এবার এশিয়া কাপে চার অধিনায়ককে একটা অভিন্ন
প্রশ্ন শুনতে হলো—‘এটাই কি বাংলাদেশের
মাটিতে আপনার শেষ আন্তর্জাতিক টি-
টোয়েন্টি?’
জবাবে কেউ পরিষ্কার উত্তর দিলেন, কেউ বা
চাইলেন এড়িয়ে যেতে। ক্রিকেটের ছোট
দৈর্ঘ্যে মাশরাফি বিন মুর্তজা, মহেন্দ্র সিং ধোনি,
শহীদ আফ্রিদি ও লাসিথ মালিঙ্গার ভবিষ্যৎ হয়তো
লম্বা হবে আরও কিছুদিন। কিন্তু বাংলাদেশের
মাটিতে কি আর কখনো খেলা হবে আন্তর্জাতিক
টি-টোয়েন্টি? উত্তরটা ‘না’ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
চারদিকে এমন জল্পনা যে এশিয়া কাপ দিয়েই
ঘরের মাঠে শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি
খেলে ফেলেছেন মাশরাফি। আনুষ্ঠানিকভাবে
বাংলাদেশ অধিনায়ক কিছুই জানাননি এখনো। তবে এ
কান-ও কান হয়ে যেটি শোনা যাচ্ছে, ‘হতেও
পারে’! এশিয়া কাপের ফাইনাল-পূর্ব সংবাদ
সম্মেলনে প্রশ্নটা অবশ্য উঠেছিল। বাংলাদেশ
অধিনায়ক প্রশ্নকর্তাকে পাল্টা জিজ্ঞেস
করলেন, ‘আপনাকে কে বলেছে? আমি তো
বলিনি!’
ক্যারিয়ারে বাংলাদেশ-অধ্যায়টা অনেকভাবেই মনে
থাকবে ধোনির। ক্যারিয়ারের শুরু এখানে, আনন্দ-
হতাশার অনেক মুহূর্ত তাঁকে উপহার দিয়েছে এই
দেশ। তবে ভারতের টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে
অধিনায়ক সম্ভবত খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর

বাংলাদেশ-অধ্যায় শেষ করে ফেললেন এবার।
যদি তা-ই হয়, এশিয়া কাপ জিতেই বাংলাদেশের
স্মৃতিকে রাঙিয়ে রাখলেন ‘মাহি’।
ধোনি নিজে অবশ্য সেটি স্বীকার করতে চাননি।
সংবাদ সম্মেলনে যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হলো,
এই এশিয়া কাপই কি বাংলাদেশে তাঁর শেষ সফর?
ভারত অধিনায়কের সরস উত্তর, ‘এত তাড়াতাড়ি
নিজেকে মুক্তি দিচ্ছি না। আরও কয়েকবার আমার
মুখোমুখি হতে হবে বাংলাদেশকে। এটাই
একমাত্র সময় যখন আমার উত্তরের চেয়ে
প্রশ্নটাই অনেক বড় হয়।’
মাশরাফি-ধোনির মতো কূটনৈতিক নয়, মালিঙ্গা স্পষ্টই
জানিয়ে দিয়েছেন, এটাই তাঁর শেষ বাংলাদেশ সফর।
২০০৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ
খেলতে এসেছিলেন লঙ্কান ফাস্ট বোলার। গত
এক দশকে তাঁর স্মৃতিতে জমা হয়েছে দারুণ সব
গল্প। এর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে বেশি
আনন্দ দেয় তাঁকে? দুবার না ভেবে উত্তর
দিলেন, ‘অবশ্যই ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়।
ওই বিশ্বকাপের স্মৃতিটাই আজীবন মনে থাকবে।’
বাংলাদেশের মাটিতে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ
খেলা প্রসঙ্গে আফ্রিদি অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন
ছুড়লেন, ‘আমাকে বিপিএলে দেখতে চান না?’
বলেই এক প্রস্থ হাসি। বিপিএলে আফ্রিদিকে
হয়তো আরও অনেকবার দেখা যাবে।

কিন্তু
বিপিএল আর জাতীয় দলের হয়ে খেলা তো এক
নয়। অনেক দিন ধরেই বিদায়ের রাগিণী বাজছে
পাকিস্তান অলরাউন্ডারের। আফ্রিদি অবশ্য স্পষ্ট
করে বলেননি, কখন অবসর নেবেন। তবে ধরা
হচ্ছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের
মাটিতে এবারের এশিয়া কাপই শেষ আফ্রিদির।
দীর্ঘ এই সময়ে বাংলাদেশের মাটিতে তাঁরও
যোগ হয়েছে বহু স্মৃতি। ক্যারিয়ারের
গোধূলিবেলায় এসে বাংলাদেশের মানুষের
ভালোবাসার কথাই জানালেন আফ্রিদি, ‘সব সময়ই
বাংলাদেশে খেলাটা বড় ব্যাপার। এখানে আমার প্রতি
মিনিট, প্রতিটি সেকেন্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে
থাকাটা উপভোগ করেছি। এখানকার মানুষের
আতিথেয়তা চমৎকার।’
শুধু আফ্রিদি কেন; ধোনি-মালিঙ্গার কণ্ঠে নিশ্চয়ই
শোনা যাবে বাংলাদেশ-প্রশস্তি। তবে মাশরাফির
জন্য অনুভূতিটা হবে ভিন্ন। যদি ঘরের মাঠে শেষ
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেই ফেলেন,
ভারতের বিপক্ষে রোববারের ফাইনালটা না জেতার
আক্ষেপ বহুদিন তাড়িয়ে বেড়াতে পারে
অধিনায়ককে।

Leave a Reply