Torrent এর মাথামুন্ডু (পর্ব ১)
কম্পিউটারে ইন্টারনেট চালান অথচ Torrent কি জানেন না এমন মানুষ বোধ হয় খুবই অল্পই আছে। তবে মোবাইল ব্যাবহারকারীদের অনেকেই এখনো জানেন না টরেন্ট কি।
আমি আমার আগের পোস্টে বলেছিলাম টরেন্ট নিয়ে আলোচনা করবো। সেটাই এখন করছি। ১ টা পোস্টে এত কিছু ব্যখ্যা করা যাবে না। তাই দুইটা পোস্ট করছি। দুইটাই একসাথে পোস্ট করছি।
টরেন্ট আসলে কি?
টরেন্ট হচ্ছে যেকোন কিছু ডাউনলোড করার একটা উপায়৷ টরেন্টের মাধ্যমে আপনি প্রায় যে কোন কিছু ডাউনলোড করতে পারেন। নতুন যে কোন মুভি সবার আগে আপ্লোড হয় টরেন্ট সাইটে। মূলত এটাকে আপ্লোড বলে না।(পরবর্তীতে বলছি)
টরেন্ট ব্যাবহার করার একাধিক কারন আছে। প্রধান কারন টরেন্টের মাধ্যমে আপনি সব রকম ফাইল পাবেন। আপনি মুভি, গান, ই-বুক, মিউজিক ভিডিও, টিভি শো সহ সব কিছুই পাবেন টরেন্টে। এরকম কালেকশন একজায়গায় আর কোন সাইট কখনই দিবে না। আরেকটা কথা টরেন্ট কিন্তু কোন ওয়েবসাইট না। গুগলে যেমন আপনি কোন কিছু ডাউনলোডের জন্যে সার্চ দেন টরেন্টও সার্চ দেওয়ার জন্যে কিছু সাইট আছে। সেই সাইটগুলিতে টরেন্ট সার্চ করে আপনি ডাউনলোড করতে পারেন। এসব সাইটে টরেন্ট হোস্ট করা হয়। সয়াবি টরেন্ট শেয়ার করে এখানে। ২য় পর্বে কয়েকটি জনপ্রিয় সাইটের নাম দিয়ে দিবো।
টরেন্ট ব্যাবহারের ২য় কারণ এর ডাউনলোড স্পিড। আপনি টরেন্টের স্পিড গুগল ড্রাইভের থেকেও ভালো পাবেন। গুগল ড্রাইভে যে মুভি বা অন্য কোন ফাইল আপ্লোড দেওয়া হয় তা মূলত গুগলের নিজেদের সার্ভারে জমা হয়। আপনি যখন ডাউনলোড দেন তখন গুগলের সার্ভার আপনার কাছে আপ্লোড করে আর আপনি ডাউনলোড করেন। যেসব সাইটে মুভি ডাউনলোডের সময় স্পীড কম( নেটওয়ার্ক ভালো হওয়া সত্বেও) পান তখন বুঝে নিবেন যে যে সার্ভার থেকে মুভি ডাউনলোড করছেন সেই সার্ভার নিম্নমানের অথবা সেই সার্ভার আপনাকে পূর্ণ গতীতে ডাউনলোড করতে আটকাচ্ছে। কারন তার জিনিস সে দিতেও পারে নাও পারে। সার্ভার কে সহজে বোঝাতে গেলে বলতে হয় এইটা একটা মেমোরি কার্ড তবে সেইটা অনলাইনে আছে। যে কেউ ব্যাবহার করতে পারে তবে তার বিনিময়ে তাকে হয়তোবা টাকা দিতে হয়। সব সার্ভারের লিমিট দেয়া থাকে। গুগল ড্রাইভে যেমন আপনি ১৫ জিবির থেকে বেশি আপ্লোড করতে গেলে আপনাকে স্টরেজ তাদের কাছ থেকে কিনতে হবে। এই লিমিটের বাধা দূর করার জন্যে টরেন্টের আগমন।
এখন আপনি ভাববেন টরেন্টে তো সবচেয়ে বেশি জিনিস আছে। আবার টরেন্ট ফ্রি। তাহলে এর জন্যে নিশ্চই আলাদা শক্তিশালী সার্ভার আছে। যারা ফ্রিতে সার্ভিস দিচ্ছে। কিন্তু এখানেই টরেন্টের মজা। টরেন্টের আসলে কোন সার্ভার নাই। আবার বলতে গেলে টরেন্টের অসংখ্য সার্ভার। কারন টরেন্ট যে ব্যাবহার করে তার কম্পিউটার বা মোবাইলই হচ্ছে সার্ভার। কিভাবে তাইতো?
টরেন্ট যেভাবে কাজ করে-
কল্পনা করেন আপনি এই মাত্র Man of Steel ফিল্মের আসল সিডি বেশ অনেক টাকা খরচ করে কিনে আনলেন। আপনি আপনার কম্পিউটারে সেই ফাইল কপি করলেন। এখন আপনার ইচ্ছা হচ্ছে যে আপনি এই মুভিটা এমন ব্যাবস্থা করতে চান যেনো আর কাউকে না কিনতে হয়। সবাই আপনারটা কপি করে নিতে পারে। আপনি আমাকে মুভিটি দিতে চান। কিন্তু আপনি আছেন ঢাকায় আমি আছি রাজবাড়ী। তাই পেন্ড্রাইভে কপি করে নেওয়ার সুজোগ নেই। আবার গুগল ড্রাইভের জায়গা শেষ আপনার। সেক্ষত্রে আপনি একটা টরেন্ট হোস্ট সাইটে (২য় পর্বে লিংক দিবো) আপনার ফাইল যে কেউ ডাউনলোড করতে পারবে তার পারমিশন দিবেন। অতঃপর ওই সাইট আপনাকে একটা লিংক দিবে। আপনি সেই লিনক টা আমাকে দিবেন। আমি ওই লিঙ্কে গিয়ে মুভিটি ডাউনলোড করবো ডিরেক্টলি আপনার কাছ থেকে। অর্থাৎ আমি যখন ডাউনলোড দিবো তখন আপনার কম্পিউটার আপ্লোড করবে আমার কাছে। তখন আমার ইন্টারনেট যেমন খরচ হবে তেমনি আপনারও হবে। কারন একজন ডাউনলোড দিচ্ছে আরেকজন আপ্লোড দিচ্ছে।
এই ক্ষেত্রে আপনি আপ্লোড দিচ্ছেন। তাই আপনাকে বলা হবে Seeder( সিডার)। আমি ডাউনলোড দিচ্ছি তাই আমাকে বলে হবে লিচার/পির(leecher/peer)।
এখন ধরেন আপনি চাচ্ছেন আপনার অন্য ১০ জন ফ্রেন্ডও মুভিটি ডাউনলোড করুক আপনার কাছ থেকে। এক্ষেত্রে তারাও ওই লিনকে গিয়ে ডাউনলোড দিবে। কিন্তু এখানে সমস্যা হওয়ার কথা। কারন আপনার ইন্টারনেটের আপ্লোড স্পিড ৫ MBPS। তার মানে আমি ডাউনলোড করলে ৫ MBPS স্পিড পাবে। কিন্তু আমার সাথে আরো ৯ জন একই সময় ডাউনলোড দিলে একেকজনের স্পিড মূলত হয়ে যাওয়ার কথা আপনার স্পিডের ১০ ভাগের ১ ভাগ। তাই আমরা ডাউনলোড স্পিড কম পাবো। কিন্তু ব্যাপারটা আরো জটিল।
মনে করুন আমি আপনার মুভিটি(১০ জিবি সাইজের) সবার আগে ডাউনলোড দেওয়া শুরু করলাম। আমার ১ জিবি ডাউনলোড হয়ে গেছে। এখন নতুন ৯ জন লিচার আসলো। তারা তখন শুধু আপনার কাছ থেকে ডাউনলোড করবে না। আমার কাছ থেকেও আমার ডাউনলোড করা ফাইলটুকু ডাউনলোড করবে। এটার জন্যে আপনার পারমিশন দেয়া লাগবে না। এটাই টরেন্টের নিয়ম।
আপনি যে ১ জিবি ডাউনলোড দিয়েছেন সেই টুকুই অন্যদের কাছে আপ্লোড হতে থাকবে। আবার একদিকে আপনার ডাউনলোডও হতে থাকবে। এতে স্পিডের ভারসাম্য থাকবে। তার মানে পরস্পরের সহযোগিতা করেছেন। আবার আপনার ফ্রেন্ডদের(১০ জনেরই) যখন ১ জিবি ডাউনলোড হয়ে যাবে তখন যদি আবার ১০০ জন নতুন ডাউনলোড করতে আসে তখন আপ্লোড দেওয়ার মানুষ কিন্তু ১১ জন। আপনি, আমি আর নতুন ৯ জন যাদের ১ জিবি ডাউনলোড হয়ে গেছে। তাই নতুন ১০০ জনকে আপলোড করবো আমরা ১১ জন। তাদের যখন আবার ডাউনলোড হয়ে যাবে কিছুটা তারাও অন্যদের আপ্লোড করা শুরু করবে।
শুধু আপনি ছাড়া বাকি যারা ডাউনলোড করছে তারা সবাই লিচার, যারা আপলোড করছে তারা সিডার।
ডাউনলোড স্পিড কখন কেমন পাবেন?
উপরের ব্যাখ্যার পর বুঝতেই পেরেছেন বলে আশা করি। তবুও বলি, সিডার যত বেশি হিবে আপনার ডাউনলোড স্পিড তত বেশি হবে। একই সাথে লিচার বেশি হলেও আপনার ডাউনলোড স্পিড বেশি হবে। তবে লিচার যেন সিডারের তুলনার বেশি না হয়ে যায়। রেশিয়ো ১ঃ২ হলেও ভালো স্পিড পাবেন। হোস্ট সাইট গুলোতে সিডার ও লিচারের সংখ্যা দেয়া থাকে। তাই আপনি সার্চ দেয়ার সময় দেখে নেবেন সিডারের পরিমান কি লিচারের থেকে বেশি কিনা বা কাছাকাছি কিনা।
কেন লিচার সিডারের থেকে বেশি হওয়া ভালো নয়? কারন লিচারের আপ্লোড স্পিড কম হয়। তাই তারা অন্যদের সাহায্য করে ঠিকই কিন্তু খুবই কম সাহায্য করে। যেমন আমি ডাউনলোডের সময় আপ্লোড স্পিড একেবারে কমিয়ে দেই সেটিংস থেকে। এতে আমার ডেটা চার্জ কম হয়। তাই লিচারের উপর ভরসা না করাই ভালো। কিন্তু সিডাররা ফুল স্পিডে আপ্লোড দেয়। তাই সিডার বেশি হলে সর্বদা ভালো। কোন ফাইলের ৬০ জন সিডার আর ১৫ জন লিচার থাকলে আপনি গুগল ড্রাইভের থেকে ভালো স্পিড পাবেন। মূলত অনেকেই ফাইল টরেন্ট থেকে ডাউনলোডের পর ফাইলটির হিস্টোরি ডিলেট করেন না। ফলে যখন কম্পিউটার চালু থাকে তখন ওই ফাইলটা আপলোড হতে থাকে অন্য কারো কাছে। এভাবেই কাজ করে টরেন্ট।
সমস্যা:
নতুন কোন মুভি রিলিজ হয় তখন সবাই মুভিটি ডাউনলোড করে। ফলে সিডার বেশি থাকে। ফলে স্পিড বেশি পান। কিন্তু আস্তে আস্তে মানুষের অগ্রহ যখন কমে যায় ওই মুভি থেকে তখন সিডার কমে যায়। এতে স্পিড কম পাবেন। কেউ না কেউ কখনো না কখনো একটা মুভির সিড করে চলে যায়, আর আপ্লোড করে না। কিন্তু কোন সিডার না থাকলে তো আর লাভ নাই। তাই অনেক সময় দেখা যায় অজনপ্রিয় মুভির সিডার কম। ফলে স্পিড কম পাচ্ছেন। আবার অনেক পুরানো অবিখ্যাত মুভির স্পিডও কম পাচ্ছেন কারন মানুষের আগ্রহ কম ওই মুভির উপর। তবে যদি মুভিটি বিখ্যাত হয় তবে সবসময়ই ভালো হোস্ট সাইটে মুভিটির ভালো রকম সিডার পাবেন। এজন্য বিখ্যাত হোস্ট সাইট ব্যাবহার গুরুত্বপুর্ন। কারন বিখ্যাত টরেন্ট সাইটে বেশি মানুষ ভিজিট করে। বেশি ডাউনলোড করে। তাই বেশি সিডার থাকবে। বেশি সিডার থাকলে আপনি বেশি স্পিড পাবেন। এভাবেই কাজ করে টরেন্ট।
সতর্কতা: কোন খারাপ মানুষ ভালো জিনিসের নামে কোন ভাইরাস আপলোড দিয়ে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। এর থেকে বাচার উপায় হচ্ছে বেশি সিডারের ফাইল ডাউনলোড করা। কারন বেশি সিডার মানে ওই ফাইলটি ভালো। তাই সবাই ডাউনলোড করছে।
সব কথার শেষ কথা কিভাবে ডাউনলোড করবো টরেন্ট থেকে? পার্ট টু তে তাই বলছি। ধন্যবাদ।
8 thoughts on "Part 2- Movie ডাউনলোডের সেরা সাইটসমূহ : Torrent-1"