যাদের বাড়িতে রেফ্রিজারেটর আছে তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো একটি ব্যাপার লক্ষ্য করে থাকবেন।ফ্রিজ থেকে কিছূ বের করার পর যখন দরজা আটকানো হয় তখন যদি আবার সঙ্গে সঙ্গে ফ্রিজের দরজা খোলার চেষ্টা করা হয় তখন অনেকটা শক্ত লাগে।কখনো ভেবেছেন এমন কেন হয়ে থাকে?
আমাদের বাসাবাড়িতে অনেকেরই হয়তো ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটর আছে।সেখান থেকে খাবার বের করে দরজা বন্ধ করার পর হঠাৎ মনে পড়ে আরেকটি জিনিস বের করা বাকি। কিন্তু দ্বিতীয়বার খুলতে গেলেই সেটি বেশ শক্ত লাগে।অনেকে ব্যাপারটি না বুঝে মেকানিক্যাল বা যান্ত্রিক ত্রুটি মনে করে থাকেন। কিন্তু এর পিছনে রয়েছে একটি বিজ্ঞান যেটির নাম থার্মোডাইনামিক্স।
আজকে আলোচনা করবো এ ফ্রিজের দরজা শক্ত হওয়ার ব্যাপারটি নিয়ে। থার্মোডাইনামিক্স বুঝার জন্য কিছু বেসিক সাইন্স জানা লাগবে।
গ্যাসীয় পদার্থের ধর্ম হচ্ছে সেটি যেসব অনু বা এটম নিয়ে গঠিত সেগুলো ছোটাছুটি করতে থাকে। অর্থাৎ গ্যাসীয় পদার্থ স্থির নয়। গ্যাসকে যদি তাপ দেয়া হয় তাহলে সেগুলোর অনুর ছোটাছুটি বেড়ে যায়।যত বেশি পরিমান তাপ দেয়া হয় তত বেশি পরিমানে গ্যাসের অনুগুলো ছোটাছুটি করতে থাকে।
এবার আসা তাপমাত্রার ধর্ম নিয়ে। তাপমাত্রার ধর্ম হচ্ছে সেটি দুটি ভিন্ন তাপমাত্রার বস্তুর সংস্পর্শে আসে তাহলে সেটি মাঝামাঝি তাপমাত্রায় থাকতে চায়।
এর একটি সহজ উদাহরন হলো এই শীতের সময় উত্তপ্ত পানি যখন ঠান্ডা পানিতে মেশানো হয় তখন সেটি মাঝামাঝি তাপমাত্রায় চলে আসে।
তাহলে ব্যাপারটি কি দাঁড়ালো?
তাপমাত্রা দুটি ভিন্ন তাপীয় বস্তুর সংস্পর্শে আসলে সেটি একটা মাঝামাঝি তাপমাত্রায় আসতে চায়।এবং গ্যাস যত কম তাপমাত্রায় থাকে তত এর আয়তন কমে।কারন কম তাপমাত্রায় অনুর ছোটাছুটি কম হয় যেকারনে সেগুলো স্থির অবস্থার দিকে চলে যায়।
এখন জানা যাক যেকারনে রেফ্রিজারেটর দরজা দ্বিতীয়বার খুলতে গেলে শক্ত থাকে
রেফ্রিজারেটরের কাজ হলো এর যে স্টোরেজ থাকে সেটিকে নিন্ম তাপমাত্রায় নিয়ে আসা। আমরা যে ফাঁকা জায়গায় খাবার রাখি এর অপরপাশে ইভ্যাপারেটর কয়েল দিয়ে প্রচন্ড ঠান্ডার ফ্রিওন গ্যাস চলাচল করে।এই প্রচন্ড ঠান্ডায় সেটি তরল অবস্থায় থাকে। এর ফলে যা হয়, ফ্রিজের ভিতরে রাখা জিনিসের তাপমাত্রা আর ফ্রিওন গ্যাসের কয়েলের তাপমাত্রা একটি মাঝামাঝি অবস্থায় আসতে চায়। এর ফলে ফ্রিজে রাখা খাবার ঠান্ডা থাকে।
যখন আমরা ফ্রিজের দরজা খুলি তখন বাইরের গরম হাওয়া ফ্রিজের স্টোরেজে প্রবেশ করে।এই গরম হাওয়ার মধ্যে আছে গ্যাস। যেহেতু ফ্রিজের ভিতরের গ্যাস ঠান্ডা থাকে আর বাইরে থেকে প্রবেশ করা গ্যাস গরম। এর ফলে যা হয় বাইরের গরম হাওয়া ফ্রিজের ভিতরে সংকুচিত হয়ে যায়।কারন গ্যাসের ধর্মই হচ্ছে নিন্ম তাপে এর আয়তন কমা।
এ সংকোচন সৃষ্টি হওয়ার কারন বাইরের গ্যাসের আয়তন ফ্রিজের ঠান্ডায় কমে গেছে। গ্যাসের অনু যত কম তাপমাত্রায় থাকে তত এর আয়তন কমে।এটি একধরেন ভ্যাকুয়াম ইফেক্ট তৈরী হয়।আর এর ফলেই ফ্রিজের দরজা দ্বিতীয়বার খুলতে গেলে শক্ত লাগে।কারন তখন ফ্রিজের ভিতরের এয়ার প্রেসার আর বাইরের পরিবেশের এয়ার প্রেসারে প্রচুর পার্থক্য থাকে।
এই ফ্রিজের দরজা শক্ত হওয়া কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হয়না।কারন গ্যাস একসময় ঠান্ডা হয়ে ফ্রিজের ভিতরে আবার আগের পরিবেশে ফিরে আসে।বাইরে থেকে যে গরম হাওয়া যায় সেটির এটমের ঘনত্ব ফ্রিজের ভিতরের এটমের ঘনত্ব সমান হয়ে যায়।এর ফলে ভ্যাকুয়াম ইফেক্ট ও আর থাকে না।কারন তাপমাত্রার প্রবাহের ফলে একসময় এয়ার প্রেশার ফ্রিজের ভিতরে বাইরে সমান হয়ে যায়।
ফ্রিজের দরজা শক্ত হওয়া গরমকালেই মুলত বেশি দেখা যায়।কারন পরিবেশের হাওয়া অনেক বেশি গরম থাকে।মূলত এই ভ্যাকুয়াম ইফেক্টের জন্যই দ্বিতীয়বার খুলতে গেলে সেটি শক্ত হয়ে থাকে।আর থার্মোডাইনামিক্স এর জন্যই সেটি দীর্ঘ ক্ষন শক্ত হয়ে থাকে না।
আজ এই পর্যন্তই।আশা করি ভালো লাগবে।খুবই সহজভাবে এটি বোঝানোর চেষ্টা করেছি। দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে। ট্রিকবিডির সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
One thought on "রেফ্রিজারেটরের দরজা দ্বিতীয়বার খুলতে গেলে যে কারনে শক্ত থাকে"