তুন প্রজন্মের স্মার্টফোন গুলোর সবচাইতে খাস কথা হলো, এই ফোন গুলো বৃষ্টিতে ভিজতে পারে, সুইমিং পুলের ভেতর ছবি তুলতে পারে আর কখনোয় পানি নিয়ে আপনাকে কোন চিন্তা করতে হয়না। ওয়াটার প্রুফ ডিভাইজ বলতে কিন্তু আমরা এই সুবিধা গুলোকেই বুঝি। কিন্তু আমরা যা বুঝি তা কতটা সত্যি? সত্যিটা হচ্ছে, এই ডিভাইজ গুলো ওয়াটার প্রুফ নয়—এরা ওয়াটার রেজিট্যান্ট! আর ঠিক এই বিষয়টিই ভিন্নতা সৃষ্টি করে, যা আমাদের জানা প্রয়োজন।

অবশ্যই শুধু স্মার্টফোন নয়—বরং ওয়্যারেবল গ্যাজেট গুলো যেমন স্মার্ট ওয়াচ, ফিটনেস ব্যান্ড ইত্যাদিও আমাদের চলাফেরা এবং দৈনন্দিন জীবনের মান উন্নয়ন করছে। তাই স্মার্টফোনের পাশাপাশি এই সকল ডিভাইজ গুলোও প্রতিদিন অর্জন করছে নতুন নতুন ক্ষমতা। আমাদের জীবনের সবসময়ের সাথে জড়িত ডিভাইজ গুলোর সবচাইতে বড় সমস্যা হলো পানির স্পর্শে চলে আসা। তাই আজকালের ফোন প্রস্তুতকারী কোম্পানিরা ওয়াটার প্রুফ ডিভাইজ প্রস্তুত করার জন্য বেশি আগ্রহী। প্রস্তুতকারী কোম্পানিরা প্রায়ই তাদের বিজ্ঞাপনে প্রচার করে থাকে যে, তাদের ডিভাইজটি “ওয়াটার প্রুফ”। কিন্তু এই শব্দটি কখনোয় সত্যি নয়। তাই আপনি যদি আপনার ডিভাইজ সম্পর্কে সতর্ক না হোন—তবে আপনাকে অনেক টাকার মাশুল গুনতে হতে পারে।

বন্ধুরা, আজকের আর্টিকেলে আমি আলোচনা করবো ওয়াটার প্রুফ এবং ওয়াটার-রেজিস্টান্ট এর মধ্যে পার্থক্য নিয়ে। আরো আলোচনা করবো, আপনার ডিভাইজ যদি ওয়াটার-রেজিস্টান্ট হয়ে থাকে—তবে আপনার কোন কোন সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজনীয়? এবং বোনাস হিসেবে থাকবে এই সম্পর্কিত আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তাই চলুন শুরু করা যাক…

ওয়াটার প্রুফ বনাম ওয়াটার রেজিট্যান্ট

ওয়াটার প্রুফ ডিভাইজ মানে হলো, যে ডিভাইজের মধ্যে কোন পানি প্রবেশ করতে পারবেনা, যেখানে ওয়াটার রেজিট্যান্ট ডিভাইজ মানে, সে ডিভাইজে অনেক সময় পানি প্রবেশ করবে কিন্তু তারপরেও কিছু স্তর পর্যন্ত এটি সুরক্ষিত থাকবে। কোন ডিভাইজ প্রস্তুতকারী কোম্পানি ওয়াটার প্রুফ ডিভাইজ তৈরি করতে সক্ষম নয়, এদের ডিভাইজ গুলো ওয়াটার রেজিট্যান্ট হয়ে থাকে। যদিও এটি সূক্ষ্ম ব্যাপার কিন্তু এতেই চলে আসে মারাত্মক পার্থক্য।

হ্যাঁ, আপনার ফোন হয়তো বৃষ্টির পানিতে ভেজার ক্ষমতা রাখে, কিন্তু আপনি একে নিয়ে গভীর সমুদ্রে ডাইভিং করতে যেতে পারবেন না। হ্যাঁ, আপনার স্মার্ট ওয়াচ হয়তো আপনাকে পানির নিচে সময় প্রদর্শন করতে সক্ষম হবে, কিন্তু আপনি পানির নিচে এর কোন বাটন চাপতে পারবেন না—কেনোনা বাটন চাপলে এর সুরক্ষা স্তরের মুখ খুলে যাবে এবং পানি ভেতরে প্রবেশ করবে।

তাহলে যখন ওয়াটার প্রুফ ডিভাইজ বলে কিছুই নেই তখন এ নিয়ে আলোচনা করে আপনার কোন কাজে আসবে না। তো চলুন আলোচনা করা যাক ওয়াটার রেজিট্যান্ট নিয়ে। একটি ডিভাইজ কতটা পানি প্রতিরোধী বা কতদূর পর্যন্ত পানি সহ্য করতে পারবে তা নির্ণয় করার জন্য ডিভাইজ অনুসারে এ গুলোকে দুই স্ট্যান্ডার্ডে ভাগ করা হয়ে থাকে। স্ট্যান্ডার্ড গুলো হলো এটিএম (ATM) এবং আরেকটি আইপি (IP)।

এটিএম স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করা হয় ওয়্যারেবল ডিভাইজ গুলোর ক্ষেত্রে

এটিএম (ATM) মানে এখানে বাতাবরণকে (Atmosphere) বোঝানো হয়েছে। আপনি যখন সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উপরে থাকেন তখন তখন এক প্রকারের বাতাবরণের চাপ আপনার চারপাশে বিরাজ করে এবং যখন ১০ মিটার পানির গভীরে অবস্থান করেন তখন আরেক প্রকারের বাতাবরণের চাপ আপনার চারপাশে বিরাজ করে। উপরের চাপকে ১ এটিএম হিসেবে ধরা হয় এবং ১০ মিটার পানির ভেতরের চাপকে ২ এটিএম ধরা হয়ে থাকে। এভাবে প্রত্যেক বেশি ১০ মিটার পানির নিচের গভিরতার জন্য আলাদা এটিএম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

স্মার্ট ওয়াচ এবং আপনার ফিটনেস ব্যান্ডের পানি প্রতিরোধী ক্ষমতা সাধারনত এটিএম দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। যদি আপনার ডিভাইজটি ওয়াটার রেজিট্যান্ট ৫ এটিএমস দ্বারা রেটিং করা হয়ে থাকে তবে আপনি এর সাথে আরামে গভীর সমুদ্রের ডাইভিং এ যেতে পারেন, আপনার সুইমিং পুলে আরামে সাঁতার কাটতে পারেন।

কিন্তু সত্য কথা বলতে ওয়্যারেবল ডিভাইজ গুলোর জন্য কোন স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট করা হয়ে থাকে না। কিন্তু তারপরেও একজন ব্যবহারকারী হিসেবে আপনার ডিভাইজটি যদি ৫ এটিএমস হয়ে থাকে তবে আপনার চিন্তার কোন কারন নেই। কিন্তু আপনার ডিভাইজটি এটিএম স্ট্যান্ডার্ডের তাই এটি একটি ওয়াটার রেজিট্যান্ট ডিভাইজ—ফলে এর এটিএম এর মানের উপর নির্ভর করেই আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন যে, কত গভীর পানিতে যেতে পারবেন। আর আরেকটি সমস্যা হলো পানিতে নিমজ্জিত থাকার সময় আপনি কোন বাটন প্রেস করতে পারবেন না।

ফোনের জন্য আইপি রেটিং ব্যবহার করা হয়ে থাকে

ওয়্যারেবল ডিভাইজ গুলোর জন্য কোন স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট না থাকলেও স্মার্টফোনের জন্য কিন্তু ওয়াটার রেজিট্যান্ট স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট রয়েছে। আর এই টেস্টের রুল প্রদান করেছে “ইন্টারন্যাশনাল ইলেকট্রো টেকনিক্যাল কমিশন (International Electrotechnical Commission (IEC)”। এবং এই স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট পদ্ধতিকে বলা হয়ে থাকে ইন্টারন্যাশনাল প্রোটেকশন (International Protection) বা আইপি (IP)। আইপি রেটিং সাধারনত দুটি ডিজিট কোডে হয়ে থাকে।

যেমন স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৭ এজের (রিভিউ) আইপি রেটিং হলো IP68। এই ডিজিট দুইটির মধ্যে প্রথম ডিজিটটি নির্দেশ করে ধুলাবালি প্রোটেকশন দেওয়ার। যেখানে 6 হলো সর্বউচ্চ রেটিং (আজকের দিনের বেশিরভাগ স্মার্টফোন গুলোয় এটি অর্জনে সক্ষম হয়েছে)। এবং দ্বিতীয় ডিজিটটি নির্দেশ করে ওয়াটার প্রোটেকশন দেওয়ার, যেখানে 9 হচ্ছে সর্বউচ্চ রেটিং (কিন্তু বেশিরভাগ ফোনই 7,8 রেটিং অর্জন করে ফেলেছে)। চলুন নিচের লিস্টটি থেকে ওয়াটার প্রোটেকশন নিয়ে আইপি রেটিং সম্পর্কে জানি।

  • 1: পানির ফোটায় কোন ক্ষতি হবে না।
  • 2: পানির ফোটায় কোন ক্ষতি হবে না এবং ১৫ ডিগ্রি উল্লম্বভাবে পড়ে গেলেও কোন ক্ষতি হবে না।
  • 3: পানির স্প্রে করলেও কোন ক্ষতি হবে না, ৬০ ডিগ্রি উল্লম্বভাবে পড়ে গেলেও কোন ক্ষতি হবে না।
  • 4: ফোনের যেকোনো দিক থেকে পানির ঝটকা দিয়ে ধুয়ে দিলেও কোন ক্ষতি হবে না।
  • 5: ৬.৩এমএম নজেলের ওয়াটার জেট দিয়ে পানি নিক্ষেপ করলেও কোন ক্ষতি হবে না।
  • 6: ১২.৫এমএম নজেলের ওয়াটার জেট দিয়ে পানি নিক্ষেপ করলেও কোন ক্ষতি হবে না।
  • 7: ১ মিটার গভীর পানিতে সর্বউচ্চ ৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখলেও কোন ক্ষতি হবে না।
  • 8: ১ মিটারের বেশি গভীর পানিতে সর্বউচ্চ ৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখলেও কোন ক্ষতি হবে না।
  • 9: অধিক তাপমাত্রার এবং অধিক চাপের পানি স্প্রে করলেও কোন ক্ষতি হবে না।

আশা করছি এতক্ষণে আপনাদের বিভিন্ন আইপি রেটিংস সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা হয়ে গেছে। কিন্তু এখানেও একটি সমস্যা আছেআপনার ডিভাইজটি ওয়াটার প্রোটেকশন আইপি রেটিং 8 মানে কিন্তু এটি নয় যে, তা আইপি রেটিং 6 বা আইপি রেটিং 7 পরীক্ষিত! আর এই জন্যই কিছু ডিভাইজে একাধিক আইপি রেটিং দেওয়া থাকে। যেমন সনি এক্সপেরিয়া জে৫ এ আইপি রেটিং IP65 এবং আইপি রেটিং IP68 উভয়ই রয়েছে।

কিন্তু আপনার এতটাও চিন্তা করার কিছু নাই, আমি শুধু টেকনিক্যাল ব্যাপার গুলো নিয়ে কথা বলছিলাম। যেকোনো ডিভাইজ যদি আইপি রেটিং যথাক্রমে 5, 6, 7, এবং 8 পাস করে তবে সেই ডিভাইজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রথম চারটি স্টেপও পাস করে নেবে। যেমন পানি ফোটা, পানির স্প্রে, এবং পানির ঝলকা। তো ওয়াটার রেজিট্যান্ট ফোন কেনার আগে আপনার কোন বিষয়টি সবচেয়ে প্রথমে খেয়াল করা দরকার? সবচেয়ে প্রথমে দেখতে হবে আইপি রেটিংস এর দ্বিতীয় ডিজিট। এখানে যতো বেশি উচ্চ নাম্বার থাকবে—মানে প্রোটেকশনও ততোবেশি উচ্চমানের হবে।

ওয়াটার প্রুফ ডিভাইজ এর সীমাবদ্ধতা

সত্যিটা নিশ্চয় এতক্ষণে খুব ভালোভাবে জেনে গেছেন যে, “ওয়াটার প্রুফ” আসলে “ওয়াটার রেজিট্যান্ট”। তো চলুন এবার সর্ত অনুসারে ওয়াটার প্রুফ প্রযুক্তির কিছু সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। যাতে আপনি সহজেই নির্ণয় করতে পারেন যে ঠিক কোন ব্যাপার গুলোতে আপনার সতর্ক থাকা প্রয়োজনীয়।

সিল এবং বাটন– আপনার ফোনের যদি সিম স্লট বা মেমোরি স্লটের মুখে কোন ঢাকনা থাকে তবে তা বন্ধ করে নিন। কেনোনা এই ঢাকনা গুলো খোলা থাকলে ভেতরে পানি প্রবেশ করতে পারে। যদি আপনার ডিভাইজে কোন বাটন থাকে তবে পানির নিচে তা প্রেস করা থেকে বিরত থাকুন। বাটন প্রেস করার ফলে সুরক্ষা স্তরের মুখ খুলে যেতে পারে এবং আপনার ফোনে পানি প্রবেশ করতে পারে। হ্যাঁ, কিছু ফোন কোম্পানি তাদের ফোনে বাটন প্রেস করার অনুমতি প্রদান করে থাকে। তবে বাটন প্রেস করার আগে আপনার কোম্পানি অনুমতি দেয় কিনা তা চেক করে নেওয়া উত্তম।

শুধু ফ্রেস পানিতে– আপনি কি আপনার ফোন সমুদ্রের গভীরে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন? হ্যাঁ! কিন্তু আপনার কি এটা করা উচিৎ? না, একদমই না! বন্ধুরা দেখুন প্রত্যেকটি ওয়াটার রেজিট্যান্ট আইপি টেস্ট কিন্তু শুধু মাত্র ফ্রেস পানি দ্বারা করা হয়ে থাকে—সমুদ্রের পানিতে নয়। সমুদ্রের পানির সাথে দ্রবীভূত লবণ আপনার ফোনের চরম ক্ষতিসাধন করতে পারে। তাই, আপনার কাছে যদি একটি ওয়াটার প্রুফ ফোন থাকে—তবে তা সমুদ্রের পানি থেকে দূরে রাখায় ভালো। ভুলক্রমে যদি সমুদ্রের পানিতে ফোন চলে যায়, তবে তাৎক্ষনিকভাবে তা পরিষ্কার পানি দ্বারা ধুয়ে নেওয়া উচিৎ হবে।

পানি ছাড়া অন্য তরলে নয়– প্রত্যেকটি আইপি টেস্ট শুধু মাত্র পানির বিরুদ্ধে সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়, কিন্তু কফি, চা, কোল্ড ড্রিঙ্কস, তেল ইত্যাদির বিরুদ্ধে নয়। তাই ভুলক্রমেও যদি পানি ব্যাতিত অন্য কোন তরল আপনার ফোনের উপর ঢেলে পড়ে তবে তাৎক্ষনিকভাবে ফোনটির পাওয়ার অফ করে দিন, ব্যাটারি খোলা সম্ভব হলে খুলে ফেলুন (নন-রিমুভেবল ব্যাটারি বনাম রিমুভেবল ব্যাটারি), এবং ফোনটি ভালোভাবে মুছে এবং পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে আবার পাওয়ার অন করুন।

ওয়াটার প্রুফ কিন্তু কোন ফিচার নয়!

বন্ধুরা একটি বিষয় খুব ভালোভাবে জেনে রাখুন যে, ফোন ওয়াটার প্রুফ হওয়া মানে এটি পানির বিরুদ্ধে একটি প্রোটেকশন কিন্তু এটি কোন ফিচার নয়। আপনি কোন ওয়াটার প্রুফ ফোনের বিজ্ঞাপনে হয়তো দেখে থাকবেন যে, পানির নিচে গিয়ে সবাই মিলে ছবি উঠাচ্ছে। কিন্তু ব্যাস্তবে তা কতটুকু সম্ভব? পানির নিচে ফোনের টাচ স্ক্রীন (টাচ স্ক্রীন প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে) কখনোয় ভালো কাজ করবে না। ফলে আপনি কোথায় টাচ করছেন ফোন বুঝতেই পারবেনা—ছবি উঠানো তো হয়ে গেলো অনেক দূরের কথা।

ফোন ওয়াটার প্রুফ হওয়া শুধু মাত্র একটি প্রোটেকশন পরিমাপ, এটি কোন নতুন ফিচার নয়। তাই প্রত্যেকবার ফোন ভিজে যাওয়ার পড়ে ফোনটি বন্ধ করুন, ব্যাটারি খুলে ফেলুন যদি সম্ভব হয়, ফোনটি ভালোভাবে শুকনো কাপড় দ্বারা মুছে নিন, এবং ফোনটি অন করুন।

আশা করি উপকৃত হয়েছেন। সব ধরনের নতুন গান পেতে নিয়মিত চোখ রাখুন

Leave a Reply