তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি)
টেলিযোগাযোগ সেবা ও স্মার্টফোনের
ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে দেশে পাল্লা দিয়ে
বাড়ছে ইন্টারনেট ডেটার ব্যবহার। বর্তমানে
প্রতিদিন গড়ে ব্যবহৃত হচ্ছে ৩০০ টেরাবাইট
ডেটা, যা দুই বছর আগেও ছিল মাত্র ৫০
টেরাবাইট। অর্থাৎ দুই বছরে ইন্টারনেট ডেটার
ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে ৬০০ শতাংশ বা ৬ গুণ।
বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ে
সুইডেনের বহুজাতিক টেলিযোগাযোগ
অবকাঠামো সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এরিকসনের
বাজার গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি)
টেলিযোগাযোগ সেবা চালু হলে ইন্টারনেট
ডেটার এ ব্যবহার সামনের বছরে আরও
বাড়বে বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি।
গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ডেটার ব্যবহার
পরিমাপ করতে টেরাবাইট, গিগাবাইট ও
মেগাবাইটের মতো একক ব্যবহার করা হয়। ১
হাজার ২৪ গিগাবাইটে ১ টেরাবাইট হিসাব করা হয়,
একইভাবে ১ হাজার ২৪ মেগাবাইটে ১ গিগাবাইট
ধরা হয়। ব্যবহারকারীরা সাধারণত মেগাবাইট বা
গিগাবাইটের হিসাবে ইন্টারনেট ডেটা প্যাকেজ
কেনেন।
২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত এরিকসন
মবিলিটি রিপোর্টে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা
হয়েছে, মুঠোফোন ব্যবহারকারী
প্রবৃদ্ধির দিক থেকে শীর্ষ পাঁচ দেশের
একটি হলো বাংলাদেশ। গত এক বছরে এই
বাজারে একক মুঠোফোন ব্যবহারকারী বৃদ্ধি
পেয়েছে ৪০ লাখ। ব্যবহারকারীর
প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষ দুটি দেশ হলো ভারত ও
চীন।
এরিকসন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজ
জৈন প্রথম আলোকে বলেন, থ্রিজি সেবা
চালু, তরুণ জনগোষ্ঠী, নগরায়ণ এবং
স্মার্টফোনের ব্যবহার বাংলাদেশের

ইন্টারনেট ডেটার ব্যবহার বৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা
রেখেছে। সামাজিক যোগাযোগ, ইনস্ট্যান্ট
মেসেজিং বা খুদে বার্তা আদান-প্রদান, ভিডিও
দেখায় সিংহভাগ ডেটা ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে
সবচেয়ে জনপ্রিয় পাঁচটি মোবাইল
অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে শীর্ষস্থানে
আছে ফেসবুক ও ইউটিউব।
এরিকসনের হিসাবে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে
স্মার্টফোনের ব্যবহার দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশ,
যা ২০১৮ সালের শুরুতে ৪০ শতাংশ হবে।
মুঠোফোন আমদানিকারকদের দেশীয়
সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন
ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের
(বিআইএমপিএ) হিসাবে, ২০১৫ সালে দেশে
৬০ লাখ স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে, ২০১৪
সালে যা ছিল ৪০ লাখ। এ সময়ে দেশে সাধারণ
ফিচার ফোন ও স্মার্টফোন মিলে ২ কোটি
৫০ লাখ মুঠোফোন বিক্রি হয়েছে।
বিএমপিআইএর মহাসচিব রেজওয়ানুল হক বলেন,
স্মার্টফোনের বাজার এখন প্রতিবছরে গড়ে
৫০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এই প্রবৃদ্ধি
অব্যাহত থাকলে ২০১৮ সালে স্মার্টফোনের
ব্যবহার মোট বাজারের ৪০ শতাংশের বেশি
হবে।
এরিকসনের গবেষণায় আরও বলা হয়েছে,
মুঠোফোনভিত্তিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট
ডেটা ব্যবহারের এ প্রবৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা
রেখেছে। প্রতিদিন ব্যবহৃত হওয়া ৩০০
টেরাবাইট ডেটার ৯৫ শতাংশ বা ২৮৫ টেরাবাইটের
জোগান আসে মুঠোফোন ইন্টারনেট
থেকে।
খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা
গেছে, মুঠোফোনভিত্তিক ইন্টারনেট
ডেটার বাজারে শীর্ষ অবস্থানে আছে
গ্রামীণফোন। মোট ডেটার প্রায় ৫০ শতাংশই
গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয়।
গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস
নেহাল আহমেদ বলেন, ‘থ্রিজি সেবা চালু
করার পরে গ্রামীণফোন নেটওয়ার্কে
ইন্টারনেট ব্যবহার লক্ষণীয়ভাবে
বেড়েছে। গ্রাহকের চাহিদামাফিক
ইন্টারনেটভিত্তিক মানসম্পন্ন সেবা ও সুলভ
প্যাকেজের কারণে গ্রামীণফোন এ
ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে এবং থাকবে বলে
আমরা বিশ্বাস করি।’
ডেটার ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে
দেশে বেড়েছে ইন্টারনেট
ব্যান্ডউইট্থের ব্যবহার। ইন্টারনেট ডেটা
ব্যবসায় পাইকারি বিক্রেতা হিসেবে কাজ করা
আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে
অপারেটরদের হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন
প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জিবিপিএস (গিগাবাইট প্রতি
সেকেন্ড) ব্যান্ডউইট্থ ব্যবহৃত হয়। দুই বছর
আগে দৈনিক ব্যান্ডউইট্থের চাহিদা ১০০
জিবিপিএসের কম ছিল।
মুঠোফোন অপারেটররা পাইকারি হিসাবে
আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ব্যান্ডউইট্থ
কেনে। এরপর গিগাবাইট বা মেগাবাইটের
হিসাবে নির্দিষ্ট মূল্যে খুচরা পর্যায়ে
গ্রাহকের কাছে তা বিক্রি করা হয়।
আইআইজি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের
প্রধান স্ট্র্যাটেজি কর্মকর্তা সাবির আহমেদ
বলেন, ইন্টারনেট ডেটার ব্যবহার গত কয়েক
বছরে বেড়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
তবে জনসংখ্যার অনুপাত বিবেচনায় নিলে
এখনো বিশাল একটি জনগোষ্ঠী ইন্টারনেট
সেবার বাইরে আছে।
সরকারের হিসাবে দেশে মোট ইন্টারনেট
ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ৫ কোটি ৮৩ লাখ।
এর ৯৬ শতাংশ বা ৫ কোটি ৫৫ লাখ লোক
মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।

ফ্রীনেট সম্পর্কিত টপিক্স পরতে আমার সাইটে আসুন

Leave a Reply