আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ !
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ।
সুপ্রিয় পাঠক ,
আমরা যে এবাদত করি তা আল্লাহর কি কাজে লাগে ?? আর আমরা যদি এবাদত নাই করি তাহলে তাতে আল্লাহর কি ক্ষতি ?
নিম্ন বর্ণিত ঘটনার মাধ্যমে তার সুন্দর ব্যাখ্যা দেওয়া হলো ।
আল্লামা রুমী (রহ:) একটি ঘটনা লেখেন, বাগদাদের সন্নিকটে এক গ্রামে এক ব্যক্তি বাস করতো। লোকটির একদিন স্বাধ জাগলো বাদশার দরবারে গিয়ে তার সাথে সাক্ষাত করবে।
বাদশাও তো আর এ যুগের বাদশাদের মত নয়, অর্ধ দুনিয়ার শাসক । তখনকার মানুষ বাদশার কাছে গেলে কিছু হাদিয়া নিয়ে যেত। উদ্দেশ্য বাদশার একটু সুদৃষ্টি তার উপর পড়ে। লোকটি বাসা থেকে বের হওয়ার আগে তার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করল যে, আমি তো বাদশার দরবারে যাচ্ছি। তার জন্য কোন হাদিয়া তোহফা নেওয়া উচিত।
এখন কি নিতে পারি? লোকটির বসবাস ছিল ছোট্ট একটা গ্রামে। দুনিয়ার কোন খবর তার ছিলো না। তার স্ত্রী তাকে পরামর্শ দিল, আমাদের ঘরে কলসে যে পানি আছে সেটা নিয়ে যাও। রাজ দরবারের লোক জন এমন স্বচ্ছ শীতল ও বিশুদ্ধ পানি পাবে কোথায়? লোকটিও তার স্ত্রীর কথা যৌক্তিক মনে করল। পানি নিয়ে রাজ দরবারে রওয়ানা দিল। তখন তো আর উড়ো জাহাজের যুগ ছিলোনা। লোকটি পায়ে হেঁটেই কলসি মাথায় নিয়ে
রওয়ানা হল। দির্ঘ্য পথ পাড়ি দিতে কলসের উপর ধুলাবালি ভিতরেও পানি ময়লা আর গন্ধ হয়ে গেল। বেচারা গ্রাম্য লোক এসব খেয়াল না
করেই রাজ দরবারে উপস্থিত হয়ে খলিফার সামনে কলসি পেশ করলো।
লোকটি বলল, “হুজুরের জন্য আমার
পুকুরের বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানো এনেছি।”
ভাবলাম আপনার দরবারে এমন পানি কোথায় পাবেন! দয়া করে এটা কবুল করুন।”
খলিফা বললেন, ” আচ্ছ! ঢাকনা সরাও তো দেখি! ”
ঢাকনা সরানো হল, পানি গন্ধ হয়ে গেছে। খলিফা ভাবলেন , “বেচারা নিখাদ ভালবাসা নিয়ে এমন করেছে। তার মন ভাঙা ঠিক হবে না। ”
তাই খলিফা লোকটির কলস ভরে
আশরাফি দিতে নির্দেশ দিলেন। লোকটিও খুব খুশি!
লোকটি যখন রাজ দরবার থেকে ফিরে যাওয়ার অনুমতি চাইলো তখন খলিফা এক নওকর কে
বললেন তাকে কিছু দুর আগায়ে দিয়ে এসো আর দজলা নদীর তীর দিয়ে নিয়ে যাবে।
কিছু দুর আসার পর দজলার অথৈয় পানি দেখে গ্রাম্য লোকটি বলল ওখানে কি?
নওকর বলল, ওটা নদী। চলো নদীর পানি কত সুন্দর দেখবে চলো। নদীর কাছে গিয়ে গ্রাম্য লোকটি নদীর সুন্দর স্বচ্ছ পানী দেখলো এবং কিছুটা পান করল।
আর ভাবতে লাগলো, ” হায়! খলিফার দরবারে কাছে এত সুন্দর পানি আর আমি তার জন্য ময়লা পানি এনেছিলাম। তাহলে খলিফা আমার পানি গ্রহণ করেছে শুধু তার দয়া আর
উদারতার ক্ষাতিরে! আমার পানির তো তার কোন প্রয়োজোনই ছিলোনা। উপরন্তু আমার কলস ভরে আশরাফি দিয়ে দিল! ”
রুমী রহঃ এই ঘটনা শুনিয়ে বলতেন, আমাদের ইবাদতও তেমন যা আল্লাহর কোনই কাজে আসেনা। তিনি আমাদের ইবাদতের মুখাপেক্ষী নন।
আর আমাদের ইবাদতও স্বচ্ছ নির্ভেজাল নয়। বরং তা দুর্গন্ধযুক্ত কিন্তু শুধু আল্লাহর প্রতি ভালবাসার কারণে হয় বলে আল্লাহ আপন দয়ায় তার বদলা দেন। আল্লাহ আমাদেরকে তার হুকুম, নবীজীর তরিকা আর অলি আউলিয়াদের পথ অনুসরন করেএখলাসের সাথে আমাল করার তাওফিক দান করুন।
আমিন….!!
27 thoughts on "আমাদের এবাদত আল্লাহ তাআলার কি কাজে লাগে ? একটি সুন্দর ব্যাখ্যা কাহিনী দ্বারা লেখা হলো , যা পূর্বে পড়েননি । আশা করি অনেক ভালো লাগবে ।"