একেকসময় মনের অবস্থা একেকরকম থাকে। আমার একটা অভ্যাস আছে। মন বেশি বিক্ষিপ্ত থাকলে, মনের সে অনুভূতি একবাক্যে লিখে তার সাথে IslamQA জুড়ে দিয়ে সার্চ দেই। ধরা যাক, মন খারাপ। তাহলে লিখে ফেলি-
Feeling depressded ISlamQA.
এভাবে লিখলে অসংখ্য ফতোয়া চলে আসে। একটার পর একটা পড়তে থাকি। মনে হয় যেন, কোনো এক জ্ঞানসমুদ্রে এসে পড়েছি। পড়তে পড়তে একসময় মন খারাপের অনুভূতিটা চলে যায়।
.
ফতোয়া ঘাটতে ঘাটতে দুইটি প্রশ্নে চোখ পড়ে গেলো। দুইটা প্রশ্নই দুইজন মেয়ে করেছে। একজন লিখেছে-
“শায়খ! আমার বয়স ২৯ হয়ে গেছে। এখনো বিয়ে হয়নি। আমি সবসময় আল্লাহ্র কাছে একজন ভালো স্বামী চাই। ….. কিন্তু এখনো আমার দু‘আ কবুল হয়নি। মাঝে মধ্যে মনে হয় আমি গুনাহগার বলেই হয়তো আল্লাহ্ আমার দু‘আ কবুল করছেন না। শায়খ! আমার জন্য একটু দু‘আ করে দিন না, যাতে আল্লাহ্ আমাকে একজন ভালো স্বামী দেন।”
.
আরেকজন প্রশ্ন করেছে-
“আল্লাহ্ সুন্দর। তিনি সুন্দর ভালোবাসেন। কিন্তু কালো চেহারা, ব্রণে ভরা মুখ আর এবড়ো-থেবড়ো দাঁতের কারণে আমি নিজেকে কুৎসিত মনে করি। আচ্ছা! আমি তো সুন্দর না। তার মানে কি আল্লাহ্ আমাকে ঘৃণা করেন?… বাসায় সবাই আমাকে বোঝা মনে করে। ইসলামে তো সুন্দর মেয়ে বিয়ে করতে বলা হয়েছে। আর আমি পুরুষদের দোষও দেই না। তারা তো কুরআন-সুন্নাহ মেনেই চলছে। কিন্তু আমার দোষ কী? আমি তো কুৎসিত হতে চাইনি! কাউকে সামাজিকভাবে মেনে নেয়া হচ্ছে না, চাকরী দেয়া হচ্ছে না, এমনকি বিয়েও করা হচ্ছে না -শুধু সে সুন্দর না বলে! এটা একজন মেয়ে কীভাবে মেনে নিবে?”
শায়খ দুইজনকে এতো সুন্দর উত্তর দিলেন! উত্তর শুনেই মন ভরে গেলো। সংক্ষেপে তুলে ধরছিঃ
.
হে আল্লাহ্র বান্দী! কুরআনের এই আয়াত নিয়ে ভাবো-
“হয়তো তোমরা কোন একটি বিষয় পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ভালো না। আবার একটি বিষয় অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আসলে, আল্লাহই জানেন আর তোমরা জানো না।” [সূরা বাকারা ২:২১৬]
কাজেই, আমাদের জন্য কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ, সেটা আল্লাহই ভালো জানেন। তিনি আমাদের জন্য জীবনটাকে সেভাবেই সাজিয়েছেন।
.
হাঁ, দুনিয়ার পরীক্ষার জন্য হয়তো আমাদের কাছে সেটা অবিচার মনে হতে পারে। কিন্তু যদি ধৈর্য ধরতে পারি, তবে তার জন্য আল্লাহ্ আমাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিবেন। রাসূল (সা) বলেছেন, “মুমিনের ব্যাপারটা বড়ই আজব। যখন তার সাথে ভালো কিছু ঘটে, সে ধৈর্য ধরে আর তা তার জন্য উত্তম। আর যখন খারাপ কিছু ঘটে, সে সবর করে। আর এটাও তার জন্য উত্তম।” (মুসলিম, হাদিস নংঃ ২৯৯৯)
তাই আল্লাহকে ধন্যবাদ দাও। যদি তিনি তোমাকে কিছু থেকে দূরে রাখেন, তবে তা তোমার কল্যাণের জন্যেই। শয়তানকে ওয়াসওয়াসা দেয়ার সুযোগ দিয়ো না। বরং, আল্লাহ্ যেমন চান, তেমন একজন বান্দী হয়ে যাও। তাঁর ফয়সালা হাসিমুখে মেনে নাও। কাদরকে গ্রহণ করতে শিখো। আল্লাহ্র ইবাদত দিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখো। সালাত-সিয়াম, আল্লাহ্র যিকিরে নিবিষ্ট হও।
নিজের প্রতি সদয় হও। তাকিয়ে দেখো, তোমার মতো লক্ষ লক্ষ মেয়ে বিয়ে করতে পারছে না। কিন্তু তারা অনেক বিবাহিত দম্পতির চেয়ে সুখে আছে।
.
কখনো কোনো দম্পতিকে একসাথে দেখলে কি তোমার মন খারাপ হয়ে যায়? মনে হয় আল্লাহ্ তোমাকে এই সুখ থেকে বঞ্চিত করেছেন? এক মিনিট দাঁড়াও! তুমি তো কেবল জীবনের একটা দিকই দেখলে!
যদি তুমি সেই স্ত্রীকে দেখতে যে তার স্বামীকে ঘৃণা করে, স্বামীকে একটুও ভালোবাসে না, যার মুখ থেকে কেবল স্বামীর অত্যাচারের রোমহর্ষক বর্ণনাই পাওয়া যায়, তাহলে হয়তো বিয়ে থেকে তোমাকে দূরে রাখার জন্য তুমি আল্লাহকে ধন্যবাদ দিতে।
এরপর থেকে নিজেকে হতভাগী মনে হলে, তোমার সেই বান্ধবীর কথা মনে করবে, যাকে সারাক্ষণ তার স্বামীর বকা হজম করতে হয়। স্মরণ করবে তোমার সেই প্রতিবেশীর কথা, যাকে স্বামী মেরে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।
.
আজ তুমি অসুন্দর হওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ করছো। কিন্তু যদি আল্লাহ্ তোমাকে যে নি’আমত দিয়েছে সেটা গুনতে শুরু করো, তবে গুনে শেষ করতে পারবে না।
“যদি তোমরা আল্লাহর নি‘আমত গণনা করো, তবে তার সংখ্যা গুনে শেষ করতে পারবে না। মানুষ বড়ই যালিম। বড়ই অকৃতজ্ঞ।” (সূরা ইব্রাহীম ১৪:৩৪)
.
আজ যদি সবাই তোমার মতো কথা বলতে শুরু করে, তবে যারা অসুস্থ তারা বলবে, “আল্লাহ্ কেন আমাকে অসুস্থ রেখেছেন আর সবাইকে সুস্থ রেখেছেন?”
যারা গরীব তারা বলবে, “আল্লাহ্ কেন আমাকে গরীব বানিয়েছেন আর অন্যদেরকে ধনী বানিয়েছেন?”
যারা ক্লান্ত তারা বলবে, “আল্লাহ্ কেন আমাকে দৌড়ের ওপর রেখেছেন আর সবাইকে এতো ভালো রেখেছেন?”
.
তুমি কেন এভাবে ভাবছো না যে, আল্লাহ তোমাকে দেখার জন্য দুইটা চোখ দিয়েছেন, অথচ কোটি কোটি মানুষ চোখে দেখতে পায় না।
তুমি পা দিয়ে হাঁটতে পারো অথচ লাখ লাখ মানুষ আজ পঙ্গু।
আল্লাহ তোমাকে ইসলাম দিয়েছেন অথচ কোটি কোটি মানুষ ইসলামের সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত।
.
একবার ভেবে দেখো, সেসব অমুসলিম মেয়েদের কথা, যাদেরকে আল্লাহ্ নজরকাড়া সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছেন। কাল যদি তারা কুফরের ওপর মারা যায়, তবে তারা কোথায় থাকবে? এই সৌন্দর্য তাদের কী কাজে লাগবে? বরং তারা যদি তাদের অন্তরটাকে ইসলাম দিয়ে সুন্দর করতো, তবে তা তাদের কাজে লাগতো। আমি তোমাকে প্রশ্ন করি, কোনটা তোমাকে খুশি করে? একজন সুন্দরী অমুসলিম হিসেবে থাকা নাকি একজন অসুন্দর মুসলিমা হিসেবে থাকা?
.
মুহাম্মাদ রশীদ একটি বই লিখেছেন। নাম ‘গাইরে মুতাযাওজিয়াত ওয়ালাকিন সা’ঈদাত (বিয়ে না করলেও সুখী)। তিনি সেখানে এক বোনের গল্প এনেছেন। যে বিয়ে করতে না পারায় খুব হতাশ থাকলেও পরবর্তীতে কুরআনের মাধ্যমে জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছে। তিনি লিখেছেন,
সকল মেয়েরই বোঝা উচিত, তাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে, জীবনের সবক্ষেত্রে আল্লাহ্ তা‘আলার ইবাদত করতে পারা। তার যদি ঘর-সংসার করার সুযোগ আসে, তবে সে ইসলাম অনুযায়ী ছেলেমেয়েদেরকে বড়ো করবে। আর যদি সুযোগ না হয়, তবে সে যেন সেসব বোনদেরকে নিজের মেয়ে হিসেবে নিয়ে নেয়, যারা আল্লাহ্র পথ থেকে দূরে সরে গিয়েছে। সে তাদেরকে আল্লাহ্র রাস্তায় আনার চেষ্টা করবে। তাদের ভালো কাজের অংশীদার সে নিজেও হবে। এভাবে পৃথিবীর সকল মুসলিমকে সে নিজের করে নিবে।
.
নিজেকে গড়ে তুলবে একজন ভালো মানুষ হিসেবে। যাকে সবাই অনুসরণ করবে। শ্রদ্ধা করবে। ভালোবাসবে। আর-
“আল্লাহ কোনো ভালো মানুষদের প্রতিদান নষ্ট করেন না।” [সূরা তওবা, ৯:১২০]
Courtesy – Shihab Ahmed Tuhin
valoi likhsen vai monta aktu valo kore dilen. But ami gf er karone khub osukhi aci.