এমন অনেকেই আছেন যারা সব সময় নতুন মডেলের ডিভাইস ব্যবহার পছন্দ করেন। আবার কেউ কেউ কোনো ডিভাইসের নতুন মডেল এলে সাথে সাথে না কিনে কিছুদিন পর একটু কম দামে সেকেন্ড হ্যান্ড নিয়ে নেন। এতে টাকাও বাঁচে আবার উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সাধও পূরণ হয়। আর এজন্যই পুরাতন, ব্যবহারকৃত, কিংবা সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্য ক্রয়-বিক্রয় বিশ্বজুড়ে প্রচলিত। এজন্য আলাদা মার্কেটপ্লেসও আপনি দেখে থাকবেন।

এখন আপনি যদি আপনার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বিক্রি করে দিতে চান, অথবা অন্য কারো কাছ থেকে তার ব্যবহৃত ফোনটি কিনতে চান, তাহলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। অন্যথায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। আপনি যাতে ব্যবহৃত ফোন বিক্রি করে কিংবা সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কিনে না ঠকেন, সেজন্যই এই পোস্ট।

পুরাতন বা ব্যবহৃত ফোন বিক্রির আগে করণীয়

এখনকার সময়ে কিছুদিন পর পর স্মার্টফোন চেঞ্জ করে নতুন স্মার্টফোন কেনা একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রে নতুন ফোন কেনার আগে পুরাতন ফোনটি একটা ভালো দামে বিক্রি করাটা খুবই জরুরি। তবে পুরাতন ফোনটি বিক্রির আগে আপনাকে কিছু কাজ অবশ্যই করা উচিত। এতে করে আপনার কোনো ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না আবার ফোনটির ভালো একটা দাম পাবেন।

১. সিমকার্ডটি খুলে ফেলুন

পুরাতন ফোনটিকে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করার আগে প্রথম কাজ হলো আপনার স্মার্টফোন থেকে আপনার নিজের সিমকার্ডটি খুলে নেয়া। কারণ, সিমকার্ড আপনার একান্তই ব্যক্তিগত এবং আপনি আপনার নতুন ফোনে হয়ত এই সিমকার্ডটি ব্যবহার করতে চাইবেন। তাছাড়া আপনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কন্টাক্টও এই সিমে থাকতে পারে। তাই একটা সিম ইজেকশন টুল দিয়ে সিমকার্ড খুলে রাখুন।

২. মেমোরি কার্ডটি খুলে নিন

আজকালকের স্মার্টফোনগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণ অনবোর্ড স্টোরেজ থাকে বলে অনেকেরই মেমোরি কার্ড ব্যবহার করা লাগে না। কিন্তু যদি আপনি মেমোরি কার্ড ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন, তাহলে মনে করে সেটি খুলে রাখুন। তবে মেমোরি কার্ড খোলার আগে অবশ্যই ফোনটি বন্ধ করে নিন অথবা স্টোরেজ অপশন থেকে আনমাউন্ট করে নিন। তা না হলে আপনার মূল্যবান ডেটা করাপ্ট হয়ে যেতে পারে।

৩. ফোনটি ফ্যাক্টরি রিসেট ও সম্পূর্ণ ইরেজ করে নিন

এবার আপনার কাজ হলো ফোনটিকে সম্পূর্ণভাবে ইরেজ করে এর সব সেটিংস ফ্যাক্টরিতে থাকা অবস্থায় যেমন ছিল তেমনভাবে নিয়ে আসা। তবে তার আগে আপনার ফোনের সব ডেটা আপনার মেমোরি কার্ডে বা পিসিতে ব্যাকাপ করে নিন।

পাশাপাশি যেসব জিনিস আপনার ক্লাউড একাউন্টে সিঙ্ক হয় সেগুলোর সর্বশেষ অবস্থা আপনার গুগল কিংবা অ্যাপল একাউন্টে (উদাহরণস্বরূপ) সিঙ্ক হয়েছে কি না তা চেক করে নিন। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তবেই ফোন রিসেট দিন। রিসেট দেওয়ার সময় ফোনের ব্যাটারি পর্যাপ্ত রাখা উচিত। চাইলে চার্জার কানেক্ট করে নিতে পারেন।

৪. ফোনটি পরিষ্কার করে নিন

এখন আপনার কাজ হবে ফোনটির বাইরের দিকটা পরিষ্কার করে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে ফোনটির একটি ভালো দাম নিশ্চিত করা। স্থায়ী স্ক্র্যাচ কিংবা ডেন্ট নিয়ে আপনার হয়ত কিছু করার নেই কিন্তু চাইলেই আপনি ফোনের ধুলাবালি আর আঙ্গুলের ছাপগুলো মুছে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে শুকনো নরম কাপড়ই যথেষ্ট। তবে চাইলে একটু গ্লাস ক্লিনিং লিকুইড যোগ করে নিতে পারেন।

৫. পুনরায় বাক্সবন্দী করুন

যত্ন নিয়ে ফোন ব্যবহার করে থাকলে এটাও নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে আপনি আপনার ফোনের বাক্সটিও খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছেন। যদি তাই হয় তাহলে ফোনটি আবার বাক্সে ভরে ফেলুন। ফোনটির সাথের চার্জার ও অন্যান্য এক্সেসরিজ যদি থেকে থাকে তাহলে সেগুলোও সাথে দিয়ে দিন। এতে করে ক্রেতা পাওয়া আরো সহজ হবে এবং আপনি ভালো একটা দামও পাবেন।

সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কেনার আগে যেসব বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে

সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোন যেমন আপনার ভালো একটি ফোন কম খরচে ব্যবহারের সাধ মেটাতে পারে তেমনি এগুলো কিনে ঠকে যাওয়ার নজিরও কম নয়। তাই সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোন কিনে না ঠকার জন্য কিছু জিনিস খেয়াল না করলেই নয়। আর সেগুলো নিয়েই আজকের এই পোস্ট।

১. কার কাছ থেকে কিনছেন

না ঠকার জন্য এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন স্টেপ। আপনি যদি স্মার্টফোনটি আপনার বাস্তব জীবনে পরিচিত কারো কাছ থেকে কিনেন তাহলে অনেকটাই নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে কেনার পর কোনো সমস্যা পেলে আপনি সেটা নিয়ে কথা বলারও সুযোগ পাচ্ছেন।

কিন্তু ঝামেলা হয় অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে দামি স্মার্টফোন হলে আপনার উচিত বিক্রেতার সাথে সরাসরি দেখা করে কথা বলা এবং তার ব্যাপারে ব্যাসিক কিছু খোঁজখবর নেয়া। লেনদেনের ক্ষেত্রে চাইলে একজন মধ্যস্থতাকারী রাখতে পারেন।

২. কাগজপত্র যাচাই

আজকাল নকল ও চোরাই স্মার্টফোনে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। আপনাকে ঠকিয়ে কেউ হয়তো চুরি করা স্মার্টফোনও ধরিয়ে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি পরে হয়রানির মুখোমুখি হতে পারেন। তাই আপনার উচিত বক্স সহ স্মার্টফোন কেনা এবং ফোনের সাথে বক্সের আইএমইআই নম্বর মিলিয়ে দেখা। সেই সাথে বিক্রেতা যেখান থেকে স্মার্টফোনটি কিনেছেন সেই দোকানের রশিদ পেলে আপনি আরো নির্ভার থাকতে পারেন।

স্মার্টফোনটিতে ওয়ারেন্টির মেয়াদ আছে কি না, থাকলে বাংলাদেশে সেটার ওয়ারেন্টি পাবেন কিনা সেটাও বিক্রেতার কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে নিবেন। আর মনে করে ওয়ারেন্টি কার্ডটিও চেয়ে নিবেন। যদি সম্ভব হয়, বিক্রেতার ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি সংগ্রহ করে রাখতে পারেন।

৩. সফটওয়্যার চেক

এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বাইরে থেকে আপনি হার্ডওয়্যার ত্রুটি ধরতে পারলেও সফটওয়্যার জনিত কোনো সীমাবদ্ধতা থাকলে সেটা ধরা কঠিন। যেমনঃ আইফোনের ক্ষেত্রে আইক্লাউড লক করা কি না সেটা দেখে নিবেন। এন্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে সেট রুট করা থাকলে ওয়ারেন্টি পাবেন কিনা তা জেনে নিন।

যদিও, রুট করা স্মার্টফোন কিনলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু ওয়ারেন্টি চাইলে রুট করা কিনা সেটা দেখে নিবেন। প্রয়োজনীয় পাসওয়ার্ড গুলো চেয়ে নিবেন বিক্রেতার কাছ থেকে। সবচেয়ে ভালো হয় ফ্যাক্টরি রিসেট দেয়া অবস্থায় ফোন কিনলে।

৪. হার্ডওয়্যার টেস্ট

অনেকসময় বাইরে থেকে দেখতে ভালো মনে হলেও শক কিংবা পড়ে যাওয়া জনিত কারণে স্মার্টফোনের বিভিন্ন সেন্সর যেমনঃ ক্যামেরা, ব্লুটুথ, ওয়াইফাই, রেডিও ইত্যাদি কাজ নাও করতে পারে। তাই এসব চেক করে নেয়া উচিত। চেক করার জন্য হার্ডওয়্যার টেস্ট নামে প্লে স্টোরে অনেক অ্যাপ পাবেন।

বিভিন্ন পোর্ট যেমনঃ ইউএসবি, হেডফোন জ্যাক ইত্যাদি টেস্ট করে নিতে ভুলবেন না। সবচেয়ে বেশি নজর দিবেন ব্যাটারির ক্ষেত্রে। প্রায় সব স্মার্টফোনেই নন রিমুভেবল ব্যাটারি থাকে। তাই ব্যাটারি খারাপ থাকলে আপনাকে মুশকিলে পড়তে হবে। সম্ভব হলে বিভিন্ন অ্যাপ দিয়ে এপ্রক্সিমেট ব্যাটারি ইউসেজ ডেটা থেকে স্মার্টফোনটির ব্যাটারির অবস্থা যাচাই করে নিবেন।

সর্বোপরি নিজের এসব ব্যাপারে ধারণা কম থাকলে পরিচিত কাউকে সাথে নিয়ে যাওয়া উচিত। তাহলেই ঠকার সম্ভাবনা কম থাকবে।

4 thoughts on "পুরাতন ফোন বিক্রয় ও ক্রয়ের আগে করণীয়"

  1. Nishan khan Subscriber says:
    Good Idea Bro
    1. Tech Lover Contributor Post Creator says:
      Thanks

Leave a Reply