক নেই। তবে অনেক সময় মানুষ অসুস্থ হলে তার ব্রেইনের কার্যক্ষমতা হারান, সেক্ষত্রেও কিন্তু ঐ ২১.৩ গ্রাম পদার্থ কনস্ট্যান্স হিসেবেই থাকে তাই মানুষের ব্রেইনের সাথে আত্মার কোন সম্পর্ক নেই, এমনকি ব্রেইনের কোন অংশে এই ২১.৩ গ্রাম পদার্থ থাকে বলেও আমার মনে হয়না; তবে আত্মা তথা ২১.৩ গ্রাম পদার্থ ব্রেইনকে নিয়ন্ত্রণ করলেও করতে পারে (হয়তো)।
দ্যাটস অল….. আপাতত আমার ব্রেইন কিংবা ২১.৩ গ্রাম পদার্থ এই পর্যন্তই ভাবতে পারে এরবেশী কল্পনার ক্ষমতা অধম অক্ষম নিয়নটার নেই!!!
পরীক্ষার বিপরীত সমালোচনা:
উপরের ডানকানে এই পরীক্ষা যে শতভাগ সহীহ এমনটা ভাববেন না বরং এটি অবৈজ্ঞানিক বলেই ঘোষিত হয়েছে। কেননা এই পরীক্ষার না তো কোন মানদণ্ড ছিলো আর না তো এটা সর্বজন স্বীকৃত কোন এক্সপেরিমেন্ট ছিলো। এমনকি এই পরীক্ষাতে ব্যবহার করা স্কেল যদিও সূক্ষ্ম মাপ নিতে পারতো তবুও তাতে যান্ত্রিক ত্রুটি থাকা অস্বাভাবিক নয়। আবার পরীক্ষাটিতে প্রাপ্ত ফলাফল শুদ্ধতর হতে আরও অধিক সংখ্যাতে পরীক্ষা করা উচিত ছিলো কেননা একটি রিপোর্ট দিয়েই ডিসিশন নেওয়া অযৌক্তিক।
এমনি ডেডবডি হতে ঘাম বাষ্পীভূত হতে পারে যার কারনে ২১.৩ গ্রাম ওজন কম হয়, আর কুকুরের বেলায় তাদের ঘাম গ্রন্থি থাকে না বলেই হয়তো ২১.৩ গ্রাম ওজন হ্রাস পায়না।
ইসলাম কি বলে??
উপরের সকল কথাতে ইসলাম বিপরীত বহু বক্তব্য থাকতেই পারে; তাইবলে কথায় কথায় নাস্তিক উপাধি টানা বোকামি হবে।
আমি এখানে সায়েন্স নিয়ে কথা বলছি তাই সেন্সটি সায়েন্টিফিক হওয়া চাই, সায়েন্সের প্লাটফর্মে ধর্ম টেনে আনা সবচেয়ে বড় অধর্মের কাজ কেননা এখনো বিজ্ঞান এবং ইসলাম ধর্ম ( এমনকি অন্যান্য ধর্মও) এখনো সর্বসম নয় আর কখনো হতেও পারবে না (কেননা ইসলামের পরিসর ব্যাপক তাতে শতভাগ প্রমাণ করা একা সায়েন্সের সাধ্যি নেই)।
সুতরাং ইসলাম’কে বিশ্বাসে রাখুন এবং মুসলিম হিসেবে মনে প্রানে মানুন; ইসলাম কোন তর্কের বিষয় নয় বরং বিশ্লেষণপূর্বক পূণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা তাই এখানে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
শেষকথা:
২১.৩ গ্রাম আত্মা হউক আর প্রানশক্তি হউক; এটা সৃষ্টিকর্তার দান সুতরাং এখনই লাইফটাকে শাইন করার সময়….সময় অপচয় করলেন তো হেরে গেলেন।
ফেসবুকে আমি→নিশান আহম্মেদ নিয়ন
আল্লাহ হাফেজ