আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন যে যখন আপনারা আপনাদের স্মার্টফোনে এমন কিছু টুইকস এবং হ্যাক করতে চেষ্টা করেন যেগুলোর সাথে রুট পারমিশন জড়িত থাকে সেগুলোর জন্য ওয়ারেন্টি বাতিলের সাবধানতা প্রদর্শন করা হয়। তাহলে কি সত্যিই স্মার্টফোন রুট করলে বা বুটলোডার আনলক করলে স্মার্টফোনের ওয়ারেন্টি বাতিল হয়ে যায়?
ছোট্ট উত্তর, “হ্যাঁ!”
তবে উত্তরটি ছোট্ট হলেও যদি এই উত্তরের পেছনের কারণগুলো ব্যখ্যা করতে শুরু করা হয় তবে তা অনেকটাই কমপ্লেক্স হয়ে দাঁড়াবে। অপরদিকে স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো কেন এধরণের নিয়ম ওয়ারেন্টি অ্যাগ্রিমেন্টে যুক্ত করেছে সেটা হয়তো শতভাগ নির্ভুলভাবে ব্যখ্যা করা সম্ভব হবেনা তবে অবশ্যই এর কিছু ব্যখ্যা দেয়া সম্ভব।
প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো কী বলে?
সহজ ভাষায় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া তথ্য থেকে জানা যায় যে কোন রকম আন-অ্যাপ্রোভড সফটওয়্যার মোডিফিকেশন করা হলেই স্মার্টফোনের ওয়ারেন্টি বাতিল হয়ে যাবে। তবে শুধুমাত্র নেক্সাস ডিভাইসগুলো এবং ডেভেলপার এডিশনের স্মার্টফোনগুলোর জন্য এই নিয়ম কিছুটা ব্যাতিক্রম হয়ে থাকে যদিও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এসম্পর্কে কোন পরিষ্কার বক্তব্য দেয়না। উদাহরণস্বরূপ, মটোরোলার একজন রিপ্রেজেন্টেটিভ একটি পাবলিক ফোরামে নিমোক্ত মন্তব্য করেছিলেন যা হুবহু তুলে দেয়া হলো –
“The new (2015) Moto X Pure is not a developer edition, so unlocking the bootloader does void the warranty…
To sum up and clarify:
Unlocking the bootloader will show your warranty as void.
However, if an unrelated physical material failure should occur, such as a bad volume rocker or a failed speaker, it will be covered if the phone shows no signs of physical abuse. The key is that the problem can’t be traced to software or abuse…
The above guidelines are applicable in the US only. Policies differ by region/country.”
এমনকি নেক্সাস ডিভাইসগুলোর ক্ষেত্রেও ওয়ারেন্টি বিষয়ক জটিলতা দেখা যায়। সময়ের সাথে সেই ডিভাইসগুলোর ক্ষেত্রে কিছুটা ভাষার পরিবর্তন করা হয়েছে আরকি! যেমন, আগেকার ডিভাইসগুলোর জন্য ব্যবহার করা হত ‘বুটলোডার আনলক করা যাবে (এবং এতে ওয়ারেন্টি বাতিল হয়ে যাবে!) আর বর্তমানে নতুন নেক্সাসগুলোর ক্ষেত্রে লেখা থাকে “বুটলোডার আনলক করা যাবে (এতে ওয়ারেন্টি বাতিল হতে পারে)”। বুঝুন তাহলে, কথা একই! একটা সরাসরি আর একটা ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে বলা হয়েছে শুধুমাত্র।
একজন রেডডিট ব্যবহারকারী গুগলের একজন সাপোর্ট রিপ্রেজেন্টেটিভকে প্রশ্ন করেছিলেন তার নেক্সাস ৬পি ডিভাইসটিতে রুট করে কাস্টম রম ইন্সটল করলে স্মার্টফোনটির ওয়ারেন্টি বাতিল হয়ে যাবে কি না। এবং রিপ্রেজেন্টেটিভের উত্তরে জানা গিয়েছিল যে এতে করে ওয়ারেন্টি বাতিল হবেনা। তবে এটা কিন্তু শুধুই একজন সাপোর্ট রিপ্রেজেন্টেটিভের উত্তর ছিল, কোন অফিসিয়াল ঘোষণা নয়।
ওয়ারেন্টি কীসের উপর ভিত্তি করে দেয়া হয়?
প্রথমেই একটা বিষয় লক্ষ্য করলে দেখবেন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওয়ারেন্টি সম্পর্কিত নিয়মগুলোর ব্যাপারে পুরোপুরি স্পষ্ট নয়, কিছু কথা তারা এমনভাবে প্রয়োগ করে যার ফলে ব্যবহারকারীরা পরবর্তিতে দ্বিধা দন্দে ভোগেন! তবে এটা কিন্তু সত্যি যে যে কোন প্রতিষ্ঠানই হার্ডওয়্যার রিলেটেড প্রবলেমগুলো কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই ঠিক করে দিতে একপ্রকারের বাধ্য।
উদাহরণস্বরূপ, আপনার স্মার্টফোনে যদি কোন হার্ডওয়্যার সম্পর্কিত সমস্যা থেকে থাকে যেমন ধরুন আপনার টাচ স্ক্রিন কাজ করছেনা বা হার্ডওয়্যার বাটনে কোন রেসপন্স পাচ্ছেন না তবে এই সমস্যাগুলো কোন রকম ঝামেলা না করেই ওয়ারেন্টির আন্ডারে চলে যায় কিন্তু সফটওয়্যার সম্পর্কিত সমস্যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঝামেলা করে থাকে যদি সমস্যা আপনার কারণে সৃষ্টি হয়ে থাকে।
আর আপনি যদি কোন সেলুলার ক্যারিয়ারের কাছ থেকে স্মার্টফোন কিনে থাকেন (যেমন, গ্রামীণফোন, রবি) তবে তারা রুটেড ডিভাইসগুলোতে কোন প্রকার ওয়ারেন্টি সার্ভিস প্রদান করতে চাইবেনা, কোনভাবেই নয়। এটা মূলত একদিক থেকে ঠিকই আছে। কেননা, ক্যারিয়ারে যারা রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে থাকেন তারা নিশ্চয়ই আপনাকে এমন কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নয় যে ‘সায়ানোজেন মড ব্যবহার করলে অমুক সুবিধা কাজ করবে কি না”, তাইনা?
যদি সমস্যায় পড়েই থাকেন তবে সম্ভবত আপনার ভাগ্যই খারাপ!
আসলে, টেকনিশিয়ানদের পক্ষে কোনটি হার্ডওয়্যার সম্পর্কিত সমস্যা আর কোনটি আপনার করা সফটওয়্যার সম্পর্কিত সমস্যা সেগুলো বুঝে নেয়া খুব একটা কঠিন কিছুই নিয়। এজন্যে সাধারণ ভাবেই কোন সমস্যায় তাদের কাছে স্মার্টফোন নিয়ে গেলে যদি তারা বুট করার সময় একটি কাস্টম রমের লোগোও দেখতে পায় তাহলেই তারা আপনার স্মার্টফোন আপনাকে ফেরত দিয়ে দিতে পারে! কেননা, নিয়মে স্পষ্ট করেতো লিখেই রেখেছে তারা। অবশ্য, যদি আপনি আপনার স্মার্টফোনে বুট লোগো পর্যন্ত দেখতে পারেন তবে কিছু রিসার্চ করলে আপনি নিজেই আপনার ডিভাইসটি ঠিক করে ফেলতে পারবেন।
মনে রাখা জরুরী যে রুট করা এবং নতুন রম ফ্ল্যাশ করার প্রক্রিয়ায় যদি আপনি কোন ভুল করে থাকেন তবে আপনার স্মার্টফোনের ছোট থেকে শুরু করে নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। ছোট্ট একটি উদাহরণ দেই, ধরুন আপনি একদমই নতুন এবং আপনি রুট করে প্রথমেই আপনার ডিফল্ট লঞ্চারটি অথবা ওয়্যারলেস রেডিও মুছে দিলেন। তখন? এক্ষেত্রে সহজেই আপনার টেকনিশিয়ানরা এটা বুঝে নিবে এবং আপনার ওয়ারেন্টি বাতিল করে দেয়া হবে।
মনে রাখবেন রুট প্রসেসের সময় ভুল হলে কিছু ক্ষেত্রে স্মার্টফোন পারমানেন্টলি ব্রিক হতে পারে যাকে অনেকেই হার্ড ব্রিক বলে থাকেন যার ফলে আপনার স্মার্টফোনটি কোনভাবেই বুট হবেনা। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো আপনাকে খুব সহজেই ফিরিয়ে দিতে পারবে। তবে হ্যাঁ, হার্ড ব্রিক হওয়ার ঘটনা খুবই কম এক্ষেত্রে। হয়না বললেই চলে।
পাশাপাশি অনেক অনভিজ্ঞ ব্যবহারকারীরা এমন আছেন যে তারা না বুঝেই কিছু টুইকস করে ফেলেন যার ফলে হার্ডওয়্যার ড্যামেজ হয়ে যায়। যেমন, কেউ না বুঝেই প্রসেসর ওভার করে ফেললেন যার ফলে ওভারহিট হয়ে কোন একটা সমস্যা দেখা দিল। সেক্ষেত্রে আপনি আরও বিপদে পড়বেন। তাই যাই করবেন, সাবধানেই করবেন।
যদি বিপদে পড়েই যান তাহলে?
যদি আপনার স্মার্টফোনে রুট করার পরে কোন প্রকার সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে এবং আপনি যদি আপনার স্মার্টফোনটি চালু করতে সক্ষম হন তবে ওয়ারেন্টিতে নেয়ার আগে আনরুট করে ফেলুন। রুট প্রসেসের চাইতে আনরুট প্রসেস অনেকটাই নির্ভেজাল হয়ে থাকে। বলতে পারেন, “ওয়ান ক্লিক অ্যাকশন”! তাহলে আর সমস্যা হবার কথা নয়।
শেষ কথা
অনেকে এমনও আছেন যারা রুট করবেন না করবেন না বা করলে কি সুবিধা-অসুবিধা এগুলোই জানেন না। তাই তাদের জন্য বলতে চাই, প্রথমে জানুন টার্মটির সম্পর্কে। এরপরেও যদি আপনার মনে হয় আপনার ডিভাইস রুট না করলেই নয় শুধুমাত্র তখনই রুট করুন। অন্যথায় আমার মতে রুট না করাই শ্রেয়।
আমার ব্লগ সবাইকে আমন্ত্রণ রইল
symphony e60 model