বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধন ও পুনঃনিবন্ধনে কোনো পর্যায়ে আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ নিয়ে শুধু কেন্দ্রীয় তথ্য ভাণ্ডারে রাখা আঙুলের ছাপের সঙ্গে তা যাচাই করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধন বন্ধ করতে এক আইনজীবীর রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার সচিবালয়ের এক সভায় প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন উদ্যোগ বন্ধ করতে যারা ‘অপপ্রচার’ চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুয়া পরিচয়ে অথবা নিবন্ধন ছাড়া সিম কিনে নানা অপরাধে ব্যবহারের অভিযোগ বাড়তে থাকায় সম্প্রতি গ্রাহকদের তথ্য যাচাই ও সিম পুনঃনিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যাতে আঙুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে।
মোবাইল অপারেটররা আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করছে এবং সেই তথ্য বিদেশে পাচার হচ্ছে বলে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন জনের আলোচনায় অভিযোগ উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার আঙুলের ছাপের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন বন্ধ করতে উকিল নোটিসও পাঠিয়েছেন এক ‘নাগরিক’।
তারানা হালিম বলেন, যে পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করা হচ্ছে সেখানে অপারেটরদের আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করার প্রযুক্তিগত কোনো সক্ষমতা নেই।
“আঙুলের ছাপটি একটি বাইনারি ডিজিটাল কোড, যা কোনো অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা সম্ভব নয়।”
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন বলেন, যে যন্ত্রের সাহায্যে আঙুলের ছাপ নিয়ে সিম নিবন্ধন করা হচ্ছে তা শুধু অনলাইনে যাচাই করা হচ্ছে, ওই যন্ত্রে আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করার কোনো প্রযুক্তি নেই। ব্যাংক ও অন্যান্য সেবা খাতেও এইভাবে ছাপ যাচাই করা হচ্ছে।
বিটিআরসির মহাপরিচালক মো. এমদাদ উল বারী বলেন, যেই পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনে আঙুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে সেখানে কোনোভাবেই তা সংরক্ষণ করার উপায় নেই।
সিআইডি পুলিশ সুপার রেজাউল হায়দার বলেন, “যেভাবে আঙুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে তাতে কারও ব্যক্তিগত আঙুলের ছাপ নিয়ে অপরাধ কার্যক্রমে ব্যবহার করা সম্ভব নয়, এগুলো কেবল সিনেমাতেই সম্ভব।”
তারানা হালিম বলেন, “এই প্রজেক্ট (বায়োমেট্রিক নিবন্ধন) ভেস্তে গেলে অপারেটররা সবচেয়ে খুশি হবে। তাদের সিম বিক্রি কমে গেছে। একটি মহল এই অপপ্রচার চালাচ্ছে, যারা অবৈধ ভিওআইপি করে কোটি কোটি টাকা কামাই করছে, চাঁদাবাজি করছে এবং সন্ত্রাসী কাজ করছে।”
টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেন, “এই অপপ্রচারে যারা জড়িত রয়েছে, বিরোধিতা করছে তাদের ভেরিফিকেশন দরকার, গোড়ায় হাত দেওয়া হবে। তাদের খুঁজে বের করা হবে। দুই একজনকে বের করে ধরতে চাই।”
অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির বলেন, “সিম নিবন্ধনে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তাতে অপারেটরদের নেপথ্য কোনো হাত নেই। বরং এ বিষয়ে অপারেটররা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে যাতে খুব দ্রুত এই কাজ শেষ হয়, তাদের সদিচ্ছা রয়েছে।”
গত ১৬ ডিসেম্বর সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হওয়ায় আঙুলের ছাপ না দিয়ে এখন আর নতুন সিম কেনা যাচ্ছে না। পাশাপাশি বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুরনো সিমের পুনঃনিবন্ধন চলছে, যা এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনার কথা বলে আসছেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী।
বিটিআরসির মহাপরিচালক মো. এমদাদ উল বারী জানান, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি নাগাদ দুই কোটি ৫৩ লাখ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন বা পুনঃনিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।