একটা সময় ছিলো যখন নিয়মিতই কম্পিউটারে বিভিন্ন লিনাক্স ডিস্ট্রো ট্রাই করতাম। একসাথে বেশ কয়েকটা ডিস্ট্রো মাল্টিবুটও করা থাকতো। তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটা স্থিতিশীল করেছে আমাকে। এখন জীবনে এডভেঞ্চারের পরিবর্তে শান্তি খুঁজছি, তাই এক্সপ্লোরেশন কমে গেছে। বিশেষ করে ভার্সিটির সেমিস্টার কার্যক্রম চলাকালীন সময়টাতে আসলে নতুন করে সবকিছু সেটআপ করার মত বিলাসিতার সুযোগও থাকে না।
ব্যতিক্রম হলো ইয়ার ব্রেকের সময়টা। এক বর্ষ তথা দুই সেমিস্টার শেষে আমাদের দুই মাসের মত একটা লম্বা বিরতি থাকে। তবে পরিস্থিতির কারণে প্রতিবারই বিরতিটা আরো কিছুটা দীর্ঘায়িত হয়েছে। এবারও তাই। ফিডোরা লিনাক্স ব্যবহার করছিলাম অনেকদিন। একটু তো বৈচিত্র দরকার হয় জীবনে। আর পরিবর্তন করতে চাইলে এটাই উপযুক্ত সময়।
লিনাক্স ইউজার হিসেবে স্বপ্ন ছিলো একদিন আমিও “I use Arch, btw” বলবো। তাই আর্চ লিনাক্স ইন্সটল করলাম, প্লাজমা ডেস্কটপের সাথে। সত্যি বলতে বিশুদ্ধ আর্চ লিনাক্স ইন্সটল ও প্রাথমিক সেটআপ করা এখন কঠিন কিছু না, archinstall লাইব্রেরি ব্যবহার করে ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্টসহ ইন্সটল খুব সহজে করা যায়।
তবে বাই ডিজাইন, আর্চ সবকিছু আউট অফ দা বক্স রেডি করে দেয়ার জন্য তৈরি না। সত্য যে আর্চ লিনাক্সের উইকি সবচেয়ে সমৃদ্ধ, প্রচুর হেল্পফুল গাইড আছে। কিন্তু তারপরও এডভেঞ্চার না চেয়ে সহজ-সুন্দর শান্তিপূর্ণ জীবন চাইলে আর্চের দিকে না যাওয়াই ভালো অভিজ্ঞতা থেকে যেটুকু শিক্ষা নিতে পারলাম।
অন্যদিকে সহজ-সুন্দর কিছুর কথা বললে যে নামটি সবার প্রথম দিকে আসে, তা হলো লিনাক্স মিন্ট। নতুন ব্যবহারকারীদের লিনাক্সে আসার গেটওয়ে হিসেবে অনেকেই মিন্টকে সাজেস্ট করে থাকেন। তবে মিন্ট ব্যবহারের জন্য লিনাক্সে নতুন হওয়ার কোন শর্ত নেই, নির্ঝঞ্ঝাট কিছু খুঁজছেন, এমন যে কেউই আসলে মিন্টকে বেছে নিতে পারেন।
লিনাক্স মিন্ট উবুন্টুর এলটিএস (লং টার্ম সাপোর্ট) সংস্করণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। লিনাক্স মিন্ট ২২ তৈরি হয়েছে উবুন্টু ২৪.০৪ এলটিএসের ওপর ভিত্তি করে। লিনাক্স মিন্ট ২২ এর কোডনেম Wilma। এটা এই জুলাইয়ের ২৫ তারিখে রিলিজ হয়েছে। আমি মোটামুটি রিলিজের সময় থেকেই এটা ব্যবহার করছি।
লিনাক্স মিন্টের তিনটি ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট সংস্করণের সাথে আছে- Cinnamon, XFCE ও Mate। ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট নিয়ে যদি ধারণা না থাকে, সেক্ষেত্রে এই লেখা থেকে দেখে নিতে পারেন। সিনামন মিন্টের ডেভেলোপারদেরই তৈরি, এটাই লিনাক্স মিন্টের সবচেয়ে প্রোপার এক্সপ্রেরিয়েন্সের জন্য আদর্শ। আমি সিনামন সংস্করণ ব্যবহার করছি।
উবুন্টু খুব জনপ্রিয় একটি লিনাক্স ডিস্ট্রো। তবে এখন উবুন্টুর সিচুয়েশনটা কিছুটা মিক্সড আপ। উবুন্টুর গ্নোম আর ট্রেডিশনালের মিক্সডআপ UI, UX পার্সোনালি আমার কাছে কিছু জায়গায় অর্থবহ মনে হয় না। আর Snap-এর অনেকটা এগ্রেসিভ ইমপ্লিমেন্টেশনের বিতর্ক তো আছেই। মিন্ট উবুন্টুতে বেজ করা হলেও এই ব্যাপারগুলো নেই। বাই দা ওয়ে, মিন্টের একটা বিশেষ সংস্করণও আছে, LMDE বা Linux Mint Debian Edition, যেটা উবুন্টুর পরিবর্তে ডেবিয়ান বেজ করে তৈরি।
উবুন্টু আর লিনাক্স মিন্টের প্রসঙ্গে একটা ব্যাপার উল্লেখ করতে আগ্রহ বোধ করছি। উবুন্টুর আইএসও সাইজ নিয়মিত বাড়তে বাড়তে উবুন্টু ২৪.০৪ এ এসে ৬ জিবিতে এসে দাঁড়িয়েছে। যেখানে মিন্ট ২২-এর আইএসও সাইজ ২.৭ জিবি। সময়ের সাথে বাড়লেও উবুন্টু থেকে অনেক কম। অথচ প্রি-ইনক্লুডেড সফটওয়্যারে খুব একটা তফাৎ নেই। সম্ভবত Snap ইমপ্লিমেন্টেশন, আর বিভিন্ন ধরণের লাইব্রেরির ব্যবহার উবুন্টুর আইএসও সাইজ এতটা বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ।
সম্ভবত ২০১৬ সালে রিলিজ হওয়া লিনাক্স মিন্ট ১৮ ছিলো আমার ব্যবহার করা লিনাক্স মিন্টের প্রথম সংস্করণ, এছাড়া আরো বিভিন্ন সময়ে ট্রাই করা হয়েছে। ইন্সটলেশন প্রসেসে ৮ বছরে কোন তফাৎ আসেনি। উবুন্টু সম্প্রতি তাদের নতুন ইন্সটলার ইমপ্লিমেন্ট করলেও লিনাক্স মিন্ট Ubiquity ইন্সটলার ব্যবহার করছে, যেটা উবুন্টুর আগের ইন্সটলার ছিলো এবং আরো অনেক ডিস্ট্রো ব্যবহার করে থাকে।
তবে ৮ বছরে তফাৎ এসেছে ব্র্যান্ডিংয়ে। একটা সবুজাভ ছোঁয়া থাকবে, মিন্টের এরকম রূপের সাথেই আমরা পরিচিত। অথচ মিন্ট ২২-এ এসে সেটা হারিয়ে গেছে। ডিফল্ট অ্যাকসেন্ট কালার হিসেবে থাকছে হলুদ ও নীলের সমন্বয়।
বলতে হবে মিন্টের আগের সবুজের খুব একটা ভক্ত ছিলাম না আমি, তবে নতুন গ্রিন অ্যাকসেন্ট কালারটা বেশ সুন্দর। আমি এটাকে ডিফল্ট না রাখার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এই প্রসঙ্গে, লিনাক্স মিন্টে GTK থিমিং সমর্থন খুবই ভালো। মিন্ট ২২-এ থিম সেটিংসকে সিমপ্লিফাই করা হয়েছে। এখান থেকে Style (Mint-X, Mint-L, Mint-Y), ভ্যারিয়েন্ট ও অ্যাকসেন্ট কালার একদম সহজে কাস্টমাইজ করা যায়। অন্যান্য থিম ব্যবহারসহ পূর্ণ কন্ট্রোল এবং মিক্স এন্ড ম্যাচের জন্য এডভান্সড সেটিংস আছে।
রেফারেন্সের জন্য Mint-X ও Mint-L স্টাইলের সাথে স্ক্রিনশট যুক্ত করে দিচ্ছি, যেগুলো বেসিকালি পূর্ববর্তী ভার্সনগুলোতে ডিফল্ট স্টাইল ছিলো।
লিনাক্স মিন্টে আগে অ্যাপ্লিকেশন থিমের জন্য Light ও Dark-এর পাশাপাশি Darker একটি ভ্যারিয়েন্ট ছিলো। ওপরের ছবিতে যেমন আছে, এখানে অ্যাপ্লিকেশনগুলো লাইট ও ডার্কের একটা কম্বিনেশন ব্যবহার করতো। আমার কাছে এটা বেশ সুন্দর লাগতো। কিন্তু নতুন থিমে এই ভ্যারিয়েন্টটি নেই। যদিও পুরনো স্টাইলগুলো ইনক্লুডেড থাকাতে মিক্স এন্ড ম্যাচ করা যাবে।
আমার মনে পড়ে, মিন্টে আগে ফায়ারফক্স ব্রাউজারে স্টার্ট পেজ হিসেবে তাদের একটি পেজ ছিলো। এখন সেটাও থাকছে না। এবং একসময় মিন্টে ফায়ারফক্সে স্পন্সরশিপের জন্য ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন ছিলো ডাকডাকগো, গুগল এমনকি ইনক্লুডেড ছিলো না সরাসরি, যুক্ত করে নিতে হত। তবে এখন এর কিছু থাকছে না, ফায়ারফক্স- এজ ইট ইজ থাকছে। সো মিন্ট আউট অফ দা বক্স আরো ক্লিন একটা সেটআপ দিচ্ছে।
মিন্টে আসার আগে অনেকটা সময় হয়েছে গ্নোম ও প্লাজমা ডেস্কটপের বাইরে কিছু সেভাবে ব্যবহার করা হয়নি। এই ডেস্কটপগুলো লেটেস্ট গ্রাফিক্স টুলকিট, লেটেস্ট ডিসপ্লে সার্ভার ওয়েল্যান্ড, ওয়ান-টু-ওয়ান টাচপ্যাড জেসচারসহ নবতর প্রযুক্তিগুলো ইতোমধ্যে এডপ্ট করেছে।
সিনামন, এক্সএফসিই কিংবা মাতেসহ অন্য ডেস্কটপগুলো প্রায়ক্ষেত্রেই এক জেনারেশন পিছিয়ে আছে বলা যায়। যেমন Cinnamon-এ ওয়েল্যান্ড সাপোর্ট ডেভেলোপমেন্ট একদমই ইনিশিয়াল স্টেজে আছে। টাচপ্যাড জেসচার সমর্থন আছে, তবে ওয়ান-টু-ওয়ান না। ফ্র্যাকশনাল স্কেলিং এক্সপরিমেন্টাল ফিচার হিসেবে আছে।
তবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে এর জন্য খুব একটা প্রভাব পড়েছে না। কারণ এমনিতে লিনাক্স মিন্ট ২২ খুবই ওয়েল-মেড একটা রিলিজ। একটা সমস্যা, এক্সপেরিমেন্টাল ফ্র্যাকশনাল স্কেলিং ব্যবহার করলে উইন্ডো মুভ এনিমেশন স্মুথ থাকে না, তবে বাদবাকি ফ্র্যাকশনাল স্কেলিং ঠিকঠাক কাজ করছে।
ডেস্কটপ এক্সপ্রেরিয়েন্সে পরিবর্তনের দিকে মিন্ট বেশ রক্ষণশীল। বিগত অনেক বছরে বড় কোন পরিবর্তন নেই এখানে। প্যানেল, মেনু, অ্যাপইন্ডিকেটর সাপোর্ট, ডেস্কটপ আইকনস সাপোর্ট সবকিছু ট্রেডিশনালি যেভাবে দেখে আমরা অভ্যস্থ, যেভাবেই আছে।
আমি অবশ্য এখন একাধিক ওয়ার্কস্পেস ব্যবহার করতে অভ্যস্থ, তবে মিন্টে তাতে কোন অসুবিধে হচ্ছে না। ওয়ার্কস্পেস সমর্থন আছে। মাল্টিটাস্কিং ও ওয়ার্কস্পেস সুইচিংকে ইফিশিয়েন্ট করতে হট-কর্নার সমর্থন, টাচপ্যাড জেসচার ও কীবোর্ড শর্টকাট আছে।
টাচপ্যাড জেসচার প্রথমে সেটিংস থেকে এনাবল করে নিতে হয়। গ্নোম ও কেডিই-তে যেরকম ওয়ান-টু-ওয়ান (অর্থাৎ টাচপ্যাডে যতটুকু মুভমেন্ট হবে, সে অনুযায়ী লাইভ এক্সিকিউট হবে) জেসচার রয়েছে, এটা অবশ্য তেমন না- কীবোর্ড শর্টকাটের মত একবারে এক্সিকিউট হবে। তবে এটা পুরোপুরি কাস্টমাইজেবিলিটি অফার করে।
সফটওয়্যারের বেলায় মিন্টে কোন Flatpak, Snap বা Appimage থাকছে না। Flatpak সাপোর্ট এনাবল করা আছে অবশ্য, সফটওয়্যার ম্যানেজারে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে System Package বা Flatpak সিলেক্ট করা যাবে।
আগের সংস্করণগুলো থেকে লিনাক্স মিন্ট ২২-এর পরিবর্তনগুলোর কথা যদি বলি, চোখ ধাঁধানো কোন পরিবর্তন কিন্তু এখানে মূল ব্যাপার না। মিন্টের ডেভেলোপমেন্টের ধারা বজায় রাখা, এবং নতুন উবুন্টু বেজে উন্নীত করা এটাই মূল বিষয়।
Linux Mint 22 আগামী ৫ বছরের জন্য সিকিউরিটি আপডেট পাওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে এটি লিনাক্স কার্নেল ৬.৮ এর সাথে এসেছে। নতুনত্ব হিসেবে প্রতি ৬ মাস অন্তর কার্নেল ভার্সন আপডেট প্রদান করার পরিকল্পনা আছে। সাউন্ড সার্ভার হিসেবে PulseAudio থেকে PipeWire-এ সুইচ করা হয়েছে, যা আরো আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে কম ল্যাটেন্সিসহ ইম্প্রুভড পারফর্মেন্স ও বেটার কম্প্যাটিবিলিটি দিতে পারে।
ম্যাট্রিক্স ক্লায়েন্ট Element-এর একটি ওয়েব-অ্যাপ যুক্ত করা হয়েছে। এখান থেকে সরাসরি লিনাক্স মিন্টের ম্যাট্রিক্স সার্ভারে যুক্ত হতে পারবেন। ম্যাট্রিক্স অনেকটা ডিসকোর্ডের মত, তবে ওপেন সোর্স ও ডিসেন্ট্রালাইজড। এটা বেশ চমৎকার একটা সংযোজন, কমিউনিটির সাথে সরাসরি ইউজারকে কানেক্ট করার জন্য।
Linux Mint 22 ব্যবহার করতে গিয়ে আমি সবচেয়ে বড় যে সমস্যায় পড়েছি, তা হলো Keyring। লং স্টোরি শর্ট, প্রতিবার প্রোটন ভিপিএন চালু করলে কী-রিং পাসওয়ার্ড সেট করতে বলা হচ্ছে, সেট করি বা খালি রাখি প্রোটন ভিপিএন ব্যবহার করতে গিয়ে নতুন করে লগইন করতে হচ্ছে। এটা ছাড়া এখন পর্যন্ত উল্লেখ করার মত তেমন কোন ইস্যু পাইনি, অবশ্য ক্যাজুয়াল ইউসেজের বাইরে তেমন কিছু করিওনি এর মধ্যে।
সারমর্ম হলো লিনাক্স মিন্টে অনেক ফ্যান্সি কোন ব্যাপার নেই। কিছু আধুনিকতর প্রযুক্তির ইমপ্লিমেন্টেশন এখনো করা হয়নি। তবে যা কিছু আছে তা ওয়েল-ডেভেলোপড। সর্বোপরি লিনাক্স মিন্টের এক্সপ্রেরিয়েন্স সিম্পল ও সলিড।
নতুন ফিচারস | রিলিজ নোটস | ইন্সটলেশন গাইড
একটি GR+ BD পরিবেশনা
Thank You…