অনেক সময় দেখা যায়, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বা সামাজিকভাবে হেয় করতে বা হয়রানি করতে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। সাক্ষী সাজিয়ে মামলা উপস্থাপন করায় প্রতিপক্ষ হয়রানির মুখোমুখি হন। এছাড়া মামলা চালাতে গিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষতিরও সম্মুখীন হন। ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারা উপধারা (১) অনুসারে, কোনো মামলা যদি নালিশের মাধ্যমে অথবা পুলিশের বা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তথ্য প্রদান করার মাধ্যমে করা হয় এবং পরবর্তীতে যদি ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্ত বা একাধিক অভিযুক্তের কাউকে খালাস দেন এবং ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, অভিযোগগুলো মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না-এই মর্মে উক্ত অভিযোগকারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে পারেন। অভিযোগকারী আদালতে অনুপস্থিত থাকলে আদালত কারণ দর্শানোর জন্য সমন জারি করতে পারেন। উপধারা (২) অনুসারে, অভিযোগকারী কারণ দর্শানোর পর ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন আনীত অভিযোগগুলো মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা জরিমানা করতে পারেন। এক্ষেত্রে তৃতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হলে জরিমানার পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। জরিমানার অর্থ মামলার বিবাদীকে পরিশোধ করতে হবে। জরিমানা অনাদায়ে ম্যাজিস্ট্রেট সর্বোচ্চ ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করতে পারেন। এছাড়া Law of Torts অনুসারে বিদ্বেষপরায়ণ মামলার ক্ষেত্রে প্রতিকার পেতে চাইলে বাদীকে প্রমাণ করতে হবে যে, (ক) বিবাদী তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল; (খ) পূর্বের মামলার প্রকৃতি দেখে মনে হয়, মামলাটি বাদীর অনুকূলে শেষ হতে পারত; (গ) মামলাটি যুক্তিসংগত এবং সম্ভাব্য কারণ ছাড়া করা হয়েছিল; (ঘ) মামলাটি বিদ্বেষবশত করা হয়েছিল; (ঙ) মামলার ফলে বাদীর ক্ষতি হয়েছে। উল্লেখ্য, কোনো মামলায় যদি কাউকে দণ্ডিত করা হয়, তবে দণ্ডিত ব্যক্তি ওই দণ্ডাদেশকে বিদ্বেষবশত বলে বাদীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে না। দণ্ডবিধির ১৯৩ ধারা অনুসারে, বিচারিক প্রক্রিয়ার কোনো পর্যায়ে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে বা সাক্ষ্য বিকৃত করলে ওই ব্যক্তি সাত বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে বা সাক্ষ্য বিকৃত করলে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। দণ্ডবিধিরি ১৯৪ ধারা অনুসারে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য বা সাক্ষ্য বিকৃত করে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য কোনো অপরাধে কাউকে দণ্ডিত করায়, সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। এক্ষেত্রে মিথ্যা সাক্ষ্য বা সাক্ষ্য বিকৃত করার ফলে যদি নির্দোষ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়, তাহলে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারী মৃত্যুদণ্ড বা ১৯৪ ধারায় বর্ণিত অন্যান্য দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। দণ্ডবিধির ১৯৫ ধারায় উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য বা সাক্ষ্য বিকৃত করে কাউকে এমন কোনো অপরাধে দণ্ডিত করায়, যার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সাত বছরের কারাদণ্ড, তাহলে উক্ত ব্যক্তিও সমদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
Share:
One thought on "আইন জানুন আইন মানুন পর্ব ২৮: মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার আইনি প্রতিকার"