সবাইকে আমার সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে দ্বিতীয় পর্ব লিখতে বসেছি। গতপর্বে যে এতো সারা দেবেন আপনারা আসলে আমার ধরণাও ছিলো না। আশা করি আজকের পর্বে মোটা মুটি নয়। পুরোটাই ক্লিয়ার হয়ে যাবে। তাহলে চলুন শুরু করি?

গত পর্বে কিছু প্রশ্ন করেছিলাম এবং সাথে উত্তরও দিয়েছিলাম । অনেকেই মেসেজ করেছিলো তারা খুব ভাল ভাবে বুঝেছেন । আশা করি যারা বুঝেছেন তারা স্কিল্ড পার্সন হয়ে কাজ নেমে পড়বেন।
আর যারা এখনো বুঝতে পারছেন না আসলে কি করবেন তারা আমার লেখাটা আবার পড়েন। আশা করি সকল সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও শান্তি মিলবে। আজকে আমি কিছু কিছু কাজের ধারণা বা উদাহরণ দেবো। আশা করি সবাই মন দিয়ে পড়ে বোঝার চেষ্টা করবেন। না বুঝলে কমেন্টে জানাবেন আপনার সমস্যার কথা আশা করি আপনাকে হেল্প করতে পারবো।
তো শুরুতেই দেখুন যে কত ধরনের কাজ করা যায় ফ্রিল্যান্সার মার্কেট প্লেসে। প্রথমে ডিজাইনিং দিয়ে শুরু করি । তবে মনে রাখবেন কাজ তো কাজই কোনো কাজই ছোট না।

ডিজাইনিঃ

ডিজাইনিং এর অনেক ধরনের কাজ আপনি এখানে পাবেন। আপনাকে এর জন্য ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটরের কাজ জানতে হবে। এছাড়া ডিজাইনিং এর আরো অনেক ধরনের সফটওয়ার আছে যেগুলো সম্পর্কে আপনার পূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। তা না হলে ডিজাইনিং এর কাজ আপনি করতে পারবেন না। কারণ, ক্লায়েন্টের চাহিদা মাথায় রেখে এক এক সময় এক এক ধরনের ডিজাইন আপনাকে করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের ডিজাইনিং এর কাজ আছে। যেমনঃ প্রেজেন্টেশন, ফটোগ্রাফী, অ্যানিমেশন, লোগো ডিজাইন, ইলাস্ট্রেশন, গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদি
একটা একটা করে যদি বলতে যাই তাহলে অনেক লম্ভা পোস্ট হয়ে যাবে । তার পরেও সর্ট করে একটু বলি।
প্রেজেন্টেশনঃ এটা মূলত বিজ্ঞাপন এর কাজে বেশি লাগে। এটির দ্বারা লেখা ও ছবি কে এনিমেশন রুপে বিভিন্ন স্টাইল তৈরি করা যায়। MS Ofice এর গুরুত্ব পূর্ণ অংশ হল Microsoft Power point । একে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন বলা হয়। প্রেজেন্টেশন কথার অর্থ হল উপস্থাপন করা। কোন বিষয় সম্বন্ধে বিভিন্ন তথ্যকে উপস্থাপন করার পদ্ধতিকে Presentation বলে। যেমন- বিভিন্ন আলোচনা চক্র, বিভিন্ন প্রদর্শনী, সভাসমিতি কনফারেন্স সেমিনার ইত্যাদি জায়গার কোন বিষয় বস্তুর উপর বক্তা তার মতামত দর্শক ও শ্রোতাদের কাছে উপস্থাপন করে থাকেন। কিন্তু বক্তার অনুপস্থিতে দর্শক ও শ্রোতারদের মনোযোগ ও দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বক্তা তার বিষয় বস্তুতে বিভিন্ন লেখা, ছবি, সাউন্ড, গ্রাফ ইত্যাদি ব্যবহার করেন। তারপর Projector এর মাধ্যমে সেগুলি দর্শকের সামনে তুলে ধরেন।  আর এই সমস্ত কাজ পাওয়ার পয়েন্টে সহজে করা যায়। এছারা এরকম অনেক কাজ পাওয়ার পয়েন্টে করা যায়।
ফটোগ্রাফীঃ টেকনিকাল ভাষায় বলতে গেলে একটা সময় অথবা একটা মোমেন্ট কে কোনো একটা মাধ্যমে আটকে ফেলা – এটাই সহজ ফটোগ্রাফি’র সংজ্ঞা |
অ্যানিমেশনঃ অ্যানিমেশন  বা সজীবতা (ইংরেজি: Animation) হচ্ছে স্থির চিত্রের একটি ক্রম যেগুলোকে বিশেষ প্রক্রিয়া লক্ষ্য করলে জীবন্ত ও সচল বলে মনে হয়।
বাকি গুলা অবশ্য কম বেশি সবাই জানেন তাই আর বলছি না।

রাইটিংঃ

এই কাজ করার জন্য আপনাকে সৃজনশীল হতে হবে। কারণ আপনাকে বিভিন্ন ধরনের টপিক্স এর উপর লিখতে হতে পারে। আপনাকে ক্লায়েন্ট যে রাইটিং এর কাজ দিবে আপনাকে প্রথমে সে বিষয়ে রিসার্চ করতে হবে। তারপর পূর্ণ একটা ধারণা লাভ করার পর ঐ বিষয়ে লেখা শুরু করতে হবে। নিচে কিছু রাইটিং এর কাজের উদাহরণ দিলাম।
যেমনঃ বিজনেস প্লান রাইটিং, ক্রিয়েটিভ রাইটিং, একাডেমিক রাইটিং, ওয়েবসাইট কনটেন্ট রাইটিং, টেকনিক্যাল রাইটিং, সি.ভি ও কভার লেটার রাইটিং, গ্রান্ট রাইটিং, কপিরাইটিং, অ্যার্টিকেল ও ব্লগ, পোস্ট রাইটিং ইত্যাদি

ওয়েব ডিজাইনিং এবং সফটওয়ার ডেভেলপমেন্টঃ

আপনি যদি কোডিং এ ভাল হয়ে থাকেন। তাহলে আপনি ওয়েব ডিজাইনিং এবং সফটওয়ার ডেভেলপমেন্টের কাজ করতে পারেন। এই ধরনের কাজের পেমেন্টও বেশি হয়ে থাকে। আপনি যে কোন ধরনের সফটওয়ার তৈরি করতে হতে পারে। তাই ভাল ভাবে এই বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে। হতে পারে মোবাইল সফটওয়ার বা কম্পিউটারের সফটওয়ার।

ট্রান্সলেশনঃ

আপনি যদি বিভিন্ন দেশের ভাষা বুঝে থাকেন। তবে এই কাজ আপনার জন্য উপযোগী। কারণ ট্রান্সলেশনের মত অনেক কাজ আছে এখানে। শুধু মাত্র ক্লায়েন্টদের চাহিদা মোতাবেগ একটা কনটেন্ট কে অন্য ভাষায় রূপান্তরিত করে দিতে হবে।

অ্যাডমিন জবস বা সহজে যেটা বুঝায় সেটা হলো ডাটা এন্ট্রি জবসঃ

এই ধরনের কাজ মূলত ডাটা এট্রি, ওয়েব রিসার্চ ইত্যাদি ধরনের হয়ে থাকে। যেমনঃ ডাটা এট্রি, ট্রান্সক্রিপশন, ভারচুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স, প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, ওয়েব রিসার্চ ইত্যাদি
তবে ডাটা এন্ট্রি কাজের জন্য প্রচুর আউটনলেজ থাকা প্রয়োজন।
 ডাটা এন্ট্রি কাজের উপরে হাল্কা একটু ধারণা দেই ।  ডাটা  এন্ট্রি (Data Entry) হচ্ছে কম্পিউটারের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ধরনের ডাটা একটি স্থান/প্রোগ্রাম থেকে অন্য আরকটি স্থানে/প্রোগ্রামে প্রতিলিপি তৈরি করা। ডাটাগুলো হতে পারে হাতে লেখা কোন তথ্যকে কম্পিউটারে টাইপ করা অথবা কম্পিউটারের কোন একটি প্রোগ্রামের ডাটা একটি স্প্রেডশীট ফাইলে সংরক্ষণ করা। কম্পিউটার ব্যবহারের শুরু থেকেই ডাটা এন্ট্রির ধারনা চলে এসেছে। বর্তমানে ইন্টারনেটের কল্যাণে তথ্যের আদান প্রদান বিস্তৃত হয়েছে, সেই সাথে বেড়েছে বিভিন্ন ধরনের ডাটাকে সুবিসন্নস্ত করে এর বহুবিধ ব্যবহার। তাই দক্ষ ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এধরনের কাজগুলো একা বা দলগতভাবে সম্পন্ন করা যায় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের সাধারণ ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। ফলে যে কেউ এই ধরনের কাজ করে ঘরে বসেই বৈদিশিক মুদ্রা আয় করতে পারে।

প্রয়োজনীয় দক্ষতাঃ

ডাটা এন্ট্রি প্রজেক্টে বিভিন্ন ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হয় যা একটি প্রজেক্টের উপর নির্ভর করে। অনেক ধরনের প্রজেক্ট পাওয়া যায় যাতে শুধুমাত্র কপি-পেস্ট ছাড়া আর কোন দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। তবে সাধারণভাবে যে দক্ষতাগুলো সবসময় প্রয়োজন পড়বে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে – দ্রুত টাইপিং করার ক্ষমতা, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ও বিশেষ করে মাইক্রোসফট এক্সেলে পরিপূর্ণ দখল এবং সর্বোপরি ইংরেজিতে ভাল জ্ঞান। তার সাথে রয়েছে ইন্টারনেটে সার্চ করে কোন একটি তথ্য খোঁজে পাবার দক্ষতা এবং বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট, ফোরাম, ওয়েব ডাইরেক্টরী সম্পর্কে ভাল ধারণা।

ডাটা এন্ট্রি কাজের প্রকারভেদঃ

ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে যেসকল ডাটা এন্ট্রি কাজ পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে – বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ফাইল, ছবি ইত্যাদি আপলোড করা, বিভিন্ন সাইট থেকে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য এক্সেলের একটি ফাইলে সংরক্ষণ করা, ওয়েবসাইটের জন্য একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর আর্টিকেল লেখা, একটি ওয়েবসাইটকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ফোরাম, গ্রুপে গিয়ে পরিচয় (Promote) করিয়ে দেয়া, দুটি ওয়েবসাইটের মধ্যে লিংক আদান প্রদান করা (Link Exchange), অনলাইনে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতে সাহায্য করা, OCR (অপটিক্যাল কারেক্টার রিকগনিশন) থেকে প্রাপ্ত লেখার ভুল সংশোধন করা ইত্যাদি।
ডাটা এন্ট্রির অসুবিধা বলেই আজকের পর্ব শেষ করবো । এই ব্যাপারটা সবার জানা দরকার।

অসুবিধাসমূহঃ

যদিও ডাটা এন্ট্রি এর কাজ তুলনামূলকভাবে সহজ কিন্তু এই ধরনের কাজে অনেক ধরনের অসুবিধা রয়েছে, যা পূর্বে বিবেচনা করেই কাজে নামা উচিতঃ
প্রথমত এই ধরনের কাজে অনেক বেশি বিড পড়ে, তাই প্রথম অবস্থায় কাজ পাওয়া খুব কঠিন। এই ধরনের কাজে আপনার মেধা বা দক্ষতা প্রমাণের প্রাথমিকভাবে কোন সুযোগ নেই। তবে ছোটখাট কয়েকটা কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করে ফেলতে পারলে একই বায়ারের কাছ থেকে আরো অনেক কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডাটা এন্ট্রি কাজগুলো সময়সাপেক্ষ, একঘেয়ে এবং প্রায় ক্ষেত্রে বিরক্তিকর।
অনেক কাজের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের স্পীড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যেসব কাজে ফাইল আপলোড করতে হয় অথবা যে কাজগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, সেক্ষেত্রে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন রয়েছে।
অনেক ডাটা এন্ট্রির কাজ রয়েছে যা একার পক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা সম্ভব নয়। এজন্য ৫ থেকে ১০ জনের একটা টিম গঠন করার প্রয়োজন পড়তে পারে।
ডাটা এন্ট্রির কাজগুলো খুবই সতর্কতার সাথে এবং নির্ভুলভাবে করতে হয়। তাই শতভাগ নির্ভুল টাইপিং এবং কাজের সময় পূর্ণ মনযোগ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কমেন্ট করুণ আপনি কি কাজ সম্পর্কে জানতে চান। ইনশাহ আল্লাহ্‌ চেষ্টা করবো ততটুকু লেখার।
যতটুকু আমার সাধ্যের মধ্যে আছে।
ভাল লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না । আজকের মত আসি। দেখা হবে আগামী পর্বে। সবাই ভাল থাকুন । আল্লাহ্‌ হাফেজ।
লেখা এবং রিসার্চঃ শিশির চৌধুরী। 
প্রথম প্রকাশিতঃ  সি টেক ব্লগ 

14 thoughts on "কিভাবে শুরু করবেন ফ্রিল্যান্সিং। একদম ব্যাসিক থেকে প্রোফেশনাল পর্ব ০২"

  1. mehedi789 Contributor says:
    Nice bro
    1. শিশির Author Post Creator says:
      ধন্যবাদ ভাই
    1. শিশির Author Post Creator says:
      ধন্যবাদ ভাই
    1. শিশির Author Post Creator says:
      ধন্যবাদ ভাই
  2. Jewel143T Contributor says:
    Onekk kichu bujhlam……Tobe 1st jeta korte hobe ta holo English ra sikhte hobe……
    1. শিশির Author Post Creator says:
      এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না ভাইয়া
  3. Saif ul Islam Contributor says:
    ভাই মারকেটিং সম্পর্কে কিছু বললেন না যে?
    1. এম এইচ মামুন Author Post Creator says:
      Bolbo vai bolbo new article gula dekhen
  4. nihan121 Contributor says:
    bhaiya ami valo edit korte pari. edit ar pray sob gula kag pari tai editor der freelecer a ki ki kag pete pari ae somporke aktu bolbn plzz☺

Leave a Reply