আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ
প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা আশা করছি আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে আপনারা সকলেই ভাল আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি এবং সুস্থ আছি আলহামদুলিল্লাহ।
আপনারা সকলেই জানেন কালকে থেকে পবিত্র রমজান শুরু হতে চলেছে এবং আজকে রাতে আমাদের সেহরি খেতে হবে এবং তারাবির নামাজ ও আজকে রাতে থেকেই পড়তে হবে । বলতে কষ্ট হলেও সত্যি যে করোনা ভাইরাসের জন্য এবার আমাদের বাসায় বসেই তারাবি নামাজ পড়তে হবে। কেননা জীবন বাঁচানো ফরজ । জীবন আগে, তাছাড়া বিপদ দেখে দিলে আল্লাহ তায়ালা সর্তকতা অবলম্বন করতেও বলেছেন ।
তো এখন এসব কথা বাদ দিয়ে মূল কথায় আসা যাক।
তারাবির নামাজ নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যে অনেক রকম প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে আজকের পোস্টটি সেইসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ।
আজকে আমরা তারাবি নিয়ে পাঁচটি প্রশ্ন তুলে ধরব এবং তার সমাধান করার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ তো চলুন শুরু করা যাক।
১। তারাবির নামাজ না পড়লে রোজা হবে কি?
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন আসলে তারাবি ফরজ নামাজ নয় এটি একটি সুন্নত। আর রোজা রাখা ফরজ এখন আপনি যদি রোজা রাখেন কিন্তু তারাবির নামাজ না পড়েন তাহলে হয়তো আপনার রোজা হয়ে যেতে পারে কিন্তু আপনি সুন্নতের বরখেলাপ করলেন আর সুন্নত না মানা কত বড় গুনাহ সেটা আমরা সকলেই জানি। তাই আমার মতে রোজা রাখলে তারাবির নামাজ অবশ্যই পড়া উচিত।
২। তারাবি কয় রাকাত পড়তে হবে?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত একখানা হাদিস রয়েছে। এটা এসেছে আবু বকর ইবনে শাইবা গ্রন্থে এবং সাহাবী ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু পর্যন্ত আজও অব্দি ২০ রাকাত তারাবির নামাজ চলে আসছে ।
এখানে কথা আছে যারা আবার ৮ রাকাত মানে তাদের সাথে আমার কোন ঝগড়া লাগানোর ইচ্ছা নাই আপনি আপনার মতো চলেন আর যারা ২০ রাকাত নামাজ আদায় করে তাদের তাদের মত চলতে দিন। অযথা ঝগড়া-ফাসাদ করবেন না।
৩। তারাবির নিয়ত কিভাবে করতে হবে?
আসলে নিয়ত বিষয়টা মনে মনে বললেই হয়ে যায় আপনি যদি নামাজের আগে বলে নেন যে আমি দুই রাকাত তারাবির নামাজের জন্য নিয়ত করছি তাহলেই আপনার নিয়ত হয়ে গেলো তবে আপনি যে কাজটা করতে পারেন সেটা হচ্ছে আরবিতে পড়া উত্তম বাংলার থেকে।
তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন তারাবির নিয়ত বাংলাতে না করে আরবিতে করতে। হ্যাঁ যদি আরবিতে আপনার সমস্যা হয় বা মুখস্ত না থাকে তাহলে বাংলাতে পড়তে পারেন এতে কোন সমস্যা নেই।
৪। তারাবি কোন সূরা দিয়ে পড়তে হবে?
এটা সাধারনত অনেক মানুষই জিজ্ঞাসা করে থাকে এটার সহজ উত্তর হচ্ছে আপনি যে কোন সূরা দিয়ে তারাবির নামাজ আদায় করতে পারবেন এখানে কোন নির্দিষ্টতা দেওয়া নেই ।
আপনি চাইলে সাধারণ নামাজ যেভাবে আদায় করতেন ঠিক একই সূরা দিয়ে তারাবির নামাজ আদায় করতে পারবেন।
৫। কয় রাকাত পরপর দোয়া দোয়া পড়তে হবে?
এ বিষয়ে আপনি যদি দোয়া সবার শেষে করেন তাহলে কোন সমস্যা নেই তবে যদি আপনি তারাবি নামাজের সময় চার রাকাত পর পর বিরতি নিয়ে দোয়া-দরুদ পড়েন বা একটু বিশ্রাম নেন সেটা সবচেয়ে ভালো হয়। এটা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন।
আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভাল লেগেছে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করবেন যাতে তারাও এসব জেনে উপকৃত হতে পারে এবং নিজেদের মধ্যে এসব বিষয় নিয়ে কনফিউশন না থাকে। আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
হজরত সায়েব বিন ইয়াজিদ (রা.) বলেন, আমরা উমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-এর যুগে ২০ রাকাত এবং বিতর পড়তাম। (মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, বাইহাকি ২/৩০৫ (সনদ সহিহ) তাবেয়ী রুফাই বিন মেহরান যিনি ‘আবুল আলীয়া’ নামে প্রসিদ্ধ, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের মাত্র দুই বছর পর ইসলাম গ্রহণ করেন এবং হজরত উমর (রা.)-এর পেছনে তিনি নামাজ পড়েন। তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ উস্তাদ সাহাবি হজরত উবাই বিন কা’ব (রা.)-এর ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, হজরত উমর (রা.) হজরত উবাই (রা.)-কে রমজানে লোকদের নিয়ে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, লোকজন দিনভর রোজা রাখে, কিন্তু তারা সুন্দরভাবে কোরআন পড়তে পারে না, তাই আপনি যদি রাতে তাদের নামাজে কোরআন পড়ে শোনাতেন! তখন তিনি বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! জামাতবদ্ধভাবে কোরআন শোনানোর এ পদ্ধতি তো আগে ছিল না। তিনি বললেন, আমি জানি, তবে তা খুবই উত্তম। এরপর সাহাবি হজরত উবাই (রা.) লোকদের নিয়ে ২০ রাকাত পড়লেন। (আল মুখতারাহ জিয়াউদ্দীন মাকদিসী ৩/৩৬৭,১১৬১)