গুলশান হামলার মতো বিশেষ পরিস্থিতিতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের
যোগাযোগের পথ বন্ধে রাজধানীর নির্দিষ্ট একটি বাণিজ্যিক এলাকায় মহড়া শুরু করেছে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল ফোন অপারেটররা।মোবাইল ফোন অপারেটররা তাদের ‘ভয়েস সার্ভিস’ বন্ধেও মহড়া চালাচ্ছে। ইন্টারনেট কনটেন্ট বন্ধে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতাও যাচাই করছে করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি কার্যালয় থেকে এই মহড়ার তদারক করছে সংস্থার বিশেষ একটি দল।
এই মহড়ার কথা বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ আগে জানালেও ঠিক কখন কোন এলাকায় তা চালানো হবে, তা প্রকাশ করতে রাজি হননি।
“সোমবার বিকাল থেকে মধ্য রাত অবধি ঢাকার কোনো কোনো এলাকা এ মহড়ার আওতায় আসবে। তবে এলাকার নাম বলা যাচ্ছে না,” দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাত ১টায় একটি বাণিজ্যিক এলাকায় মহড়া শুরু হয়েছে।
অফিস ছুটির পর এই বাণিজ্যিক এলাকায় লোকসমাগম কম থাকায় এটি বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানান বিটিআরসি কর্মকর্তারা।
ওই কর্মকর্তা বলেন, “ইন্টারনেট সংযোগের সঙ্গে ভয়েস কলও তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধের বিষয়টি এ মহড়ায় যাচাই করা হচ্ছে।
“ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধে এই মহড়ায় বিশেষ জোর দেওয়া হলেও কিছু অপারেটরের ভয়েস বন্ধের বিষয়েও নিশ্চিত হতে চাইলে ভয়েস সার্ভিস বন্ধও মহড়ায় নিয়ে আসা হয়েছে।”
“তবে ভয়েস সেবা বন্ধের মহড়া খুবই কম সময়ের জন্য করা হচ্ছে , এ প্রক্রিয়ায় গ্রাহকরা বুঝতেও পারবেন না,” বলেন তিনি।
গত ১ জুলাই রাতে একদল অস্ত্রধারী তরুণ গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে দেশি-বিদেশি অতিথিরা ভেতরে আটক পড়েন। জিম্মি সঙ্কটের মধ্যে জঙ্গিদের ঠেকাতে গিয়ে বোমায় নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
ওই পরিস্থিতিতে জঙ্গিদের যোগাযোগের পথ বন্ধ করতে গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ৭৯ নম্বর সড়ক ও আশপাশের এলাকায় ব্রডব্যান্ড সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হলেও মোবাইল ইন্টারনেট চালু থাকে।
পরদিন ভোরে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে সশস্ত্র বাহিনী ওই ক্যাফের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তার আগেই ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। গভীর রাতেই তারা রক্তাক্ত লাশের ছবি ইন্টারনেটে তুলে দেয়, যা আইএসের বরাত দিয়ে প্রকাশ করে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।
সেই রাতে ক্যাফের জঙ্গিরা বিশেষ একটি অ্যাপ ব্যবহার করে বাইরে যোগাযোগ করেছিল বলে পরে গণমাধ্যমে খবর আসে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করায় সে সময় মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি।
মোবাইল যোগাযোগ ঠিক রেখে ডেটা ট্রান্সফার বন্ধ রাখা সম্ভব কি না- এ নিয়ে পরে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হয়। এ প্রেক্ষাপটেই বিটিআরসি এই মহড়ার উদ্যোগ নিল।
রাত ১২ থেকে ইন্টারনেট কনটেন্ট বন্ধের সক্ষমতা যাচাই শুরু করে বিটিআরসি।
এ প্রক্রিয়ায় ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট কোনো ইউআরএল বন্ধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে এবং দেখা হচ্ছে কত সময়ের মধ্যে তারা এ কাজ করতে পারছে বা ব্যর্থ হচ্ছে কি না।
বিশেষ পরিস্থিতিতে অপারেটররা কোন কনটেন্ট, ইন্টারনেট ও ভয়েস কল বন্ধ করতে কী ধরনের সক্ষমতা দেখাতে পারে বা এই প্রক্রিয়ায় কী সমস্যা রয়েছে, তা যাচাই করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান বিটিআরসি ওই কর্মকর্তা।
ওই এলাকায় ইন্টারনেট কিংবা ভয়েস সার্ভিস বন্ধের পর আইনশৃঙঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের ডিভাইসগুলো চালু রাখতে পারছেন কি না, তাও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
বিশেষ পরিস্থিতিতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের যোগাযোগের পথ বন্ধে ইন্টারনেট সেবা তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেওয়ার মহড়া করতে সোমবার বিটিআরসি’র নির্দেশনা পায় ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
শাহজাহান মাহমুদ তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, মোবাইল ইন্টারনেট থেকে শুরু করে তারযুক্ত ইন্টারনেটসহ (ফিক্সড ব্রডব্র্যান্ড) সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা এই মহড়ার অন্তর্ভুক্ত হবে। মহড়া ১৫ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত হতে পারে।
যে সব এলাকার ইন্টারনেট বন্ধ করা হচ্ছে, আগে থেকে না জানালে গ্রাহক স্বার্থ লঙ্ঘিত হবে কি না-এ প্রশ্নে শাহজাহান মাহমুদ বলেন, “আগে থেকে জানানো সম্ভব হচ্ছে না, বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র কিছু সমস্যা তো মেনে নিতেই হবে।”
ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসপিএবি) সেক্রেটারি এমদাদুল হক বিটিআরসির নির্দেশনা পাওয়ার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন।
“এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা বিটিআরসি পাঠিয়েছে। কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করা যায় কিনা- তা পরীক্ষা করতে এই মহড়া হবে।”
‘খুবই কম সময়ের জন্য’ কোনো কোনো এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হবে জানিয়ে
___________________________________________________________
ভাল ভাল টিপস পেতে আমার সাইটে ঘুরে আসবেন TipsaLL24.com