বর্তমানে মোবাইল ফোন খালি কথা বলা ও ছবি
তোলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এইগুলা ছাড়াও
মোবাইল ফোন অনেক এডভান্স কাজ করতে
পারে। দৈনন্দিন জীবন কে আরো সহজ করতে
মোবাইল ফোনে প্রচুর এক্সট্রা ফাংশনালিটি দেয়া
হয়। আর এই কাজ গুলার জন্য লাগে সেন্সর।
আজকে আমরা মোবাইল ফোনে ব্যাবহৃত কমজ
সেন্সর গুলা সম্বন্ধেই জানার চেষ্টা করবো
.
★Proximity Sensor:- স্মার্টফোনের সবচেয়ে
বহুল ব্যাবহৃত সেন্সর মনে হয় এইটা ই। প্রায়
প্রত্যেকটা স্মার্টফোনেই এই সেন্সর দেয়া
থাকে।মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় যখন
আমরা ফোনটা কানের কাছে নেই তখন ডিসপ্লের
আলো নিভে যায়। আবার যখন কান থেকে দূরে
আনি বা মুখের সামনে আনি তখন সয়ংক্রিয়ভাবে
ডিসপ্লের আলো জ্বলে উঠে। অজ্ঞানবশত
যেনো কথা বলার সময় ডিসপ্লেতে টাচ না লাগে
এর জন্য এটা ব্যাবহার করা হয়। এই কাজটা করা হয়
প্রক্সিমিটি সেন্সরের সাহায্যে।
প্রক্সিমিটি সেন্সর টা থেকে ক্রমাগতভাবে একটা
আদৃশ্য আলো বিকিরিত হয়। ওই আলো যখন
কোন কিছুতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আসে তখন
সে এই তথ্যটা সফটওয়্যার কে দেয়। সফটওয়্যার
তখন ডিসপ্লে বন্ধ/চালু করে।
অনেক ফোনে একাধিক প্রক্সিমিটি সেন্সর ব্যাবহার
করা হয় বিভিন্ন ধরনের Gesture কন্ট্রোল এর
জন্য
.
★Accelerometer:- এইটা ব্যাবহার করা হয় ফোনের
ডিরেকশান বুঝার জন্য। মানে আমরা যখন অটো
রোটেশান অন করে রাখি তখন দেখা যায় ফোন
পোট্রেইট মোড এ ব্যাবহারের সময় ডিসপ্লে টা
ও পোট্রেইট মোড এ থাকে, আবার
লেন্ডস্কেপ মোড এ ফোন ঘুরালে ডিসপ্লে
অটোমেটিক লেন্ডস্কেপ মোড এ চলে যায়।
এছাড়াও গেম খেলার সময় ফোন মুভমেন্ট করে
গেম এর কন্ট্রোলিং এর জন্য ও এইটা ব্যাবহৃত হয়।
মোবাইল ফোনের এক্সেলেরোমিটার কাজ
করে মাইক্রো ইলেক্টো মেকানিকাল সিষ্টেম
(MEMS) এর মাধ্যমে। এইটা মেকানিকাল এবং
ইলেক্ট্রিক্যাল দুই পদ্ধতির একটা সমন্বয়ে কাজ
করে। এর মাধমে এক্সেলেরোমিটার ফোনের
কতটুকু নড়াচড়া করলো, কোন দিলে করলো
এইগুলা পরিমাপ করতে পারে। আগে এইটা দ্বিমাত্রিক
অক্ষে সীমাবদ্ধ থাকলেই বর্তমানে ত্রিমাত্রিক
অক্ষে নড়াচড়া পড়িমাপ করতে পারে এটি।
.
★Gyroscope:- Gyroscope সেন্সারের কাজ মূলত
এক্সেলারোমিটারের মতই কাজ করে। তবে এই
সেন্সরের কাজ একটু এডভান্স। যেখানে
Accelerometer ৩ অক্ষে কাজ করে সেখানে
এইটা ৩৬০ ডিগ্রী কোনে কাজ করতে পারে।
অর্থাৎ মোবাইল যেদিকেই ঘুরান প্রত্যেকটা
কোন এই সেন্সর ডিটেক্ট করতে পারবে।
বর্তমানে এই সেন্সরের ব্যাপক ব্যাবহার দেখা যায়।
বিশেষ করে ত্রিমাত্রিক (3D) গেইম গুলা খেলার
সময়, ৩৬০ ডিগ্রী ভিডিও/ছবি দেখার সময় এই
সেন্সর কাজে লাগে। এইটা না থাকলে VR বক্স এ
কিছু দেখেও মজা পাওয়া যায় না। VR বক্স এ ৩৬০
ডিগ্রি ভিডিও দেখার সময় আপনি যেদিকে তাকাবেন
ভিডিওর ডাইরেকশন ও ঠিক ওইদিকেই পরিবর্তিত
হবে। এইটা আপনাকে ম্যানুয়ালি করা লাগবে না।
.
★Pedometer:- প্যাডোমিটার ব্যাবহার করা হয় আপনি
কতটা হাটলেন বা কতদূর হাঁটলেন তা নির্নয় করার
জন্য। সাধারণত আমরা স্মার্ট ব্যান্ড বা স্মার্ট ওয়াচে
এইটা দেখতে পাই। তবে বর্তমানে কিছু
ফোনেও (হুয়ায়ুয়ে তে দেখেছি আমি) দেয়
এউ সেন্সর।
এইটা মূলত ভার্টিক্যাল ডিরেকশন, ফরওয়ার্ড
ডিরেকশন, সাইড ডিরেকশন এই তিনটা অক্ষে এ
মোবাইল ফোনের নড়াচড়া কে পরিমাপ করে
তারপর সেটার উপর ভিত্তি করে হিসাব করে যে
এক্সেলোমিটারের আপডেট ভার্শন বলা যায়।
.
★Magnetic Sensor:- ম্যাগনেটোমিটার মোবাইল
ফোনে কম্পাস বা দিক নির্দেশক যন্ত্রের কাজ
করে। যারা আমার মত দিক আউলাইয়া ফেলেন তাদের
জন্য খুবই উপকারী এইটা। এর মাধম্যে উত্তর-
দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম দিক গুলা দেখিয়ে দিবে।
কম্পাস কিভাবে কাজ করে আমরা সবাই জানি। এই
সেন্সরে একটা চৌম্বক থাকে আর আমরা জানি যে
চৌম্বক সবসময় উত্তর-দক্ষিন মেরু বরাবর থাকে। তাই
আপনি মোবাইল যেদিকেই ঘুরান ওই চোম্বকের
সাহায্যে মোবাইল ঠিকই দিক চিনতে পারবে।.
.
★Ambiant Light Sensor:- ফোনের
আশেপাশের পরিবেশের আলোর পরিমান
মেপে তার সাথে ফোনের ব্রাইটনেস সমন্বয়
করাই হচ্ছে Light সেন্সরের কাজ। অর্থাৎ এটার
মাধ্যমেই অটো ব্রাইটনেস কাজ করে। বাহিরে
গেলে যখন আলো বেশি থাকে তখন ডিসপ্লের
ব্রাইটনেস ও বেশি লাগে ফোনের কন্টেন্ট
দেখার জন্য আবার যখন আমরা বাসায় থাকি তখন কম
আলো লাগে যেনো চোখে কম চাপ পরে
এবং কিছু ব্যাটারি সেভ হয়। আর এইটা আমাদেরকে
ম্যানুয়ালি করতে হয় যদি Light সেন্সর না থাকে।
থাকলে কোন চিন্তা নাই অটো ব্রাইটনেস অন
করে রাখলে ফোন নিজে নিজেই বুঝে নেবে
কতোটুকু ব্রাইটনেস দরকার। মোবাইল ফোনের
উপরে ফ্রন্ট ক্যামেরা বা স্পিকারের আশেপাশেই
এটা থাকে।
Ambient Light Sensor মুলত কাজ করে একটা
ফটো ডায়োডের মাধ্যমে যা সেন্সরের
ভিতরে থাকে। এইটা এমন একটা ডিভাইস যে
আলোর বর্ণালী গুলাতে প্রতিক্রিয়াশীল। এইটা
প্রথমে আলোক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে
রুপান্তর করে তারপর সেটা CPU তে পাঠায়। তারপর
CPU সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্রাইটনেস এডজাস্ট
করে নেয়।
.
★Fingerprint Sensor:- মোবাইল ফোনের
বায়োমেট্রিক সিকিউরিটি সিষ্টেমের সবচেয়ে
সহজ, নিরাপদ ও জনপ্রিয় পদ্দতি হচ্ছে এটি। এর
মাধ্যমে ফোন আনলক করা, এপ আনলক/লক করা,
বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক্যাল পেমেন্ট এর
নিরাপত্তা, বিভিন্ন Gesture Control ইত্যাদি সুবিধা
পাবেন।
এটি মুলত প্রথমে আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট সমন্ধে ডাটা
কালেক্ট করে ওইটার প্যাটার্ন টা সেভ করে রাখে
পরবর্তিতে ব্যাবহারের জন্য। পরবর্তিতে যখন
আপনি ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর কোন কাজ করতে যান তখন
মোবাইল আগের ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর সাথে মিলিয়ে
দেখে। যদি মিলে তাহলে আপনি ফোনের
এক্সেস নিতে পারবেন। না হলে পারবেন না।
কিভাবে সে ফিঙ্গারপ্রিন্ট আপনার আঙ্গলের ছাপ টা
সেভ করলো এইটা নিয়া বললে আলাদা একটা লিখা
লিখতে হবে।
.
★Barometer:- ব্যারোমিটার বায়োমন্ডলের চাপ
পরিমাপ করে থাকে। এই চাপ পরিমাপ করে সে এইটা
পরিমাপ পরে যে সমূদ্রতল থেকে আপনি কতটা
উপরে আছেন। এর মাধমে আপনি কতটা উপরে
উঠলেন, সিড়ি বাইলেন, ট্রিপ এ গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠ
থেকে কতো উপরে আছেন (অক্সিজেনের
পরিমান আন্দাজ করার জন্য) এইগুলা সম্বন্ধে একয়া
ধারনা পাওয়া যায়ন এছাড়াও কোন ফোনে
ব্যারোমিটার থাকলে সেই ফোনে GPS
তুলনামূলক ভালোভাবে কাজ করবে। অনেক
ফোনে এটা দেয়া হয় আবার বেশিরভাগ ফোনে
সাধারণত এই সেন্সর দেয় না।
.
★Optical Heart Rate Sensor:- এটা কাজ করে
আপনার হার্ট রেট বা হৃদস্পন্দন মাপার জন্য। ধরেন
একটা অতি রূপবতী মেয়ে আপনার সামনে দিয়ে
হাঁটছে, হঠাৎ ই সে চুল খুলে দিয়ে আবার চুল ঠিক
করা শুরু করলো। তখন আপনি চাইলেই তাৎক্ষণিক
ভাবে এটা দিয়ে আপনার হৃদকম্পন টা মেপে নিতে
পারবেন। আবার জরুরী প্রয়োজনে কোন
অসুস্থ মানুষের হার্ট রেট ও মাপতে পারবেন।
ডাক্তার রা এটাকে এখনো অতোটা এলাউ করেন
না। সম্প্রতি স্যামসাং এর নতুন ফোন S9+ এ এই
সেন্সর দেয়া হয়েছে।
হার্ট রেট পরিমাপের জন্য ফটোপ্লেথ্যাসমোগ
্রাফি (Photoplethysmography) নামক একটি পদ্ধতি
ব্যবহার করা হয়। ফটোপ্লেথ্যাসমোগ্রাফি হচ্ছে
একধরনের অপটিকাল পদ্ধতি, যা রক্তের
পেরিফেরাল সঞ্চালনে আয়তনের পরিবর্তন
সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিতে ফিটনেস
ব্যান্ড থেকে ত্বকে আইআর রশ্মি নির্গত হয়। ঐ
রশ্মি পেশি, স্কিন পিগমেন্ট, শিরা এবং ধমনীর
রক্তের মধ্যে নিমজ্জিত হওয়ার পরপরেই আবার
বাউন্স করে ফিরে আসে। আইআর রশ্মি
তীক্ষ্ণতা যখন পার্শ্ববর্তী অন্যান্য টিস্যু
থেকে রক্তের মাধ্যমে বেশি নিমজ্জিত হয়, তখন
খুব সহজেই রক্তের ওঠানামা পরিমাপ করতে পারে
এবং সেগুলোকে ফটোপ্লেথ্যাসমোগ্রাফি
সেন্সরগুলোর মাধ্যমে হার্ট রেট হিসেবে
প্রকাশ করতে পারে।
.
★Thermometer:- থার্মোমিটারের কাজ আমরা সবাই
জানি। প্রায় প্রত্যেকটা আধুনিক ফোনেই
থার্মোমিটার দেয়া থাকে। তবে বেশিরভাগ
ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে ফোনের
অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা পরিমাপ করার জন্যই
থার্মোমিটার দেয়া হয়। তবে কিছু ফোনে
ফোনের বাহিরের পরিবেশের তাপমাত্রা পরিমাপ
করার জন্যও থার্মোমিটার দেয়া হয় যেনো
ফোনের ভিতরের তাপমাত্রা মাপার সাথে সাথে
বাহিরের পরিবেশের তাপমাত্রাও মাপা যায়।
আমরা জানি যে, তাপ প্রয়োগে যে কোন পদার্থ
আয়তনে বৃদ্ধি পায়। থার্মোমিটার মূলত কাজ করে
তাপের কারনে কোন ধাতুর আয়তনের বৃদ্ধির
পরিমানের উপর অর্থাৎ কতটুকু বৃদ্ধি/হ্রাস পেলো
ধাতুটা তার উপর। এক্ষেত্রে ধাতু হিসেবে পারদ
ব্যাবহার করা হয়।.
.
★Air Humidity Sensor:- এইটা আপনার আশেপাশের
পরিবেশে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমান পরিমাপ
করে। এতে করে আপনি বুঝবের পরিবেশ
কতোটা আদ্র বা শুষ্ক আছে।
.
★Hall Sensor: হল সেন্সরের কাজ খুব একটা বেশি
না। দেখা যায় অনেক ফোনে ফ্লিপ কাভার লাগালে
কাভার যখন ডিসপ্লের কাছে যায় তখন ডিসপ্লে
নিভে যায়, কাভার টা খুললে ডিসপ্লের আলো
জ্বলে উঠে অটোমেটিক। এই টাইপের কাজ
করার জন্যই মূলত হল সেন্সর ব্যাবহার করা হয়।
এইটা মূলত কাজ করে ম্যাগনেট এর মাধমে। কাভারে
এক ধরনের ম্যাগনেট দেয়া থাকে যেটা
ফোনের কাছে আসলে ফোনে থাকা মেটাল
কে ডিটেক্ট করে (উল্টাটা ও হতে পারে)
সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডিসপ্লের আলো নিভিয়ে
দেয়।
.
★★★এই পোষ্টের উদ্যেশ্য দুইটা। প্রথমত
সেন্সরের কাজ, কার্যপদ্ধতি এইগুলা সম্বন্ধে একটা
বেসিক আইডিয়া দেয়া। আর শাওমি অনেক দিকে
কার্পণ্য করলেও সেন্সরের দিকে এখনো খুব
একটা কার্পণ্য করেনি। তবে কিছু নামি ব্র ্যান্ড আছে
(নাম বলা যাবেনা) তারা তাদের মিডরেঞ্জের ডিভাইস
গুলায় সেন্সর নামেমাত্র দেয়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ
সেন্সর তারা স্কিপ করে যায়। তাই সেন্সরের কাজ
জানলে আপনি আপনার প্রয়োজনমত ফোন বাছাই
করতে পারবেন।
সবাই ভালো থাকবেন। প্রিয়জনকে ভালো
রাখবেন।
#Proved