টেকনিকাল কথাবার্তা কম হবে, সহজ কথায় সরলভাবে ধারণাগুলো বোঝা যাক।

রেজ্যুলেশন

HD (High Resolution) রেজ্যুলেশন বলতে বোঝায় এর রেজ্যুলেশন হলো 1280 x 720 পিক্সেল। অর্থাৎ ১২৮০টি করে পিক্সেলের ৭২০টি সারি বা ৭২০টি করে পিক্সেলের ১২৮০টি সারি। আর FHD (Full HD)-এর রেজ্যুলেশন হলো 1920 x 1080। UHD (Ultra HD) বা 4K রেজ্যুলেশন হলো 3840 x 2160।

পিক্সেল ডেনসিটি

ডিসপ্লের মাপ সচারচর কোণাকুণি হিসেব করা হয়। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত 16:9 হলে 6″ ডিসপ্লের দৈর্ঘ্য প্রায় 5.24″ ও প্রস্থ প্রায় 2.95″। রেজ্যুলেশন HD হলে 5.24″-তে 1280 টি পিক্সেল ও 2.95″-তে 720 টি পিক্সেল আছে। তাহলে প্রতি ইঞ্চিতে পিক্সেল সংখ্যা প্রায় 244। এজন্য এই ডিসপ্লের পিক্সেল ডেনসিটি 244 PPI (Pixel Density)।

পিক্সেল

ওপরের ছবিটির রেজ্যুলেশন 50 x 50 পিক্সেল। অর্থাৎ এখানে মোট 50 * 50 = 2500টি পিক্সেল আছে। ছবিটি যখন আমরা জুম করব, তখন এই পিক্সেলগুলো আপনি আলাদাভাবে দেখতে পারবেন।

ওপরের ছবিটিতে জুম করার পর দেখতে পারছেন আগের ছবিটি মূলত কিছু বর্গাকার এক রঙের ব্লকের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিলো। এগুলো এক একটি পিক্সেল, ডিজিটাল ছবির ক্ষুদ্রতম একক।

মেগাপিক্সেল

1280 * 720 = 921600, মানে একটি HD একটি ছবি 921600 টি বা 0.9212 মিলিয়ন পিক্সেল দ্বারা গঠিত হয়। মেগাপিক্সেল মূলত মিলিয়ন পিক্সেল বোঝায়। এজন্য HD রেজ্যুলেশনে ছবি তুলতে অন্তত 0.9212 মেগাপিক্সেল বা বলা যায় 1 মেগাপিক্সেল ক্যামেরা প্রয়োজন। একইভাবে FHD রেজ্যুলেশনের ছবি তুলতে অন্তত মোটামুটি 2.1 MP ও 4K ছবি তুলতে মোটামুটি 8.3 MP ক্যামেরা প্রয়োজন।

স্মার্টফোনে যদিও এখন 200 MP থেকেও বেশি ক্যামেরা চলে আসছে, ল্যাপটপে কিন্তু এখনো সচারচর 1 MP বা সর্বোচ্চ 2 MP ক্যামেরা দেখা যায়। আর একচুয়ালি আপনার ডিসপ্লে FHD রেজ্যুলেশনের হলে জুম করা ছাড়া তা মোটামুটি 2 MP ছবিই পূর্ণ রেজ্যুলেশনে দেখাতে সক্ষম।

একারণে ক্যামেরার কোয়ালিটি যাচাইয়ের জন্য মেগাপিক্সেল খুব বেশি প্রভাব রাখে না। কিছু 12 MP ক্যামেরা কিছু 108 MP ক্যামেরা থেকেও বেটার ছবি দিতে সক্ষম হয়। যদিও অনেকক্ষেত্রে হায়ার রেজ্যুলেশন সেন্সরগুলো বেটার হয়ে থাকতে পারে, তবে তা শুধু মেগাপিক্সেলের জন্য নয়।

পিক্সেল বিনিং

হায়ার রেজ্যুলেশন ক্যামেরার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাও আছে। সাধারণভাবে ক্যামেরার ইন্ডিভিজুয়াল পিক্সেলগুলো যত বড় হবে তত বেশি আলো ক্যাপচার করতে পারবে। কিন্তু বিশেষ করে স্মার্টফোনে, যেখানে তত বড় সেন্সর ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা করা মুশকিল, সেখানে বেশি মেগাপিক্সেল বেশি হলে ইন্ডিভিজুয়াল পিক্সেলগুলোর আকার অনেক ছোট হয়ে যায়। যেকারণে তারা বেশি আলো ক্যাপচার করতে পারে না।

প্রসেসিং পাওয়ার আরেকটি কনসার্ন, বেশিরভাগ স্মার্টফোনের ইমেজ প্রসেসর 48 MP বা 64 MP বা আরো হায়ার ইমেজ প্রসেস করার মত ক্যাপাবল না। ক্ষেত্রবিশেষে ছবি নিতে ক্যাপাবল হলেও ভিডিও ক্যাপচার করার মত ক্যাপাবিলিটি থাকে না।

পিক্সেল বিনিং টেকনোলজি এক্ষেত্রে একটি সমাধান। পিক্সেল বিনিং সাধারণত 4 in 1 অথবা 9 in 1 হয়ে থাকে। 48 MP বা 64 MP ক্যামেরাতে 4 in 1 এবং 108 MP ক্যামেরাতে 9 in 1 পিক্সেল বিনিং দেখা যায়। 4 in 1 পিক্সেল বিনিংয়ে দুই পিক্সেলের দুই সারি তথা ২*২ = ৪টি পিক্সেল, এবং 9 in 1-এ ৩*৩ = ৯টি পিক্সেলের ক্যাপচারকৃত তথ্য একীভূত হয়ে একটি বৃহত্তর পিক্সেলের কাজ করে, যেটিকে সুপারপিক্সেল বলা হয়।

পিক্সেল বিনিং প্রযুক্তিসহ একটি 48 MP ক্যামেরাতে কিন্তু আসলেই 48 মিলিয়ন পিক্সেল থাকে। তাই পূর্ণ রেজ্যুলেশন মোডে ছবি তুললে এখানে অনেক 48 MP ডিটেইলড ছবি পাওয়া যায়, জুম করলে সূক্ষ্মতর ডিটেইলসগুলো উঠে আসে।

কিন্তু লোয়ার লাইট সিচুয়েশনসহ অনেক সিচুয়েশনে একচুয়ালি সমান সাইজের 48 MP ক্যামেরা থেকে 12 MP ক্যামেরা বেটার আউটপুট দিতে পারে, প্রসেসরও দ্রুততর প্রসেস করতে সক্ষম হয়। তখন পিক্সেল-বিনড ছবি তুললে আউটপুট 12 MP হয়।

তাত্ত্বিকভাবে পিক্সেল-বিনড ছবিতে কালার একুরেসিতে ঘাটতি থাকার কথা, তবে সফটওয়্যার অ্যালগরিদমের মাধ্যমে এটি সমাধান করা হয়।

আরো জানতে: What is pixel binning? Everything to know about this photographic technique – ANDROID AUTHORITY

সুপার রেজ্যুলেশন

কাজের দিক থেকে সুপার রেজ্যুলেশন মূলত পিক্সেল বিনিংয়ের ঠিক বিপরীত। পিক্সেল বিনিং হায়ার মেগাপিক্সেল সেন্সর থেকে লোয়ার মেগাপিক্সেলে ছবি তোলে, সেখানে সুপার রেজ্যুলেশন লোয়ার রেজ্যুলেশন লোয়ার মেগাপিক্সেল ক্যামেরা থেকে হায়ার মেগাপিক্সেলে ছবি তোলে। 13 MP ক্যামেরা থেকে 50 MP ছবি পাওয়াটা এখন অসম্ভব না এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে।

সুপার রেজ্যুলেশনের ক্ষেত্রে মূলত একসাথে কয়েকটি শট নেয়া হয়। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেগুলো একত্র করে ডিটেইল গ্যাপগুলো ফিলআপ করে হায়ার রেজ্যুলেশন ছবি প্রস্তুত করা হয়।

আরো জানতে: Super resolution explained: The photography technique used by almost everyone – ANDROID AUTHORITY

আরো দেখুন: স্মার্টফোন চিপসেট, SoC (এসওসি): যা আপনার জানা দরকার আছে কিংবা নেই!

একটি নিয়নবাতি পরিবেশনা

One thought on "অবশ্যই দেখুন, ক্যামেরা নিয়ে যা না জানলে ধোঁকা খাবেন! পিক্সেল বিনিং ও সুপার রেজ্যুলেশন কী কাজ করে? রেজ্যুলেশন, পিক্সেল ডেনসিটি, মেগাপিক্সেল এবং আরো…"

  1. abrno34 Author says:
    সুন্দর লিখছেন।

Leave a Reply