কয়েক বছর ধরেই নখ আঁকা ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। পোশাক ও চুলের স্টাইলের পাশাপাশি নেইল আর্টের মাধ্যমেও নিজেকে ট্রেন্ডি ও ফ্যাশনেবল হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। প্রতিবছরই ফ্যাশনের বিভিন্ন অনুষঙ্গের মতো নখের এই সাজসজ্জারও পরিবর্তন হয়। রং, নকশা, নখের আকৃতি—সবকিছুতেই আসে নতুনত্ব।প্রতিবছরই নখের রং, নকশা, আকৃতি সবকিছুতেই আসে নতুনত্ব। মডেল: লাবণ্য, সাজ: কিউবেলা, ছবি: সুমন ইউসুফনানা রকম নখের সাজবরাবরের মতো এ বছরও নখের সাজে নতুনত্ব এসেছে। কিউবেলার রূপবিশেষজ্ঞ ফারজানা মুন্নী জানালেন, ‘বর্তমানে নখের ক্ষেত্রে গাঢ় রংগুলো চলছে। একদম একরঙা না করে এগুলোর ওপর নানা ধরনের প্যাটার্ন ও নকশা ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। এ সময়ের জনপ্রিয় তিনটি ডিজাইন হচ্ছে রংধনু, অর্ধেক চাঁদ ও মারবেল আর্ট। একঘেয়েমি কাটাতে চার নখে এক রং ও একটি নখে আলাদা রং করা হচ্ছে। পাশাপাশি এক নখেই ব্যবহার করা হচ্ছে দুইটি রং। এগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে সাজানো হচ্ছে গ্লিটার, বিভিন্ন রঙের পাথর ও ছোট ছোট মুক্তা দিয়ে।’এ বছর আশির দশকের রীতি অনুসরণ করা হবে। আশির দশকে প্রচলিত সাদাকালো জ্যামিতিক নকশা, গ্লিটার, সিকুইন, একরঙা সাদা প্রাধান্য পাবে। চুলের রং ও মেকআপের সঙ্গে মিল রেখে নেইল আর্ট করার প্রবণতা থাকবে এ বছর। ফ্রেঞ্চ টিপ, বোল্ড মেটালিক, রেডিয়েন্ট ওপাল, লেটারিং, ডটেড ডিজিটস, স্পারকাল, ইলেকট্রিক প্রিন্ট, গ্রাফিক লাইনস, মাল্টিকালার স্ট্রাইপসহ বিভিন্ন নকশা চলবে বছরজুড়ে।
কান ও নাক ফোঁড়ানোর প্রথা রয়েছে অনেক দেশেই। তবে বর্তমানে ফ্যাশন সচেতনদের মধ্যে ‘নেইল পিয়ার্সিং’ অর্থাত্ নখ ফোঁড়ানোর চল এসেছে সাজসজ্জার অনুষঙ্গ হিসেবে। ঠোঁট, নাভি, ভ্রু ইত্যাদি ফোঁড়ানোর পর তরুণীরা এখন ভিড়েছে নখ ফোঁড়ানোর দিকে।সুস্থ ও সুন্দর নখে জেল ব্যবহার করে সহজে ফোঁড়ানো যাবে। আলগা নখ ব্যবহার করে কিংবা সরাসরি নখ ফুঁড়িয়ে ব্যবহার করা যাবে কানের দুলের মতো দেখতে ছোট আকারের রিং। তবে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মহল থেকে একটু সর্তক বাণী আছে। তাদের মতে, অনেক দিন ধরে আলগা নখ পরে তা ফোঁড়ালে মূল নখের ওপর চাপ পড়ে এবং সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নখের লাবণ্য নষ্ট হয়ে যায়।তরুণীদের কাছে নখ ফোঁড়ানো বিষয়টি এখন ফ্যাশনের রূপ পেয়েছে। রঙ-বেরঙের নেইল পলিশের সঙ্গে নখে ছোট গোলাকার রিং ঝুলানো রীতিমতো নিজস্ব স্টাইলের পূর্ণতা প্রকাশ করছে। নখ ফোঁড়ানোর নিয়মানুযায়ী প্রথমে নখে জেল কিংবা নেইলপলিশ লাগিয়ে তারপর ফোঁড়ানো হয়। কারণ একবার নখ ফোঁড়ানো হলে নেইলপলিশ দেয়া একটু কষ্টকর বটে। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে কাজটি সহজেই করা যায়।তবে নখ ফোঁড়ানোর ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। অবশ্যই ঘরে বসে নখ ফোঁড়ানোর কাজ করা যাবে না। ভালো মানের পার্লারেএ ব্যবস্থা থাকলে সেখানে নখ ফোঁড়ানোর কাজ সেরে নিতে পারেন। ভুল করেও কোনো সুই দিয়ে নখ ফোঁড়ানো যাবে না। এতে নখ ভেঙে যেতে পারে। এ বিষয়ে প্রফেশনাল কাউকে দিয়ে নখ ফোঁড়াবেন। একবার নখফোঁড়ানো হলে কাজ করার সময় সতর্ক থাকতে হবে। কারণ কোনো কিছুর চাপ পড়লে দুর্ঘটনাবশত নখ ভেঙে যেতে পারে। শিশুদের নখ ফোঁড়ানো থেকে বিরত রাখবেন। নখ ফোঁড়াতে হলে অবশ্য আগাম যত্ন ও নিয়মিত পরিচর্যা প্রয়োজন।এটি ক্ষতিকর নয়
অনেকের মনে এই ধারণা জন্মাতে পারেএটি নখ এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিনা। কিন্তু ডারমাটোলজিস্টদের মতে এটি মোটেও ক্ষতিকর কিছু নয়। তবে বার বার করাটা সব সম্য উচিৎ নয়। একবার করে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর কিছুদিন বাদ দিয়ে আবার করতে পারলে ভালো হয়।যেভাবে করবেনপার্লারে খুব সহজে এবং বেশ কম দামেই নেইল পিয়ারসিং করানো হয়ে থাকে। তবে খুব সাবধানে এই নেইল পিয়ারসিং করা উচিৎ। নতুবা পুরো নখটিই ভেঙ্গে যেতে পারে। বাসায়ও ইচ্ছে হলে এই নেইল পিয়ারসিং নিজে করে নিতে পারেন। একটি বড় মোটা সুঁই বা পিন আগুনে স্টেরিলাইজ করেতা দিয়ে করা যায় তবে খুব সাবধানে করবেন যেন সুঁই আঙুলে না ফোটে এবং নখের বাড়তি কোনো ক্ষতি না হয়। একটি নখে পিয়ারসিং করানো হয়।জুয়েলারিনেইল পিয়ারসিং এর জুয়েলারি দোকানে পাওয়া যায়। যদি না পাওয়া যায় তবে আপনি অর্ডার দিয়ে ছোট করে বানিয়ে নিতে পারেন। পোশাকের সাথে মিলিয়ে এবং নখের রঙের সাথে মিলিয়েএকটি সুন্দর জুয়েলারি আপনার হাতের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে নিতে পারেন।সতর্কতাঃ– বাসায় পিয়ারসিং খুব বেশি বাধ্য না হলে করবেন না। পার্লারে করাই ভালো। এতে নখের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।– নখে জুয়ালারি পরার সময় খুব সাবধানে পড়বেন। কারণ সামান্য অসাবধানতায় নখের পিয়ারসিং নষ্ট হয়ে যাবে।– নখে সর্বক্ষণ জুয়েলারি পড়ে থাকবেন না। কারণ এতে করে কাজে সমস্যা হবে এবং নখের পিয়ারসিংএর ক্ষতি হবে।নখের যত্ননখ সাজানোর পাশাপাশি নখের প্রতি হতে হবে যত্নশীল। কেননা নেইলপলিশ ও রিমুভার ব্যবহার করার ফলে নখের আর্দ্রতা চলে যায়। এ ছাড়া নেইলপলিশের রাসায়নিক দ্রব্যও নখের ক্ষতি করতে পারে। তাই কিছু জিনিস সব সময় খেয়াল রাখা উচিত—* সব সময় ভালো মানের নেইলপলিশ ব্যবহার করা উচিত।* দুই দিনের বেশি নেইলপলিশ নখে রাখা ঠিক না। তাই দু-তিন দিনের মধ্যেই ভালো কোনো রিমুভার দিয়ে নেইলপলিশ তুলে ফেলতে হবে।.* রিমুভার নখের আর্দ্রতা কেড়ে নেয়। তাই ময়েশ্চারাইজারসমৃদ্ধ রিমুভার ব্যবহার করতে হবে।* রিমুভার ব্যবহারের পর কুসুম গরম পানিতে কিছুক্ষণ হাত ভিজিয়ে রেখে ভালো কোনো লোশন লাগাতে হবে।* নখ সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। পারলারে গিয়ে নিয়মিত মেনিকিউর করালে ভালো হয়। এ ছাড়া বাসায় ঘরোয়া পদ্ধতিতেও মেনিকিউর করতে পারেন।* প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।