ব্লগিং শুরু করতে চাচ্ছেন,কিন্তু সঠিক গাইডলাইনের জন্য শুরু করতে পারছেন না?কিংবা শুরু করলেও কোথায় থেকে কি করতে হবে ভেবে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে?সঠিক গাইডলাইনের অভাবে কোনো কাজ সঠিক ভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হয় না।ব্লগিং এর ক্ষেত্রেও কিন্তু একই ব্যাপার।ব্লগিং আমরা শুরু করি,বা করেছি নিজের ইচ্ছায় কিংবা অন্যের থেকে শুনে।কিন্তু এই বিষয়টি কেউ আমাদের হতে কলমে শেখায় না।
গুগল, ইউটিউব দেখে এবং আমাদের নিজেদের প্রচেষ্টায় ব্লগিং করতে হয়।গাইডলাইনের অভাবে ব্লগিং শুরু করলে কোন কাজের পর কোন কাজ করতে হবে সেটা বুঝতেই অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়।অনেকেই ইউটিউব দেখে ব্লগিং করে থাকে।এটি অবশ্য অনেক ভালো দিক।কারণ,আমাদের অজানা জিনিস গুলো জানার জন্য যেসব জিনিস দরকার সেগুলো আমাদের আশেপাশে যেসব ব্যবহারযোগ্য রিসোর্স আছ,সেখান থেকে কালেক্ট করতে জানা উচিত।
অনেক তো কথা বললাম,এখন আসি মূল প্রসঙ্গে।নয়তো আমার এই বকবকানি পড়ে হয়তো আপনার বিরক্তি এসে যেতে পারে।আজকের এই পোস্টটি মূলত লিখছি আমি ব্লগিং শুরু করার সময় আমাদের যেসব ধাপ অনুসরন করা উচিত এবং কোন কাজটির পর কোন কাজটি করতে হবে সেগুলোর একটা লিস্ট নিয়ে।আপনি যদি ব্লগিং শুরু করতে চান,বা শুরু করে দিয়েছেন,তবে আশা করি এই পোস্টটি আপনার জন্য একটু হলেও হেল্পফুল হবে।
ব্লগিং করতে জানতে হবে যেসব বিষয়
নিচে আমি ১০টি ধাপ সম্পর্ককে আলোচনা করবো।যেগুলো ব্লগিং করার সময় আমাদের প্রয়োজন হবে।
ব্লগিং এর প্রথম ধাপ
আমাদের ঠিক করতে হবে ব্লগিং করবো কি না।আমাদের মন কি চায়?যদি ব্লগিং করার সময় ব্লগিং এ আমাদের মন না বসে তবে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না।অনেকেই ওয়েবসাইট বানিয়ে সেখানে পোস্ট করে অ্যাডসেন্স এপ্রুভাল নিয়ে বিক্রি করে দেয়।সেটা অন্য বিষয়।তবে ব্লগিং এর আসল মানে হল এটা আমাদের বছরের পর বছর করতে হবে।অর্থাৎ,এটি আসলে নেশা হয়ে যায়।কাজে যদি মন না বসে তবে সেই কাজ তো ভালো মত করা যাবে না।
ব্লগিং এর দ্বিতীয় ধাপ
ব্লগিং করবো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার পর আমাদের ঠিক করতে হবে কোন বিষয়ে ব্লগিং করবো।ব্লগিং করার জন্য অনেক ধরনের নিশ আছে।নিশ শব্দটি নতুন মনে হচ্ছে?গুগল সার্চ করে আরো জেনে নিতে পারেন এই বিষয়ে।তবে একদম শর্ট করে বলি,নিশ মানে টপিক।অর্থাৎ,আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে যেসব বিষয়ে লিখবো সেটাই হলো নিশ।একটি ওয়েবসাইট কিন্তু মাল্টি নিশ হতে পারে।অর্থাৎ, আপনি আপনার ওয়েবসাইটে অনেক বিষয়ে লেখালেখি করতে পারেন। তবে কোনো বিষয়ে লেখালেখি করার জন্য সেই বিষয়ে যথেষ্ট পরিমাণ ধারণা থাকা জরুরী।নয়তো আমরা যে নিশ নিয়ে ব্লগিং করছি,সেই বিষয়ে নতুন নতুন টপিক নিয়ে পোস্ট করবো কিভাবে?তাই না?
ব্লগিং এর তৃতীয় ধাপ
নিশ ঠিক করে ফেলেছেন?কোন বিষয় নিয়ে ব্লগিং করছেন না করতে চান সেটি আমাকে জানাতে পারেন কমেন্ট বক্সে। যাই হোক,নিশ ঠিক করে পর আমাদের ঠিক করতে হবে আমরা কোন CMS অর্থাৎ Content Management Service এ ব্লগিং করবো।এক্ষেত্রে আমরা জনপ্রিয় ২টি অপশন থেকে একটি বেছে নিতে পারি।একটি হলো গুগলের Blogger এবং অপরটি হলো WordPress । এখন এখানে কিছু ব্যাপার আছে।Blogger কাদের জন্য এবং WordPress কাদের জন্য?
Blogger দিয়ে ব্লগিং করতে পারেন,যদি আপনি প্রতি বছর শুরু ডোমেইন কেনার জন্য টাকা খরচ করতে চান।এর বেশি কোনো খরচ হবে না আপনার।(যদি পোস্ট নিজে লিখতে পারেন) Blogger গুগলের ফ্রী একটি প্রোডাক্ট।আর Blogger অনেক সেইফ।অর্থাৎ, সিকিউরিটি নিয়ে ভাবতে হবে না।আপনাকে শুধু আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে হবে।এটাই অনেক।
আরও পড়ুন – ডিজিটাল মার্কেটিং কাকে বলে
WordPress তাদের জন্য,যারা প্রফেশনাল ভাবে ব্লগিং করতে চায়।অর্থাৎ,ব্লগিং কে পেশা হিসেবে নিতে চায়।ওয়ার্ডপ্রেসে অনেক সুবিধা রয়েছে,যা একটি ব্লগ পরিচালনা করার জন্য যথেষ্ট।অনেক কাজ আপনি প্লাগিন দিয়েই করতে পারবেন।অসংখ্য সব থিম পাবেন নিজের ওয়েবসাইটকে প্রফেসনাল লুক দেয়ার জন্য।তবে প্রতি মাসে বা প্রতি বছর ডোমেইন এবং হোস্টিং কেনার জন্য টাকা খরচ করার মতো মন মানুষিকতার এবং সামর্থ থাকতে হবে।তবেই ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ব্লগিং করতে পারবেন।
ব্লগিং এর চতুর্থ ধাপ
ওয়ার্ডপ্রেস সিলেক্ট করলেন নাকি ব্লগার? যেটিই সিলেক্ট করুন।ব্লগিং করা গেলে হলো।এখন আমাদের প্রয়োজন ডোমেইন নাম।ডোমেইন আবার কি?শব্দটি নিশ্চই শুনেছেন।ডোমেইন হলো একটি ওয়েবসাইটের নাম।আমাদের যেমন নাম আছে,ঠিক তেমনি একটি ওয়েবসাইটের যে নাম থাকে,সেটি হলো ডোমেইন নাম।ওয়েবসাইটের আইপি এড্রেস অ্যাকসেস করার জন্য ডোমেইন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ বিষয়ে অন্য কোনো পোস্টে আলোচনা করবো।ডোমেইন নাম নির্বাচন করার সময় আমাদের দ্বিতীয় ধাপে যে নিশ সিলেক্ট করেছিলাম,সেই নিশের সাথে মিল রেখে ডোমেইন নাম সিলেক্ট করতে হবে।
এটি বলার একটি কারণ দেখাই।আপনি হয়তো বলতে পারেন যে,ডোমেইন নাম একটি হলেই তো হয়।এটা ঠিক,তবে আমাদের নিশের সাথে মিল রেখে ডোমেইন নাম নির্বাচন করা উচিত।কারণ,আমাদের ওয়েবসাইট যদি হয় টেকনোলজি নিয়ে।আর আমরা ডোমেইন সিলেক্ট করি foodpedia । তবে একটু কেমন হয়ে যায় না?আমাদের ওয়েবসাইটের ভিজিটররা তো চিন্তায় পরে যাবে,সাথে সার্চ ইঞ্জিন এর ক্রলার।তাই নিশের সাথে মিল রেখে ডোমেইন নাম নির্বাচন করতে হবে।\
আরও পড়ুন – মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করার উপায়
ব্লগিং এর পঞ্চম ধাপ
এখন এটি আপনার উপর ভিত্তি করছে যে আপনি হোস্টিং কিনবেন কি না।কারণ,আপনি যদি Blogger প্ল্যাটফর্ম এ ব্লগিং করতে চান,তবে আপনাকে হোস্টিং কিনতে হবে না।কিন্তু এক্ষেত্রে অনেক কিছু করতে পারবেন না,এবং অ্যাকসেস থাকবে না।কোনো ভায়োলেন্স করলে ব্লগ রিমুভ করে দিবে কোনো ওয়ার্ণিং না দিয়ে।ব্যাকআপ এর অপশন অব্দি দিবে না।তবে ওয়ার্ডপ্রেস এ এদিক দিয়ে সুবিধা রয়েছে।পুরো অ্যাকসেস আপনার কাছে।যখন ইচ্ছে আপনার ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ নিতে পারবেন।ওয়ার্ডপ্রেস এ ব্লগিং করতে চাইলে হোস্টিং কিনতে হবে।হোস্টিং হলো একটি মেমোরি কার্ড এর মত।কিন্তু এটি একটি সার্ভার।অর্থাৎ,যে সার্ভারে আমাদের ওয়েবসাইটের ডাটা থাকবে এবং মানুষ অ্যাকসেস করতে পারবে।
আপনি বাংলাদেশী কিংবা ইন্টারন্যাশনাল যেকোনো ওয়েবসাইট থেকে হোস্টিং কিনতে পারেন।কার্ড থাকলে Namecheap বা Godaddy অথবা Hostinger থেকে হোস্টিং কিনতে পারেন।এটি পুরো আপনার ইচ্ছের উপর নির্ভর করছে।তবে ভালো হোস্টিং প্যাক নেয়ার চেষ্টা করবেন।যেনো ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বেশি হলে হোস্টিং না ডাউন হয়ে যায়।হোস্টিং এর স্পীড বেশি হলে ওয়েবসাইটের স্পীড বেশি হবে।
ব্লগিং এর ষষ্ঠ ধাপ
ডোমেইন কিনেছিলেন?ব্লগার ব্যবহার করলে কিন্তু সাবডোমেইন দিয়েও ব্লগিং করতে পারবেন।অ্যাডসেন্স ও নিতে পারবেন।তবে ব্লগিং যেহুতু করবো,পরবর্তীতে যেনো আফসোস না করতে হয়,তাই একটি ডোমেইন কেনা বুদ্ধিমানের কাজ।ব্লগার এ ব্লগিং করলে যেখানে থেকে ডোমেইন কিনেছেন সেখানে আপনার সাইটে cName যুক্ত করে ডোমেইন যুক্ত করতে হবে।নিচে ব্লগারে কিভাবে ডোমেইন সেট করতে হয় এই বিষয়ে একটি পোস্ট যুক্ত করে দিচ্ছি। Trickbd তে এই পোস্টটি অন্য এক অথর ভাই করেছিলেন।
Cloudflare দিয়ে ব্লগারে কাস্টম ডোমেইন কিভাবে অ্যাড করবেন।
ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ব্লগিং করলে যে কোম্পানি থেকে ডোমেইন কিনেছেন সেই ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার হোস্টিং এর নেমসার্ভার ডোমেইনের নেমসার্ভারে রিপ্লেস করে দিন।অর্থাৎ,হোস্টিং এর নেমসার্ভার কপি করে ডোমেইনের আগের নেমসার্ভার কেটে হোস্টিং এর যে নেমসার্ভার কপি করলেন,সেটা পেস্ট করে দিবেন।তাহলেই হয়ে যাবে।
ব্লগিং এর সপ্তম ধাপ
সবকিছু তো করলাম,এখন আমাদের ওয়েবসাইটের জন্য থিম নির্বাচন করতে হবে।Blogger ব্যবহার করলে আমার প্রোফাইলে ঢুকে Blogger Template সম্পর্কিত পোস্টগুলো দেখতে পারেন।তাহলে অনেক ভালো টেমপ্লেট পেয়ে যাবেন।ওয়ার্ডপ্রেস এ Jannah Newspaper, Blocksy , Generatepress , Astra , Kadence যেকোনো থিম ব্যবহার করতে পারেন।থিম সেট করে সুন্দর ভাবে কাস্টোমাইজ করে নিবেন।
আরও পড়ুন – ব্লগিং কি? ব্লগিং করে কত টাকা আয় করা যায়
ব্লগিং এর অষ্টম ধাপ
সবকিছু ঠিক ভাবে করে থাকলে এখন আমাদের ওয়েবসাইটের জন্য কিছু দরকারী পেজ বানাতে হবে।ব্লগিং করে টাকা ইনকাম করতে চাইলে,আমাদের যেকোনো অ্যাড নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে হবে।অন্য উপায় ইনকাম করা যায়।তবে সে বিষয়ে এই পোস্টে আলোচনা করবো না।অ্যাডসেন্স সবথেকে ট্রাস্টেড অ্যাড নেটওয়ার্ক।তাই অ্যাডসেন্স এপ্রুভাল নিতে আমাদের ওয়েবসাইটে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পেজ থাকতে হবে। এগুলো হলো : About , Contact , Privacy Policy , Disclaimer , Terms of Use । অ্যাডসেন্স এপ্রুভাল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে এই পেজগুলো থাকতে হবে।
ব্লগিং এর নবম ধাপ
সবকিছু ঠিক ভাবে করে থাকেলে,এখন আমাদের সঠিক ভাবে ইউনিক পোস্ট লিখতে হবে।বাংলায় ব্লগিং করলে ভালো কিছু KD (Keyword Difficulty) কম এমন কীওয়ার্ড নিয়ে রিসার্চ করে পোস্ট লিখতে হবে।ইংলিশে এভাবেই কীওয়ার্ড রিসার্চ করে পোস্ট লিখতে হবে।পোস্ট এসইও ফ্রেন্ডলী করে লিখতে হবে।যেনো সার্চ ইঞ্জিনে র্যাঙ্ক করে।তবেই তো ওয়েবসাইটে ভিজিটর পাবো।ভিজিটর ছাড়া তো এসবকিছুই বৃথা।
ব্লগিং এর দশম ধাপ
ওয়েবসাইটে ভালো ইউনিক পোস্ট থাকলে এবং ভিজিটর থাকলে,অ্যাডসেন্স থেকে দ্রুত এপ্রুভাল পেয়ে যাবেন।এজন্য গুগল অ্যাডসেন্স এ একটি একাউন্ট খুলে আপনার সাইট অ্যাড করে দিয়ে তারপর অ্যাডসেন্স থেকে দেয়া কোডটি আপনার ওয়েবসাইটের থিমের ভিতর অ্যাড করে দিবেন।তাহলেই আশা করছি আপনার অ্যাডসেন্স পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
777+ Happy Birthday Status in Bengali 2023
999+ Happy Birthday Wishes in Bengali 2023
উপসংহার
এই পোস্টে আমি বিগীনার ব্লগারদের জন্য ১০টি ধাপ নিয়ে আলোচনা করেছি।যেগুলো ব্লগিং শুরু করার জন্য করতে হয়।এগুলোর প্রতিটি ধাপ ভালো ভাবে সম্পাদন করলে সহজেই ব্লগিং করে সফল হওয়া সম্ভব।আশা করছি এই ধাপ ১০টি নিয়ে আরো বিস্তারিত লেখার সুযোগ পাবো।যদি আপনার কাছে পোস্টটি কাজের মনে হয়,তবে অবশ্যই মন্তব্য করবেন।তাছাড়া এই বিষয়গুলো নিয়ে আমার আলাদা করে আরো বিস্তারিত এবং লাইভ (অর্থাৎ,কিভাবে কি করতে হবে) প্রুফ সহ পোস্ট করা উচিত কি না জানাবেন।আজকের মত এতটুকু।
যেমন কপি পোস্ট করলে করবো কিন্তু Adsense করবো না।