বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই? বর্তমান সময়ে টিভি খুললেই কিংবা অনলাইনে কোন ওয়েবসাইটে ভিজিট করলে অথবা কোন ভিডিও দেখলে সেখানে চলে আসে একের পর এক বিরক্তিকর বিজ্ঞাপণ। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বিজ্ঞাপণ আমাদের জন্য অনেক উপকারী হলেও এটি আমাদের সবচাইতে বেশি বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিজ্ঞাপণ সত্যিই অনেক বিরক্তিকর। হোক সেটি টিভিতে, বিলবোর্ডে কিংবা অনলাইনে। আমরা কেউই বিজ্ঞাপণ দেখতে পছন্দ করি না। মনে করুন পুরো পৃথিবীর মানুষ বিজ্ঞাপণ এর বিপক্ষে চলে গেল এবং সকল জায়গা থেকে বিজ্ঞাপণ উঠিয়ে নেওয়া হলো। তাহলে কি কি ঘটতে পারে, চলুন এ বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা যাক।
বিজ্ঞাপণ আমাদের অনলাইন প্লাটফর্ম এবং ব্যক্তিগত জীবনে একটি বিরক্তিকর কারণ। কেননা কোনো একটি প্রয়োজনীয় ভিডিও দেখার মাঝে হঠাৎ করেই চলে আসে এই বিজ্ঞাপণ। টিভিতে কিংবা অনলাইন প্লাটফর্ম এর সকল জায়গায় এটি সমান ভাবে আমাদের জন্য বিরক্তিকর। যদিও অনলাইন প্লাটফর্মে যে সব বিজ্ঞাপণ দেখানো হয় তা টিভির বিজ্ঞাপণের চাইতে কম বিরক্তিকর। অনলাইন প্লাটফর্মে আমরা যেসব বিজ্ঞাপনগুলো দেখে থাকি সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই আমাদের প্রয়োজন হয়। কিন্তু টিভিতে যেসব বিজ্ঞাপনগুলো কয়টি মিনিট ধরে চলতে থাকে সেগুলো আমাদের তেমন কোন কাজে লাগে না।
তবে চলুন এবার জেনে নেয়া যাক যে অনলাইন প্লাটফর্মে কিংবা টিভিতে বিজ্ঞাপণ কেন দেওয়া হয়?
আমরা যখন বাড়িতে টিভি দেখি কিংবা ইউটিউব ভিডিও প্লে করি তখন কিছুক্ষণ পরপরই বিজ্ঞাপণ চলে আশাকরি এই বিরক্তিকর বিজ্ঞাপণ কেন দেওয়া হল, এসব বিজ্ঞাপণ গুলো না দিলেও তো চলত, কিংবা দিলেও খুব কম পরিমাণে দিত। তবে আপনার ভাবার মাঝেও যৌক্তিকতা রয়েছে। আমরা যদি এসব জায়গায় কম বিজ্ঞাপণ দেখতে পাই তবে এগুলো দেখতে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করব।
কিন্তু আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় তারা কেন আপনাকে বিজ্ঞাপণ দিবে না, আপনি কি তাদেরকে এ জন্য কোন টাকা দেন? এর উত্তরে আপনারা সকলেই বলবেন যে না আমরা তো এজন্য ইউটিউবকে কিংবা টিভি চ্যানেলের মালিক কে কোন অর্থ পরিশোধ করি না। তবে আপনি এক্ষেত্রে কিন্তু ফ্রিতে সেসব ভিডিও গুলো দেখছেন। এজন্য আপনি ইউটিউব কে কিংবা ওয়েবসাইট ব্যবহার করলে সেই প্লাটফর্ম কে কোন অর্থ পরিশোধ করছেন না। অনলাইন প্লাটফর্মে আপনার সেই ফ্রিতে বিচরণ করার জন্যই মূলত বিজ্ঞাপণ দেওয়া হয়।
এই বিজ্ঞাপণ আমাদের জন্য বিরক্তিকর হলেও এই বিজ্ঞাপণের জন্যই কিন্তু আমরা ফ্রি কনটেন্ট দেখতে পাই, টিভি চ্যানেলগুলো আমাদেরকে ফ্রিতে দেখার সুযোগ দেয়, অনলাইন ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউবে আমরা ফ্রিতে ভিডিও এবং কনটেন্ট দেখতে পারি।
অনলাইন প্লাটফর্মে বিজ্ঞাপণ দেখানো বন্ধ করে দিলে কি হবে?
প্রথমেই বলে নেই, বিজ্ঞাপণ বন্ধ করে দিলে অনেক ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যাবে। ইউটিউব এর মতো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে এবং বেশিরভাগ কোম্পানি তাদের ব্যবসা হারাবে। বিজ্ঞাপণের বাজার বন্ধ হয়ে যাবার কারণে বেশিরভাগ লোক তখন চাকরি হারাবে। এছাড়া এসময় আরও একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে আমাদের সকলকেই সেটি হলো, নতুন কোন প্রোডাক্টে বাজারে আসলে সেটি কেউ জানতেই পারবে না। কেননা বিজ্ঞাপণ হচ্ছে প্রচার করার মাধ্যম, সেই বিজ্ঞাপণ এ যদি বন্ধ হয়ে যায় তবে আমাদের কাছে সেই পণ্যটির কোন প্রচার আসবেনা। যদিও অনেক মাধ্যমে সেই পণ্যটির সংবাদ আমাদের কাছে আসতে পারে, তবে সেটি হবে অনেক সীমিত পরিমাণে।
শুধু যে এতে করে কোম্পানিগুলোই লোকসান করবে তা নয়। এতে করে আমাদেরকে ও বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে। কেননা সে সময় আমরা কোন প্রমোশনাল অফার সম্পর্কে জানতে পারবো না। কেননা সেই সময় ফ্রিতে কেউ আপনাকে সেই পণ্যটির সংবাদ পৌঁছে দেবে না এবং আপনিও সেটির সঠিক দাম নির্ধারণ জানতে পারবেন না।
এখনো মনে হতে পারে যে আমরা তবে তখন সে সব ওয়েবসাইট ভিজিট করে সেই পণ্যটির দাম জেনে নেব। কিন্তু এভাবে করে আপনি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম স্মরণে রাখবেন? দেখা গেল যে, আপনি যে সব ব্রান্ডের নাম মনে রেখেছিলেন সেগুলোতে কোন ধরনের আকর্ষণীয় অফার দিলো না। এক্ষেত্রে আপনি সে পণ্যটি পাবেন না। এছাড়া আপনার মনে হতে পারে যে বিজ্ঞাপণ বন্ধ হয়ে গেল তো কি হয়েছে, আমি সেসব প্রতিষ্ঠান ভিডিওগুলো ইউটিউবে দেখব। কিন্তু এটি অসম্ভব নয় কেননা ইউটিউব সে সময় আপনাকে ফ্রিতে আর সার্ভিস দেবে না, এক্ষেত্রে আপনাকে টাকা দিয়ে ইউটিউব ব্যবহার করতে হবে।
বিজ্ঞাপণ বন্ধ হয়ে গেলে বড় বড় অনলাইন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সেবাগুলো আর ফ্রিতে ব্যবহার করা যাবে না। এর মধ্যে যেমন গুগল, ইউটিউব, ফেসবুক ইত্যাদি এর মতো ওয়েবসাইটগুলো। এসব সেবাগুলো ব্যবহার করতে হলে আমাদেরকে সাবস্ক্রিপশন ফি প্রদান করতে হবে। ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে আমরা আমাদের পছন্দ অনুযায়ী কোন টিউন আপলোড করতে পারবোনা। এককথায় অনলাইন প্লাটফর্ম এর সমস্ত জায়গায় আমাদেরকে সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে তারপর ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে।
যদি কোন সময়ের জন্য বিজ্ঞাপণ বন্ধ করে দেয়া হয় তবে আপনি হয়তোবা সেটি জানার জন্য ইউটিউবে চলে যাবেন সে বিষয়ে জানার জন্য। কিন্তু সে সময় ইউটিউবে গিয়ে আপনি কোন ভিডিও দেখতে পাবেন না। কেননা সে সব ভিডিও গুলো ইউটিউবে সার্ভারে রাখার জন্য ফি প্রদান করতে হয়। ইউটিউব ভিডিওতে গুগল বিজ্ঞাপণ দেখানোর মাধ্যমে সেই টাকাটি তুলে থাকে। কিন্তু সে সময় যদি বিজ্ঞাপণ বন্ধ হয়ে যায় তবে সার্ভার চালানোর খরচ উঠানো যাবে না, যে কারণে ইউটিউব চালানোর জন্য আপনার ডিসপ্লে তে সাবস্ক্রিপশন এর জন্য লেখাটি ভেসে উঠবে। কেননা ইউটিউব আপনাদেরকে এতদিন ভিডিও দেখিয়েছে শুধুমাত্র বিজ্ঞাপণ দেখানোর বিনিময়।
সেজন্যই বিজ্ঞাপণ বন্ধ হয়ে যাবার কারণে আপনাকে সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে হবে। সাধারণ মানুষের পক্ষে যেখানে মোবাইলের ডাটা কিনে ব্যবহার করায় অনেক কষ্টকর ব্যাপার, সেখানে মোবাইল ডাটার পাশাপাশি কোন প্লাটফর্মে সাবস্ক্রিপশন ফি দেওয়া অনেকটা বিলাসিতার মত। বিভিন্ন প্লাটফর্মে সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে ব্যবহার করার জন্য অনেক গ্রাহকই ইন্টারনেট থেকে দূরে সরে যাবে। ফলে গুগল ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ হয়ে যেতে বেশি সময় লাগবে না।
অনেকেই মনে করেন ওয়েবসাইট বা টিভিতে বিজ্ঞাপণ দেওয়ার কোন মানে হয়না। তাদেরকে আমি আরও একবার বলব যে বিজ্ঞাপণ না থাকলে আপনি ফ্রিতে এত কিছু ব্যবহার করতে পারতেন না এবং আপনার জীবন এতটা উন্নত হতো না। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনলাইন প্লাটফর্ম এর বিজ্ঞাপণ ভালোবাসি, যদি সেটি আমার মনের মত এবং চাহিদা অনুযায়ী হয়। অনলাইনে বিজ্ঞাপণ শুধুমাত্র আমাদের বিরক্তির কারণই হয় না। বরং অনলাইনে বিজ্ঞাপণ আমাদের জীবনকে অনেকটা সহজ করে দিয়েছে।
বিজ্ঞাপণ আছে বলেই কিন্তু আমারা অনলাইনে আমাদের পছন্দমত বিজ্ঞাপণ দেখতে পারি। যদি অনলাইন থেকে বিজ্ঞাপণ উঠে যেত তবে আমরা আমাদের চাহিদা অনুযায়ী কোন পণ্যের বিজ্ঞাপণ দেখতে পারতাম না। ফলে আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় সেবাটি হয়তোবা অজানাই থেকে যেত।
তো বন্ধুরা, বিজ্ঞাপণ আছে বলেই আমরা অনলাইনে সবকিছু ফ্রিতে ব্যবহার করতে পারছি। যদি বিজ্ঞাপণ না থাকতো তবে অনলাইনের সবকিছু আমাদেরকে টাকা দিয়ে ব্যবহার করতে হত এবং আমরা আমাদের কাঙ্খিত সেবাটি হয়তোবা পেতাম না।
আমার সাইট টা দেখার দাওয়াত রইলো – www.rkraihan.com
3 thoughts on "যদি অনলাইনে কোনো বিজ্ঞাপণ না থাকতো তাহলে আমাদের যেরকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো"