শহিদমিনারে ফুল দেয়াকে মূর্তিপূজার সাথে তুলনা করতে,শেরেক সাব্যস্ত করতে এবং প্রোপাগান্ডা চালিয়ে উঠতিপ্রজন্মকে শহিদমিনার থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সারা বছরতৎপর থাকে একটি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র। অথচ শহিদমিনারএকটি ধর্মনিরপেক্ষ ভাস্কর্য। এতেবাঙালিরা ফুল দেনভাষাশহিদদের প্রতি নিছক শ্রদ্ধা দেখাতে। আজ পর্যন্তকোথাও শোনা যায়নি— শহিদমিনারের শিক ধরে কেঁদেকেটেকোনো হিন্দু নারী হাত জোড় করে উত্তম স্বামী চেয়েছেনকিংবা কোনো মুসলিম ছাত্রী পরীক্ষায় ভালো ফল পেতেশহিদমিনারে গিয়ে তসবি জঁপেছেন। আজ পর্যন্ত শোনাযায়নি— রোগমুক্তির জন্য কোনো বৃদ্ধ জাতীয়স্মৃতিসৌধে পাঁঠা বলি দিয়েছেন কিংবা কোনো ধ্বজভঙ্গপুরুষ দাম্পত্য জীবনে সুখী হবার জন্য অপরাজেয় বাংলায়খাসি মানত করেছেন। শেরেক যদি হয়েইথাকে, তা অহরহহয়ে চলছে বিবিধ পিরের দরগায়। শহিদমিনারে-ভাস্কর্যে হয়নিছকই সংস্কৃতির চর্চা, অপসংস্কৃতির ধারকদের তাইশহিদমিনারকে এত ভয়।বিভিন্ন ভাস্কর্যকে মূর্তি বলে প্রচার করে পৈশাচিক আনন্দপায় প্রতিক্রিয়াশীলেরা। তারা ভালো করেই জানে মূর্তি ওভাস্কর্যের পার্থক্য। তারাও জানে— ধর্মীয় উদ্দেশ্যেতৈরি প্রাণীপ্রতিকৃতি মূর্তি, আর সর্বজনীন উদ্দেশ্যেতৈরি প্রাণীপ্রতিকৃতি ভাস্কর্য।

সৌদি আরব, ইরানেরমতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোতে খোদমসজিদের পাশেই আছে বিবিধ প্রাণীভাস্কর্য। হজের একটিগুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে মিনায় শয়তানের স্তম্ভেপাথরনিক্ষেপ। শয়তান একটি অদৃশ্য সত্তা, সে নিশ্চয়ইবালবাচ্চা নিয়ে ঐ স্তম্ভে বাস করেনা কিংবা ঐ স্তম্ভটিইশয়তান না। তবু শয়তানের ঐ প্রতীকী ভাস্কর্যেপাথরনিক্ষেপকেই ইসলামে ‘শয়তান’কে পাথর নিক্ষেপ করারসমান বলে গণ্য করা হয়, অর্থাৎ ইসলামের অন্যতম রুকনখোদ হজের সাথেও একটি প্রতীকী ভাস্কর্য জড়িত।শয়তানের ঐ ভাস্কর্যটি নিশ্চয়ই মূর্তি নয়, নিশ্চয়ই মূর্তিনয় ইরানে মসজিদের পাশে নির্মিত বিভিন্ন কবিরভাস্কর্যও। তা হলে কেন কেবল বাংলাদেশী ভাস্কর্যগুলোইমূর্তি? কেন শহিদমিনারে ফুল দেয়া মূর্তিপূজা বা শেরেক?এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বেশ সহজ। বাঙালি সংস্কৃতি ওবাংলা ভাষাকে এ দেশের প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বড্ড ভয়।মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও এরা পড়ালেখা করতে পছন্দকরে বরাবরই উর্দু-ফারসি-আরবি ভাষায়। পাকিস্তান আমলেএরা চেয়েছিল বাংলাকে আরবি বর্ণে লিখতে। সেই অপচেষ্টাবিফলে গেলেও শহিদমিনারে ফুল দেয়াকে মূর্তিপূজা বলে কিছুমানুষের মনে ধারণা তৈরি করতে এরা সফল হয়েছে, এরা সফলহয়েছে ধর্মকে ও ধর্মনিরপেক্ষ শহিদমিনারকে মুখোমুখিদাঁড় করাতে।
কোনো এলাকায় একটি শহিদমিনার বামুক্তিযুদ্ধের কোনো ভাস্কর্য নির্মিত হলে তা নিছকভাস্কর্য থাকে না; অল্পদিনের মধ্যেই সেটি পরিণত হয় একটিসাংস্কৃতিক কেন্দ্রে, ভাস্কর্যটিকে কেন্দ্র করে সেখানেতৈরিহয় একটি অঘোষিত সাংস্কৃতিক বলয়; সেখানে মঞ্চস্থ হতেথাকে মুক্তিযুদ্ধের নাটক, ধ্বনিত হতে থাকেরাজাকারবিরোধী কবিতা, পরিবেশিত হতে থাকেতিমিরবিদারী নৃত্য। বাহান্ন থেকেএকাত্তর পর্যন্তসংগ্রামে-সমরে বাঙালিকে সবচেয়ে বেশি উদ্দীপ্ত করেছে‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটিই। আমরা বাহান্নতেপেয়েছি বাংলা, একাত্তরে পেয়েছি দেশ। শহিদমিনারে না,প্রতিক্রিয়াশীলদের যাবতীয় অ্যালার্জি শহিদমিনারেপরিবেশিত নাটকে-নৃত্যে গানে-কবিতায়। তাই ওরা সমূলেউপড়ে ফেলতে চায় শহিদমিনারের প্রতিটি ইট, প্রতিটি রড!পাকিস্তান সরকার কেন্দ্রীয় শহিদমিনার ভেঙেছিল দুইবার—১৯৫২ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি একবার, ১৯৭১ সালের ২৫শেমার্চ রাতে আরেকবার। আলী আকবর টাবীর ‘দৈনিক সংগ্রাম— মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা’ বইটি ওলটাতে-ওলটাতে ৯৫পৃষ্ঠায় দেখলাম ১৯৭১ সালের ১৬ই জুলাই জামায়াতেরমুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদকীয়তে লেখা আছে—‘আইয়ুব খানের গভর্নর আজম খান ছাত্রদেরকে খুশি করারজন্য যে শহিদমিনার তৈরি করলেন, তাকে পূজামণ্ডপ বলাযেতে পারে। কিন্তু মিনার কিছুতেই না। সেনাবাহিনী এইকুখ্যাত মিনারটি ধ্বংস করে সেখানে মসজিদ গড়ে শহিদদেরপ্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শনের চেষ্টা করেছেন জেনেদেশবাসী খুশি হয়েছে।’ অর্থাৎ শহিদমিনারের সাথেপ্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ও জামায়াতিদের শত্রুতা বেশপুরোনো। ভাষা-আন্দোলনের নেতৃত্ব যদি জামায়াতেরকেউ দিত; তা হলে শহিদমিনার পূজামণ্ডপও হতো না,শহিদমিনারে ফুল দেয়া শেরেকও হতো না। যুদ্ধাপরাধীদেরবিচার যেই শুরু হলো, অমনি জামায়াত গোলাম আজমকেভাষাসৈনিক বলে প্রচার করা শুরু করল।
ঘটনাচক্রে একটিমানপত্র পাঠ করে এখন ভাষাসৈনিক-বনে-যাওয়া এই গোলামআজমই আবার সত্তর সালে প্রকাশ্যে বলেছে ভাষা-আন্দোলন করে সে ভুল করেছে। অর্থাৎনিক্ষিপ্ত থুতুপুনরায় গলাধঃকরণ করা প্রতিক্রিয়াশীলদের মজ্জাগতস্বভাব। একজন ভাষাসৈনিককেও খুঁজেবের করা যাবে না,যিনি শহিদমিনারে ফুল দেয়াকে শেরেক মনে করেন।শহিদমিনারে ফুল দেয়াকে শেরেক ও শহিদমিনারকেপূজামণ্ডপ মনে করেন বা করতেন বাংলার একমাত্র ছহি ওআসল ‘ভাষাসৈনিক’ গোলাম আজম গং!বাংলাদেশের যে মাজারটিতে সবচেয়ে বেশি ফুল দেয়া হয় এবংসমর্থকদের মধ্যে যে মাজারটিতে সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ হয়,সেটি জিয়াউর রহমানের মাজার। জামায়াতিদের মুখে কখনওশোনা যায়নি— জিয়ার মাজারে শেরেক হচ্ছে কিংবা জিয়ারমাজারটি একটি পূজামণ্ডপ। সালাম-বরকতরা ধর্মযুদ্ধেনিহত নন বলে জামায়াতিরা তাদেরকে ‘শহিদ’ বলতে নারাজ।অথচ ধর্মযুদ্ধে নিহত-না-হওয়া জিয়াউর রহমানকে বিএনপি‘শহিদ রাষ্ট্রপতি’ বলে প্রচার করে চললেও তাতে কখনোইআপত্তি করেনি জামায়াত! শহিদমিনারে ফুল দেয়াকেঅনেকেই ‘অর্থের অপচয়’ বলে বলে প্রচার করে। এদের কাছেঅবশ্য সবই অর্থের অপচয়; এদের কাছে ফুলও অপচয়,পহেলা বৈশাখের ইলিশও অপচয়। সে দিনদূরে না, যেদিন এরাইলিশকেও মুরতাদ মাছ বলে ঘোষণা করবে, ইলিশ খাওয়াকেহারাম ও শেরেক বলে ফতোয়া দেবে!এক শহিদমিনারের যে পরিমাণ রেপ্লিকা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়েআছে, তা পৃথিবীর আর কোনো ভাস্কর্যের নেই। বাঙালিজাতি অন্য কোথাও ঐক্যবদ্ধ না হলেওঅন্ততশহিদমিনারে ও ভাষার প্রশ্নে এক ও ঐক্যবদ্ধ। বাঙালিরএই ঐক্যের জায়গাটিতে ফাটল ধরাতেই শেরেকতত্ত্ব নিয়ে ৬৪বছর ধরে ছটফট করছে বাঙালি জাতিরই একটি বেওয়ারিশঅংশ।
♥♥♥♥Amraito.com♥♥♥♥

13 thoughts on "শহীদ মিনারে ফুল দেয়া কি হারাম ?"

  1. Boot Contributor says:
    হহহহহহহ
  2. Alauddin Raj Contributor says:
    আরে মুর্খ, হিন্দু তাদের মুর্তিকে বিবিন্ন ফুল ফল দিয়ে থাকে।সে দিক থেকে আমাদের পার্থক্য কোথায়।ভাষা শহিদদের জন্য দোয়া করলেই আল্লাহ খুসি হবেন।
  3. proyas masum Contributor Post Creator says:
    দোয়া অবশ্যই করবো কিন্তু
    যেমন স্মৃতি রহ্মার্থে শৌধ তেমনি শহিদ মিনারও তাই,
    এর সাথে অন্য ধর্ম বা মিল অমিলের কোন সম্পর্ক নাই।
  4. কিসের ধর্ম হে কিসেরধর্ম!!! আল্লাহ কেন যে এই ইসলাম ধর্মটারে চাপাই দিছেন আমাদের উপর ….!!???
    আরে মূর্খ…… তুমিতো চাও ধর্ম কর্তৃক বাধাটা না থাকুক। তাই না ? তাই তুমার এমন মনোভাব। তুমার জীবন বৃত্তান্ত ঘেটে দেখলে দেখা যাবে জীবনে কোনো দিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ তাকবীর ওয়ালার সাথে আদায় করতে পারো নাই !!!
    মানুষ যে-কোনো কাজ করে হয় এতে তার নেকি না হয় গুনাহ লিখা হয়। ধর্মনিরপেক্ষ নামে এইটা কোন ইবাদত চালু করলা যেটাতে গুনাহ হবে না।
  5. ইন্টারনেট থেকে ইসলাম শিখলে জ্ঞান এক চেটিয়াই রয়ে যাবে। Neutral চিন্তা ধারা নিয়ে আখিরাতকে সামনে নিয়ে চলতে চেষ্টা করো। আর গান, নাটক ? ==========!!!!
    আস্তাগফিরুল্লাহ। কিছু বললাম না এইটা নিয়ে। শুধু এইটুকু বলি যদি আল্লাহর গুন নিয়েও কোনো গান থাকে আর তাতে বাজনা থাকে সেইটাও হারাম ! আর দেশাত্মবোধক গান!!!!???!!!
    (যাদের চিন্তা দুনিয়ামূখী, তাদের কাছে আমার কথা Boring লাগতে পারে। মানে এই লিখাটা পরে নিজের দুনিয়ামূখীত্ততা অথবা আখিরাতমূখীত্ততা সহজেই যাচাই করে নিতে পারা যাবে। )
    {দুনিয়া মুসলমানদের জন্য জেলখানা স্বরুপ }
    আসসালামু আলাইকুম
    1. rupok12 Contributor says:
      মো : মুফতি ভাইয়ের সাথে সম্পুর্ণ একমত।
    2. আলহামদুলিল্লাহ রুপক ভাই।
  6. “Voice of 71 – ৭১ এর কন্ঠ” নামের এই FACEBOOK পেইজ থেকে তুমার এই পোষ্টটা কপি করা ।
    1. proyas masum Contributor Post Creator says:
      মজার কথা হইলো তুমি নিজেই মিয়া ফেসবুক ফিশিং সাইট খুইলা রাখছো অন্যের আইডি হ্যাক করতে ।
      চোরের মায়ের বড় গলা ।
      ইসলাম শ্রেষ্ঠ ধর্ম তবে চোরের জন্য নয়।
  7. proyas masum Contributor Post Creator says:
    না আখতারুজ্জামান আজাদের পোষ্ট থেকে
    এটা উনিই আগে লিখেছেন।
    ভাইরে বলতে চাইছি শহীদ মিনারে যাওয়া তো হারাম না কিন্তু পিরের দর্গায় মানত করা হারাম হওয়া সত্বেও আমরা লাইন ধরি, এখানে সেটার আলোচনা করা হইছে,
    আর কিছু পাবলিকের চুলকানি হবেই ।
    1. proyas masum Contributor Post Creator says:
      ভুল বুঝতে পারায় ধন্যবাদ
  8. ondhokar Author says:
    এদের একেকটারে ধইরা পাকিস্তানে নিক্ষেপ করা উচিত। আসলে এরা সংস্কৃতি পছন্দ করে না। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিতে এরা পটু। ওইযে বললেন না, চোরের মায়ের বড় গলা। দেখা যাবে এদের একটায়ও প্রতিদিন কোনো ভাল কাজ করে না। মুখে পাকনামি করতে পছন্দ করে।

Leave a Reply