আরএস খতিয়ান অনুসন্ধান করুন-


আজকের তথ্য প্রযুক্তির যুগে জমির মালিকানা যাচাই করা আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়ে উঠেছে। জমির সঠিক তথ্য জানা থাকা জরুরী, বিশেষ করে জমি ক্রয়-বিক্রয়, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্তি, ঋণ গ্রহণ, সরকারি ভাতা প্রাপ্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে। আর এই সকল ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিল হলো আরএস খতিয়ান। আরএস খতিয়ান (Rights Settlement Khatian) মূলত জমির মালিকানার একটি সরকারি দলিল যা জমির পরিচয়, মালিকের নাম, জমির পরিমাণ, শ্রেণী এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ধারণ করে। এই নিবন্ধে, আমরা আরএস খতিয়ান কী, এর গুরুত্ব কি, কিভাবে ঘরে বসেই অনলাইনে মাত্র ১ মিনিটে আরএস খতিয়ান যাচাই করবেন, সেই সাথে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আলোচনা করবো।

আরএস খতিয়ান কী?


আরএস খতিয়ান হলো একটি আইনি দলিল যা জমির মালিকানার স্বত্ব প্রমাণ করে। এটি ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর কর্তৃক ইস্যু করা হয়। প্রতিটি মৌজার জন্য আলাদা আলাদা আরএস খতিয়ান থাকে। এই খতিয়ানে জমির মালিকের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, জমির পরিমাণ, শ্রেণী (কৃষি/অকৃষি), খাজনা ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ থাকে। জমির মালিকানা সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে আরএস খতিয়ান একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আরএস খতিয়ানের গুরুত্ব


আরএস খতিয়ান জমির মালিকানা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিম্নে আরএস খতিয়ানের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো- জমির মালিকানা প্রমাণ- আরএস খতিয়ান জমির আইনগত মালিকানা প্রমাণ করে।
জমি সংক্রান্ত লেনদেন- জমি ক্রয়-বিক্রয়, দান, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে আরএস খতিয়ান অত্যাবশ্যকীয়।
ঋণ গ্রহণ- ব্যাংক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে জমি বন্ধক রাখার জন্য আরএস খতিয়ান জমা দিতে হয়।
সরকারি ভাতা- বিভিন্ন সরকারি ভাতা, যেমন কৃষি ঋণ, ফসল বীমা ইত্যাদি প্রাপ্তির জন্য আরএস খতিয়ান প্রয়োজন হয়।
আইনি বিরোধ নিষ্পত্তি- জমি সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের আইনি বিরোধ নিষ্পত্তিতে আরএস খতিয়ান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অনলাইনে আরএস খতিয়ান যাচাই-


বর্তমানে ঘরে বসেই অনলাইনে আরএস খতিয়ান যাচাই করা সম্ভব।
ই-পর্চা ওয়েবসাইট থেকে আরএস খতিয়ান যাচাই-
ভূমি মন্ত্রণালয়ের “ই-পর্চা” ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আরএস খতিয়ান যাচাই করা সবচেয়ে সহজ এবং ত্বরিত পদ্ধতি।
ধাপ ১- প্রথমে https://eporcha.gov.bd/ ওয়েবসাইটে যান।

ধাপ ২- “সার্ভে খতিয়ান” অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৩- আপনার জমির বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং মৌজা বাছাই করুন।
ধাপ ৪- খতিয়ানের ধরণ” থেকে “আরএস” বাছাই করুন।
ধাপ ৫- আপনার খতিয়ান নম্বর প্রদান করুন এবং “খুঁজুন” বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৬- আপনার প্রদত্ত তথ্য সঠিক হলে আপনার জমির আরএস খতিয়ানের সমস্ত তথ্য দেখতে পাবেন।

Land.gov.bd ওয়েবসাইট থেকে আরএস খতিয়ান যাচাই


ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট “land.gov.bd” থেকেও আপনি আরএস খতিয়ান যাচাই করতে পারবেন।
ধাপ ১: https://land.gov.bd/ ওয়েবসাইটে যান।

ধাপ ২- “স্মার্ট ভূমি রেকর্ড ও ম্যাপ” অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৩: সার্ভে খতিয়ান” বাছাই করুন।
ধাপ ৪: আপনার জমির বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং মৌজা বাছাই করুন।
ধাপ ৫- “খতিয়ানের ধরণ” থেকে “আরএস” বাছাই করুন।
ধাপ ৬- আপনার খতিয়ান নম্বর প্রদান করুন এবং “খুঁজুন” বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৭- আপনার প্রদত্ত তথ্য সঠিক হলে আপনার জমির আরএস খতিয়ানের সমস্ত তথ্য দেখতে পাবেন।

আরএস খতিয়ানের তথ্য না পেলে করণীয়


অনলাইনে আরএস খতিয়ানের তথ্য না পেলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন-
তথ্য যাচাই- প্রথমে নিশ্চিত হন যে আপনি সঠিক বিভাগ, জেলা, উপজেলা, মৌজা এবং খতিয়ান নম্বর প্রদান করেছেন।
স্থানীয় ভূমি অফিসে যোগাযোগ- আপনার স্থানীয় ভূমি অফিসে ( সহকারী কমিশনার ( ভূমি ) – এর কার্যালয় ) গিয়ে আরএস খতিয়ানের জন্য আবেদন করতে পারেন।
জাতীয় ভূমি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ( এনএলএসপি ) – এর সাথে যোগাযোগ- এনএলএসপি- র ওয়েবসাইট অথবা হটলাইনে যোগাযোগ করে আরএস খতিয়ান সম্পর্কিত যেকোনো সহায়তা নেওয়া যাবে।

উপসংহার-


আরএস খতিয়ান জমির মালিকানার একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। জমি সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে আরএস খতিয়ান অত্যাবশ্যক।

Leave a Reply