কেমন আছেন সবাই , আশা করি সবাই ভালই আছেন 🙂 বেশী কথা না বাড়িয়ে বিস্তারিত পোষ্টে চলে যাই । পোষ্টটা এমনিতেই অনেক বড় হতে চলছে 🙂
আসুন প্রথমেই কিছু তথ্য জেনে নেই ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে ;
আপনি কি জানেন, ঠিক এই মুহূর্তে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ওয়েবসাইট রয়েছে পৃথিবীতে । একটি অবাক করার মত তথ্য ।
আসুন জেনে নেই সি-প্যানেল(CPanel) কি । সি-প্যানেল এর প্রাথমিক ধারনা বিস্তারিত আলোচনা সহ
Yahoo! এর করা এক জরীপ থেকে দেখা যায়, শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রতি মাসে প্রায় ১৬ মিলিয়নের বেশী অর্থাৎ ১ কোটি ৬০ লাখেরও বেশী ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়ে থাকে! যার প্রায় ৭০% এরও বেশী করা হয় প্রোফেশনাল ওয়েব ডিজাইনার হায়ার করে এবং যার মার্কেট ভেল্যু ২০.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা!
আমাদের কাছে শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্য এবং গোটা পৃথিবীতে এর পরিমাণ দিন দিন ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে।
এজন্যই আজ আপনাদের সাথে ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব 🙂
আজকে আপনাদের জন্য থাকছে ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট নিয়ে বিস্তারিত , এ পোষ্ট থেকে আপনি জানতে পারবেন ;
- ওয়েব ডিজাইন কি ?
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি ?
- ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর মধ্যে পার্থক্য ।
- ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট এর ভবিষ্যৎ কি ?
- কিভাবে ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট এ ক্যারিয়ার গড়বেন ।
প্রথমেই আসি ওয়েব ডিজাইন নিয়ে ,
ওয়েব ডিজাইন মানে হচ্ছে একটা ওয়েবসাইট দেখতে কেমন হবে বা এর সাধারন রূপ কেমন হবে তা নির্ধারণ করা। ওয়েব ডিজাইনারহিসেবে আপনার কাজ হবে একটা পূর্ণাঙ্গ ওয়েব সাইটের টেম্পলেট বানানো। যেমন ধরুন এটার লেয়াউট কেমন হবে। হেডারে কোথায় মেনু থাকবে, সাইডবার হবে কিনা, ইমেজগুলো কিভাবে প্রদর্শন করবে ইত্যাদি। ভিন্ন ভাবে বলতে গেলে ওয়েবসাইটের তথ্য কি হবে এবং কোথায় জমা থাকবে এগুলো চিন্তা না করে, তথ্যগুলো কিভাবে দেখানো হবে সেটা নির্ধারণ করাই হচ্ছে ওয়েব ডিজাইনার এর কাজ। আর এই ডিজাইন নির্ধারণ করতে ব্যাবহার করতে হবে কিছু প্রোগ্রামিং, স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ এবং মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ।
ওয়েব ডিজাইন শিখতে যেসব জানতে হবেঃ
এইচটিএমএল (HTML): HTML একটি মার্কআপ ভাষা। ব্রাউজার কোন একটা সাইটের ভিউয়ার যা দেখতে পায় তা এইচটিএমএল দিয়ে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এটি কোন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নয়, বরং যেকোনো প্রোগ্রামিং থেকে অনেক সহজ। এটা এতটাই সহজ যে যেকোনো সাধারন মানুষ যে প্রোগ্রামিং শিখতে চায় না, সেও হাসির ছলে ছলে HTML শিখে নিতে পারে।
সিএসএস (CSS): এটাও একটা মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ। এটি নির্ধারণ করে দেয় ব্রাউজার জেই কন্টেন্ট HTML দ্বারা প্রদর্শিত হবে সেটা দেখতে কেমন হবে। অর্থাৎ লেখাটার ফন্ট কত বড় হবে। পাশে কতটুকু জায়গা খালি থাকবে। একটা লেখা থেকে আরেকটার দূরত্ব কতটুকু হবে, এটির রঙ কি হবে বেকগ্রাউন্ড কি হবে, এমনকি সর্বশেষ CSS3 দিয়ে কন্টেন্টে এনিমেশন ও যুক্ত করা যায়।
জাভাস্ক্রিপ্ট/জেকুয়েরি (javascript/jQuery): এই দুটোকে মূলত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের কিছুটা কাছাকাছি ধরা যায়। মূলত দু,টি জিনিসের কাজ একি তবে জেকুয়েরি হচ্ছে জাভাস্ক্রিপ্টেরই একটা রূপ যা সাইটে জাভাস্ক্রিপ্ট ব্যবহারকে অনেকটাই সহজ করে। আর এগুলোর কাজ হচ্ছে সাইটটা ইন্টারেক্টিভ করা। অর্থাৎ ভিজিটর একটা বাটনে ক্লিক করলে মেনু ওপেন হবে। অথবা একটা ফর্ম সাবমিট করলে কনফার্মেশন মেসেজ দেখাবে ইত্যাদি।
আমরা শুধু আপনাদের বোঝানোর সুভিদ্ধার্থে ডেমো ইমেজ ব্যবহার করেছি , যাতে আপনারা বুঝতে পারেন কোন কোডটা কেমন । 🙂
মূলত কাজ শুরু করতে এই কয়েকটি ল্যাঙ্গুয়েজে দক্ষতা এবং বাস্তব কাজে ব্যবহার করার যোগ্যতা অর্জন করলেই হবে। তবে এই ধরনের কাজে অভিজ্ঞতা একটি চলমান প্রক্রিয়া। উত্তরোত্তর নতুন অনেক কিছু শিখে নিজেকে আরও প্রফেশনাল আরও যোগ্য ওয়েব ডিজাইনার করে তুলতে হবে।
ওয়েব ডেভেলপমেন্টঃ
একটি ওয়েবসাইটে কখন কখন বিভিন্ন ধরনের কাজ করা হয়ে থাকে। যেমন রেজিষ্টেশন করা, ওর্ডার করা, নতুন তথ্য আপডেট করা। এই ধরনের কাজ গুল করার জন্য বিভিন্ন সার্ভার সাইড স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আপনি যদি নিজেকে একজন ওয়েব ডেভেলপার হিসাবে তৈরি করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই নির্দিষ্ট ধাপে বিভিন্ন ল্যাঙ্গুয়েজ শিখতে হবে।
ওয়েব ডেভেলপ হচ্ছে ওয়েব সাইট এর জন্য অ্যাপ্লিকেশন। এখানে আপনাকে কোডিং এর মাধ্যমে নানা ধরণের অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে হবে । আপনি যদি ওয়েব ডেভেলপার হতে চান তাহলে ধৈর্য, পরিশ্রম ও মনোযোগের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য । ওয়েব ডেভেলপার হতে হলে অনেক সময় প্রয়োজন । ওয়েব ডেভেলপার হতে হলে আপনাকে (X)HTML, CSS, jQuery, JavaScript, PHP, MySQL, Java, ইত্যাদি CMS সম্পর্কে ভালো জানতে হবে । এছাড়া Server related যেমনঃ ASP, .NET, AJAX, ইত্যাদি জানতে হবে
যদিও ওনেক বেশি কিছু মনে হচ্ছে কিন্তু আপনি যদি মনযোগ দিয়ে ২ মাস এ সব বিষয় নিয়ে কাজ করেন তাহলে খুব সহজেই এ ব্যবপার গুলো কাভার করতে পারবেন। একজন ভালোমানের ওয়েব ডেভেলপার হওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই লজিকাল ও আন্যালাইসিস করার ক্ষমতা থাকতে হবে। এছাড়াও ধাপে ধাপে কাজ করার বিষয়টা বুঝতে হবে। বিভিন্ন ফ্রিল্যন্সিও সাইটে এর উপর প্রচুর কাজ থাকে। এছাড়াও আপনি আপনার ওয়েবসাইট সেল করার জন্য বিভিন্ন সাইটে/মার্কেট প্লেসে রাখতে পারেন।
এখানে খেয়াল করবেন, আমরা কিন্তু বার বার ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট এই দুইটা পার্ট এর কথা বলছি, আসলে এ দুটো কি? চলুন জেনে নেই …
ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট এর মধ্যে পার্থক্যঃ
ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে একটা পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট তৈরির দুটো ধাপ। ডিজাইন হচ্ছে প্রথম ধাপ এবং ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে শেষ ধাপ। ওয়েব ডিজাইন অংশে একটি ওয়েবসাইটের ফ্রন্ট-এন্ড অর্থাৎ ব্যবহারকারীরা যে অংশ দেখতে পায় সেটা করা হয়ে থাকে আর ডেভেলপমেন্ট অংশে ব্যাক-এন্ড অর্থাৎ একটি ওয়েবসাইটের ভেতরের ফাংশনাল পার্ট গুলো ডেভেলপ করা হয়ে থাকে। বিষয়টা ক্লিয়ার হবে যদি আমরা ফেসবুকের কথাই চিন্তা করি- ফেসবুকে আমরা যে বিভিন্ন কালার, লেখা, ছবি ইত্যাদি দেখি, এই প্রদর্শনের কাজ গুলো হয় ডিজাইন পার্ট এর মাধ্যমে, আর এই যে আমরা সেখানে রেজিস্ট্রেশন করতে পারি, পোস্ট করতে পারি, কমেন্ট করতে পারি এই জাতীয় ফাংশনাল কাজ গুলো আটোমেটিক করা হয় ডেভেলপমেন্ট পার্ট থেকে।
আশা করি এখন ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট এর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পেরেছেন 🙂
ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট এ ক্যারিয়ারঃ
ওয়েব ডিজাইন দিয়ে অনলাইন ক্যারিয়ার শুরু করার অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে, এর ক্রমবর্ধমান কর্মক্ষেত্র । এটি শিখতে অন্যান্য অনেক কাজের তুলনায় সহজ এবং যেহেতু এর প্রচুর চাহিদা হয়েছে তাই শেখার পরে কাজ করার অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও ওয়েব ডিজাইন শেখার আরেকটি প্রধান কারন হচ্ছে, এটি এখন শিখলে এখনই কাজ করা সম্ভব , তাই অন্যান্য কাজের মত কাজ করতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয় না।
নিচে ডেইলি মেইল এর দেয়া একটা তথ্য দেখুনঃ
এই পৃথিবীতে প্রতি ১ মিনিটে প্রায় ৫৭১ টি নতুন ওয়েবসাইট তৈরি করা হচ্ছে। তার মানে, ঘণ্টায় ৩৪২৬০। এবার ভাবুন মাসে কতগুলো! বর্তমানে প্রায় বিলিয়ের উপরে অ্যাক্টিভ ওয়েবসাইট রয়েছে পৃথিবীতে। প্রায় ২৯৪ মিলিয়ন ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল ২০১৫ এর শুরুর দিকে!
একবার ভেবে দেখেছেন কি, এই ওয়েবসাইট গুলো কারা তৈরি করে? এগুলো কিন্তু কোন মেশিন বা রোবোট তৈরি করে না, এগুলো তৈরি করেন আপনার আমার মত সাধারন মানুষ যারা ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট করতে জানেন।
সবচাইতে মজার বিষয় হচ্ছে প্রতিদিন যে হারে নতুন ওয়েবসাইট তৈরির প্রয়োজন পড়ছে, নতুন ওয়েব ডিজাইনার বা ডেভেলপার কিন্তু সে হারে তৈরি হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত মার্কেটে ওয়েব ডেভেলপারের ঘাটতি বেড়েই চলেছে।
ওয়েব এমন একটি জায়গা যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই, তাই সম্ভাবনাও অনেক বেশি!
তাছাড়া প্রথম আলোতে ইল্যান্স কর্তৃপক্ষের
দেয়া এক বিবৃতি মতে, বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা ওয়েব প্রোগ্রামিং ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট বিভাগে তাদের দক্ষতা
দেখিয়ে কাজও পাচ্ছেন বেশ ভাল। আশা করি বুঝতেই পারছেন, ক্যারিয়ারের ভবিষ্যত কেমন হতে পারে!
তাই আপনি যদি ভালমত ওয়েব ডিজাইন বা ডেভেলপমেন্ট শিখতে পারেন তাহলে আশা করা যায় ক্যারিয়ারে কোন সমস্যা হবে না । 🙂
কোথায় শিখবেনঃ
সব কিছুই তো বললাম কিন্তু কোথায় কিভাবে শিখবেন তা তো বললাম না 😀
এখন অনলাইনে এত রিসোর্স যে খুব সহজে একা একাই আপনি শিখতে পারবেন। W3Schools যেখানে সব টিউটোরিয়াল রিসোর্স পাবেন। এছাড়া আপনি ইউটিউবে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন বাংলা ভাষায় অনেক অনেক টিউটোরিয়াল । অথবা বিভিন্ন প্রকার ট্রেনিং সেন্টার থেকেও শিখতে পারেন। একটা ব্যাপারে লক্ষ্য রাখবেন ।আমাদের দেশে এখন পযর্ন্ত ভাল মানের ট্রেনিং সেন্টার আছে হাতে গোনা কয়েকটি।
অনেক কথা বলেছি , আর বেশী কিছু বলব না ; পোষ্টটা পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ । কেমন লাগলো তা কিন্তু জানাতে ভুলবেন না ।
আমাদের সাথেই থাকুন । আমাদের ফেইসবুক পেজে এবং ইউটিউব চ্যানেল এ লাইক / স্যাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেন না ।
ফেসবুক পেজঃ Trickbd – Know For Sharing
ইউটিউবে ট্রিকবিডিঃ Trickbd.com
আবারো ধন্যবাদ সবাইকে , ভাল থাকবেন ।