থানায় কোনো অভিযোগকারী ব্যক্তি অভিযোগ দায়ের করলে তা প্রত্যাখ্যান করার এখতিয়ার আমাদের দেশের বিদ্যমান ও বর্তমান কোনো আইনে নেই। পুলিশ স্টেশন বা থানায় মামলা বা অভিযোগ দায়েরের কথা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় উল্লেখ থাকলেও পুলিশ বাহিনীর বাইবেল বলে পরিচিত পুলিশ রেজুলেশন্স বেঙ্গল, ১৯৪৩ (পিআরবি)-এর ২৪৪ নম্বর প্রবিধানে অভিযোগ গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। পিআরবি-এর ২৪৪ (ক) প্রবিধানে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, “A first information shall be recorded in respect of every cognizable complaint preferred before the police whether prima-facie false or true, whether serious of petty, whether relative to an offence punishable under the Indian penal code (বাংলাদেশে বিদ্যমান দণ্ডবিধি) or any special or local law…” অর্থাৎ আমলযোগ্য প্রত্যেক অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশের সামনে প্রদত্ত প্রথম তথ্য রেকর্ড করতে হবে সেটা প্রাথমিকভাবে সত্য হোক বা মিথ্যা হোক কিংবা গুরুতর হোক বা ক্ষুদ্র হোক অথবা দণ্ডবিধি বা অন্য কোনো স্পেশাল বা আঞ্চলিক আইনের অধীন শাস্তিযোগ্য যাই হোক না কেন। পিআরবি-এর এই প্রবিধানে মামলা গ্রহণ বা রেকর্ড করার বাধ্যবাধকতায় শব্দ ‘Shall’ ব্যবহার করা হয়েছে।

ব্যতিক্রম : ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ৩৪ ধারা কিংবা পৌর, রেলওয়ে বা টেলিগ্রাফের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের জন্য তা প্রযোজ্য হবে না। এ বিষয়ে প্রবিধান ২৫৪-এ বিস্তারিত উল্লেখ আছে। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে থানায় যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে কেউ মামলা করতে পারবে কি না? উত্তর হলো হ্যাঁ। তাহলে আবারও প্রশ্ন জাগতে পারে যে, এভাবে মামলা হলে অগণিত মামলা হবে কি না? এর উত্তরে বলা যায়, অগণিত মামলা হবে সাধারণ দৃষ্টিতে। কিন্তু গভীর দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় যে, যেকোনো তথ্য মামলা হিসেবে রেকর্ড করার কথা আইনে বলা হলেও সব মামলার তদন্ত নাও হতে পারে। কারণ, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৭ (১) (গ) ধারায় বলা হয়েছে যে, পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে যদি এটা প্রতীয়মান হয় যে, মামলাটির পর্যাপ্ত ভিত্তি নেই, তাহলে তিনি মামলাটির তদন্ত করবেন না। আবার দণ্ডবিধিতে উল্লিখিত ২১১ ধারায় মিথ্যা মামলা দায়েরের পালটা ব্যবস্থা রাখার ফলে থানায় মামলা রেকর্ড করার সুবিধাটিকে Cheque and balance করা হয়েছে। কিন্তু আইনের কোনো বিধানে পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা সাব-ইন্সপেক্টরকে মামলা না নেওয়ার ক্ষমতা বা এখতিয়ার দেওয়া হয়নি। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় এজাহার করা বা দায়েরের পদ্ধতি উল্লেখ থাকলেও থানার ডিউটি অফিসার বা অন্য যেকোনো সাব-ইন্সপেক্টর বিভিন্ন অজুহাতে মামলা গ্রহণ না করে থাকেন। যেমন- ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এখন থানায় নেই ইত্যাদি। কিন্তু আইনে এ ধরনের কোনো অজুহাতের সুযোগ দেয়নি। অর্থাৎ পিআরবি-এর ২০৭ (গ) ধারায় পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, যখন কোনো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং জুনিয়র সাব-ইন্সপেক্টর অনুপস্থিত বা অসুস্থ থাকেন, তখন ফৌজদারি কার্যবিধির ৪ (ধ) ধারা অনুসারে সিনিয়র অ্যাসিসট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর থানার চার্জ এজিউম এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার যেকোনো কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারবেন। Unavoidable পরিস্থিতি ছাড়া তিনি কখনও তদন্ত করতে পারবেন না। এমনকি সাব-ইন্সপেক্টর যদি অনুপস্থিত হন, তাহলে তিনি আমলযোগ্য অপরাধের কোনো তথ্য পাওয়ার পর প্রাথমিক পদক্ষেপ অর্থাৎ তথ্যটিকে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করবেন। যদি সাব-ইন্সপেক্টর থানার সীমানার কোনো এলাকায় থাকেন, তাহলে অ্যাসিসট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর অভিযোগকারীকে তৎক্ষণাৎ এজাহারের একটি কপিসহ সাব-ইন্সপেক্টরের কাছে পাঠাবেন। শুধু সাব-ইন্সপেক্টর তার এখতিয়ার থেকে অনুপস্থিত বা অসুস্থ থাকলে সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর নিজেই তদন্তভার গ্রহণ করবেন। আইনের কোনো বিধানে পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা সাব-ইন্সপেক্টরকে মামলা না নেওয়ার ক্ষমতা বা এখতিয়ার দেয়া হয়নি। থানায় মামলা না নেওয়ার অপরাধে যে শাস্তি হতে পারে তা পুলিশ আইন, ১৮৬১- এর ২৯ নম্বর ধারায় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে।

থানায় মামলা গ্রহণ না করার অপরাধ ও শাস্তি : ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ২৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো পুলিশ কর্মচারী নিম্নলিখিত রূপে যেকোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়, যথা: 
১. কর্তব্যচ্যুতি (Violation of duty)- কোনো নিয়ম বা রেজুলেশন স্বেচ্ছাকৃত ভাবে অমান্য করা ও গাফিলতি এবং পূর্ণভাবে তা পালনে শৈথিল্য করা।
২. উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কোনো বৈধ আদেশ ইচ্ছাপূর্বক অমান্য করা বা গাফিলতি পূর্বক তা পালনে শৈথিল্য করা। তবে তাকে বিচারার্থে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সোপর্দ করা চলবে এবং বিচারে অপরাধী প্রমাণিত হলে ৩ মাসের বেতনের সমপরিমাণ জরিমানা অথবা তিন মাস পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা উভয়বিধ দণ্ড হতে পারে। আইনের এই বিধান মামলা না নেওয়ার অপরাধকে শাস্তিপ্রদানের মাধ্যমে রোধ করার ব্যবস্থা করেছে। উল্লেখ্য, এখানে নিয়ম (Rule) বা রেজুলেশন লঙ্ঘন বা গাফিলতি বলতে পিআরবি-এর মামলা গ্রহণ সংক্রান্ত ২৪৪ নিয়মের লঙ্ঘনকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ থানায় পুলিশ মামলা গ্রহণ করেননি, এটা প্রমাণিত হলে তার উপরিউক্ত শাস্তি হবে।

থানায় মামলা গ্রহণ না করার প্রমাণ কীভাবে করবেন : থানায় মামলা না নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য থানায় কমপক্ষে তিনজন ব্যক্তি যাওয়া উচিত এবং থানায় প্রবেশ ও প্রস্থানের সময় উল্লেখসহ কর্তব্যরত ডিউটি অফিসারের নাম ভালোভাবে জানতে হবে এবং ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ৪২ ধারা অনুসরণ করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেক জেলায় পুলিশের বিরুদ্ধে পিআরবি-এর আচরণভিত্তিক অপরাধের শাস্তিপ্রদানের জন্য ‘স্পেশাল পুলিশ ট্রাইব্যুনাল (Special Police Tribunal) গঠন করা দরকার এবং সঙ্গে সঙ্গে একটি থানায় কী অধিকার বিদ্যমান আছে, সে সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে।

মামলার কপি সরবরাহে বাধ্যবাধকতা :থানায় মামলা হয়েছে কি না-এ ব্যাপারে সাধারণ জনগণ জানার জন্য থানায় গিয়ে মামলার কপি চাইতে গেলে বিড়ম্বনায় পড়েন। অথচ সাক্ষ্য আইনের ৭৪ নং ধারা অনুযায়ী, থানায় রক্ষিত রেজিস্ট্রারে রেকর্ডের মামলার কপি যেকোনো ব্যক্তি পদ্ধতিগতভাবে অর্থাৎ আইনগত ফি প্রদানের মাধ্যমে পাওয়ার অধিকারী। কেননা, ওই ধারা অনুযায়ী রেজিস্ট্রারে রক্ষিত মামলা পাবলিক ডকুমেন্ট।

4 thoughts on "আইন জানুন আইন মানুন পর্ব ১০: থানায় মামলা গ্রহণে বাধ্যবাধকতা ও পদ্ধতি"

  1. ontu Author says:
    vaia post gulo onek valo.. but porte onek kosto hoy.. main main concept highlight and para kore likhle aro onek valo hoto..

    thanks for share..

    1. Shakil Contributor Post Creator says:
      Somoyer ovabe Google voice use kore likheci vaiya.porer bar theke cesta korbo.
  2. Abdus Sobhan Author says:
    facebook ar ak writer ar likha golpo tar permission charai aktu youtube channel copy kore video baniyechen sei video te 285K+ view oneke se vhai ke copybazz mone korce ai karone oi video te comment korle channel bole uni google theke niyechen ar sei khane koro writerer nam chilo na akhon kivabe mki bosta neoya jai mane copyright ba cyber crime konta kivabe korte hobe??

Leave a Reply