বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশে চীনা টিকটক এর ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে, কেউ অর্থ উপার্জনের জন্য আবার কেউবা শখের বসে টিকটকে ভিডিও করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছেন।

এসব ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই রাতারাতি তারকা বনে যাচ্ছেন, নাটক সিনেমা গানের সেলেব্রেটিদের মতো টিকটক সেলিব্রেটিও তৈরি হয়েছে।
যাদের রয়েছে অসংখ্য ফ্যান ফলোয়ারও ।

অনেকের আবার উদ্ভট আচার-আচরণ কিংবা সাজগোজ , বেশ কিছুদিন আগে দেশে গ্রেপ্তার হওয়ার tiktok তারকা অপুর কর্মকাণ্ড নিয়েও ব্যাপক আলোচনা হয়।

অপুর মতোই tiktok এর বেশিরভাগ ব্যবহারকারী মূলত কিশোর-কিশোরী ও তরুণ তরুণী। বিভিন্ন অভিযোগে tiktok অ্যাপ  নিষিদ্ধ হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে! টিকটক কি??? কেন এই অ্যাপটি এত জনপ্রিয়? আর কেনই বা এর এত সমালোচনা?

এসব নিয়েই এবারের আর্টিকেল।


টিকটক কি?


ভাইরাল হওয়া মজার মজার নাচ ও ঠোঁট মেলানো হাস্যকৌতুকের ভিডিও তৈরি ও শেয়ার হয় tik tok অ্যাপে। কম বয়সে ছেলেমেয়েদের কাছে এই মোবাইল অ্যাপ টি খুবই জনপ্রিয়।

এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর চাহিদা মত যেকোনো কিছুর সাথে নিজের ঠোট মিলিয়ে ছোট ছোট ভিডিও তৈরি করে তা শেয়ার করা যায়। আবার এর সাহায্যে নিজের পছন্দের গানের সঙ্গে নাচ বা নানা ধরনের কমিটিও তৈরি করা সম্ভব।

স্টিকার ফিল্টার ও অগমেন্টের রিয়েলিটি ও ব্যবহার করা যায় এসব ভিডিওতে , ফ্রি এই অ্যাপটিকে অনেকটা ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ ইউটিউব এর ছোটখাটো সংস্করণ বলা চলে।

TikTok এর যাত্রা শুরুর ইতিহাস।

বর্তমানে টিকটক সম্পূর্ণভাবে চিন ভিত্তিক হলেও টিকটকের যাত্রা শুরু হয়েছিল ভিন্ন ভিন্ন তিনটি অ্যাপ হিসেবে।
প্রথমটি ছিল মার্কিন একটি অ্যাপ যার নাম মিউজিকাল ডট লি, এটি শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে। প্রযুক্তি বিষয়ক চীনা কোম্পানি বাইক ডেন্স ২০১৬ সালে একই ধরনের একটি অ্যাপ চালু করে যার নাম *দই*।

পরে বাইট ড্যান্স টিক টক নাম নিয়ে সারা বিশ্বে তার প্রচার প্রমোশন ঘটাতে শুরু করে! ২০১৮ সালে মিউজিক্যাল কে কিনে নিয়ে তাকেও টিকটকের সঙ্গে একত্রিত করে বাইটডান্স। টিক টক এর প্রধান নির্বাহী সাবেক কর্মকর্তা কেভিন মায়ার।


টিকটক কিভাবে কাজ করে?


tiktok ব্যবহারকারীরা ১৫ সেকেন্ড থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের ভিডিও পোস্ট করতে পারেন। পাশাপাশি এখানকার বিশাল তথ্যভাণ্ডার থেকে গান ও ফিল্টার বাছাই করতে পারেন।

একজন ব্যবহারকারীর যখন এক হাজারের বেশি ফলোয়ার হয় তখন তিনি তার ভক্তদের জন্য লাইভে আসতে পারেন।

শুধু তাই নয় এখানে তিনি ডিজিটাল উপহারও গ্রহণ করতে পারেন, যা অর্থের সাথেও বিনিময় করা যায়। একজন ব্যবহারকারী যাকে অনুসরণ করেন তিনি তার ভিডিও দেখতে পারেন।

এছাড়াও তিনি আগে যেসব বিষয়ে ভিডিও দেখেছেন। তার উপর ভিত্তি করে তিনি নতুন নতুন ভিডিও দেখতে পারেন , ব্যবহারকারীরা নিজেদের মধ্যেও ব্যক্তিগত বার্তা আদান প্রদান করতে পারেন এই মোবাইল অ্যাপ এর মাধ্যমে।

যারা কিছুটা অভিনয় করেন বা কমেডি করতে পারেন, তাদের নিজেদের প্রতিবাদ তুলে ধরার জন্য এই টিকটক একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে উঠে এসেছে।


tiktok কি সস্তা জনপ্রিয়তার মাধ্যম?


অনেকের অভিযোগ বিকৃত অঙ্গভঙ্গি এবং অশ্লীল শব্দ ও যৌনতা প্রয়োগ করে শুধু সস্তার জনপ্রিয়তা পাওয়ার উদ্দেশ্যেই এক শ্রেণীর ব্যবহারকারী টিকটক প্লাটফর্ম ব্যবহার করেন।

শুধু সাধারণ মানুষের নন টিকটক আসক্তিতে মজে আছেন সেলিব্রেটি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।

আর টিকটক এর ব্যবহারকারীদের মধ্যে তরুণ প্রজন্মই বেশি , সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন এই ধরনের ভিডিও আসক্তির পর্যায়ে চলে গেলে তা তরুন সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।


টিকটক কেন এত জনপ্রিয়?


করোনা ভাইরাস সংকটের সময় tiktok এর জনপ্রিয়তা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে লকডাউনের কারণে ঘর বন্দী মানুষের তীব্র আগ্রহ তৈরি হয় এই অ্যাপের প্রতি।

টিকটক এর মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৮০ কোটি! ভারতে টিকটক নিষিদ্ধ করার আগে এটি সেখানে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

সে দেশের ১০ কোটিরও বেশি মানুষ ইতোমধ্যে tiktok ডাউনলোড করেছে! মজার মজার ভিডিও তৈরি ও শেয়ার করা যায় tiktok এ যা তরুণদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

tiktok এর ভিডিও আকারে ছোট ব্যবহার করা সহজ, এবং সব সময় এতে যুক্ত হয় নতুন নতুন ফিচার। ভিডিওতে নিজের কন্ঠ মেলানো বা ঠোঁট মেলানোর সুযোগ রয়েছে।

ভিডিওতে অন্যের কন্ঠ ও ব্যবহার করা যায় ২০১৯ সালের শুরু থেকেই ডাউনলোড চার্টের অন্যতম শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে টিকটক।

গত বছর instagram ও স্ন্যাপচ্যাট কে টপকে বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ ডাউনলোডকারী অ্যাপে পরিণত হয় tiktok এই কোম্পানির মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।


টিকটক কি চিন এর গুপ্তচরের ভূমিকা পালন করে?

টিকটকে ভিডিও সম্পাদনা করা অন্য যেকোনো অ্যাপের ভিডিও এডিট এর চেয়ে সহজ। টিকটক থেকে যেমন বিনোদন পাওয়া যায়, তেমনি এর মাধ্যমে রান্না ফটোগ্রাফি অথবা দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ের টিপস ও পরামর্শ পাওয়া যায়।

টিকটকে কারো সঙ্গে মেসেজ চালাচালি বা যোগাযোগ রক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে না, অনেক বেশি লাগামহীনভাবে ভিডিও তৈরি করা যায় এখানে, ভিডিও তৈরি করার হাজার হাজার টেম্পলেট রয়েছে এতে।

এছাড়াও ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করে আপলোড দেয়া যায় টিকটকে ,এর ভিডিও গুলো সাধারণত ৫ মিনিটের বেশি হয় না হলে মানুষের আগ্রহ সহজে হারায় না।

আর ভিডিও গুলো কাউকে আকৃষ্ট করতে খুবই কার্য করি। আর এখানে যেমন তেমন কনটেন্ট তৈরি করেও রীতিমত ভালো ভিউ পাওয়া যায়।

টিকটক কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে বহু প্রশ্ন আছে! ডাটা সংরক্ষণ থেকে শুরু করে এর অ্যালগরিদম নিয়ে রয়েছে অনেক রহস্য। একজন ব্যবহারকারী যখন tiktok ব্যবহার করেন তখন তার প্রচুর ডাটা খরচ হয়।

অ্যাপটির কিছু কিছু ডাটা খরচের ধরন দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। খুব সম্প্রতি জানা গেছে এটি ব্যবহারকারীর কপি ও পেস্ট নিয়মিত মনে রাখে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও অভিযোগ করেছেন যে যারা tiktok ব্যবহার করেন শেষ পর্যন্ত তাদের সব তথ্য চীনের কমিউনিস্ট পার্টি হাতে গিয়ে পড়তে পারে।

টিকটক কর্তৃপক্ষ সব সময় বলে আসছে, ব্যবহারকারীর কাছ থেকে তারা যেসব তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো চীনের বাইরে সংরক্ষণ করা হয়! তারা বলছে যুক্তরাষ্ট্রের ডাটা যুক্তরাষ্ট্রেই সংরক্ষণ করা হয়।

তার ব্যাকআপ রাখা হয় সিঙ্গাপুরে, ইউরোপের গোপনীয়তার সংক্রান্ত ইউনিটেও সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডের স্থানান্তর করা হয়েছে।

তবে তাত্ত্বিকভাবে বলা যেতে পারে যে হুয়াওয়ে এর মতো টিকটককের ও বিদেশি ব্যবহারকারীর তথ্যের ব্যাপারে চীনা সরকার হয়তো টিক টক প্রতিষ্ঠানের উপর চাপ তৈরি করতে পারে।

চীনে ২০১৭ সালে যে জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে! সে অনুযায়ী দেশটির যে কোন সংগঠন অথবা নাগরিক রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে সাহায্য সহযোগিতা করতে বাধ্য।

কেন দেশে দেশে নিষিদ্ধ হচ্ছে টিকটক ?
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ টিকটক এর মত চিনা মোবাইল অ্যাপ তার দেশের নাগরিকদের তথ্য হাতে নিচ্ছে। একই অভিযোগে টিকটক নিষিদ্ধ করেছে ভারত ও।

যদিও সিনা প্রযুক্তি কোম্পানি bitedance লিমিটেড বলছে টিকটক ব্যবহারকারীদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় বরাবর জোর দিয়েছেন তারা। আবার ইরান পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে টিক টক নিষিদ্ধ করা হয়েছে মূলত অপসংস্কৃতি ও অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগে।


টিকটক এর ব্যবহারকারীরা কারা?

সব বয়সীদের কাছেই টিকটক জনপ্রিয়, তবে টিনেজার কিংবা কিশোর কিশোরীদের কাছে অপেক্ষাকৃত বেশি জনপ্রিয় এই অ্যাপটি।

যারা খুব সহজেই হাজার হাজার কিংবা লাখ লাখ ফলোয়ার পেতে চায় তাদের জন্য tiktok খুবই উপযোগী। কারণ সস্তা বিনোদনে খুব সহজেই যে কাউকে ছোটখাটো সেলিব্রেটি করে তুলতে পারে টিক টক।

Contract Facebook: facebook.com/imran.sameya

আজকের মত এখানে ই শেষ করছি আশা করছি খুব শিগগিরই নতুন কিছু নিয়ে হাজির হচ্ছি সেই পর্যন্ত সাথেই থাকুন ট্রিকবিডির ধন্যবাদ।❤️

3 thoughts on "°টিকটক° এর নামে শুধুই কি অশ্লীলতা? | °TikTok° অ্যাপ নিয়ে কেন এত মাতামাতি???"

  1. holoin Subscriber says:
    কেনো? টিকটকের কেওকি তোমার মায়ের গোয়া মারছিলো নাকি
    1. Meraj Rohman Contributor says:
      tor marchilo bain****
  2. Uzzal Mahamud Pro Author says:
    এটিও Game গুলার মত বাংলাদেশ এ off করে দিয়া উচিত.!

Leave a Reply