আসসালামু আলাইকুম
অনেকেই জানি আর অনেকেই হয়ত জানিনা আমাদের ফোন এর সেন্সর গুলি কিভাবে কাজ করে,আর ফোনের কাজ গুলি সহজ করে দেয়।
তাই আজ তুলে ধরার চেষ্টা করলাম স্মার্টফোনে ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেন্সরের নাম এবং তাদের কাজ।
অ্যাক্সেলেরোমিটার সেন্সর
সর্বপ্রথম কথা বলি অ্যাক্সেলেরোমিটার সম্পর্কে, যেটি প্রায় সকল স্মার্টফোনে লাগানো থাকে। এখন অ্যাক্সেলেরোমিটার কী কাজ করে তাই আপনাদের কে জানানোর চেষ্টা করি। এই সেন্সরটি আপনার ফোনকে আপনি কী ভাবে ধরছেন তার সম্পর্কে সফটওয়্যারকে বলে।
ধরুন, আপনার ফোনের অটো রোটেট অপশনটি যখন চালু করা থাকে তখন আপনি যখন কোনো ছবি কিংবা ভিডিও দেখেন, ফোনটি স্বাভাবিক ভাবে সোজা করে ধরে তখন ছবি কিংবা ভিডিও টিও সোজা দেখা যায়। কিন্তু আপনি যখন ফোনটিকে ল্যান্ডস্কেপ করে ধরেন তখন ফটোটিও ল্যান্ডস্কেপ হয়ে যায়। এমনি ভাবে কিছু ফোনে ফিচার থাকে আপনার ফোনে যখন কল আসে তখন যদি আপনার ফোন উল্টা রেখে করে রেখে দেন তবে ফোনটি সাইলেন্ট হয়ে যাবে। অথবা এমনিতে উল্টো করে রাখলে পাওয়ার সেভিং মুডে চলে যাবে। আর এই সকল বিষয় গুলোর জন্য অ্যাক্সেলেরোমিটার কাজ করে থাকে
জাইরোস্কোপ সেন্সর
আপনার ফোনে থাকা আরেকটি সেন্সরের নাম হলো জাইরোস্কোপ বা জাইরোসেন্সর। আসলে এটিও এক প্রকারের অ্যাক্সেলেরোমিটার। কিন্তু অনেক উন্নত ধরণের অ্যাক্সেলেরোমিটার। এর সাহায্যে আপনার ফোন একদম নিখুঁত তথ্য পায়, যে আপনি ঠিক কীভাবে, কোন অ্যাঙ্গেলে বা কত ডিগ্রি কোণ বাঁকিয়ে আপনার ফোনটিকে ধরে আছেন।
বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে আপনি চাইলেই ৩৬০ ডিগ্রি পিকচার তুলতে পারেন। এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করে আপনি যখন ৩৬০ ডিগ্রি পিকচার ক্যাপচার করেন তখন আপনার ফোন বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে বিভিন্ন ছবি ক্যাপচার করে। এই অবস্থায় জাইরোস্কোপের সাহায্যে ক্যামেরা জানতে পারে যে কোন ছবি কত অ্যাঙ্গেলে ক্যাপচার করা হয়েছে এবং সেই হিসেব অনুসারে আপনার ফোনের সফটওয়্যার সেই ফটো গুলোকে একত্রিত করে একটি পুরো ৩৬০ ডিগ্রী ফটোতে রূপান্তরিত করে।
আবার কিছু কিছু গেমে দেখতে পাওয়া যায় বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ফোনকে নড়াচড়া করানোর মাধ্যমে গেমে বিভিন্ন টাস্ক সম্পূর্ণ করা হয়। যেমন আপনি যদি ফোনটিকে ল্যান্ডস্কেপ করে ধরে সামনে পেছনে ঝোঁকান তবে এক টাস্ক হবে। যদি উপর নিচ করে ঝোঁকান তবে আরেক টাস্ক হবে যদি চারিদিকে ঘোরান তবে আরেক টাস্ক হবে ইত্যাদি। আর এই সব কাজের জন্যেই জাইরোসেন্সর ব্যবহার করা হয়।
ম্যাগনেটোমিটার_সেন্সর
তৃতীয় সেন্সরটির নাম হলো ম্যাগনেটোমিটার। এই সেন্সরটি আপনার ফোনে কম্পাসের কাজ করে থাকে। আপনার ফোনে যদি ম্যাগনেটোমিটার না থাকে তবে ম্যাপে বা বিভিন্ন কম্পাসের অ্যাপে উত্তর-দক্ষিণ দিক ইত্যাদি নির্দেশনা দেখতে পাবেন না।
এই সেন্সরের সাহায্যে কিছু অ্যাপ মেটাল ডিটেক্টর হিসেবে কাজ করে। যেহেতু এই সেন্সরটি একটি ম্যাগনেট তাই আপনি যদি কোন ধাতব পদার্থ আপনার ফোনের কাছে নিয়ে আসেন তবে এই সেন্সর তা নির্ণয় করতে পারে এবং এর সাহায্যে বিভিন্ন প্রকারের অ্যাপ গুলো কাজ করে থাকে।
প্রক্সিমিটি সেন্সর
এবার কথা বলি কিছু প্রক্সিমিটি সেন্সর সম্পর্কে। এই সেন্সরটি আপনার ফোনের সামনের ক্যামেরা বা উপরের স্পিকারের আশেপাশে দেখতে পাওয়া যায়। এই সেন্সরটি আপনার ফোনের স্ক্রীন থেকে আপনার দূরত্ব মাপার কাজ করে।
যেমন যখন আপনি কারো সাথে আপনার স্মার্টফোনটির মাধ্যমে কথা বলতে থাকেন তখন আপনার ফোনের স্ক্রীনের লাইট বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুটি সুবিধা হয়, এক হলো আপনার ব্যাটারি লাইফ সেভ হয় এবং দ্বিতীয়ত আপনি যখন কানে ফোন লাগিয়ে কলে থাকেন তখন জেনো আপনার স্পর্শ লেগে কলটি কেটে না যায় বা হোল্ড হয়ে না যায় বা যেকোনো অপশনে ক্লিক না হয়ে যায় এর জন্য স্ক্রিনের লাইট বন্ধ হয়ে যায়।
এছাড়াও দেখবেন হয়তো আজকাল কিছু আধুনিক স্মার্ট ফোন গুলোতে একটি নয় বরং ৩-৪ টি প্রক্সিমিটি সেন্সর লাগানো থাকে। যখন ফোনের উপর থেকে হাত ভাসিয়ে নিয়ে যাবেন তখন আপনার ফোনের স্ক্রিন অন হয়ে যাবে তো আপনি সেখানে নোটিফিকেশন ইত্যাদি দেখতে পাবেন।
আবার এই রকম অনেক অ্যাপ আছে যারা প্রক্সিমিটি সেন্সর ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজ সম্পূর্ণ করে থাকে, যেমন: ফোনের উপর থেকে হাত উড়িয়ে কল রিসিভ করা, হাতের ইশারায় সেলফি উঠানো ইত্যাদি।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর
মূলত,ফিংগার বা হাতের ছাপ নেওয়া যায় এমন করে বানানো হয় এই সেন্সর। কাজ কম হলেও এর গুরুত্ব কিন্তু মেলা।সর্বদা সিকিউরিটি দিতে এখনকার প্রায় অনেক ফোনে ব্যবহৃত হচ্ছে এ সেনসর।
ব্যারোমিটার সেন্সর
ব্যারোমিটার বায়ুমণ্ডলের চাপকে পরিমাপ করার কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। এই সেন্সরটির সাহায্যে আপনি জানতে পারবেন যে সমুদ্রতল হতে আপনি কতটা উচ্চতায় রয়েছেন। এই সেন্সরটি প্রধানত দুইটি কাজ করে থাকে। একটি হলো আপনার ফোনে যদি ব্যারোমিটার থাকে তবে এটি জিপিএস কে সাহায্য করে থাকে এবং আপনার লোকেশন একদম আরো সঠিক করে জানাতে পারে।
দ্বিতীয়ত কিছু হেলথ রিলেটেড অ্যাপস থাকে যেগুলো আপনার পাহাড়ে চড়ার উচ্চতা মেপে থাকে, বা আপনি কত সময়ের মধ্যে কতখানি উচ্চতা চড়েছেন ইত্যাদি বিষয় গুলোও আপনি ব্যারোমিটারের সাহায্যে জানতে পারবেন।
থার্মোমিটার সেন্সর
অবাক হওয়ার কিছু নেই, কিছু কিছু ফোনে আবার থার্মোমিটার লাগানো থাকে। যদিও এক হিসেবে থার্মোমিটার প্রায় সব ফোনেই লাগানো থাকে। কিন্তু ঐ থার্মোমিটার লাগানো থাকে আপনার ফোনের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা মাপার জন্য।
আপনার ব্যাটারি বা সিপিইউ এর তাপমাত্রা নির্ধারণ করে তাছাড়া আপনার ফোনের বাকী যন্ত্রাংশ গুলোর তাপমাত্রাও। যাতে করে কখনো কিছুর তাপমাত্রা বেড়ে গেলে তা ঠিক করার জন্য ফোনের পারফর্মেন্স স্লো করতে পারে
কিন্তু কিছু ফোনে এক্সটার্নাল থার্মোমিটারও দেয়া থাকে। যার মাধ্যমে আপনি আপনার চারপাশের বা বাহিরের তাপমাত্রা মাপতে পারেন। যেমন: স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৪।
প্যাডোমিটার সেন্সর
এই সেন্সরটি সকল ফোনে দেখতে পাওয়া যায় না, খুব কম কিছু স্মার্টফোনে প্যাডোমিটার দেখতে পাওয়া যায়। প্যাডোমিটার অ্যাক্সেলেরোমিটারের আরেকটি উন্নত সংস্করণ এবং এটির মাধ্যমে আপনি নির্ণয় করতে পারবেন যে সারাদিনে আপনি কতটা পায়ে হেঁটেছেন।
এই কাজটি আপনি অ্যাক্সেলেরোমিটারের সাহায্যেও করতে পারবেন, কিন্তু এটি এতটাও সঠিক হবে না। কিন্তু আপনার ফোনে যদি একটি বিশেষ প্যাডোমিটার সেন্সর থাকে তবে একদম সঠিক ভাবে আপনার হাঁটাচলা নির্ণয় করা সম্ভব, আপনাকে কোন তৃতীয়পক্ষ অ্যাপস ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে না।
রেডিয়েশন সেন্সর
আরেকটি সেন্সর যার নাম হলো রেডিয়েশন সেন্সর, যার সম্পর্কে কথা না বললেই নয়। এটি শুধু মাত্র কয়েকটি ফোনেই দেখতে পাওয়া যায়। এবং শুধু কিছু জাপানি ফোনে এটি দেখতে পাওয়া যায়। এই সেন্সরটির সাহায্যে আপনি এটি জানতে পারবেন যে আপনার চারপাশের পরিবেশে কতটা ক্ষতিকর রেডিয়েশনের অস্তিত্ব রয়েছে।
যেমন মনে করুন আপনার ঘরে অনেক প্রকার রেডিওঅ্যাকটিভ ডিভাইস রয়েছে যেমন আপনার সেলফোন সিগন্যাল, ওয়াইফাই সিগন্যাল, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি। তো এই সেন্সরটি মূলত সেই রেডিয়েশনের মাত্রা পরিমাপ করে এবং আপনাকে জানিয়ে দিতে পারে এটি আপনার জন্য কতটাক্ষতিকর হতে পারে তার সম্পর্কে। যদিও এটি বর্তমানে মাত্র কিছু ফোনেই আছে কিন্তু সামনের দিনে হয়তো অনেক ফোনেই এটি দেখতে পাবেন বলে আশা রাখা যায়।
ভাল লাগলে,কোন মতামত বা কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন।
4 thoughts on "সেন্সর কি?জেনে নিন মোবাইলে কোন সেন্সর কি কি কাজ করে?"