হ্যাকিং বিদ্যার হাতেখড়ি শুরু হউক
হ্যাকিং বিদ্যা’টি যতোটা না টেকনিক্যাল এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও নেটওয়ার্কিং সাথে যুক্ত এরও অধিক বিষয়টি মনষত্বাতিক; যদিও কথাটা শুনতে কিছুটা অপরিপক্ক মনে হতে পারে তথাপি “একই অবস্থা ও অবস্থানে থেকে একজন সাধারণ মানুষ এবং হ্যাকারের ভেতর পার্থক্য এই যে সে সিচুয়েশান তথা পরিস্থিতির লজিক্যাল এনলাইসিসের মাধ্যমে Vulnerability তথা দূর্বলতা অনুসন্ধান করতে পারে এবং সেই Vulnerability ইউটিলাইজেশনের মাধ্যমে কার্য সিদ্ধি করতে পারে” – এটি কেবলই যে কোন নেটওয়ার্ক বা কম্পিউটার সিস্টেম হতে হবে তা নয় বরং এটি আমাদের বাস্তবিক জীবনের সর্বক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য; সুতরাং এটা বলা হয়তো খুব অযাচিত হবে না যে “জীবনে সফলতার জন্য কার্যত হ্যাকিং বিদ্যার একটি ইফেক্টিভ ভূমিকা আছে বৈকি”!
হ্যাকিং কি?
যদি প্রথাগত ডেফিনেশনের দিকে যেতে হয় তাহলে হ্যাকিং হলো “কোন সিস্টেম দূর্বলতা অনুসন্ধানে অবৈধ অনুপ্রবেশ” তবে এখানে সিস্টেম বলতে যদিও আক্ষরিকভাবে কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং বোঝানো হয় – তথাপি এই সিস্টেম বলতে যেকোন ব্যবস্থাপনা’কে ইন্ডিকেট করা যেতেই পারে; এটলিস্ট রিয়েল লাইফ হ্যাকারের জন্য বিষয়টা আরও অধিকতর প্রযোজ্য যার প্রকৃষ্ট নির্দশন হলো হ্যাকিং বিদ্যার একদম প্রাথমিক ধাপ তথা “সোস্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং”।
হ্যাকিং শেখার প্রাথমিক উপায়!
যদিও হ্যাকিং শেখার জন্য প্রথাগতভাবে প্রোগ্রামিং এবং প্রবলেম সলভিং সক্ষমতার ওপর অধিক জোর দেওয়া হয় তথাপি ব্যক্তিগভাবে আমি মনে করি হ্যাকিং বিষয়টার প্রাথমিক এবং প্রধান প্রয়োজনীয় অংশ হলো “মনষত্বাতিক উপলব্ধি” তথা সাইকোলজিক্যাল রিয়েলাইজেশান; আপনি যদি হ্যাকার হতে চান তবে মানসিকভাবে আপনাকে এভাবে কনফিডেন্সের সহিত দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করতে হবে যে “আমি একজন হ্যাকার হবো”!
মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে এই ধাপগুলি ইফেক্টিভ ভূমিকা পালন করবে…
হ্যাকিং বিদ্যার মনষত্বাতিক ধাপ
যেকোন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে শান্ত ও ধীরস্থির থাকা >>> ঐ পরিবেশ ও পরিস্থিতি হতে যথাসম্ভব তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করা >>> ঐ সকল তথ্য ও উপাত্ত লজিকের মাধ্যমে এনলাইসিস করা >>> এনালাইসিসের মাধ্যমে সেই সিস্টেম বা পরিস্থিতি যেটাই হউক সেটার দূর্বলতা বা Vulnerability অথবা ফাঁকফোকর খুঁজে বের করা >>> ঐ Vulnerability কিভাবে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন সেটার জন্য পরিকল্পনা করা >>> আপনার পরিকল্পনার মাঝে কোন ত্রুটি আছে কিনা সেটা রিচেইক দেওয়া >>> যদি আপনার প্রাথমিক পরিকল্পনা সফল না হয় তবে সম্ভাব্য কি কি এফেক্ট আসতে পারে সেটার ছক করা >>> ঐসব ছকের প্রতিক্রিয়া মোকাবিলা করে একই সময়ে দ্বিতীয় এবং প্রয়োজনে তৃতীয় ব্যাকআপ প্ল্যান করা >>> সর্বোপরি সফল না হওয়া অবধি চেষ্টা অব্যহত রাখা।
কেমন হ্যাকার হতে চান?
হ্যাকিং বিদ্যার শুরুতেই আপনাকে এটা ডিসাইড করতে হবে যে আপনি কেমন হ্যাকার হতে চান? সেটা হতে পারে White Hat Hackers যারা কিনা নৈতিকভাবে হ্যাকিং প্র্যাকটিস করেন; Black Hat Hackers যাদের হ্যাকিং মোটিভ হলো অনৈতিকতা এবং Gray Hat Hackers যারা তাদের প্রয়োজনীতা অনুসারে নৈতিকতা বা অনৈতিকতায় অস্পষ্ট মানসিকতায় হ্যাকিং প্রক্যটিস করেন যা হ্যাকিং বিদ্যায় নৈতিকতার এক ক্লাসিফিকেশন মাত্র!
যদিও শুনতে হয়তো হাস্যকর মনে হতে পারে হ্যাকিং শিখতে এসে (এটলিস্ট প্রচলিত হ্যাকিং শেখার আগ্রহ) তাদের ক্ষেত্রে এটার গুরুত্ব ততোটা না থাকলেও হ্যাকটিভিস্টেরা যেমন শুধুমাত্র রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়গুলোতে হ্যাকিং প্র্যাকটিস করেন তেমনি Green Hat Hacker যারা কিনা হ্যাকিং বিদ্যাতে অপারদর্শী হয়েও ট্রিকসের প্রতি অধিক নজর দেয় (এরা তেমন মূল্যায়িত নয়),
Blue Hat Hacker যারা সফটওয়্যার বা সিস্টেমের ভার্নাবলিটি ডেভোলপ করেন তেমনি Red Hat Hacker লিনাক্স বেইসড সিস্টেমের ওপর কাজ করে যদিও তাদের অন্যতম লক্ষ্য থাকে Black Hat Hackers দের প্রতিপক্ষ হিসেবে অপরাপর Purple Hat Hacker এরা সিস্টেমের ত্রুটি সংশোধনে কাজ করে থাকে অনেকটাই নীল টুপি পড়া স্পেশালিষ্ট এর মতোই। এছাড়াও Script kiddies / Nation-state hackers / Insider threats এভাবেও হ্যাকার ক্লাসিফিকেশন করা চলে।
ট্রাডিশনাল হ্যাকিং বিদ্যার হাতেখড়ি
মনষত্বাতিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করার পর আপনাকে হ্যাকিং বিদ্যার ক্ষেত্র নির্বাচন করতে হবে অর্থাৎ আপনি কোন প্লাটফর্মে হ্যাকিং প্র্যাকটিস করতে চান? সেটি হতে পারে কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং সিস্টেম, অপারেশন সিস্টেম (OS) ওয়েব এপ্লিকেশন এবং সফটওয়্যার ডিপার্টমেন্ট ইত্যাদি; মূলত আপনি কোন প্লাটফর্মে হ্যাকিং প্র্যাকটিস করতে চান সেটার ওপর নির্ভর করবে আপনার লার্নিং ট্যাকটিস।
হ্যাকিং বিদ্যায় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ
প্রাথমিকভাবে হ্যাকিং শিক্ষার জন্য ভার্নাবিলিটি অনুসন্ধান এবং প্রবলেম সলভিং এর সাথে সাথে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানাটা গুরুত্বপূর্ণ; এক্ষেত্রে শুরু হতে C এবং C++ দিয়ে শুরু করা যেতে পারে; তথাপি অধিকতর ইফেক্টিভ যদিও Python তথাপি C এবং C++ যেহেতু একদম কম্পিউটার সিস্টেম কিভাবে অপারেট হয় সেটার ট্যাকটিস জানা ও বোঝা যায় সেহেতু এটাই প্রেফারেবল।
যদি ধারাবাহিকভাবে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শিক্ষার স্টেপ তৈরী করা হয় তবে C >>> C++ >>> Python [C কিংবা C++ একইসাথে শেখার সাথে সাথেই Python লার্নিং ও প্র্যাকটিস করা যেতে পারে – যদিনা সেটা আপনার শেখার সহিত ফ্ল্যাকচুয়েট না করে] >>> Ruby >>> Perl >>> Assembly >>> Continue [ এখানে Continue বলতে বোঝানো হয়েছে Assembly লার্নিং সমাপ্ত করা মানেই আপনার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শেখার শেষ নয় বরং আরও High Lavel Programming Language শেখা চালিয়ে যাওয়া তথাপি প্রাথমিক ধাপে উল্লেখিত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলো লার্নিং করা উচিত]।
হ্যাকিং শেখার উপকরণ
উপরোক্ত হ্যাকিং বিদ্যার ধাপগুলির সাথে সাথে হ্যাকিং বিদ্যা আয়ত্ত্ব এবং প্র্যাকটিস করতে যেসকল উপাদান ইফেক্টিভ হতে পারে সেটার রিসোর্স যথাসম্ভব দেওয়া হলো:-
Hacking Learning
পরিপূর্ণভাবে নিজেকে একজন হ্যাকার হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন হবে ব্যাসিক লেসনের সেইজন্য
Hacking Lessons গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক ভূমিকা পালন করবে।
Guide
হ্যাকিং বিদ্যা আয়ত্ব করতে দিক নির্দেশনায় প্রয়োজন হবে একটি সঠিক গাইডলাইন সেক্ষেত্রে এই Hacking Learning RoadMap কাজে লাগবে
অনেকেই হয়তো সংশয়ী হতে পারে যে বই পড়ে কি হ্যাকিং শেখা যায়? তবে হ্যাকিং বেইসড বেশ কিছু পিডিএফ ন্যাচারাল ও ট্রাডিশনাল হ্যাকিং বিদ্যা শিক্ষায় ইফেক্টিভ হতে পারে তেমনি পিডিএফ কালেকশন Hacking PDF Library One
Video
সাধারণত ভিডিও দেখে হ্যাকিং প্র্যাকটিস করা বেশ এনজয়েবল হয় কারন এখানে অপ্টিক্যাল কানেকশন থাকে সেক্ষেত্রে হ্যাকিং শিক্ষায় নিম্নোক্ত ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওগুলো আপনার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে
Hacking Learning YouTube Channel List
Google Dorks
Google Dorks এর মাধ্যমে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় হ্যাকিং ইলিমেন্টস বা ওয়েব সার্চ করে কাঙ্খিত বিষয়বস্তু পেতে পারেন Google Dork Collection One
Resources
হ্যাকিং শিক্ষায় রিসোর্স এর ভূমিকা অপরিসীম – আপনার নিকট যতো রিসোর্স তথা তথ্য ও উপাত্ত থাকবে ততোই আপনি সমৃদ্ধ হ্যাকার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবেন।
Deep & Dark Web
হ্যাকিং শিক্ষায় ডিপ ওয়েব ও ডার্ক ওয়েব সার্ফিং এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ এবং এক্সপোরেশান করার প্রয়োজন হতে পারে।
Malware
Malware শুনলেই হয়তো ভয় লাগে তথাপি হ্যাকিং বিদ্যায় Malware এর ভূমিকা বিদ্যমান; আপনার হ্যাকিং প্যাকেজটি আদতে Malware হিসেবে ভিক্টিমের সিস্টেম ইনস্টল পূর্বক সেটার এক্সেস গ্রহন এবং নিয়ন্ত্রণ করতে এটা অত্যাবশ্যকীয় বটে; উদাহরণস্বরূপ এখানে Android Malware Sample উল্লেখ করা হলো
Spamming
অবশ্যই Spamming এবং Hacking এক নয় তবে হ্যাকিং শিক্ষায় Spamming এর গুরুত্বপূর্ণ আছে
Hacker & Spammer Team
হ্যাকার হওয়ার জন্য নিত্য আপডেট এবং মোটিভেশান বা কমিউনিকেশানে হ্যাকিং ও স্প্যামিং টিম এর সহিত আপ-টু-ডেট থাকাতে পারেন
হ্যাকিং শিখতে কেমন ডিভাইস প্রয়োজন?
অবশ্যই হ্যাকিং শেখার জন্য একটি মোটামুটি উন্নত কনফিগারেশনের কম্পিউটার থাকা উচিত তবে এমন নয় যে কম্পিউটার ছাড়া হ্যাকার হওয়া যাবে না; সহজভাবে “হ্যাকিং বিদ্যাটিই যেখানে সম্পূর্ণ ব্রেইন এর খেলা” সেখানে একটি ডিভাইস না থাকলেই হ্যাকার হওয়া যাবে না এমনটা ভাবা নিতান্তপক্ষে অনুচিত; বর্তমানে এনড্রোয়েড মোবাইল হতেও আপনি হ্যাকিং শেখার শুরু করতে পারেন এবং পরবর্তী প্রফোশনাল বা প্যাশনেটেড হ্যাকার হওয়ার পূর্ণতায় একটি কম্পিউটার ম্যানেজ করতে পারেন।
হ্যাকার মানেই কি এনোনিমাস?
এটি দারূণ প্রশ্ন যে “হ্যাকার হলেই কি তিনি এনোনিমাস হবেন?” যার উত্তর “হ্যা/না” কিংবা “হ্যা এবং না উভয়ই একইসাথে” যা মূলত নির্ভর করবে কোন প্রেক্ষাপটে ও প্লাটফর্মে কোন উদ্দেশ্য আপনি হ্যাকিং বিদ্যা প্র্যাকটিস করছেন!
হ্যাকিং শেখার সম্পূর্ণ গিটহাব রিপোজিটরী লিংক:-
Hacking Learning Repositories (H4ck3R)
কনক্লুশন
সবিশেষ এটা বলায় হয়তো কোয়াইট এনাফ হতে পারে হ্যাকিং আমাদের জীবনে এমন একটি পার্ট বা অংশ যেটা থ্রিল এর সাথে সাথে জীবনে নৈতিকতা রাখলে সফলকাম হতে অনেকটাই সাহায্য করবে – অনেকটাই একজন বুদ্ধিমান ব্রেইন বন্ধু এর মতোই!
ফেসবুক আমন্ত্রণ রইলো:-Humayun Shariar Himu
সকলের জন্য শুভকামনা রইলো।
2 thoughts on "হ্যাকিং বিদ্যার হাতেখড়ি শুরু হউক"