আসসালামু আলাইকুম।
আসা করি সবাই অনেক ভালো আছেন।
আজ আমি এখানে পৃথিবীর কয়েকটা জানা অজানা ঘটনা/ জায়গার বর্ণনা তুলে ধরবো। আসা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
আজকের বিষয় কি কি নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি…
১–চুম্বক মানব–
২–মানুষখেকো গুহা–
৩–যমজের গ্রাম–
৪–ডাইনিদের কূপ–
৫–বারমুডা ট্রায়াঙ্গল–
–চুম্বক মানব–
চুম্বকের ধর্ম হচ্ছে কেবল ধাতব বস্তুকে আকর্ষণ করা কিন্তু চুম্বক মানব শরীরে আকর্ষন করছে! এমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে সার্বিয়াতে। দেশটির সাত বছরের শিশু ‘বোগদান’ এর সংস্পর্শে কোন ধাতব বস্তু এলেই আটকে যায়। চিনামাটির থালা, বাটি, টিভির রিমোট কন্ট্রোল, ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র, ধাতব চামচ, ধাতব ছুরি ইত্যাদি ‘বোগদানের’ গায়ে রাখলে তা আঠার মত আটকে থাকে। বোগদানের পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য জন্ম থেকেই বিভিন্ন বস্তুকে আকর্ষণ করার এই ব্যতিক্রমী ক্ষমতা রয়েছে ‘বোগদানের’ শরীরে ।
–মানুষখেকো গুহা–
গ্রিক ভূগোলবিদ স্ট্রাবোর মতে প্রাচীন গ্রিক শহর হিয়ারাপোলিসে ছিল এপোলো দেবতার একটি মন্দির। মন্দিরটি এক সময় নানা কারণে রহস্যময় মন্দির হিসেবে পরিচিতি পায়। এই মন্দিরের পাশেই ছিল একটি গুহা। এই গুহাটির বৈশিষ্ঠ ছিল যে, এই গুহার ভিতরে কোন জন্তু-জানোয়ার ছুঁড়ে দিলে তা আর ফিরে আসতো না। এমনকি কোন মানুষও যদি এই গুহার প্রবেশ মুখ সামান্যও অতিক্রম করতো তাহলে সেও আর ফিরে আসতো না। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, পুরোহিতরা এই গুহার ভিতরে নিরাপদে ঢুকতে পারতো আবার বের হয়েও আসতে পারতো। তবে পুরোহিতরা যখন বেরিয়ে আসতো তখন তাদের মুখমণ্ডল ফুলে যেত এবং রক্তাত্ত্ব হয়ে যেত। প্রাচীন গ্রিক বাসীদের বিশ্বাস ছিল এই গুহাটি হলো পরলোকে যাওয়ার পথ এবং সেখানে রাজত্ব করে অপদেবতারা। সাধারণ মানুষ বা জীব-জানোয়াররা সেখানে গেলে অপদেবতারা তাদের মেরে ফেলে আর দেবতারা গেলে তাদের ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে অপদেবতাদের সাথে লড়াই করে ফিরে আসতে পারে।
স্ট্রাবো এই তথ্যটি তার পুঁথিতে লিখেছিলেন ২০০০ বছর আগে। অবশ্য বর্তমানে আধুনিক বিশ্বের মানুষ ভূত, প্রেত, দেবতা বা অপদেবতা বিশ্বাস করে না। বিজ্ঞানেও এদের কোন বাস্তবতা নেই। তাহলে কি সেখানে কোন অপদেবতা ছিল না? আবার না থাকলেই বা সেখানে মানুষ, জীব-জন্তুদের মেরে ফেলতো কারা? তাহলে কি ওই গুহাটি নিজেই মানুষ খেকো গুহা! জানা যাক পরবর্তী ঘটনা।
স্ট্রাবোর পুঁথির সূত্র ধরে আমেরিকার নিউইয়র্ক কলেজের অধ্যাপক শেলডেন এই বিষয়ে নির্ভরযোগ্য নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি মত প্রকাশ করেছেন, ওই গুহার নিচ থেকে প্রাকৃতিক ভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হতো। ফলে কোন মানুষ বা জীব-জন্তু গুহার ভিতরে প্রবেশ করলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের প্রভাবে শ্বাসকষ্টে মারা যেত। তাহলে এখন প্রশ্ন দেবতারা ভিতরে ঢুকলে মারা যেত না কেন? এ ব্যাপারে শেলডেন বলেন, দেবতারা বিষয়টা পূর্ব থেকেই জানতো সেজন্য তারা এই গুহার ভিতরে ঢুকে দম বন্ধ করে থাকতো। এবং বাইরে এসে তাদের শক্তি ও ক্ষমতার মহিমা প্রচার করতো। তবে তারা যখন গুহার বাইরে আসতো তখন তাদের মুখমণ্ডল গ্যাসের চাপে ফোলা ও রক্তাত্ত্ব থাকতো।
এই প্রাচীন গ্রিক শহরটি বর্তমানে পশ্চিম তুর্কির পাযুক্কাল শহরে অবস্থিত। সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে আছে প্রচুর উষ্ণ প্রসরণ। তার মধ্যে আছে অধিক পরিমাণ ক্যালসিয়াম কার্বনেট। এসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ার ফলে এ থেকে উৎপন্ন হয় প্রচুর কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস। বাষ্প এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড কোনও ফাটল দিয়ে ঢুকে যায় গুহার ভেতর। আর তাই ভিতরে কয়েক পা গেলেই নিশ্চিত মৃত্যু। এপোলোর মন্দিরের সেই রহস্যময় গুহাটি আজও আছে। কয়েক বছর আগে একদল অস্ট্রেলীয় ছাত্র অনুসন্ধিৎসা বশত: ওই গুহার ভেতরে ঢুকেছিল পরীক্ষার জন্য। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য এটাই যে, তারা আর ফিরে আসেনি। এরপর থেকে তুর্কি সরকার গুহামুখে লোহার পাত বসিয়ে দিয়েছে । যাতে আর কেউ ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে।
–যমজের গ্রাম–
ভারতের কেরালা রাজ্যে একটি গ্রাম আছে যার নাম কোধিনি। এক অদ্ভুত এক কারনে এই গ্রামটি বিখ্যাত হয়েছে সবার কাছে। এই গ্রামে গেলেই বুঝতে পারবেন তার কারন। অবাক হয়ে যাবেন যখন দেখবেন এই গ্রামে বসবাস রত সবাই যমজ। এই গ্রামে যে দিকেই তাকাবেন দেখতে পাবেন জোড়ায় জোড়ায় একই রকম যমজ মানুষ। তাই এটি কেবল ভারত নয়, সারাবিশ্বের কাছেই হয়ে উঠেছে বিস্ময়কর গ্রাম। কারণ একমাত্র এখানেই আছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি যমজের বাস। যার কারনে গ্রামটি সবার কাছে ‘টুইন গ্রাম’ হিসেবেও পরিচিত পেয়েছে।
কোধিনি গ্রামটি কালিকট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই গ্রামে বসবাস করছে প্রায় দুই হাজার পরিবার। তবে মজার ব্যাপার হলো, এসব পরিবারে ২২০ জোড়ারও বেশি যমজ রয়েছে। সাধারণ যমজ বা নন-আইডেনটিক্যাল টুইন এবং হুবহু একই রকম দেখতে আইডেনটিক্যাল টুইন সব ধরনের যমজই দেখা যায় এই গ্রামে। আবার দুটি যমজ ভাইবোনের দেখাও মিলবে।
সমগ্র বিশ্বে গড়ে এক হাজার মানুষের মধ্যে একজোড়া যমজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা তাতেও সন্দেহ আছে কিন্তু ২০১৫ সালের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ভারতের এই গ্রামের মোট ২ হাজার বাসিন্দার মধ্যে ২২০ জোড়াই জমজ। অর্থাৎ এই গ্রামের যমজের হার ৪২ শতাংশ।
কিন্তু এই গ্রামে যমজের মানুষ থাকার রহস্য কি? কেন প্রতিবছর এই গ্রামে প্রচুর যমজ শিশুর জন্ম হয়? এই সম্পর্কে অনেকে অনেক ধরনের মন্তব্য করেন। বিশেষজ্ঞ ও ডাক্তাররা এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। । ধারনা করা হয় ১৯৪৯ সালের দিকে এই গ্রামে প্রথম যমজ শিশু জন্মগ্রহণ করে। এরপর থেকে প্রতি বছর এই সংখ্যা কেবল বেড়েই চলেছে। অনেকেই ধারনা করেন এই গ্রামের পরিবেশ এবং জিনগত কারণে এই গ্রামে অধিকাংশ যমজ শিশু জন্ম নেয়। কিন্তু তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায় কারন এই গ্রামের যেসব মেয়ের বাইরে অন্য কোথাও বিয়ে হয়েছে সেখানেও তারা যমজ সন্তান জন্ম দিয়েছেন। তাহলে এখানে মুল রহস্যটা কি? এই রহস্যের কেউ কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। এ এক অদ্ভুত প্রাকৃতিক বিস্ময়।
২০০৮ সালে গ্রামটিতে ১৫ জোড়া যমজের জন্ম হয়। আর গত ৫ বছরে জন্ম নিয়েছে ৬০ জোড়া যমজ শিশু। এবং এর সংখ্যা বেড়েই চলছে। মজার ব্যাপার হলো এখানে অধিকাংশ যমজই ‘আইডেন্টিকাল টুইন’ অর্থাৎ দেখতে হুবহু একই রকম। যার কারনে এই গ্রামে গেলে যে কাররই বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়।
এই গ্রামের স্থানীয়রাই কার সময় সমস্যায় পরে যায়। কারন একই চেহারার দুজন মানুষকে তারা নিজেরাই ঠিকমত আলাদা করতে পারে না বাইরের মানুষ তো দূরে থাক। তারপরও এই বিষয়টি নিয়ে তারা বেশ মজাও অনুভব করে থাকে। প্রায়ই দূর দুরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে কোধিনি গ্রামের যমজদের দেখতে। এর যত ব্যাখ্যাই থাকুক না কেন, ভারতবর্ষের মানুষের কাছে এ এক অমীমাংসিত রহস্য।
–ডাইনিদের কূপ–
ডাইনিদের কূপ – নামটা শুনলেই মনের মধ্যে কেমন যেনো একটা ভয় ধরানো অনুভূতির সৃষ্টি হয়! মনে হয় এটা বুঝি এমন কোন কূপ যার ভেতরে ডাইনিরা বসবাস করে! ধারে কাছে কেউ গেলেই ধরে নিয়ে যাবে কুয়ার ভেতর, তারপর ঘাড় মটকে খেয়ে ফেলবে! আসলে কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও তেমন কিছু নয়। সেই আলোচনায় আসছি এখন।
ডাইনিদের কূপ আসলে কি?
কূপ বা কুয়া বলতে আমরা সাধারণত কি বুঝি? মাটিতে গোল করে কাটা গভীর গর্ত, যার ওপর থেকে অনেক নিচে পানি দেখা যায়। দড়িতে বালতি ঝুলিয়ে সেই গভীর কূপ থেকে পানি তুলতে হয়। কুয়া অথবা কূপের কথা শুনলেই এমন একটি দৃশ্য নিশ্চয়ই আপনার চোখের সামনে ভেসে ওঠে! কারন বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে এখনো অনেক যায়গায় এমন গভীর কূপ দেখা যায়। কিন্তু যদি বলি, এমন কূপও আছে পৃথিবীতে- যার বাইরেই দড়িতে বালতি ঝুলে থাকে, আর কূপ বেয়ে পানি উপচে পড়ে চারিদিকে। আর এত বেশি পানি গড়িয়ে পড়ে যে কূপের চারপাশে মোটামুটি ছোটখাটো একটা বন্যা বয়ে যায়। কি? বিশ্বাস হচ্ছে না তাই না? বিশ্বাস না হওয়ারই কথা। কিন্তু এ রকম একটি কূপ সত্যি সত্যি আছে পৃথিবীর বুকে! মানুষ এই কূপের নাম দিয়েছে- ‘ডাইনিদের কূপ’।
ডাইনিদের কূপ কোথায় অবস্থিত?
প্রকৃতির অদ্ভুত এই সৃষ্টি রয়েছে ‘এস্তোনিয়া’র উত্তরাঞ্চলের ‘তুহালা’ গ্রামে। প্রায় ৩ হাজার বছর আগে নির্মিত হয় এই কূপ। এই কূপের গভীরতা কিন্তু মোটেও খুব বেশি নয়, মাত্র ২.৫ মিটার। আর এই গভীরতায় বেড়িয়ে আসে এত পরিমাণ পানি। আসলেই অবিশ্বাস্য ব্যাপার। তবে এই পানি কিন্তু বছরের ১২ মাসই পাওয়া যায় না। মূলত শীতকাল আর বর্ষাকালেই পানি পাওয়া যায়। আর যখন পানি পাওয়া যায় তখন চারপাশের কি অবস্থা হয় তা তো আগেই বলেছি।
ডাইনিদের কূপ নামকরণের কারণ কি?
ডাইনিদের কূপ এর নামকরণের পেছনে আছে এক মজার কাহিনী। এখানকার স্থানীয়দের মাঝে একটা প্রচলিত লোককথা আছে এই কূপ নিয়ে। তাদের ধারণা- প্রতিবছর নির্দিষ্ট এক সময়ে এই কূপের নিচে ডাইনিরা একত্র হয় গোসল করতে। আর এ সময় তারা নিজেদের মাঝে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেয়। এটা আবার মামুলি কোন ঝগড়া নয়! কথা কাটাকাটি থেকে হয় হাত চালাচালি। একজন আরেকজনের ওপর আক্রমণ চালায়। আর এই আক্রমণের কারণেই পানি এ রকমভাবে বের হয়ে আসে।
তুহালা অঞ্চলের মানুষরা সম্ভবত সবাই হ্যারি পটারের ফ্যান। তারা যাদুর রাজ্যে বসবাস করতে বেশি পছন্দ করে, সেকারণেই হয়তো জ্ঞান বিজ্ঞানের এই যুগেও আজও বেঁচে আছে এসব লোককথা। আবার অনেকে বলেন, তারা রাতের বেলা এই কূপের ওপর দিয়ে আগুনের গোলক উড়ে যেতে দেখেছেন। আবার অনেকের ধারণা এটা সৃষ্টিকর্তার এক অলৌকিক নিদর্শন। যে যা-ই বলুক না কেন, এই কূপের সব ঘটনার কিন্তু বেশ শক্ত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে।
ডাইনিদের কূপ এর রহস্যভেদ-
বিজ্ঞানীরা বলেন যে ডাইনিদের কূপ এর মূল রহস্য লুকিয়ে আছে এই এলাকার ভৌগলিক গঠনে। এই অঞ্চলে ভূগর্ভে অনেকগুলো নদী রয়েছে। মূলত শীতকালে আর বর্ষাকালে এই ঘটনা ঘটার কারণ হলো, শীতকালে যখন বরফ গলে তখন ভূগর্ভস্থ নদীগুলোর মাঝে প্রবাহিত পানির পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে যায়। ভু বিজ্ঞানীদের ধারণা – এই কূপ খননের সময়ে কোনো এক ভাবে এই নদীর কোনো এক শাখার সাথে তা মিলে যায়। আর তখনই পানি উপচে পড়ে কূপ থেকে। একইভাবে বর্ষাকালে একই ঘটনা ঘটে।
ডাইনিদের কূপের কিছু অমীমাংসিত রহস্য
যতই বৈজ্ঞানিক ব্যক্ষা দেয়া হোক না কেন- একটা রহস্য কিন্তু থেকেই যায়। তত্কালীন সময়ে এত সূক্ষ্মভাবে মাটির নিচে থাকা নদীর কোনো এক প্রশাখার সাথে মিল রেখে মাটির ওপর দিয়ে কিভাবে এই কূপটি খনন করা হয়েছিল? তাছাড়া নদী না দেখে এটা খনন করা কিভাবে সম্ভব? এই রহস্য মানুষের পক্ষে আজও ভেদ করা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে কি সম্ভব হবে? আমরা অপেক্ষায় থাকবো।
আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে এই রকম আরো আর্টিকেল আপনাদের সামনে নিয়ে আসবো।
আল্লাহ হাফেজ।
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, অন্যকে সুস্থ রাখবেন।
ai ta koi vai vole gesen na ki