আমার ছোটভাই আব্দুস সালাম আজাদীর লেখা থেকে
জান্নাতে মেয়েদের জন্যও কি হুর হবে?
================
আজ আমার কাছে এক বোন মেসেজ দিয়ে বললেনঃ হুজুর ছেলেদের জন্য হুর দেয়ার কথা কুরআনে আছে। কিন্তু মেয়েদের হুরের কথা বা এই রকম কোনো কিছু নেই কেন?
প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ ভেটকি দিয়ে বসে থাকলাম, কিছুক্ষণ ভাবলাম এবং নিবিষ্ট মনে আমার শুন্য জানালায় চোখ মেলে দিলাম।
আমি যদি ডঃ যাকির নায়েকের মত হতাম, তাহলে হয়ত চ্যাপ্টার ও ভার্স নাম্বার বলে দিয়ে জবাব দিতে পারতাম যে, “মেয়েদেরও হুর হবে। কারণ ‘হুর’ এমন শব্দ যা দিয়ে ছেলে মেয়ে দুইটাই বুঝায়”। কিন্তু তা আমি বলতে পারলাম না।
আমি যদি আমার উস্তাযগণের মত জ্ঞানের সীমাহীন সমুদ্র হতাম, তাহলে কুরআনের নানান রেফারেন্স দিয়ে আলবানী সাহেবের হুকুম সহ হাদীসের বর্ণনা দিয়ে বোনকে বলে দিতে পারতাম, “চিন্তা করোনা বোন, তুমি জান্নাতে হুর চাইবা না। তোমার জিভে ঐ কথা ফুটবেনা, তোমার মনে ওই কথা বঙ্গোপসাগরে চর জাগার মত জাগবে না। তোমারে এমন কিছু দিয়ে মন ভুলিয়ে দেয়া হবে, যে কোথায় হুর কোথায় গেলেমান, কিচ্ছু চাইবা না”। কিন্তু অত জ্ঞান না থাকায় তাও পারলাম না বলতে।
আমি যদি হতুম কোন ফিলোজফার, তাইলে হয়ত বলতামঃ হুম বেটি, বিপরীত লিংগের প্রতি এই সব টান শুধু দুনিয়াতে। আখিরাতে, জান্নাতে ঐসব টান টোন বা আকর্ষণ কিছুই থাকবে না। আর তাছাড়া ঐখানে ইন্ডিভিডিউয়ালিজম এতো বেশি হবে যে তুমি তোমারটা নিয়েই ব্যস্ত থাকবে। কাজেই তোমার মনস্ত্ত্বাত্তিক, জৈবিক ও ইহজাগতিক ধ্যান ধারণার সাথে, পারত্রিক বিষয় আশয়ের একটা ভেদরেখা টানলেই তুমি উত্তর পেয়ে যাবে। কিন্তু ফিলোজফির জ্ঞান আমার হাদারামের বিজ্ঞান শেখার মতই।
আমি যদি যুক্তিবীদ হতাম, তাহলে বোন টাকে আগে একটা পাল্টাযুক্তির ধার গেলাতাম। বলতামঃ আমার প্রতিপক্ষ, কারে আল্লাহ প্রথম বানাইছেন? ছেলেরে না মেয়েরে? বোন হয়ত বলতেন, হুজুর, ছেলেদের বানায়েছেন। আমি বলতাম, ওহে তার্কিক বোন, ছেলেদের প্রয়োজনে মেয়েরা সৃষ্ট্, নাকি মেয়েদের প্রয়োজনে ছেলেরা সৃষ্ট,?! আমার বোন হয়ত বলতে বাধ্য হতেন, হুজুর, “আদম (আ) জান্নাতে ছিলেন। তারপরেও কীসের একটু অভাব বোধ করতেছিলেন। তাই সামান্য কিছুর এই অভাবের জন্য আমাদের “জাতি মা” হাওয়া (আ)কে বানায়েছিলেন আল্লাহ। আমি তখন বিজয়ের হাসি মুখে এঁকে ১২ টা দাঁত কেলিয়ে ধরে বলতামঃ তাইলে জান্নাতে নারীর জন্য পুরুষ সৃষ্টি হবে কেন? এইটা চাও কোন দুঃখে?! আমার এই যুক্তি শুনে বোনটা হয়ত বলতেনঃ ধেত্তরি, কি জিজ্ঞেস করলাম আর কী উত্তর পেলাম!! কিন্তু আমি তাও পারলাম না, কারণ, তর্ক বিদ্যায় আমি সব সময় হেরে যাই।
আমার বন্ধুরা আমাকে একটু অন্য রকম ভাবেন। তারা আমার যে কোন জবাব শুনে হাসেন, কেও কেও বলেনঃ “খারাপ না, চালায়ে যাও”। তাদের দেয়া এই আস্কারা পেয়ে আমার এই বোনের প্রশ্নের জবাব টা একটু মিনমিনে গলায় দিলাম। বললামঃ
আপু, আমার ৫ বোন আর ৪ ভাই। ৫ বোনকে বিয়ের সময় আমার আব্বা আমাকেই মাতবর বানায়ে দিতেন, “সালাম, বাবা তুমি সিদ্ধান্ত দাও”। ৫ বোনের কেও ই বিয়েতে খুব মজা করে “হাঁ ভাই, আমি রাজি” বলে মত দেয়নি। হয় কেঁদেছে, না হয় শঙ্কায় ডুবেছে, না হয় সময় চেয়েছে। কম পক্ষে বলেছে, ভাইয়া আর কটা দিন সময় দিন, আমি পড়তে চাই, জানতে চাই, বাবা মায়ের সাথে আরো কিছু দিন থাকতে চাই। প্রায় তারা বলতো, ভাইয়া ছেলেটা দ্বীনদার তো, আমাকে ভালোবাসবে তো, আমাকে একটু ভালোভাবে রাখতে পারবে তো?
আমার চাচাতো, ফুফাতো, খালাতো ও মামাতো বোনদেরও এই অবস্থা দেখেছি। ছেলে দেখে দৌড় মেরে হাত ধরেছে এমন হয়নি।
এর অর্থ হলো, মেয়েরা দৈহিকতা ও মদিরতার উপরে প্রেম ভালোবাসা, উপযোগিতাকে বেশি প্রাধান্য দেয়। মা বাবার সাথে তাদের নাড়ি থাকে বাঁধা, জন্ম নেয়া ঘরের সাথে থাকে তাদের আত্মার সম্পর্ক। ওরা মায়া চায়, দয়া চায়, ওরা প্রেম চায়, ভালোবাসা চায়। তাসলিমা নাসরীনের মত বেপরোয়া পুরুষ-খোরও রুদ্রর জন্য কাঁদে। সৈয়দ শামসুল হকেরা তার সাথে খেলারাম হতে চাইলে ভয় পায়, বিবমীষায় মুষড়ে পড়ে।
হাওয়া থেকে শুরু করে ফাতিমা আলাইহিন্নাস সালাম পর্যন্ত সব মেয়েদের দোয়া ও আকুতি, গল্প ও জীবনী, পুরুষের সাথে সম্পর্কের রোমাণ্টিক দৃশ্য গুলো কুরআনে বা হাদীসে দেখেছি। সব জায়গায় দেখেছি মেয়েদের চাওয়া পাওয়া থাকে পুরুষের দেহ শুধু নয়। পুরুষের পৌরুষ তারা দেখতে চায়, যেটা সামান্য ঝড়ে নুয়ে পড়েনা। তারা দেখতে চায় নারীর আমানাত বইতে পারার যোগ্যতা আছে কিনা। ‘ক্বাওয়িয়্যুন আমীন’ কিনা।
আপু, মেয়েরা বিপদে পড়লে, কেউ স্বামীর হাতে নির্যাতিতা হতে থাকলে, কিংবা ধর্ষকামীর লালসার শিকার হলে সে গোটা পুরুষ জাতির কাছ থেকে পানাহ চায়, চায় তার সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য, কামনা করে তাঁর দয়া, আকুল হয় তাঁর ভালোবাসা পেতে। আছিয়ার মন থেকে বের হয়ে আসেঃ ও আল্লাহ তোমার পাশে জান্নাতে একটা ঘর বানিয়ে দিয়ো, মা’বূদ। আল্লাহর পাশে থাকা ঐ ঘর দেখে আছিয়া প্রাণ দান করতেও হেসে ওঠেন। অনুরূপ খাদীজা জানতে চেয়েছিলেন, কোথায় থাকবেন মরে গেলে? সুসংবাদ যখন দেয়া হয় যে, খাদিজা, তোমার ঘর হবে ডায়মন্ডের বাঁশ দিয়ে তৈরি প্রাসাদ। ‘নারিত্বের অহংকার’ খাদিজা তা দেখে রব্বের কাছে চলে যান হাসি মুখে। এই হলো মেয়েদের মর্যাদা, ও জান্নাতে তাদের উঁচু স্থান।
আসলে আপু, মেয়েদের চাহিদা ই আলাদা। পুরুষের মত জৈবিক নয়, স্থূল নয়, নয় মক্ষীরানীর চরিত্রে খেলা রাস্তার কীটদের মত। ওদেরকে পুরুষেরাই শেষ করেছে পুরুষের কামনার জন্য। পুরুষের যে অন্তহীন চাহিদা মেটাতে আল্লাহ পুরুষকে হুর দেয়ার ওয়াদাহ করেছেন, সেই রকম কোনো চাহিদা যেহেতু মেয়েদের নেই, তাই সেটা মেটাতে আল্লাহ তাদের জন্য পুরুষ হুরের কথা কুরআনে বলেননি। কারণ মেয়েদের ঐটা কখনো জিজ্ঞেস করা লাগেনি। তার আগেই কুরআন বলে দেয়, নারী জান্নাতে গেলে তোমার ইচ্ছার স্বামীই তুমি পাবে জান্নাতে। কুরআন বলেছে, জান্নাতি ব্যক্তি, সে নর হোক, হোক নারী, যাইই চাইবে তাই ই পাবে সেই সীমাহীন সুখের রাজ্যে।
আপু, পুরুষ মানুষের দুনিয়াতে চাহিদার ক্ষেত্রে নারী একটা বড় বিষয় থাকেই। এই জন্য তাকে কুরআন বলেছে, দীন মেনে চলিস। নারী সংগীর দরকারে একটা বিয়ে করে নিস। পারলে দুইটাও বিয়ে করতে পারিস। আরো চাইলে হালাল উপায়ে ন্যায় বিচার করে তিন চারটা নিস। তার পরেও খারাপে যাসনা। এর পরেও চাইলে দুনিয়াতে আর না, ভালো আমল কর, তাহলে জান্নাতে পাবি। পুরুষের সীমাহীন লোভের জন্যই আল্লাহ এই কথাটা কুরআনে বলে দিয়েছেন। এর পরেও পুরুষের চাহিদার শেষ নেই। নারী দেখলেই হল, তার মাঝে উথাল পাথাল। তার জন্য জান্নাতের হুরের ওয়াদা দিতে হয়েছে।
মেয়েদেরকে কুরআন তথা ইসলাম দিয়েছে জান্নাতে যাবার ওসিলা বানিয়ে। বলেছে, এক, দুই, তিন কন্যার বাবা যদি হতে পারো, আদর সোহাগ ও যত্ন দিয়ে লালন পালন করে ভালো করে গড়ে তুললেই জান্নাতের গ্যারান্টি লাভ করবে। মায়ের খিদমত করে জান্নাত সহজে পাবে। ইয়াতিম মেয়ের দায় দায়িত্ব নিলে রাসূলের (সা) খুব পাশে একই জান্নাতে থাকবে। তোমার স্ত্রীর সাক্ষ্যে তোমার জান্নাতে যাবার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। মেয়েদের বলা হলোঃ জান্নাতে গেলে তুমি বাবা মা, ভাই বোন সবাইকে পাবে। আর মন তোমার যা চাইবে তাও পাবে। আছিয়া মারয়ামের মত নারীরা কোন নবীকে চাইতেও পারেন, আছিয়া ও মারইয়াম (আ) তাও পাবেন। মেয়েদের চাহিদা অপূর্ণ থাকবে, এ কেমন জান্নাত?!
আমার বোন বললেন, ভাইয়া চোখে পানি এলো। আলহামদুলিল্লাহ, আমার আল্লাহ কত মহীয়ান। আজ নারীত্বের বিপুলতা টের পেলাম, ধন্য আমি নারী হয়ে।
আমি আমার বোনের জন্য দুয়া করলাম। জান্নাতের দিকে হেঁটে যাওয়া এক সমঝদার নারী।
“Fully Collected From: Abubakar Muhammad Zakaria’s post”
Shuno jibon…olpo ektu gan niya boro boro torko bitorko te na jawai better…Ekjon sahabir ghotona tumi ki porso kina janina…? ek jonoik sahabi rodi-allahu-anhu jina kore allahr rosul ke bolsilen ai allahr habib ami jina korsi…ar hujur pak sallallahu alaihi wasallam bujte parsen je oi sahabi jina korse tobuo tini bolsilen na tumi jina koro nai……………..long kahini…
@JIBON@
** ‘হুর’ আরবি শব্দ । এর অর্থ অপ্সরা, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি ।
সাদা অংশ দুধের মত সাদা এবং কালো অংশ কুচকুচে কালো। এরূপ
অতি সুন্দরী রমণীকে বুঝায় ।
সুন্দরী রমণীকে বুঝানো হয়েছে
অর্থ-“সেখানে তাদের (স্বর্গবাসীদের) জন্য থাকবে আনতনয়না হুর ।
মুক্তার মত, তাদের কর্মের পুরস্কারস্বরূপ” (সুরা- ওয়াকিয়াহ, আয়াত- ২২-২৪)