সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা, ব্যক্তিগত ভরণপোষণ চালানো, কিংবা ব্যবসার পরিসর বৃদ্ধি, সবগুলো লক্ষ্য পূরণের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো- নিয়মিত আয়ের পথ খোলা রাখা। একজন ফ্রিল্যান্সারের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তার স্কিল সেট। আর একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কিভাবে আপনার ফ্রিল্যান্সিং স্কিল গুলো সবসময় আপডেটেড রাখতে পারেন, সেটাই আমরা আলোচনা করব এই আর্টিকেলে।
নিঃসন্দেহে বর্তমানে ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্মটি হলো আপওয়ার্ক। খুব সহজেই সার্ভিস প্রোভাইডার খুঁজে পাওয়ার পাশাপাশি এখানে আপওয়ার্ক মেম্বাররা নানান রকম কোর্সে অংশগ্রহণ করার জন্য বিশেষ বিশেষ অফারও পেয়ে থাকেন। এমনই একটি প্রোগ্রাম পার্টনারের নাম ইউডেমি।
সাম্প্রতিক সময়ে, অনেক বেশি মানুষ ফ্রিল্যান্সিংয়ে আগ্রহী হওয়ায়, প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্টের ব্যাপারটা একটু জটিল হয়ে গেছে। একজন ফ্রিল্যান্সার নিজেই নিজের পছন্দসই কাজ খুঁজে নেয়। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে নিয়মিত আপনার ফ্রিল্যান্সিং স্কিল গুলোকে আপনি কিভাবে আপ-টু-ডেট রাখবেন? প্রয়োজনীয় ট্রেনিংটাই বা পাবেন কোত্থেকে? বর্তমান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে, ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার জন্য যথেষ্ট জ্ঞান এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতাটুকু কি আপনার আছে? ধরুন, এই মুহূর্তে আপনি এসব স্কিল শিখতে আগ্রহী। কিন্তু, পর্যাপ্ত সময়, বাজেট কিংবা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্লাস করার মতো সুযোগটুকু আপনার নেই। সেক্ষেত্রে, আপনার করণীয় কি?
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিনিয়ত উঠে আসছে নতুন নতুন টেকনোলজি। আর এসব টেকনোলজির সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই একজন ফ্রিল্যান্সারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ব্যবসায়িক সম্পর্কগুলোর গতিবিধিতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসায়, গ্লোবাল মার্কেটপ্লেস গুলোতে টিকে থাকতে, একজন ফ্রিল্যান্সারের জন্য সফট স্কিল থাকাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আর অধিকাংশ সময়েই ফ্রিল্যান্সাররা যে ধরনের ফিডব্যাক পেয়ে থাকেন, তাতে তাদের ত্রুটিগুলো কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে স্কিল গুলোর আরও উন্নতি করা প্রয়োজন, সেসব জানার কোনো সুযোগই থাকে না।
আর তাই, একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার হার্ড ও সফট স্কিল গুলো তৈরি করে নেয়া এবং ধরে রাখার ক্ষেত্রে আপনাকেই সচেষ্ট হতে হবে। দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বর্তমানে, অনলাইনেই এসব ট্রেনিং নেয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষই সাধারণত, সোজা গুগল কিংবা ইউটিউবে চলে যায়। সেখানে মাত্র এক ক্লিকেই চলে আসে অসংখ্য শিক্ষামূলক কন্টেন্ট সাইট এবং ভিডিও। কিন্তু, আপনার জন্য পারফেক্ট কনটেন্ট গুলো কিভাবে খুঁজে পাবেন? এছাড়াও, কনটেন্টের মান নিয়ে প্রশ্ন তো আছেই!
মার্কেটপ্লেসের উপযোগী ফ্রিল্যান্সিং স্কিল সেটগুলো ধরে রাখুন।
ফুল-টাইম কিংবা পার্ট-টাইম, যেভাবেই ফ্রিল্যান্সিং করুন না কেন, নিজে নিজে শেখার ব্যাপারটাতে হয়তো আপনার কিছুটা লজ্জা কাজ করতে পারে। আপনি হয়তো, স্কুলেও খুব একটা ভালো স্টুডেন্ট ছিলেন না। কিংবা, কাজ করার সময়ে, কাজ বাদ দিয়ে শেখার ব্যাপারটাতেও হয়তো আপনি তেমন আগ্রহী নন।
এসব চিন্তায় পথভ্রষ্ট হবেন না। শিক্ষার এই ব্যাপারটিকে আপনার ক্যারিয়ার গড়ে তোলার একটি অংশ ভাবুন। ফ্রিল্যান্স মার্কেটে প্রতিযোগীদের এই বিশাল সমাগমে, বাকি ফ্রিল্যান্সাররা যখন প্রজেক্ট খুঁজতে ব্যস্ত সময় পার করবে, নিজের স্কিলের জোরে আপনি তখন এত ফ্রিল্যান্সারের মাঝখান থেকেও নিজেকে আলাদা ভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন।
ইন্টারনেটে রয়েছে এমন অসংখ্য অনলাইন লার্নিং প্লাটফর্ম। যেখানে আপনি পাবেন অসংখ্য শিক্ষামূলক কনটেন্ট। এসব কনটেন্ট ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় ফ্রিল্যান্সিং স্কিল অর্জন করার সুযোগও আছে। কিন্তু, এত এত অনলাইন লার্নিং প্লাটফর্ম থেকে আপনার জন্য মানানসই প্লাটফর্মটিকে বেঁছে নেয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে-
সর্বপ্রথম লক্ষণীয় বিষয়টি হলো, সাবস্ক্রিপশন ফি। সাবস্ক্রিপশন সার্ভিসে আপনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিংবা নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক কোর্সে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। তাই, আপনার বাজেটের মধ্যে কোন সাইটে আপনি বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণের সবচেয়ে ভালো অফারটি পাচ্ছেন সেটাই প্রধান বিবেচ্য বিষয়। আরও একটা ব্যাপারে লক্ষ্য রাখুন, কিছু সাইটে অনেক সময় ফ্রি কোর্সেরও সুযোগ থাকে। কিন্তু, সেখানে সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য প্রশংসাপত্র পাবার জন্য হয়তো আপনাকে অর্থ ব্যয় করতে হতে পারে। এছাড়াও, পৃথক ভাবে কোনো কোর্স সাবস্ক্রাইব করলে, সেসব কনটেন্ট আপনি আজীবন ব্যবহার করার অনুমতি পাচ্ছেন কিনা, সেটিও যাচাই করে দেখুন।
শিডিউল
কোর্সগুলোতে নিজের পছন্দমতো সময়ে অংশগ্রহণ করা যাবে, নাকি, পূর্ব-নির্ধারিত কোনো শিডিউল অনুযায়ী অংশগ্রহণ করতে হবে সেসব ভালোভাবে জেনে নিন। পূর্ব-নির্ধারিত শিডিউল হলে, দিনক্ষণগুলো মনোযোগ সহকারে চেক করে নিন। কারণ, শিডিউল অনুযায়ী কোর্সে সাবস্ক্রাইব করলে, রুটিন অনুসারে অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি যথাসময়ে কোর্স শেষও করতে হবে। অন্যথায়, আপনি হয়তো ঐ কোর্সের ক্রেডিট পাবেন না। ফুল-টাইম ওয়ার্কার হলে, আপনার জন্য শিডিউল অনুযায়ী কোর্সে অংশগ্রহণ করাটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে যেতে পারে। অবশ্য কিছু কিছু সাইটে আপনার পছন্দসই সময়ে ইচ্ছেমত কোর্সগুলোতে অংশগ্রহণের সুযোগও আছে।
ফরম্যাট
আপনি কি কোর্সটিতে তাদের সাজানো কারিকুলাম অনুযায়ী ধাপে ধাপে অংশগ্রহণ করতে চান? নাকি, কোর্স থেকে ইচ্ছেমত বেঁছে নিতে চান আপনার পছন্দমতো লেকচার গুলো? উদাহরণস্বরূপ, এই মুহূর্তে চলমান প্রজেক্টের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো লেকচার হয়তো আপনার দেখে নেয়া দরকার। কিন্তু, কোর্সটিতে সেই লেকচারটি পেতে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক সপ্তাহ। এসব বিবেচনা করলে, সেলফ-পেসড্ কোর্স (Self-paced course) বেছে নেয়াই উত্তম। এ ধরনের কোর্সে সবগুলো কনটেন্ট আপনাকে একবারেই দিয়ে দেয়া হবে। যখন ইচ্ছে আপনি সেগুলো ব্যবহার করতে পারবেন।
যোগাযোগ
নতুন কিছু শেখার সময় প্রতিমুহূর্তেই আপনি হয়তো নানান রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন। আপনার প্রশ্নগুলো আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে প্রকাশ করতে পারবেন কিনা, আর পারলেও, যথাসময়ে উত্তর পাবেন কিনা, সেগুলোও জেনে রাখুন। অধিকাংশ অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্মেই প্রতিটি কোর্সের জন্য আলাদা ডিসকাশন ফোরাম থাকে। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে স্টুডেন্টরা নিজেরাও পছন্দসই গ্রুপ তৈরি করে নেয়। এছাড়াও, সাইটে অনেকসময় ইন্সট্রাক্টরদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার সুযোগও থাকে।
বৈচিত্র্য
প্রথম প্রথম হয়তো, প্রয়োজনীয় সবগুলো কোর্স সম্পর্কে আপনার তেমন কোনো ধারণা থাকবে না। কিন্তু, দেখা যায়, বহু স্টুডেন্টই একই সাথে একাধিক সাইটের কোর্সে অংশগ্রহণ করে। সেক্ষেত্রে, তারা এমন কোনো প্লাটফর্মের খোঁজ করে, যেখানে একই সাথে মানসম্পন্ন হার্ড এবং সফট স্কিল গুলো শিখে নেয়া যাবে। একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে, নতুন নতুন টুল সম্পর্কে জানার পাশাপাশি, কন্ট্রাক্ট করার সময় নেগোশিয়েট করা, ক্লায়েন্টের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক স্থাপন করা, গঠনমূলক ফিডব্যাক দেয়া-নেয়ার কৌশল, এসব শিখে নেয়াটাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আরও একটা ব্যাপার মনে রাখবেন, একই টপিকে ভিন্ন ভিন্ন ইন্সট্রাক্টরের কাছ থেকে আপনি হয়তো ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ নেয়ার সুযোগ পাবেন।
বাস্তবমুখীতা
ব্যক্তিগত দক্ষতার উন্নয়ন ও মননের বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে অর্জিত শিক্ষা এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। এখানে আপনি আপনার কাজের জন্য প্রয়োজন এমন কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভের সুযোগ পাবেন। আর তাই আপনি যা শিখতে চান, সত্যিই ঠিক সেটাই শেখার সুযোগ পাচ্ছেন কিনা, যাচাই করে দেখুন।
শিক্ষার কোনো বয়স নেই!
আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার এবং কার্যক্রম নির্ভর করবে দু’টো বিষয়ের ওপর- ১। আপনি কী ধরনের কাজ করতে আগ্রহী এবং ২। কার সাথে করতে আগ্রহী।
যদিও, ফ্রিল্যান্সিং এমনই একটি ক্যারিয়ার, যেখানে প্রতিনিয়ত কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকার পাশাপাশি, নির্ভরযোগ্য ক্লায়েন্টদের সামনে নিজের যোগ্যতা এবং দক্ষতা তুলে ধরার জন্যও আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। এভাবেই নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিজের ফ্রিল্যান্স স্কিল গুলোকে যেমন আরও শানিত করতে পারবেন, তেমনি, আপনার হাতেও ধরা দেবে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য।
5 thoughts on "ফ্রীল্যান্সীং স্কিল বাড়ানোর প্রয়োজনীয় টিপস।"