আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।

ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম

ইসলামের যাবতীয় হুকুম আহকাম পালন পবিত্রতার উপর নির্ভর করে। এজন্যই পবিত্রতাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। এখানে পবিত্রতা বলতে জাহেরী ও বাতেনি উভয় প্রকার নাপাকি হতে পবিত্র হওয়াকে বুঝানো হয়েছে। পবিত্রতার ফজিলত ও উপকারিতা অনেক বেশি।

পবিত্র কোরআন মাজিদে উল্লেখ করা হয়েছে→ নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জন কারী কে ভালোবাসেন (সূরা বাকারা আয়াত ২২২)

রাসুল সালাম বলেছেন→ কোন মুসলিম বান্দা উযুর সময় যখন মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলে তখন তার চোখ দিয়ে অর্জিত গুনাহ সমূহ পানির সাথে অথবা পানি শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়। যখন সে দুই হাত ধৌত করে তখন তার দুই হাতের স্পর্শের মাধ্যমে সব গুনাহ সমূহ পানির সাথে অথবা পানি শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়।

অতঃপর যখন সে তার পা দুখানা ধৌত করে তখন তার দুই পা দিয়ে হাঁটার মাধ্যমে অর্জিত সব গুনাহ সমূহ পানির সাথে অথবা পানি শেষ বিন্দুর সাথে ঝরে যায়, এভাবে সে যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যায়।( সহিহ মুসলিম হাদিস নাম্বার ৬০০)

পবিত্রতা অর্জনের জন্য ইসলামের কিছু সুনির্দিষ্ট পন্থা রয়েছে। যেমন গোসল,অজু, খাওয়ার আগে হাত ধোয়া, দাঁত পরিষ্কার রাখতে মেসওয়াক করা, শরীরের ময়লা লাগলে ধুয়ে ফেলা ইত্যাদি। শুধু ব্যক্তি জীবনেই নয়, সামাজিক জীবনে ও পবিত্রতা অর্জনের দিকে লক্ষ্য রাখতে ইসলাম নির্দেশ দেয়।

রাতে স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে ভোরে ফজরের নামাজের আগেই এবং দিনে সহবাস করলে পরবর্তী নামাজের পূর্বেই স্বামী-স্ত্রী দুজনের গোসল করে নেওয়া আবশ্যক। এ গোসলকে জানাবাতের গোসল বলে এবং গোসল না করা পর্যন্ত নাপাকি অবস্থায় থাকাকে জানাবাতের অবস্থা বা জুনুবী হওয়া বলা হয়।

জানাবত তথা ফরজ গোসলে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই যৌনাঙ্গের পবিত্রতার ব্যাপারে খুবই যত্নবান হতে হবে। স্বামী তার গোপনাঙ্গকে খুব ভালোভাবে ধুয়ে নেবে যেনো চামড়ার মধ্যে বীর্য আটকে থাকতে না পারে। অনুরূপভাবে স্ত্রী ও নিজের গোপনাঙ্গকে ভালোভাবে ধুয়ে নেবে। জানাবাত হতে পবিত্র হওয়ার পদ্ধতিকে ফরজ গোসল বলে।

ফরজ গোসলঃ ফরজ গোসল এই গোসলকে বলা হয় যা করা অপরিহার্য। বালেগ বয়সে নাপাক হলে অর্থাৎ কারো স্বপ্নদোষ হলে স্বামী স্ত্রী মিলনে গোসল ফরজ হয়। আর তা থেকে পবিত্রতা অর্জনের তাগিদ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন→ যদি তোমরা নাপাক হয়ে থাকো, তবে গোসল করো।( সূরা মায়েদাহ আয়াত ৬)

অনেকেই ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম জানেন না, আবার সংকোচে কাউকে জিজ্ঞেসও করতে পারেন না। ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম না জানার কারণে অসংখ্য মুসলিমদের নানা আমল কবুল হয় না। অথচ নামাজের জন্য পবিত্র অর্জন করা ফরজ। আল্লাহ তা’আলা বলেন→ “হে ঈমানদার গণ! তোমরা নামাজের ধারে কাছেও যেয়ো না যখন তোমরা নেশা অবস্থায় মাতাল হয়ে থাকো, যে পর্যন্ত না তোমরা বোঝ যে তোমরা কি বলছো, অথবা যৌন সম্ভোগ করার পরবর্তী অবস্থায়, যতক্ষণ না গোসল করেছ (সূরা আন’নিসা আয়াত ৪৩)

নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য নামাজের বাইরে যে রুকুনগুলো আছে তন্মধ্যে শরীর পাক, কাপড় পাক ও নামাজের জায়গা পাক হওয়ার কথাও আছে। হাদিস আছে যে অপবিত্র শরীর নিয়ে কাপড়ে ও বিছানাপত্রে নামাজ হয়না (মিশকাত হাদিস নাম্বারঃ ২৬২)

যেসব কারণসমূহ গোসল ফরজ হয়

১. স্বপ্নদোষ বা উত্তেজনাবশত বীর্যপাত হলে।
২.স্বপ্নের কথা স্মরণ থাকুক বা না থাকুক শরীরে, কাপড়ে বা বিছানায় বীর্যের চিহ্ন দেখতে পেলে।
৩. নারী-পুরুষ মিলনে সহবাসে, সেক্ষেত্রে বীর্যপাত হোক আর নাই হোক, গোসল ফরজ।

৪. মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব অর্থাৎ হায়েজ বন্ধ হওয়ার পরবর্তী সময়ে গোসল ফরজ।
৫. নিফাস(সন্তান প্রসবের পর যে রক্ত স্রাব হয় তা) শেষ হলে।
৬.ইসলাম গ্রহণ করলে অর্থাৎ নব মুসলিম হলে গোসল ফরজ
৭. উত্তেজনার সাথে কারো বীর্য বের হলে ফরজ গোসল ছাড়া নামাজ হবে না।

গোসলের ফরজ তিনটি

১.একবার গড়গড়া সহিত কুলি করা ফরজ।
২. একবার নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছিয়ে পরিষ্কার করা ফরজ
৩ সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানো ফরজ ।

গোসলের সুন্নত হলো

১. তিনবার গড়গড়া সহিত কুলি করা সুন্নত
২.তিনবার নাকে নরম জায়গা পর্যন্ত পানি দিয়ে পরিষ্কার করা সুন্নত
৩.সমস্ত শরীরে তিনবার পানি দিয়ে ভালো করে ঘষে পরিষ্কার করা সুন্নত।

গোসলের আরো সুন্নত রয়েছে সেগুলো হলো

১. গোসলের নিয়ত করা।
২. গোসলের শুরুতেই দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা।
৩. পরসাব পায়খানা রাস্তা পরিষ্কার করা।
4. শরীরের কোন স্থানে নাপাকি থাকলে তা পরিস্কার করা।
5. ওযু করা
6. পানি জমে থাকে এমন স্থানে গোসল করলে, গোসলের পর সেই স্থান থেকেই সরে গিয়ে পা ধৌত করা।

যার উপর গোসল ফরজ হয়েছে, সে যদি গোসলের একটা ফরজ বাদ দিয়ে শতবার গোসল করে, তবুও তার শরীর নাপাক থেকে যাবে। ফরজ গোসলের সঠিক নিয়মঃ গোসলের পূর্বে পেশাব পায়খানা করে নেওয়া উচিত। ফরজ গোসলের পদ্ধতি হল-

১. গোসলের জন্য মনে মনে নিয়ত করতে হবে।
২.প্রথমে দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করতে হবে।
৩. এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাত দিয়ে লজ্জা স্থান এবং তার আশেপাশে ভালো করে দ্রুত করতে হবে। শরীরের অন্য কোন জায়গায় বীর্য বা না পাক লেগে থাকলে সেটাও ধৌত করতে হবে।

৪. এবার বাম হাতকে ভালো করে ধৌত করতে হবে।

5. তারপর বিসমিল্লাহ বলে ওজুর নিয়মের মত করে ওযু করতে হবে অর্থাৎ বিসমিল্লাহ বলে ডান হাতে পানি নিয়ে উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা, তিনবার গড়গড়া সহিত কুলি করা, তিনবার নাকে পানি দিয়ে নাক ঝেড়ে নেওয়া, কপালের গোড়া হতে দুই কানের লতি পর্যন্ত ও থুতনি নিচ পর্যন্ত, প্রথমে ডান হাত ও পরে বাম হাত তিনবার ধৌত করা। আঙ্গুলে কোন আন্টি থাকলে মেয়েদের হাতে কানে নাকে গহনা থাকলে তা নেড়ে চেড়ে ভিজিয়ে নেয়া, এবং সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা।

৬. অতঃপর প্রথমে মাথায় তিনবার(৩ অঞ্জলি) পানি ঢেলে চুলের গোড়ায় খেলাল করে ভালোভাবে পানি পৌঁছাবে।
৭.এবার সমস্ত শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে তিনবার ডানে তারপর তিনবার বামে পানি ঢেলে ভালভাবে ধৌত করতে হবে, যেন শরীরের কোন অংশ বা কোন লোমও শুকনো যেন না থাকে। গোসল এমনভাবে করতে হবে যাতে বগল, নাবি ও কানের ছিদ্র পর্যন্ত বাহিরের পানি দ্বারা ভিজে যায়। অতঃপর আবার সমস্ত শরীরে পানি ঢালবে।

৮.সবার শেষে একটু অন্য জায়গায় সরে গিয়ে দুই পা তিনবার ভালোভাবে ধৌত করতে হবে।
৯.পুকুর বা নদীতে গোসল করলে সে ক্ষেত্রে মনে মনে নিয়ত করতে হবে এবং পূর্বের মতো দুই হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করতে হবে, এরপর তিনবার কুলি করে নেবে।এরপর নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর লজ্জাস্থান ও তার আশপাশ ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে, এরপর ডুব দিয়ে বা যেকোনোভাবে সমস্ত শরীর ভিজিয়ে নিতে হবে।

মনে রাখতে হবেঃপুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল এবং মহিলাদের মাথার চুল ভালোভাবে ভিজিয়ে নিতে হবে। এই নিয়মে গোসল করার পর নতুন করে আরও ওযু করার দরকার নাই, যদিনা ওজু না ভাঙ্গে। কেননা হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী করীম (সাঃ) ফরজ গোসলের পর আর ওযু করতেন না।( তিরমিজি হাদিস নাম্বারঃ১০৩, মিশকাত হাদিস নাম্বারঃ ৪০৯)

নারী হউক পুরুষ হউক সকলকে রাসূল (সাঃ) পর্দার মধ্যে থেকে গোসল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ কারো সামনে সতর খোলা অবস্থায় গোসল করা যাবে না। তবে একান্ত নিজে নিজে অর্থাৎ কোন বন্ধ গোসলখানায় নিজে নিজে গোসল করলে সে ক্ষেত্রে সমস্যা নেই । ফরজ গোসল বিলম্বিত হওয়ার কারণে যদি নামাজ কাজা হয়ে যায় তাহলে আপনাকে গুনাহগার হতে হবে।

আপনার তীব্র লজ্জা এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য কোনো ওজর নয়। যার কারণে কিনা আপনি নামাজ আদায়ে বিলম্ব করতে পারেন। সুতরাং এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি। তবে নামাজ ছাড়া অন্যান্য কাজ একেবারে নিষেধ না হলেও কোন কাজ করার আগে গোপনাঙ্গ ধুয়ে নেওয়া এবং অজু করে নেওয়ার কথা একাধিক হাদীসে এসেছে।

যেমন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) ফরজ গোসল অবস্থায় পানাহার কিংবা ঘুমানোর ইচ্ছে করলে নামাজের অজুর মত অজু করে নিতেন (সহিহ মুসলিম হাদিস নাম্বার ৩০৫)

Trickbd তে অনেকেই পোস্ট কতে চান কিন্তু করতে পারছেন না। আপনারা ShopTips24.CoM ওয়েবসাইটে পোস্ট করতে পারেন।এখানে একাউন্ট করলেই author।এখানে প্রতি পোস্টের জন্য ৫-৫০ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়।পোস্টের মানের উপর ভিত্তি করে। Shoptips24.Com

আশা করি সবাই সবকিছু বুঝতে পেরেছেন। কোথাও সমস্যা হলে কমেন্ট করে জানাবেন অথবা ফেসবুকে জানাতে পারেন ফেসবুকে আমি

4 thoughts on "সকলে ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম জেনে নিন । লজ্জা নয়, জানা ফরজ"

  1. ®D® Contributor says:
    অনেক ধন্যবাদ
    1. MD Shakib Hasan Author Post Creator says:
      ?
  2. A M Contributor says:
    ৭.এবার সমস্ত শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে তিনবার ডানে তারপর তিনবার ভাই পানি ঢেলে ভালভাবে ধৌত করতে হবে,

    “তিনবার ডানে তারপর তিনবার ভাই পানি…”

    শুধু কুলি করা না কি গড়গড়া সহ কুলি করা??? 🙂

    1. MD Shakib Hasan Author Post Creator says:
      অসংখ্য ধন্যবাদ সবকিছু ঠিক করা হয়েছে।

Leave a Reply