পনি যদি অনেক আগে থেকে ওয়াইফাই রাউটার ব্যবহার করে আসেন তবে অবশ্যই সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার এবং ডুয়াল ব্যান্ড রাউটারসম্পর্কে জানেন, আবার হতে পারে এর মধ্যে কোন একটি এই মুহূর্তে হয়তো আপনি ব্যবহারও করছেন। যদি আপনার রাউটারটি পুরাতন হয় তবে সেটি সিঙ্গেল ব্যান্ড হতে পারে, কিন্তু আজকের আজকের প্রায় যেকোনো মডার্ন রাউটারই ডুয়াল ব্যান্ড হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক কোম্পানি আজকাল ট্রাই ব্যান্ড রাউটার বাজারে আনছে। এই আর্টিকেল থেকে বিভিন্ন ওয়াইফাই ব্যান্ড রাউটার সম্পর্কে জানবো এবং এদের মধ্যে পার্থক্য আর সুবিধা অসুবিধা গুলো সম্পর্কেও অবগত হবো, যাতে নতুন রাউটার কেনার সময় আপনার সঠিক ধারণা থাকে।

সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার

ওয়াইফাই সহ যেকোনো ওয়্যারলেস কমুনিকেসন সিস্টেম অবশ্যই রেডিও ফিকুয়েন্সির উপর কাজ করে। আর বিশেষ করে কমুনিকেসনের জন্য সবচাইতে কমন ব্যান্ড হচ্ছে, ২.৪  গিগাহার্জ ফ্রিকুয়েন্সি ব্যান্ড। পুরাতন সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার গুলো ৮০২.১১জি স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করে, যেটা ২০০৩ সালে প্রথম আমাদের সামনে এসেছিলো। কিন্তু এর সবচাইতে বড় অসুবিধাটি ছিল, এটি মাত্র ৫৪ মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত স্পীড দিতে পারতো।  তবে সৌভাগ্যবসত আজকের দিনের সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার ৮০২.১১এন স্ট্যান্ডার্ড এর উপর হয়ে থাকে, যেটা ৮০০মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত তাত্ত্বিক স্পীড প্রদান করতে সক্ষম। একে সিঙ্গেল ব্যান্ড বলার কারণ হচ্ছে এটিতে মাত্র একটিই রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি ব্যান্ড দেখতে পাওয়া যায়।

২.৪ গিগাহার্জের কিছু সুবিধাও রয়েছে আবার অসুবিধাও রয়েছে। প্রথমত সুবিধা হচ্ছে ২.৪ গিগাহার্জে অনেক ভালো রেঞ্জ পাওয়া যায় এবং সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটারের দাম একটু বেশিই কম। তাছাড়া যেহেতু এটি অনেক পুরাতন ফ্রিকুয়েন্সি ব্যান্ড, তাই প্রায় যেকোনো ডিভাইজ এটিকে সমর্থন করে। কিন্তু লো ফিকুয়েন্সির সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে এটি খুব ভালো স্পীড দিতে সক্ষম নয়। আর বহু ডিভাইজ একই ফ্রিকুয়েন্সি ব্যান্ড ইউজ করার জন্য ২.৪ গিগাহার্জে অনেক বেশি সিগন্যাল জ্যাম দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটারে মডার্ন ফিচার গুলো, যেমন- ডিভাইজ মনিটর, ডিভাইজ অগ্রাধিকার, লেটেস্ট সিকিউরিটি অপশন ইত্যাদি থাকে না।

ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার

আগেই বলেছি, আজকের প্রায় যেকোনো মডার্ন ওয়াইফাই রাউটার ডুয়াল ব্যান্ড হয়ে থাকে, যেটি ৮০২.১১এসি স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করে কাজ করে। এতে ৮০২.১১এন এর ২.৪ গিগাহার্জ ব্যান্ড থাকার পাশাপাশি আরেকটি নতুন এবং আলাদা ব্যান্ড হিসেবে ৫ গিগাহার্জ থাকে। অর্থাৎ আপনার রাউটারটি যদি ডুয়াল ব্যান্ড টেকনোলজির উপর হয়ে থাকে, তবে এটি একসাথে ২.৪ এবং ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড ট্র্যান্সমিট করে। আপনার ডিভাইজ যদি ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড সমর্থন করে, তবে সেটা রাউটারের ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডের সাথে কানেক্টেড হয় এবং ফাস্ট স্পীড কানেকশন তৈরি করে। আর পুরাতন ডিভাইজ গুলো ২.৪ গিগাহার্জ ব্যান্ডের উপরই কাজ করে, যেটার স্পীড অনেক স্লো কিন্তু রেঞ্জ অনেক বেশি। আপনি যদি সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার কেনেন, সেক্ষেত্রে আপনি হয়তো ২.৪ গিগাহার্জ ব্যান্ড পাবেন, অথবা ৫ গিগাহার্জ, কিন্তু ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার আপনাকে একসাথে দুইটিই ব্যবহার করার সুবিধা প্রদান করবে।

বর্তমান মার্কেটে ট্রেন্ড এই রাউটার আপনাকে খুব বেশি চার্জ করবে না, সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটারের দামের সাথে তুলনা করতে গিয়ে এর দাম প্রায় মাঝারি পর্যায়ের, তবে অনেক বেশি দামি রাউটারও বাজারে রয়েছে। আর আজকের প্রায় সকল মডার্ন ডিভাইজ গুলোই ৫ গিগাহার্জ সমর্থন করে, তাই একে তো এতে হাই স্পীড পাওয়া সম্ভব আর দ্বিতীয়ত সিগন্যাল জ্যাম হওয়ার ভয়ও থাকে না। তাছাড়া ডুয়াল ব্যান্ড রাউটারে অবশ্যই সিঙ্গেল ব্যান্ড হতে বেশি ভালো এবং মডার্ন হার্ডওয়্যার ব্যবহৃত হয়।

কিছু অসুবিধা হচ্ছে, ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার ধীরেধীরে অনেক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, ফলে ২.৪ গিগাহার্জের মতো ৫ গিগাহার্জ ডিভাইজও অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর এতে সিগন্যাল জ্যাম প্রবলেম সৃষ্টি হচ্ছে। যদিও ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড অনেক বেশি স্পীড সমর্থন করে, তারপরেও একসাথে অনেক গুলো ডিভাইজ কানেক্ট করলে স্পীড ভাগ হয়ে যায়। সাথে ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডে ২.৪ গিগাহার্জের মতো ভালো রেঞ্জ পাওয়া যায় না, দেওয়াল, দরজা, আর ফার্নিচারে সহজেই সিগন্যাল বাঁধা পেয়ে যায়। মানে আপনার রাউটারটি যদি ভিন্ন রুমে থাকে আর আপনার ডিভাইজ যদি আরেক রুমে থাকে তবে সিগন্যালে অনেক সমস্যা দেখতে পাবেন।

ট্রাই ব্যান্ড রাউটার

আজকের দিন থেকে ঠিক কয়েক বছর আগে এই ট্রাই ব্যান্ড রাউটার বাজারে উদয় হয়, যেটার মান শুনেই হয়তো বুঝতে পারছেন এতে তিনটি ব্যান্ড রয়েছে। ডুয়াল ব্যান্ড রাউটারের মতো এতে দুইটি আলাদা ব্যান্ড—২.৪ গিগাহার্জ এবং ৫ গিগাহার্জ রয়েছে, কিন্তু তিন নাম্বারে কোন আলাদা ফ্রিকুয়েন্সি ব্যান্ড না থেকে এতে আরেকটি ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড রয়েছে। এই রাউটারের ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড গুলো গিগাবিট স্পীড সমর্থন করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন একসাথে দুইটি ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড? দেখুন, রাউটারের সাথে যতো গুলো ডিভাইজ কানেক্ট হবে, স্পীড স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিভাইজ গুলোর মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যাবে। ধরুন আপনি পুরাতন ডিভাইজ গুলোকে ২.৪ গিগাহার্জের সাথে কানেক্ট করে রেখেছেন, এবং ৫  গিগাহার্জ ব্যান্ডে আপনার সকল মডার্ন ডিভাইজ সাথে আপনার টিভি কানেক্ট করা রয়েছে। এখন ধরুন আপনি টিভিতে ৪কে ভিডিও স্ট্রিম করছেন, যেটাতে অনেক হাই ব্যান্ডউইথ প্রয়োজনীয়। তো এই অবস্থায় আলাদা ডিভাইজ গুলো ভালো স্পীড পাবে না।

এখানে ট্রাই ব্যান্ড রাউটারের আরেকটি ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড আপনাকে আলাদা গিগাবিট স্পীড প্রদান করবে। তবে সিঙ্গেল ডিভাইজে আপনি ডাবল স্পীড পাবেন না। মনে করুন আপনার ট্রাই ব্যান্ড রাউটারটি ২.৪ গিগাহার্জ ব্যান্ডে ৮০০মেগাবিট/সেকেন্ড, ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড ১; ১.৩ গিগাবিট/সেকেন্ড, এবং ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড ২; ১.৩ গিগাবিট/সেকেন্ড সমর্থন করে। এখন আপনি যদি ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডে ১টি ডিভাইজ কানেক্ট করেন তবে সেটাতে ১.৩+১.৩= ২.৬ গিগাবিট/সেকেন্ড স্পীড সমর্থন করবে না। কিন্তু একাধিক ডিভাইজ কানেক্ট করলে আর কোন ডিভাইজ যদি হাই ব্যান্ডউইথ ডিম্যান্ড করে, সেক্ষেত্রে সকল ডিভাইজ গুলো ভালো স্পীড পাবে। আশা করছি ব্যাপারটি বুঝাতে পেরেছি।

তো কোনটি কিনবেন?

দেখুন আমি বরাবরের মতোই আপনাকে কমপক্ষে একটি সস্তা হলেও ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার কেনার পরামর্শ করবো—আজকের দিনে সত্যিই এটি প্রয়োজনীয়, যেখানে আমাদের ডিভাইজ অনেক বেড়ে গেছে। তবে আপনার ইন্টারনেট স্পীড যদি তেমন ফাস্ট না হয় আর আপনি হয়তো বড় জোর ১-২টি ডিভাইজ কানেক্ট করবেন, সেক্ষেত্রে সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটারেও আপনার কাজ চলে যাবে। যদি বাজেট একেবারেই লো হয়, তবে সিঙ্গেল ব্যান্ড ছাড়া কোন উপায় নেই, কিন্তু তারপরেও আপনি সাজেস্ট করবো একটু বাজেট বাড়িয়ে ডুয়াল ব্যান্ড কিনে ফেলতে। ট্রাই ব্যান্ড রাউটার কি কেনা উচিৎ? হ্যাঁ, অবশ্যই কেনা উচিৎ। যদি আপনার অনেক ডিভাইজ একই নেটওয়ার্কে কানেক্ট করার প্রয়োজন হয় এবং আপনার ইন্টারনেট স্পীড অনেক ফাস্ট হয়, সেক্ষেত্রে ট্রাই ব্যান্ড আপনাকে আলাদা সুবিধা প্রদান করবে। কিন্তু ট্রাই ব্যান্ডের সবচাইতে বড় অসুবিধা হচ্ছে এর দাম প্রচণ্ডই বেশি। আর আমাদের দেশে গিগাবিট ইন্টারনেট স্পীড ওয়ালা কানেকশন খুব কম জনের কাছেই রয়েছে। তবে লোকাল ফাইল শেয়ারিং করার জন্য ট্রাই ব্যান্ড রাউটার অনেক ভালো স্পীড প্রদান করবে, তারপরেও শুধু লোকাল শেয়ারিং এর জন্য এতো টাকা খরচের প্রশ্নই আসে না (অন্তত আমার কাছে!)।


তো ট্রাই ব্যান্ড রাউটার করে মাথা ফাটানোর কোন প্রয়োজন নেই, আজকের ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার গুলোই অনেক ভালো সুবিধা প্রদান করে থাকে। যদি আপনার অত্যন্ত ফাস্ট ইন্টারনেট না থাকে তবে ডুয়াল ব্যান্ড রাউটারই যথেষ্ট! তবে আপনি কি ট্রাই ব্যান্ড রাউটারে আপগ্রেড করতে চান?—হ্যাঁ অবশ্যই করা প্রয়োজনীয় যদি আপনার অনেক ডিভাইজ কানেক্ট করার থাকে। নিচে আমাদের টিউমেন্ট করে আপনার বর্তমান রাউটার বা কি ধরনের রাউটার কিনতে চান সে সম্পর্কে জানান।

প্রথম প্রকাশিত: ourtechbd.com

সকল প্রকার প্রযুক্তির টিপস, ট্রিক পেতে আমার সাইটে ঘুরে আসবেন   ourtechbd.com

16 thoughts on "সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার, ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার, ট্রাই ব্যান্ড রাউটার—আপনি কোনটি কিনবেন? বিস্তারিত! (মেগাটিউন)"

  1. Shadhin Author says:
    সুন্দর পোষ্ট 🙂
    1. RashedZ Contributor says:
      shadin bhai apnakee dkhi na j?
    2. MH Contributor says:
      citar kore ses porjonto tunership haralen
  2. oreo Contributor says:
    nice…..post
  3. shaon123 Contributor says:
    Thanks…
  4. MD MOFAZZAL HOSSEN Contributor says:
    Copy from techtunes
  5. Niloy Sha Contributor says:
    good post
  6. Nibir Contributor says:
    thx,,,,nice post
  7. munnabd93 Contributor says:
    vie black e phone kinar kono link thakle janan plz
  8. Bappy Contributor says:
    রানা ভাই আমি ১টা পোস্ট করছি।যদি ভালো লাগে আমাকে টিউনার করুন।ধন্যবাদ
  9. R.B. Rifat Contributor says:
    আমার। tp link রাউটার টার কান্টেকশন থাকে ঠিক ই কিন্তু কিছু ক্ষন পর পর নেট #ডাটা চলে না,,, রাউটার off করে on করলে ঠিক হয়।।।। এখন কি করতে পারি।। যাতে নেট কানেক্টশন না যায়।।।।
  10. Sefat05 Contributor says:
    সুন্দর পোস্ট…?
  11. Sefat05 Contributor says:
    সুন্দর পোস্ট… ?
  12. ajoy Author says:
    vai amar grame 512 kbps speed 5-6 jon connect korbo kon router kinle valo hoy janaben plz

Leave a Reply