আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।
রাসুল (সাঃ) এর এই ৭টি অভ্যাস আপনাকে সফলতার পথ দেখাবে
আজ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম এর জীবনের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস সম্পর্কে আপনাদেরকে জানাবো ইনশাআল্লাহ। যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং বিজ্ঞানীরাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম এর দৈনন্দিন জীবনের কার্যাবলী নিয়ে গবেষণা করেছেন, এবং মুসলিম বিজ্ঞানীরা এ সাতটি অভ্যাসকে মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ অভ্যাস বলেছেন।
১. দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়াঃ মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু সাল্লাম এশার নামাজের পর কোন বিশেষ কাজ না থাকলে যত দ্রুত সম্ভব ঘুমিয়ে পড়তেন। এবং তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে জাগতেন, অতঃপর মিসওয়াক করে ওযু গোসল করে পবিত্র হয়ে নামাজ আদায় করতেন। এবং কিছু নফল ইবাদত করে দিনের কাজ শুরু করতেন (সহিহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ৫৯৯)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম দিনের শুরুটা বরকতময় করার জন্য আল্লাহর নিকট উম্মতের জন্য দোয়াও করে গিয়েছেন।( আবু দাউদ হাদিস নাম্বারঃ ২৬০৬, সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহিব হাদিস নাম্বারঃ২৬১৬)
বিজ্ঞান প্রমাণ করে যে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়ার অভ্যাস মানুষকে ক্যান্সার, হার্টঅ্যাটাক, ব্রেন স্ট্রোক, ইত্যাদি রোগ সহ বিভিন্ন মরণব্যাধি রোগ থেকে রক্ষা করে থাকে এবং তাড়াতাড়ি ঘুমালে আমাদের শরীরে থাকা বিষাক্ত যে টক্সিন রয়েছে, তা আমাদের শরীর থেকে বের করে দেয়, অর্থাৎ শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন নির্গত হয় এবং এর সাথে সাথেই মেলাটোনিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়। যা আমাদের দেহকে রোগমুক্ত রাখতে এবং মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে সাহায্য করে।
তেমনি ভাবে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার ফলে ভোরবেলায় নির্মল বায়ুতে অক্সিজেনের মাত্রা অনেক বেশি থাকে, যার জন্য সকালের অক্সিজেন গ্রহণের ফলে আমাদের সারাদিনের কর্মচালানর জন্য উদ্যম উদ্দীপনা পর্যাপ্ত থাকে। এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা মানুষের মধ্যে প্রডাক্টিভিটি বেশি থাকে অর্থাৎ কাজ করার ক্ষমতা বেশি থাকে। এবং সেইসঙ্গে যারা দ্রুত কমিয়ে আবার দ্রুত ঘুম থেকে উঠে তাদের মধ্যে হতাশা ও দুশ্চিন্তা গ্রস্থতা ইত্যাদি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
২. স্বল্প আহার গ্রহণঃ মহানবী (সাঃ) রোহ ও অসুস্থতা প্রতিরোধ করার জন্য কম খেতেন। হাজার বছর পরে বিজ্ঞান আজ প্রমান করে যে স্বল্প আহার গ্রহণ আমাদের মধ্যে অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন→ পিঠের দাঁড়া সোজা রাখার মত কয়েক লোকমা খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। আর বেশি খাবার ছাড়া যদি থাকা সম্ভব না হয়, তাহলে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানির জন্য আর বাকি এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে।( তিরমিজি হাদিস নাম্বারঃ ২৩৮৩)
রাসূল (সাঃ) আরো বলেন→ মুমিন বেশি খাবার গ্রহণ করেনা। মুমিন এক আঁতে আহার করে অর্থাৎ কম খেয়ে থাকে। ( বুখারি হাদিস ৫৩৯৩)
অর্থাৎ খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাহ ছিল পেটের এক ভাগ খাদ্য,এক ভাগ পানীয়, আর এক ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ফাঁকা রাখতেন। (তিরমিজি হাদিস নাম্বার ১৩৮১)
৩. ধীরে ধীরে খাদ্যগ্রহণঃ খাওয়ার পরে, মস্তিষ্কের সংকেত আসতে প্রায় 30 মিনিট সময় লাগে। তাই অনেক সময় দেখা যায় ভরপেট খাবার 30 মিনিট পর মানুষের কাছে অস্বস্তি বোধ হয়। কারন সে খুব বেশি খেয়ে ফেলেছে তাই পেট খালি থাকতেই খাবার বন্ধ করা উচিত, দেখবেন 30 মিনিট পরে আপনার মনে হবে আপনার পেট পূর্ণ হয়ে গেছে।
অথবা ধীরে ধীরে খাবার গ্রহণ করতেন যার ফলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার পেট ভরে গেছে। তাই আল্লাহকে স্মরণ করে ধীরে ধীরে আহার গ্রহণ করা উচিত। নবী করীম (সাঃ) খাবার ধীরস্থিরভাবে ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে বলেছেন এবং খাবার পর খাবারের পাত্র ও আঙ্গুল চেটে খেতে বলেছেন। (বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ৫১৪০; মুসলিম হাদিস নাম্বার ৫৪১৫)
৪. পরিবারের সঙ্গে খাবার খাওয়াঃ আমাদের মহানবী (সাঃ) সব সময় পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে খাবার খাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। আজ মনোবিজ্ঞান ও বলে যে পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাবার খেলে অনেকাংশে মানসিক চাপ কমে যায়। অর্থাৎ একাকী না খেয়ে কোনো মেহমান অথবা পরিবার অথবা সন্তান অথবা কোন খাদেমকে সাথে নিয়ে খানা খাওয়া উচিত।
কেননা হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাহু সাল্লাম বলেনঃ তোমরা সম্মিলিতভাবে তোমাদের খাবার খাও এবং আল্লাহর নামে খাও দেখবে তোমাদের খাদ্যে বরকত হবে। (আবু দাউদ হাদিস নাম্বারঃ ৩৭৬৬; ইবনে মাজাহ হাদিস নাম্বারঃ ৩২৮৬)
৫.তিন ডোকে বা তিন শ্বাসে পানি পান করাঃ মহানবী (সাঃ) তিন ডোকে পানি পান করতেন। এটা সুন্নাহ। আজ বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন একসঙ্গে পানি পান করলে আমাদের ব্লাডের ইলেক্ট্রোলাইট গুলো বেড়ে যায়। এর ফলে মাথা ব্যথা মাথা ঘুরানো এবং ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া এক ডোকে ডকডক করে পানি পান করলে পাকস্থলী ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করতেন। অর্থাৎ তিনি একেবারে সবটুকু পানি পান করতেন না। (বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ৫৬৩১, মুসলিম হাদিস নাম্বার (২০২৮)-১২২, তিরমিজি ১৮৮৪,ইবনে মাজাহ ৩৪১৬, সহীহ আৎ তারগীব ওয়াৎ তারহীব ২১১৯,তাহক্বীক মুসনাদে আহমাদ ১৩২৩০,সহিহ ইবনু হিব্বান হাদিস নাম্বারঃ ৫৩৩০)
৬. রোজা রাখতেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম মুসলমানদেরকে রমজান মাসে রোজা রাখতে বলেছিলেন,যা ইসলামে ফরজ। রমজান মাসের বাহিরেও তিনি মাঝে মাঝে প্রায়ই রোজা রাখতেন। আজ জাপানি বিজ্ঞানীরাও বলেছেন যে, রোজা অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। রোজা রাখার ফলে আমাদের দেহে অটোফজি হয় অর্থাৎ রোজা রাখার ফলে আমাদের দেহের কোষ গুলো সারাদিন খাদ্য-পানীয় না পেয়ে আমাদের দেহের মধ্যেই থাকা,দেহের মৃত দূষিত কোষগুলোকে সবল কোষ গুলো খেয়ে ফেলে।
যার ফলে আমাদের ক্যান্সার ও অন্যান্য শারীরিক রোগ থেকে রক্ষা করে এই অটোফেজি তথা রোজা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম সাধারণ মাসগুলোতে প্রতিমাসে কমপক্ষে তিনটি করে রোজা থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। আর প্রতি মাসে তিনটি করে রোজা রাখার ফজিলত প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন ধৈর্যের মাস হল রমযান আর প্রত্যেক মাসেই তিন দিন সাওম পালন করা সারা বছর সাওম পালন করার সমতুল্য। সুবহানাল্লাহ। (নাসায়ী হাদিস নাম্বারঃ ২৪০৮)
৭.হাসিখুশি থাকুনঃ সুস্থ দেহের জন্য শারীরিক পনিচর্যার পাশাপাশি মানসিক প্রফুল্লতারও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। নবী সাল্লাহু সাল্লাম নিজেও অত্যন্ত সদালাপী ও হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রীর অধিকারী ছিলেন। সাহাবীরা বলতেন আমরা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর স্ত্রী হাসিখুশি আর কাউকে দেখিনি।( তিরমিজি হাদিস নাম্বার ৩৬৪১)
তাছাড়া ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের দুটি মানুষকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখার জন্য সরাসরি কাজ করে থাকে। যেমন ১. ইতিপূর্বে রোজা রাখার শারীরিক উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি। দুই নাম্বার নামাজের মাধ্যমে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে যেমন আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় তেমনি এটা একটা শারীরিক ব্যায়াম ও বটে। বর্তমান বিজ্ঞান আমাদের বলছে আমাদের হার্ট ও মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে প্রত্যহ ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
আর নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করাটা একজন মানুষের শারীরিক ব্যায়ামের প্রয়োজন পূর্ণ করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে যে নামাজ হতে হবে রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশিত নিয়ম অনুযায়ী নামাজের মত নামাজ অর্থের দিকে স্থির ভাবে নামায পড়া তাড়াহুড়ো করে নামাজ আদায় করলে আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ বয়ে আনে না।
রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন→ মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় চোর ঐ ব্যক্তি যে তার সালাত চুরি করে। তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে কিভাবে সালাত চুরি করে…? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম বললেন সে নামাজে রুকু ও সিজদা পূর্ণ করে না (মুসনাদে আহমদ হাদিস নাম্বার ২২৬৯৫; মিশকাত হাদিস নাম্বারঃ ৮৮৫)
তিনি আরো বলেন আল্লাহ তায়ালা ঐ বান্দার সালাতের প্রতি দৃষ্টি দেন না, যে সালাতে রুকু ও সিজদায় পিঠ সোজা করে না।( মুসনাদে আহমদ হাদিস নাম্বারঃ ১৬৩২৬; মিশকাত হাদিস নাম্বার ৯০৪)
রাসূল (সাঃ) আরও নিষেধ করেছেন→ কাকের ঠোকরের ন্যায় সিজদা করতে, চতুষ্পদ জন্তুর মতো বাহু বিছাতে এবং মসজিদের মধ্যে উটের মতো নির্দিষ্ট স্থান বেছে নিতে নিষেধ করেছেন। ( আবু দাউদ হাদিস নাম্বারঃ ৮৬২; ইবনে মাজাহ হাদিস নাম্বারঃ ১৪২৯)
মহানবী (সাঃ) এর অভ্যাসগুলো আমরা যদি আমাদের জীবনে আয়ত্তে আনতে পারি তাহলে একই সঙ্গে তার সুন্নাহ অনুসরণের পাশাপাশি আত্মিক পরিশুদ্ধিও লাভ করা সম্ভব। এবং সবসময় আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে যার ফলে আমরা সর্বদা সুস্থ থাকতে পারবো আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং আমরা সুস্থ শরীর নিয়ে বেশি বেশি আল্লাহর এবাদত করতে পারব ইনশাআল্লাহ।
Trickbd তে অনেকেই পোস্ট কতে চান কিন্তু করতে পারছেন না। আপনারা Ictbn.Com ওয়েবসাইটে পোস্ট করতে পারেন।এখানে একাউন্ট করলেই author।এখানে প্রতি পোস্টের জন্য ৫-৫০ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়।পোস্টের মানের উপর ভিত্তি করে। ICTBN.Com
আশা করি সবাই সবকিছু বুঝতে পেরেছেন। কোথাও সমস্যা হলে কমেন্ট করে জানাবেন অথবা ফেসবুকে জানাতে পারেন ফেসবুকে আমি
4 thoughts on "রাসুল (সাঃ) এর এই ৭টি অভ্যাস আপনাকে সফলতার পথ দেখাবে ইনশাআল্লাহ।"