বর্তমানে এই ২০২৪ সালে এসে “ওয়েবসাইট” শব্দটির সাথে প্রায় ৯৫% মানুষ পরিচিত। ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মানুষ পুরো বিশ্বটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। সেই সাথে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ইন্টারনেট এখন খুবই প্রচলিত একটি বিষয়। আর ইন্টারনেটের প্রধান উপাদান হলো ওয়েবসাইট। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না ওয়েবসাইট কী, কিভাবে এটি কাজ করে, এবং এর মাধ্যমে কিভাবে ইনকাম করা যায়। আর তাই আজকের এই পোস্টে আমরা এই খুঁটিনাটি বিষয়গুলোই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব তাই পোস্টটি ধৈর্য ধরে সম্পূর্ণ পড়লে আপনি জানতে পারবেন ওয়েবসাইট কি এবং ওয়েবসাইট থেকে কিভাবে ইনকাম করা যায় সেই ব্যাপারে। তো চলুন বেশি কথা না বলে শুরু করা যাক।

ওয়েবসাইট কী?

ওয়েবসাইট হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের ওয়েব পেজ, ছবি, ভিডিও, অডিও এবং অন্যান্য তথ্যের সমষ্টি যা একটি ওয়েব সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজেই অ্যাক্সেস করা যায়। ইন্টারনেটের অপরিহার্য অংশ হিসেবে, ওয়েবসাইটের গুরুত্ব অপরিসীম। একটি ওয়েব পেজ মূলত একটি HTML ডকুমেন্ট যা HTTP (HyperText Transfer Protocol) প্রোটোকলের মাধ্যমে ওয়েব সার্ভার থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ওয়েব ব্রাউজারে স্থানান্তরিত হয়।

প্রত্যেকটি ওয়েবসাইটের একটি আলাদা ও ইউনিক নাম থাকে এবং একই ডোমেইনের অধীনে অনেকগুলো ওয়েব পেজ থাকতে পারে যা একত্রিত হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট গঠন করে। পৃথিবীতে বিদ্যমান সব উন্মুক্ত ওয়েবসাইট একত্রে ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব’ (www – World Wide Web) তৈরি করে। এছাড়াও, কিছু ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলো শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অ্যাক্সেসযোগ্য।

২০২৪ সালে শীর্ষ ৫টি ওয়েবসাইট যেখানে সবথেকে বেশি ভিজিটর রয়েছে সেগুলো হলো:

  • ১. Facebook.com – সামাজিক যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম।
  • ২. Google.com – সার্চ ইঞ্জিন ও অনলাইন সেবা প্রদানকারী।
  • ৩. YouTube.com – ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম।
  • ৪. Twitter.com – মাইক্রোব্লগিং ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
  • ৫. Instagram.com – ছবি ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম।

এই ওয়েবসাইটগুলো কেবলমাত্র তথ্য সংগ্রহের স্থান নয়, বরং ব্যবহারকারীদের জন্য একটি ইন্টারেক্টিভ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমও প্রদান করে। আজকের যুগে ওয়েবসাইটের গুরুত্ব অপরিসীম, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ ও আরও কার্যকর করে তুলেছে।

ওয়েবসাইটের যাত্রা

ওয়েবসাইটের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮৯ সালে, যখন ব্রিটিশ পদার্থবিদ টিম বার্নার্স-লি CERN (European Council for Nuclear Research) এ কর্মরত অবস্থায় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www) আবিষ্কার করেন। তাঁর এই আবিষ্কার ইন্টারনেটের জগতে একটি বিপ্লব সূচনা করে। 

১৯৯৩ সালের ৩০ শে এপ্রিল CERN ঘোষণা করে যে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব যে কোনো ব্যক্তি বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবে। এই ঘোষণা ইন্টারনেটের প্রসার ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। 

ওয়েবসাইটের প্রাথমিক পর্যায়: শুরুর দিকে, ওয়েবসাইটগুলো ছিল সম্পূর্ণ টেক্সট-ভিত্তিক। এতে ন্যূনতম কিছু ছবি, শিরোনাম এবং অনুচ্ছেদ ছাড়া তেমন কোনো লেআউট ছিল না। সেই সময়ের ওয়েবসাইটগুলোতে বর্তমানের মতো জটিল ও দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন দেখা যেত না।

বর্তমানের ওয়েবসাইট: আজকের দিনে, ওয়েবসাইটের ডিজাইন ও ফাংশনালিটিতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। গ্রাফিক্স ও ভিজ্যুয়ালের ব্যবহার বেড়ে গেছে বহুগুণে। কিছুদিন আগেও, ওয়েবসাইটের ডিজাইন ছিল মৌলিক HTML এর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এখন, বিভিন্ন কোডিং ভাষা যেমন: Java, JavaScript, C++, C#, এবং Python এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটকে আরও আকর্ষণীয় এবং ইন্টারেক্টিভ করা যায়।

বর্তমানের ওয়েবসাইটগুলো শুধু তথ্য প্রদানের মাধ্যম নয়, বরং ব্যবহারকারীর সাথে ইন্টারেকশন এবং যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এর ফলে ওয়েবসাইট এখন কেবল তথ্যভান্ডার নয়, বরং সামাজিক যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, সামাজিক যোগাযোগের প্ল্যাটফর্মগুলোতে ব্যবহারকারীরা ছবি, ভিডিও, এবং বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট শেয়ার করতে পারে। গুগল সার্চ ইঞ্জিন আমাদের তথ্য অনুসন্ধানের অভিজ্ঞতাকে সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করেছে। ইউটিউব ভিডিও শেয়ারিং এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিনোদন এবং শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

ওয়েবসাইটের ভবিষ্যৎ: ওয়েবসাইটের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায়। অগ্রগতিশীল প্রযুক্তি এবং ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেটের ব্যবহার ওয়েবসাইটের উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), মেশিন লার্নিং, এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) এর মত নতুন প্রযুক্তির সংযোজন ওয়েবসাইটকে আরও ইন্টারেক্টিভ এবং ব্যবহারকারীর জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।

ওয়েবসাইটের এই যাত্রা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। ইন্টারনেট এবং ওয়েবসাইটের এই যাত্রা আমাদের তথ্যপ্রাপ্তি, যোগাযোগ, এবং বিনোদনের অভিজ্ঞতাকে পরিবর্তন করেছে এবং ভবিষ্যতেও আরও পরিবর্তন আনবে।

ওয়েবসাইটের কাজ কী?

ওয়েবসাইট হচ্ছে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন ধরণের ফাইল, তথ্য এবং কোড জমা থাকে একটি ফিজিক্যাল হোস্টিং সার্ভারে। এই হোস্টিং সার্ভারে সাইটের কোড, ছবি, ভিডিও, এবং অন্যান্য সমস্ত ফাইল সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিটি ওয়েবসাইটের একটি আইপি ঠিকানা (Internet Protocol address – IP) থাকে। আপনি যখন আপনার ওয়েবসাইটটি একটি সার্ভারে হোস্ট করেন এবং ডোমেইন সংযুক্ত করেন, তখন একজন ব্যবহারকারী সহজেই আপনার সাইটে প্রবেশ করতে পারে।

ওয়েবসাইটের উপযোগিতা: ওয়েবসাইটের প্রধান কাজ হলো তথ্য সরবরাহ এবং যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করা। উদাহরণস্বরূপ, যখন আমাদের কিছু জানার দরকার হয়, আমরা গুগল, ইউটিউব, এবং অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করি। আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ওয়েবসাইটগুলো রেজাল্ট প্রদান করে। এর মাধ্যমে আমরা সঠিক তথ্য এবং সমাধান পেয়ে থাকি।

বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইটের ব্যবহার:

বিভিন্ন ধরণের ওয়েবসাইট রয়েছে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্নভাবে সহায়ক। যেমন:

  • ১. অনলাইন গেমিং সাইট: যেখানে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন গেম খেলতে পারেন।
  • ২. মিউজিক সাইট: যেখানে গান শোনা এবং ডাউনলোড করা যায়।
  • ৩. ডাউনলোড সাইট: যেখানে বিভিন্ন ফাইল ডাউনলোড করা যায়।
  • ৪. খবরের সাইট: যা লাইভ স্ট্রিমিং এবং সংবাদ সরবরাহ করে।

এছাড়াও, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন ধরণের কন্টেন্ট প্রকাশ করতে পারেন, যা অন্যরা দেখতে এবং ব্যবহার করতে পারেন।

ব্যবসা ও প্রচারণার ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের গুরুত্ব: একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি পুরো পৃথিবী ভ্রমণ করতে পারবে না, কিন্তু একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তিনি তার প্রতিভা, প্রতিষ্ঠান বা পণ্যকে বিশ্বব্যাপী প্রচার করতে পারবেন। 

ওয়েবসাইটে আপনার সংস্থার পরিচিতি, কাজের ধরন, পণ্যের গুণমান, ক্লায়েন্ট রিভিউ, অর্ডার প্রক্রিয়া, এবং যোগাযোগের মাধ্যম সহ অনেক কিছু তুলে ধরা সম্ভব। 

ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আয়ের সুযোগ:

একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি বিভিন্নভাবে আয় করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে, পণ্য বিক্রি করে, অথবা বিভিন্ন সেবা প্রদান করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনার বার্তা বা পণ্য সেবা পুরো পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে দিতে পারবেন, যা অন্য কোনো মাধ্যমের মাধ্যমে সম্ভব নয়। এটি আপনার ব্যবসার প্রচারণা এবং বিকাশের জন্য একটি অত্যন্ত কার্যকর মাধ্যম।

ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরির জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম

বর্তমান যুগে একটি ওয়েবসাইট থাকা মানে আপনি অন্যদের থেকে অনেক এগিয়ে আছেন। ইন্টারনেটের প্রসারতার এই যুগে অনেক প্ল্যাটফর্ম আপনাকে ফ্রি ওয়েব হোস্টিং করার সুযোগ দিচ্ছে। আগে ওয়েবসাইট তৈরি করতে অনেক টাকা খরচ হত, কিন্তু এখন আপনি ফ্রিতেই এটি করতে পারবেন। নিচে কিছু জনপ্রিয় টুলস নিয়ে আলোচনা করা হলো:

১. ওয়ার্ডপ্রেস (WordPress)

ওয়ার্ডপ্রেস হলো বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও চাহিদাসম্পন্ন ওয়েবসাইট তৈরির প্ল্যাটফর্ম। বিশ্বব্যাপী ৮১০ মিলিয়ন ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করছে, যা প্রায় ৪৩% ওয়েবসাইটকে অন্তর্ভুক্ত করে। ওয়ার্ডপ্রেসের যাত্রা শুরু হয়েছিল ব্লগিংয়ের জন্য, তবে এখন এটি মোবাইল প্রেজেন্টেশন, ব্যবসা, শিক্ষা ক্ষেত্র এবং ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট তৈরির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

ওয়ার্ডপ্রেস মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত: WordPress.com এবং WordPress.org। WordPress.com ব্যবহার করতে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও, WordPress.org ব্যবহার করা তুলনামূলকভাবে কম সীমাবদ্ধ। ওয়ার্ডপ্রেসের ফ্রি প্ল্যানের মাধ্যমে 3GB স্টোরেজ পাওয়া যায় এবং একটি ফ্রি সাবডোমেইনসহ নির্দিষ্ট ওয়েব হোস্টিং সুবিধা থাকে।

২. ব্লগার (Blogger)

Blogger.com হলো একটি জনপ্রিয় ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম, যা ১৯৯৯ সালে Pyra Labs দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৩ সালে গুগল এই প্ল্যাটফর্মটি কিনে নেয় এবং ওয়েব হোস্টিং চালু করে। প্রতিটি ইউজারের একাউন্টে ১০০টি ব্লগ থাকতে পারে। ব্লগার ব্যবহার করে খুব সহজেই ওয়েবসাইট তৈরি করা যায় এবং এর জন্য কেবল একটি গুগল একাউন্ট প্রয়োজন। তবে ব্লগার প্ল্যাটফর্মটি শুধুমাত্র ব্লগিং পেজ তৈরির জন্য উপযোগী, ব্যবসায়িক বা অন্যান্য ধরণের ওয়েবসাইট তৈরির জন্য নয়।

ব্লগারে অনেকগুলো টেমপ্লেট থাকে, যা ব্যবহার করে আপনি আপনার সাইটটি পছন্দ অনুযায়ী তৈরি করতে পারেন। Drag-and-Drop সুবিধার কারণে প্রয়োজনমতো ব্লগগুলো কাস্টমাইজ করা যায়। ব্লগস্পটের সাহায্যে বিনামূল্যে নিজের ডোমেইন নেম পাওয়া যায়।

৩. উইক্স (Wix)

Wix হলো একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট বিল্ডিং প্ল্যাটফর্ম, যা সব ধরণের ব্যবহারকারীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা দেয়। Wix এর মাধ্যমে ১৬০ মিলিয়নেরও বেশি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। মোবাইলের সাহায্যে খুব সহজেই Wix দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়, যা বর্তমানে খুব জনপ্রিয়। 

Wix প্ল্যাটফর্মে অ্যানিমেশন, আর্টিফিশিয়াল ডিজাইন ইন্টেলিজেন্স (ADI) প্রযুক্তি এবং অ্যাপ মার্কেট ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। এখানে শতাধিক অ্যাপ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে যা ওয়েবসাইট পরিচালনা ও উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়া, আপনার সাইটের ব্যাকএন্ডে এবং ওয়েবসাইট র‍্যাংকিং করার জন্য SEO করা যায়। ফ্রি প্ল্যানে Wix 500MB স্টোরেজ সরবরাহ করে।

ওয়েবসাইট তৈরির এই জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে আপনি সহজেই আপনার নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন, যা আপনার ব্যবসা, প্রতিভা বা পণ্য সেবাকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে।

ওয়েবসাইট থেকে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায়?

কিছুদিন আগেও মানুষ জানতো না যে ওয়েবসাইট থেকে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায়। তখন ধারণা ছিলো যে ওয়েবসাইট শুধুমাত্র তথ্য বা বিনোদনমূলক খবর সরবরাহ করে। তবে সময়ের সাথে অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়েছে। এখন আপনি ঘরে বসে ফ্রি তে ওয়েবসাইট খুলে ইনকাম করতে পারেন। তবে শুধুমাত্র যেকোনো ধরনের সাইট খুললেই টাকা ইনকাম করা যাবে না। এর জন্য দরকার হবে ব্লগার ওয়েবসাইট এবং ডোমেইন হোস্টিং, যার জন্য কিছু টাকার প্রয়োজন হতে পারে। তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে, ওয়েবসাইট থেকে টাকা ইনকাম করতে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। ধৈর্য ধরে ও মন দিয়ে কাজ করতে হবে। সাইটে যখন নিয়মিত ট্রাফিক ও ভিজিটর আসা শুরু করবে, তখন আপনি ইনকামের জন্য কিছু উপায় বের করতে পারবেন। জেনে নেওয়া যাক উপায়গুলো:

১. গুগল অ্যাডসেন্স (Google AdSense) দ্বারা ইনকাম

সবচেয়ে সহজ এবং লাভজনক উপায় হলো গুগল অ্যাডসেন্স থেকে টাকা ইনকাম করা। যখন আপনার ওয়েবসাইটে অল্প কিছু ভিজিটর আসা শুরু করবে, তখন আপনি গুগল অ্যাডসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন। গুগল অ্যাডসেন্স আপনার একাউন্ট অনুমোদন করলে, আপনি অ্যাডসেন্সের বিজ্ঞাপন আপনার ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করতে পারবেন। যখন ভিজিটররা আপনার সাইটে দেখানো বিজ্ঞাপন দেখবে এবং ক্লিক করবে, তখন আপনি টাকা পাবেন। আপনার আয়ের পরিমাণ নির্ভর করবে আপনার ওয়েবসাইটে কতো ভিজিটর আসছে এবং বিজ্ঞাপনগুলো কোথায় প্রদর্শিত হচ্ছে তার ওপর। গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আপনি হাজার হাজার টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারেন।

২. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing) করে আয়

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং অনলাইন থেকে আয়ের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। আপনার যদি একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকে এবং সেখানে ভালো পরিমাণে ট্রাফিক ও ভিজিটর থাকে, তাহলে আপনি সহজেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন। ইন্টারনেটে অনেকগুলো ডিজিটাল প্রোডাক্ট কোম্পানি বা ই-কমার্স সাইট রয়েছে, যেখানে আপনি তাদের পণ্য নিয়ে মার্কেটিং করতে পারেন। এর বিপরীতে আপনি কমিশন পাবেন। আপনি চাইলে নিজের প্রোডাক্টও বিক্রি করতে পারেন।

৩. অ্যাড স্পেস (Ad Space) সেল করে ইনকাম

গুগল অ্যাডসেন্স থেকে ইনকাম করা সহজ উপায় হলেও এর অ্যাক্সেস পেতে অনেক সময় লাগতে পারে। এই সময়ে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে ডিরেক্ট বিজ্ঞাপন দেখাতে পারেন। বিভিন্ন কোম্পানি থেকে স্পন্সর অ্যাড কিংবা অ্যাড স্পেস নিতে পারেন। এর একটি বিশেষ দিক হলো আপনি কত টাকা ইনকাম করবেন তা নির্ভর করে না ভিউয়ের উপর, বরং বিজ্ঞাপনদাতাদের চুক্তির উপর। ট্রাফিক বেশি হলেই ইনকাম বেশি হবে।

৪. নিজের পণ্য বিক্রি করে আয়

মানুষ এখন কাজকে সহজ করে, মূল্যবান সময় বাঁচানোর চেষ্টা করে। অফলাইনে ব্যবসা যতটা কঠিন, অনলাইনে ততটাই সহজ। আপনি ঘরে বসে আপনার প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে প্রোডাক্ট বিক্রির মাধ্যমেও আয় করতে পারেন।

৫. ওয়েবসাইট তৈরি করে আয়ের সুযোগ

আপনি যদি WordPress, Wix, বা Blogger থেকে বিভিন্ন রকমের ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করতে পারেন, তাহলে সেগুলো সেল করে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। বর্তমানে ব্যক্তিগত বা কোম্পানির নিজস্ব পোর্টফলিওর জন্য ওয়েবসাইটের দরকার হয়। আপনি বিভিন্ন কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়ে তাদের জন্য পোর্টফলিও বা ব্র্যান্ড সাইট তৈরি করতে পারেন। এছাড়া Empire Flippers, Flippa ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে আপনার ওয়েবসাইট বিক্রি করতে পারেন।

ওয়েবসাইট থেকে আয় করার এই উপায়গুলো আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং কৌশলের মাধ্যমে সফল হতে সাহায্য করবে। ধৈর্য এবং নিয়মিত পরিশ্রমের মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটকে একটি সফল আয়ের উৎসে পরিণত করতে পারবেন।

One thought on "ওয়েবসাইট কি? এবং কিভাবে ওয়েবসাইট থেকে ঘরে বসে ইনকাম করবেন?"

  1. mdronykhan75612 Contributor says:
    শিখার টিউটোরিয়াল দেন

Leave a Reply