আল্লাহ কোরবানির মাধ্যমে
আমাদের মনের পশুত্ব দমন করার শিক্ষা
দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমরা
অনেকেই পশু কোরবানি দিতে
গিয়ে আমাদের মনুষত্ববোধকে
হারিয়ে ফেলি। কেননা এ পশুগুলো
তাদের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে
আমাদের জন্য, আর আমরা কিনা
জবাইয়ের সময় তাদের প্রাপ্য হক
প্রদান করতে পারছি না।

আমাদের মতো সব জীবজগৎ আল্লাহর
সৃষ্টি এবং তিনিই সবার প্রকৃত
মালিক। আর আমরা অনেক সময়
মালিকের অনুমতি ব্যতীত তার
সৃষ্টিকে জবাই করে থাকি। কিন্তু
ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় যে,
কোনো পশু জবাই করার সময় আল্লাহর
নাম নিয়ে তাঁর অনুমতি নেয়ার।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত
হয়েছে যে, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের
জন্য কোরবানি নির্ধারণ করেছি,
যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুষ্পদ
জন্তু জবাই করার সময় আল্লাহর নাম
উচ্চারণ করে, অতএব তোমাদের ইলাহ
এক ইলাহ, সুতরাং তারই আজ্ঞাধীন
থাক এবং বিনয়ীদের সুসংবাদ
দাও।’ (সূরা হজ ৩৪)।

আবার পশু জবাইয়ের সময় এমন বস্তু
ব্যবহার করি যাতে ধার থাকে না,
ফলে তাদের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করতে অমানবিক কষ্ট হয় এবং এ দৃশ্য
আমাদের অন্তরেও রেখাপাত করে
থাকে। কিন্তু ইসলাম এমন দৃশ্যের
অবতারণা শিক্ষা দেয় না।
ইসলামের নির্দেশ হলো- পশু জবাই
করতে হলে অবশ্যই তাকে যতটা সম্ভব
কম কষ্ট দিয়ে পূত-পবিত্রতার সঙ্গে
জবাই করা।

এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে
যে, হজরত শাদ্দাদ ইবনে আস (রা.)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি

আল্লাহর রাসুল (সা.) কে বলতে
শুনেছি- ‘আল্লাহ তায়ালা সব বস্তুর
ওপর ইহসান ফরজ করেছেন। অতএব যখন
তোমরা হত্যা করবে, তখন উত্তম পন্থায়
হত্যা করবে আর যখন জবাই করবে, তখন
উত্তম পন্থায় করবে। আর তোমাদের
প্রত্যেকেরই ছুরিতে ধার দিয়ে
নেয়া উচিত এবং জবাইকৃত জন্তুকে
নিস্তেজ হতে দেয়া
উচিত।’ (নাসাঈ)।

আর আমাদের যখন অনেক পশু একসঙ্গে
জবাইয়ের প্রয়োজন পড়ে, তখন আমরা
সব পশুকে আলাদাভাবে বেঁধে
ফেলে রাখি এবং পশুর সামনেই
চাকুতে ধার দিই ও জবাই করার
ব্যক্তি মনোনীত করি। তারপর একটি
পশুর সামনে অন্য পশুটিকে জবাই করে
থাকি। এ কেমন নিষ্ঠুরতা, যারা
কিনা আমাদের জন্য তাদের জীবন
বিলিয়ে দিচ্ছে তাদের শারীরিক
মৃত্যুর আগেই মানসিকভাবে তাদের
মৃত্যুর স্বাদ দিচ্ছি। আর আমরা
নিজেদের সভ্য জাতি হিসেবে
দাবি করে পশুদের সঙ্গে বর্বর আচরণ
করছি। কিন্তু ইসলাম আমাদের বর্বরতা
শিক্ষা দেয় না, শিক্ষা দেয়
আমাদের সবার সঙ্গে উত্তম আচরণের।

এ প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুল
(সা.) এক ব্যক্তিকে জবাইয়ের
উদ্দেশ্যে এক পশুকে শোয়ানোর পর
চাকুতে ধার দিতে দেখলেন, তখন
তিনি তাকে তিরস্কার করলেন এবং
বললেন, ‘তুমি কি ওই পশুকে দুইবার মৃত্যু
দিতে চাও? কেন তাকে শোয়ানোর
আগে চাকুতে ধার দিলে
না।’ (হাকিম)।

আবার আমরা অনেকে পশু কোরবানির
সময় অদক্ষ লোক দিয়ে পশু জবাই করে
থাকি, যার কারণে অনেক সময় পশুর
নির্দিষ্ট রগগুলো কাটা হয় না, ফলে
পশুটির মৃত্যুযন্ত্রণা দীর্ঘ হয়ে থাকে।
আবার অনেক সময় পশুটির ঘাড়ের রগ
পর্যন্ত কেটে ফেলি, যার কারণে
পশুর শরীর থেকে পর্যাপ্ত রক্ত বের না
হওয়ার কারণে তাদের গোশত

অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায়, যা শরীরের
জন্য ক্ষতিকর। তাই আমাদের দক্ষ
লোকের মাধ্যমে পশু কোরবানি
দিয়ে পশু ও মানবজাতির কল্যাণ সাধন
করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ইবন আব্বাস ও আবু হুরায়রা
(রা.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা
বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) শয়তানের
নিয়মে পশু জবাই করতে নিষেধ
করেছেন। আর শয়তানের নিয়মে জবাই
হলো- জবাইর সময় পশুর রগ না কেটে শুধু
চামড়া তুলে তাকে রেখে দেয়া
অর্থাৎ সঠিকভাবে জবাই না করা,
ফলে অধিক কষ্ট পেয়ে পশুটি মারা
যায়।’ (আবু দাউদ)।

পশু কোরবানি হয়ে গেলে আমরা
খেয়াল করি যে, পশুর বিভিন্ন অংশ
কাঁপছে, যার মাধ্যমে তার শরীরের
প্রবাহিত রক্ত বের হয়ে যায় এবং
তার গোশত স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। তাই
আমাদের পশু কোরবানি হওয়ার
কিছুক্ষণ পর তা কাটাকাটি করতে
হবে। কেননা রাসুল (সা.) পশু জবাইয়ের
পর পশুটি নিস্তেজ হওয়ার পর তার
চামড়া আলাদা করতে বলেছেন।
তাই পশু কোরবানির সময় ধারালো
চাকু দিয়ে কম কষ্টের মাধ্যমে
আল্লাহর নাম নিয়ে দক্ষ লোক দ্বারা
তাড়াতাড়ি পশু জবাই করতে হবে।
যার মাধ্যমে আমরা জবাইয়ের সময় পশুর
প্রাপ্য হক আদায় করতে পারি এবং
মনের পশুত্বকে দমন করে মনুষ্যত্ববোধ
অর্জন করতে পারি। আর তা না হলে
কোরবানির মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে।

Raihanbd.com

Leave a Reply