ধরুন, আপনি ব্যবসার কাজে বাসার
বাইরে আছেন, পরদিন সকালে গুরুত্বপূর্ণ
কোনো উপস্থাপনা আছে। অথচ এই
কাজের জন্যই আপনাকে রাত্রিযাপন
করতে হবে বাসার বাইরে। ভালো ঘুম
দরকার, কিন্তু ঘুম যে আসছে না!
অনেকেরই এমন সমস্যা হয়—নতুন জায়গায়
সহজে ঘুম আসে না। কেন এমন হয়?
যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির
একদল গবেষক এই প্রশ্নের উত্তর
খুঁজেছেন। সমস্যাটির কারণও খুঁজে
পেয়েছেন বলে তাঁদের দাবি।
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল তাঁরা
প্রকাশ করেছেন ‘কারেন্ট বায়োলজি’
নামের একটি পত্রিকায়।
ঘুম বিজ্ঞানীদের কাছে একধরনের
ধাঁধা। সব প্রাণীই দিনের কিছুটা সময়
ঘুমায়। কিন্তু ঘুম কেন এত জরুরি, সেটা
পরিষ্কার নয়। বেশ কয়েক ঘণ্টা শিকার
ও আত্মরক্ষার তৎপরতা বাদ দিয়ে
নিরিবিলিতে ঘুমিয়ে নিতে হয়
পশুদেরও। তবে কিছু প্রাণী আবার এক
চোখ খোলা রেখে ঘুমানোর অদ্ভুত
এক অভ্যাস তৈরি ফেলেছে! বটলনোজ
ডলফিন, সাউদার্ন সি লায়ন, গৃহপালিত
মুরগি এবং বেলুগা তিমি সেসব
প্রাণীর অন্যতম—ঘুমের সময় যাদের
অর্ধেক মস্তিষ্ক ঘুমায়, বাকিটা
জেগে থাকে!
‘স্নুজিং ডাক’ নামের একধরনের হাঁস
এক চোখ খোলা রেখে ঘুমায়। যে
চোখটি খোলা থাকে, সেটি
মস্তিষ্কের যে অংশের সঙ্গে যুক্ত

থাকে, সেটিও ঘুমের সময় দিব্যি
জেগে থাকে! কাজেই ঘুমের সময় যদি
কোনো শিকারি সামনে আসে,
হাঁসটি কিন্তু ঠিকই টের পায় এবং
সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কে সতর্কবার্তা
পৌঁছে যায়। তারপর ওই অবস্থা থেকে
বাঁচার জন্য হাঁসটিকে কী করতে হবে,
সেই নির্দেশনাও পৌঁছে যায়
জায়গামতো।
বিপদের সময় হাঁসের মতো প্রাণীদের
এই অদ্ভুত আচরণ কিন্তু দারুণ উপকারী।
আমরা যখন নতুন কোনো হোটেল বা
কামরায় প্রথমবারের মতো ঘুমাতে
যাই, তখন আমাদের মস্তিষ্কও হয়তো
নতুন ওই জায়গাটিকে বিপজ্জনক
এলাকা ভেবে ঘুমিয়েও সজাগ
থাকে! হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন।
গবেষকেরা মানুষের মাঝেও
ইউএসডব্লিউএস খুঁজে পেয়েছেন।
পুরোপুরি না পেলেও এই বৈশিষ্ট্যের
কিছুটা হলেও পেয়েছেন।
ঘুম নিয়ে যাঁদের গবেষণা করার কাজ,
তাঁরা ভালোভাবেই প্রথম রাতের
প্রভাব (এফএনই) সম্পর্কে সচেতন। এর
কারণ খুঁজতে নেমেছেন গবেষকেরা।
৩৫ জন স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবককে
ঘুমানোর পরীক্ষাগারে নিয়ে টানা
দুই রাত ঘুম এবং মাঝে এক সপ্তাহ
বিরতি দেওয়া হয়। স্বেচ্ছাসেবকদের
রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, হৃৎস্পন্দন,
নিশ্বাস নেওয়া, হাত-পায়ের
নড়াচড়াসহ মস্তিষ্কের উভয় পাশের
কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়। রুমের
ভেতরের শব্দের কারণে তাঁদের ঘুমের
কেমন ব্যাঘাত ঘটে, সেটাও
পর্যবেক্ষণ করে দেখা হয়। এই কাজ
করতে গিয়ে, মস্তিষ্কের দুই অংশের
পার্থক্য না খুঁজলেও সেটা পেয়ে
যান গবেষকেরা। মস্তিষ্কের বাঁ অংশ
আজব ধরনের শব্দের প্রতি বেশি
প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। এক সপ্তাহ
পর দেখা যায়, বাইরের সেসব অদ্ভুত
শব্দের প্রভাব ধীরে ধীরে কমে
আসছে। তখন মস্তিষ্কের উভয় অংশই
সমান প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
এই গবেষণাপত্রের সহলেখক ইউকা
সাসাকি এক সাক্ষাৎকারে
জানিয়েছেন, ‘আমাদের মস্তিষ্কে
সম্ভবত ডলফিন এবং তিমির মস্তিষ্কের
প্রতিকৃতি থাকতে পারে।’ সাসাকি
আরও বলেন, যাঁরা নিয়মিত ভ্রমণ করেন,
তাঁরা তাঁদের মস্তিষ্ককে প্রশিক্ষণ
দিয়ে এফএনই প্রতিক্রিয়াকে পাশ
কাটিয়ে যেতে পারেন। সাসাকির
মতে, ‘আমাদের মস্তিষ্ক “ভীষণ
অনুভূতিপ্রবণ”।’
গবেষক দলের ভবিষ্যৎ গবেষণা হবে
কীভাবে এই এফএনই প্রতিক্রিয়াকে
পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া যায়, তা
নিয়ে। এটা সম্ভব হলে নতুন জায়গায়
গিয়েও মানুষ রাতে ভালো একটা ঘুম
দিতে পারবে বলে তাঁদের বিশ্বাস।
সৌজন্যে আমরাইতো ডট কম

2 thoughts on "ঘুম আসেনা ঘুমও স্বার্থপর।"

  1. Arif Sarkar Contributor says:
    plz rana vai.plz

Leave a Reply