আসসালামু আলাইকুম।

আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদেরকে যে বিষয় সম্পর্কে বলব সেটি হচ্ছে, বিদেশে গিয়ে আমরা কি করব, কি করা উচিত বা দেশে থাকা অবস্থায় কি কি করা উচিত তা সম্পর্কে। চলুন বেশি কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।

বিদেশে মানুষ শুধু মাত্র দুইটা কাজের জন্যই যায় এক হচ্ছে কেউ পড়ালেখার জন্য আর দ্বিতীয়ত কেউবা কাজের জন্য।

পড়ালেখা বা কাজের জন্য যেটার জন্যই যাবেন, পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা উত্তম।

যারা কাজের জন্য যাবে তাদের জন্য কি রকম প্রস্তুতি নেয়া উচিত?

যারা বিভিন্ন কোম্পানি থেকে বা কোন অফিসিয়াল কাজের জন্য যাবেন তারা অবশ্যই নিজেদেরকে যথাযথভাবে তৈরি করে নিয়ে যাবেন।

কোন অফিসিয়াল কাজের জন্য হলে বেশিরভাগ সময় ইংরেজি ভাষা সুন্দরভাবে বলতে হয়। আপনাদের কারো যদি ইংরেজিতে একটু সমস্যা থাকে তাহলে আপনার অফিসিয়াল কাজ করতে যাওয়ার আগে অবশ্যই নিজেকে আপডেট করার চেষ্টা করবেন।

যে দেশে যাচ্ছেন সেই দেশের আবহাওয়া সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখুন যাতে আপনার কোন সমস্যা না হয়।

বিভিন্ন ধরনের রঙ্গিন কাপড় পড়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা আপনি অফিসিয়াল কাজ অথবা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে যাচ্ছেন আর আপনার পার্সোনালিটি ও যেন তেমনি দেখায়। নিজেকে সবসময় পরিপাটি রাখবেন। আর একটি কথা সবসময় ব্যবহার ভালো করবেন তাহলে সবখানেই মূল্য পাবেন।

মার্জিত কাপড় পরা অভ্যাস গড়ে তুলুন। কোট টাই পড়তে পারেন।

এখন কথা হচ্ছে যে যারাই স্টুডেন্ট বা যারা পড়ালেখা করতে বিদেশে যাবে তারা কি করবে?

যারা অফিসিয়াল কাজের জন্য যায় তারা না হয় সবকিছু বুঝে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে তারা নিজেদেরকে পরিপাটি অথবা নিজেদেরকে প্রপারলি রিপ্রেজেন্ট করতে পারে কিন্তু স্টুডেন্টরা প্রায় ক্ষেত্রেই তা পারে না। তো স্টুডেন্টরা যা করবে তা হচ্ছে:

১. যেই দেশে যাবে সেই দেশের ভাষা অবশ্যই শিখে যেতে।

২. IELTS-এ ভালো ফলাফল করার যথেষ্ট চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনি স্কলারশিপও পেয়ে যেতে পারেন।

৩. যে দেশে যাচ্ছেন সেই দেশের আবহাওয়া সম্পর্কে ঘাটাঘাটি করুন ইউটিউব অথবা অন্য কোন প্লাটফর্ম থেকে যে সেই দেশের আবহাওয়া আপনাদের দেশের সাথে কতটুকু মিল বাও মিল। কেননা আমরা যেই আবহাওয়াতে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি বাহিরে গিয়ে তা আমাদের উল্টাও হয়ে যেতে পারে। আমাদের দেশের মতোই যদি আবহাওয়া হয় তাহলে আপনাদের কোন সমস্যা হবে না আর যদি অন্যরকম হয় তাহলে আগে থেকেই সেরকম প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। নিজের মাইন্ড সেটআপ সেভাবেই করুন। যে আমার এমন আবহাওয়ায় দিন কাটাতে হবে পড়ালেখা করতে হবে ফ্যামিলির জন্য কিছু করতে হবে নিজের জন্য কিছু করতে হবে সবকিছুই মাথায় রাখুন।

৪. সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনার নিজের আত্মবিশ্বাস। আপনি নিজের প্রতি যখন আত্মবিশ্বাসী হতে পারবেন তখন থেকেই আপনি অনেক কিছুই করতে শিখবেন।

৫. বিদেশে আমাদের দেশে তুলনায় জামাকাপড়ের দাম অনেক বেশি হয়। যতটুকু সম্ভব আমাদের দেশ থেকে আপনি ক্যারি করতে পারবেন সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন। এতে করে থাকার খরচের পরিমাণ কমে যায়।

৬. বাইরের দেশে গিয়ে নিজেকে রান্না করে খেতে হয়। ভালো হয় যদি কিনা আপনি রান্না শিখে বিদেশে‌ যান।

৭. বিদেশে যাওয়ার আগে সকলের থেকে অবশ্যই দোয়া নিয়ে যাবেন সকাল থেকে অবশ্যই পরামর্শ নিবেন। এতে করে তারাও আপনাকে কিছু পরামর্শ দিবে এবং আপনিও উপকৃত হবেন তার সাথে সাথে যার থেকে পরামর্শ নিবেন সেও অনেক খুশি হবে তাকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য।

৮. বিদেশে যাওয়ার আগে কোন ঝামেলার মধ্যে জড়াবেন না। এতে করে আপনার বিদেশে যাওয়ার বাধা আসতে পারে।

৯. আপনি দেশ থেকে চাইলে মসলা জাতীয় কিছু নিয়ে যাইতে পারেন যদি কিনা সেটা সেই দেশে না পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে এমন ইচ্ছা হতে পারে যে দেশের কিছু রান্না করে খাই তাই জন্য সাথে করে নিয়ে যেতে পারেন।

১০. আর অবশ্যই যাদের সাথে আপনার পূর্বে কোন সমস্যা ছিল কমিউনিকেশন গ্যাপ ছিল তাদের সাথে সবকিছু ঠিক করে নিয়ে উত্তম হবে। আপনারা অবশ্যই কারো সাথে কোন সমস্যা হয়ে থাকলে তাদের থেকে মাফ চেয়ে নিতে পারেন। মাফ চাও মানে নিজেকে ছোট করো না এমনটা মনে করে আবার মাফ চাইতেই যাইয়েন না। আপনার তার সাথে যে কারণে ঝামেলা আপনিও ভুলে যান তাকেও সুন্দরভাবে বোঝায় ভুলে যেতে বলিয়েন এবং মাপ চেয়ে আসেন তাহলে তার কোন সমস্যা থাকবে না আপনার বিদেশে যাওয়ার পথে।

১১. বিদেশে মাটিতে গেয়ি আবার দেশকে ভুলে যাবেন না কেননা এই দেশের মাটিতেই আপনার জন্ম হয়েছে দেশ কি দিয়েছে আপনাকে তা না জিজ্ঞেস করে আপনি দেশকে কি দিচ্ছেন তা ভাবুন। সব সময় চেষ্টা করবেন নিজের দেশটিকে বিশ্ববাসীর সামনে সেরা প্রমাণ করতে। এটি শুধু আপনিই পারবেন।

১২. দেশে থাকা অবস্থাতেই বিদেশে আপনাকে এয়ারপোর্টে কে রিসিভ করতে আসবে তা ঠিক করে রাখবেন যাতে কোন ঝামেলায় পড়তে না হয় পরবর্তীতে।

বিদেশ যাওয়ার পর কি করবেন?

১. বিদেশে যাওয়ার পর আপনি অবশ্যই সেখানে যারা আগে থেকে ছিল তাদের থেকে কোথায় কি পাওয়া যাবে না যাবে জেনে নিবেন।

২. শুরুতে গিয়েই একা একা কোথাও যাবেন না। সবখানেই ভালো খারাপ দুই ধরনের মানুষ এই পেয়ে যাবেন। চেষ্টা করবেন ভালো মানুষদের থেকে একটু হলেও সাহায্য নেয়ার, কোথায় কিভাবে চলতে হবে তার সম্পর্কে জেনে নিবেন তাদের থেকে।

৩. অবশ্যই সব সময় বড়দেরকে সম্মান দিবেন তাহলে আপনি সকলের আদরের হয়ে যাবেন।

৪. বিদেশে যে কোন কিছুর দাম বেশি হওয়ার কারণে সুপার শপ থেকে কেনাকাটা না করাই উত্তম হবে যদি কিনা আপনার টাকার কিছু সমস্যা থাকে। যেমনটা আমাদের বাংলাদেশের প্রায় মানুষেরই হয়ে থাকে। তবে সুপার শপ এ চা পাবেন তা অনেক ভালো হবে মানের দিক থেকে। এছাড়াও আপনারা বাঙালি অনেক পেয়ে যাবেন যাদের নিজেদের দোকান আছে। বা বাঙ্গালীদের জন্য বাজারও পেয়ে যেতে পারেন সেখান থেকে বাজার করলে আপনার সুবিধা হবে অবশ্যই। তার পাশাপাশি চেনা পরিচিত হতে পারবেন অনেকের সাথে। কখনো বিপদে পড়লে অবশ্যই কাজে লাগবে সেখানে।

৫. বিদেশে গিয়ে অবশ্যই উশৃংখল হবেন না। পরিবারের থেকে অনেক দূরে থাকতেছেন তাই জন্য নিজের সবকিছু ঠিক রাখার চেষ্টা করবেন।

পড়ালেখা করার জন্য যাচ্ছেন পড়ালেখার দিকে মনোযোগ সবসময় ঠিক রাখবেন আর পরিবারের খেয়াল রাখবেন। বিদেশে যাওয়ার পর আবার পরিবারকে ভুলে যাইয়েন না যারা কিনা আপনাকে পাঠিয়েছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব করার চেষ্টা করুন এতে করে আপনার থাকা খাওয়ার খরচ থেকে শুরু করে আপনি পরিবারের জন্য কিছু টাকা পাঠাতে পারবেন।

মাথার মধ্যে সবসময় এইটা রাখুন যে যারা আপনার জন্য সবকিছু করলো তাদের জন্য যেন আপনি কিছু করতে পারেন, ভালো কিছু করতে পারেন।

আরো কোন কিছু জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন আমি আপনাদের সামনে অবশ্যই তা তুলে ধরব।

সকলের জন্য শুভকামনা জানিয়ে আজকের মত এখানেই শেষ করছি। সকলে ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন নিজের যত্ন নিবেন।

আল্লাহ হাফেজ।

 

 

Leave a Reply