স্মার্টফোনে ভার্চুয়াল র‌্যাম প্রযুক্তি ইদানীং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কোম্পানিভেদে এক্সটেন্ডেড র‌্যাম, মেমোরি ফিউশন টেকনোলজি, ডায়নামিক র‌্যাম, র‌্যাপিড মেমোরিসহ বিভিন্ন নামে এই প্রযুক্তির দেখা মিলছে, যার আইডিয়া হলো- স্টোরেজের একটি অংশকে র‌্যাম হিসেবে ব্যবহার করা।

যদি আপনি অনেক আগে থেকে অনলাইন ব্যবহার করে থাকেন, স্মার্টফোনের র‌্যাম বাড়িয়ে নেয়া- এরকম টিউটোরিয়াল হয়ত চোখে পড়ে থাকতে পারে। তখনকার সময়ে এটা খুব সহজ প্রসেস ছিলো না, এজন্য সাধারণত স্মার্টফোনকে রুট করা প্রয়োজন হত। এখন কোম্পানিগুলো বিল্ট-ইন ফিচার হিসেবে ভার্চুয়াল র‌্যাম প্রদান করছে, জাস্ট একটা টগলেই যা চালু করা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো রিয়েল লাইফে এটা কতটুকু কাজের?

যদি আপনি বুঝেশুনে একটি স্মার্টফোন কিনতে চান, তাহলে ভার্চুয়াল মেমোরি নিয়ে আপনার একটুখানি জেনে রাখা প্রয়োজন। কেননা যদি আপনি না জানেন, হয়ত কেউ কেউ আপনাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করতে দ্বিধা করবে না।

এই লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো শুধু ভার্চুয়াল র‌্যামের ধারণা বুঝতে সাহায্য করা- একারণে টেকনিকাল আলোচনাগুলো খুব কম থাকবে। ইচ্ছা আছে মেমোরি নিয়ে সহজ ভাষায় ডিটেইলড আইডিয়া সহ একটি আর্টিকেল লেখার, তবে লেখালেখিত সময় দেয়াটা একটু কঠিন হয়ে উঠেছে আজকাল।

ভার্চুয়াল র‌্যাম হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বিত একটি প্রযুক্তি। এর মূল কনসেপ্ট হলো স্টোরেজের একটি অংশকে র‌্যামের পরিবর্তে ব্যবহার করা, যাকে ভার্চুয়াল র‌্যাম বলা হচ্ছে। যখন ফিজিকাল র‌্যামে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা থাকে না, তখন সাময়িকভাবে তুলনামূলক কম প্রয়োজনীয় প্রসেসগুলো ভার্চুয়াল র‌্যামে স্থানান্তর (সয়াপিং) করা হবে। সিপিইউ এখান থেকে এড্রেস ট্রান্সলেশন প্রসেসের মাধ্যমে তথ্য এক্সেস করতে পারে।

আপনার যদি ৪ জিবি র‌্যাম ও ১২৮ জিবি স্টোরেজের একটি ডিভাইস থাকে এবং ৪ জিবি স্টোরেজকে ভার্চুয়াল র‌্যাম হিসেবে সেট করা হয়, তাহলে ইফেক্টিভলি আপনার এখন ৪ জিবি দ্রুতগতির ফিজিকাল র‌্যাম, ৪ জিবি ধীরগতির ভার্চুয়াল র‌্যাম এবং ১২৪ জিবি স্টোরেজ থাকবে।

ভার্চুয়াল র‌্যাম ব্যবহার করে কিছু এডভান্টেজ পাওয়া সম্ভব, বিশেষ করে মাল্টিটাস্কিংয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ ম্যানেজমেন্টে কিছুটা এডভান্টেজ দিতে পারে। কিন্তু স্টোরেজ ডিভাইস ফিজিকাল র‌্যামের থেকে অনেক ধীরগতির হয়ে থাকে এবং এখানে সয়াপিং এবং ট্রান্সলেশনের জন্য ডিলে হতে পারে- সর্বোপরি এটা ফিজিকাল র‌্যামের রিপ্লেসমেন্ট না।

যেকারণে ৩ জিবি (ফিজিকাল) র‌্যামের ফোনে যখন অ্যান্ড্রয়েডের ফুল ভার্সন ব্যবহার হয়ে থাকে, ২ জিবি ফিজিকাল +২ জিবি ভার্চুয়াল র‌্যাম মিলে ৪ জিবি র‌্যামের ফোনে দেখা যায় অ্যান্ড্রয়েডের লাইটওয়েট গো ভার্সন। অর্থাৎ এই ভার্চুয়াল র‌্যামের ক্যাপাবিলিটি মোটেও আসল র‌্যামের মত নয়।

অ্যান্ড্রয়েডের জন্য একটু নতুন হলেও লিনাক্স সিস্টেমে সয়াপ মেমোরি নামে ভার্চুয়ালি র‌্যামের ব্যবহার অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয়। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলি, যখন আমি ২ জিবি র‌্যামের ডেস্কটপ ব্যবহার করতাম, এর সাথে আর ২ জিবি সয়াপ ব্যবহার করাটা পারফর্মেন্সে আসলেই লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন আনতো, বিশেষ করে ল্যাগ ও হ্যাং হওয়ার প্রবণতা চোখে পড়ার মত কমে যেতো। অধিকতর র‌্যাম, যেমন ৮ জিবির ওপরে থাকলে এর প্রভাব ওভাবে দৃশ্যমান না। যত বেশি র‌্যাম থাকবে, ভার্চুয়াল র‌্যামের প্রভাব তত কম দৃশ্যমান হবে।

তো ভার্চুয়াল র‌্যাম একদমই কাজের না তা নয়, তবে মার্কেটিং গিমিক যে এর অন্যতম উদ্দেশ্য তা বলা বাহুল্য। এজন্য স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল র‌্যামের পরিবর্তে ফিজিকাল র‌্যামই বিবেচনা করা উচিৎ। আর স্মার্টফোন কোম্পানিগুলোর প্রতি অনুরোধ থাকবে, ভার্চুয়াল র‌্যাম ফিচার প্রদান করা সমস্যা নয়, তবে এর মার্কেটিং যেন মিসলিডিং না হয়। ৪ জিবি র‌্যামের ফোনকে ৮ জিবি বলে যেন চালানোর চেষ্টা না করা হয়।

দেখতে পারেন: রেজ্যুলেশন, পিক্সেল ডেনসিটি, মেগাপিক্সেল, পিক্সেল বিনিং ও সুপার রেজ্যুলেশন

মেমোরি নিয়ে আরো জানতে:

memory – TechTarget
Primary Memory – GeeksforGeeks
Virtual RAM: What is it, how does it work, and should you care? – techradar.
RAM, ROM and internal memory: understanding the difference is key – NEXTPIT

একটি নিয়নবাতি পরিবেশনা

8 thoughts on "ভার্চুয়াল র‌্যাম: স্মার্টফোন কেনার আগে যেটুকু জানা প্রয়োজন"

  1. Abubokor Rio Contributor says:
    চমৎকার বিশ্লেষণ ❤️
    1. তাহমিদ হাসান Author Post Creator says:
      শুকরিয়া
  2. Sohelarman4374 Author says:
    অসাধারণ একটি পোস্ট
  3. TrickBD Support Moderator says:
    পোস্টের মাঝখানে একটি সাইটের লিংক দেয়া হয়েছে।
    এটির কারণ ব্যাখ্যা করুন দয়া করে।
    রেফারেন্স লিংক হলে হাইলাইট করে দিবেন।
    কিন্তু নিজ সাইট ব্যতীত অন্য সাইটের লিংক অতিরিক্ত দিলে প্রমোশন হিসেবে দেখা হয়।
    তাই রেফারেন্সগুলো যত্নসহকারে দেয়া প্রয়োজন।
    বিশেষ করে পোস্টের মাঝখানে হলে।
    1. তাহমিদ হাসান Author Post Creator says:
      মোবাইল দোকানের যে লিঙ্কটি দেয়া হয়েছে, তা ওয়ালটনের একটি ফোনের ক্ষেত্রে ৪ জিবি ভার্চুয়াল র‌্যামের পরিবর্তে সরাসরি ৮ জিবি র‌্যাপিড মেমোরি হিসেবে প্রদর্শনের বিষয়টি এড্রেস করেছে। যেহেতু ভার্চুয়াল র‌্যামের বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা এই পোস্টের উদ্দেশ্য, একারণে এই বিষয়টি নিয়ে যে বাস্তবেও মানুষের অসতর্কতার সুযোগ নেয়ার প্রবণতা আছে, তার উদাহরণ হিসেবে এটি লিঙ্ক করা। প্রসঙ্গত, মোবাইল দোকানের সাথে আমার কোন অ্যাফিলিয়েশন নেই।
    2. TrickBD Support Moderator says:
      Thanks.
      Good Article.
      Informative.

Leave a Reply