Intro
গল্প লেখা আমার অভ্যাস নয়, আপনারা জানেনই। অনেক কষ্টে দু’ঘন্টা ধরে মোবাইলে লেখা আমার প্রথম শিক্ষণীয় কাহিনী ” একটি মোবাইলের আত্মকাহিনী “
## আপনারা সবাই পড়ে দেখবেন, ভালো লাগলে কমেন্টে জানাবেন।
একটি মোবাইলের আত্মকাহিনী – by Rakibul Riad
—————————— সাল ২০১৪।
আমার জন্ম হলো। স্যামসাং (Samsung) ব্রান্ডের এক ইন্জিয়ার টিম আমাকে তৈরি করেছে। শুনেছি ১৯৮৩ সালে প্রথম মোবাইল নামে ডিভাইস বাজারে আসে। সেই ডিভাইসের সাথে আমার কিছু মিল থাকায় ভেবে নেওয়া যায় আমিও মোবাইল। আমাকে তৈরি করার পর এক প্যাকেটে মুড়িয়ে রাখা হয়। প্যাকেটে ঢুকানোর সময় দেখলাম স্যামসাং এর লোগো লাগনো। প্যাকেট দেখে মনে হলো নিশ্চয় বড় কোনো কোম্পানি। সে যাই হোক। এর পর ২ দিন ধরে পড়ে রইলাম সে প্যাকেটে। ২ দিন পর কেউ একজন প্যাকেট খুলে আমাকে বের করল।
আমাকে বড় একটা দোকানে আনা হয়েছে। মোবাইলের দোকান। চারপাশে বিভিন্ন সাইজের মোবাইলের মেলা। নানা স্টাইলেরও আছে। কিছু কিছু আমার মত। টাচস্ক্রিন রয়েছে। কিছু আমার চেয়েও বড়। কিছু রয়েছে ছোট। বাটন টিপে ব্যবহার করতে হয়।
তবে সব ফোনের ব্র্যান্ড ই সেম। বুঝতে বাকি রইল না, এটা একটা মোবাইলের শো রুম।
আমাকে পরিষ্কার করে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হলো।
ঐদিনে দোকানে এলো ১২ বছরের একটা ছেলে তার বাবা মার সাথে। মার কোলে ১/২ বছরের বাচ্চা। ঐ ছেলেটার বোন।
বাবা বলল, দেখতো সোহাগ, কোনটা পছন্দ হয়?
সোহাগ নামের ছেলেটি পুরো শোরুম ঘুরে ঘুরে আমাকে পছন্দ করল। আমি দেখতে হয়ত ভালো না। তাই কেউ পছন্দ করলো না, আবার সোহাগের পছন্দকেও ফেলে দিলো না। সবাই আমার দেহকে দেখল, কিন্তু সোহাগ দেখলো আমার ভেতরটা। আমাকে সে খুব ভালবেসে ফেলল।
আমাকে কেনার পর কোনো সময়ই হাতছাড়া করলো না। সে কাউকে ধরতে দিল না। তার বন্ধুদেরকেও না, এমনকি তার মাকেও না। সারাদিন আমাকে নিয়ে গেম খেলতে লাগলো। আমাকে ঘেটে ঘেটে না জানা সব ফিচার বের করতে লাগলো।
আমাকে নিয়ে মানুষের কৌতুহল দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ। মোবাইল হয়ে জন্মানোর জন্য নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করলাম। কিন্তু শেষ পরিস্থিতিটা কেমন হবে তা জানতাম না।
দেখলাম প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময়ই সে আমাকে দিয়ে ফেলছে। মা বারবারই বলে, “সোহাগ, ফোন রেখে পড়তে বস!”
সে রাখেনা। আমার বিশ্বাস আমাকে কেনার আগে সে তার মায়ের প্রতি এত অবাধ্য ছিল না। সে খুব ভদ্র ছেলে।
***********
গ্রীষ্মের ছুটি শেষ। সোহাগের স্কুল খুলল। ক্লাস এইটে পড়ে সে। রোজ স্কুল যেতে হয় বলে আমাকে বাড়িতে রেখে যায়। আমার তাকে ছাড়া একদমই ভালো লাগে না। স্কুল থেকে ফিরেই সে আমাকে দেখে খুব খুশি হয়ে যায়। এ থেকে বোঝায় যায় সেও আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না।
একদিন আমাকে টেবিলের উপর রেখে চলে যায় স্কুলে । এদিকে তার ছোট বোন এসে আমাকে ফেলে দেয় টেবিল থেকে। তারপর কিছু মনে নেই। নিজেকে একসময় আবিষ্কার করলাম সোহাগের হাতে। শুনলাম সে স্কুল থেকে এসে আমাকে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটায়ে থাকা অবস্থায় পায়। তারপর সব জোড়া লাগিয়ে আমাকে ভাল করে তোলে।
এরপর সে আমার আরও কাছাকাছি চলে আসে। আমাকে রোজ ব্যাগের সিক্রেট পকেটে রেখে স্কুলে নিয়ে যায়। স্কুলে কখনও আমাকে বের করেনি। যদি স্কুলে ধরা পড়লে স্যার নিয়ে নেয় এই ভয়ে।
***********
স্কুলের রেজাল্ট! প্রথম সাময়িকে মোটামুটি ভালো করছে সোহাগ। আমি বেশ খুশি। রোজ স্কুলে যাওয়া ছেলে ভালো রেজাল্ট তো করবেই।
একদিন এক অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসল। সোহাগ গেম খেলছিল। কোনো পরোয়া করল না। কিছুক্ষণ পর আবার আসল। সে এবার ধরলো। ঐ পাশ থেকে একটা মেয়ে বলল – ” আপনার নাম কি সোহাগ? ”
সোহাগ বলল – ” জি! আপনি কে? আমাকে কি দরকার?”
মেয়েটি বলল – ” আমাকে চিনবে না। কিন্তু আমি তোমাকে চিনি। ”
দ্বিতীয় কথাতেই আপনি থেকে তুমি হয়ে গেল এটা লক্ষ্যই করেনি সোহাগ। সে কথা বলেই চলল।
এভাবে প্রতিদিন কথা বলতে লাগল দুজন। প্রতিদিন রাতে মেয়েটাই ফোন করত।
ও হ্যাঁ! মেয়েটার নাম রুবা। একই ক্লাসে পড়ে। সমবয়সীদের মাঝে ভাব জমাটা খুব সহজ।
কিন্তু সোহাগ ও রুবা একটু বেশীই ভাব জমাচ্ছে।
আগে রুবা ফোন দিত। এখন সোহাগ নিজে ফোন দেয়। নিজের বাঁচানো টিফিনের টাকা জমিয়ে ফোনে টাকা তোলে। কোনো উপলক্ষ্যে টাকা পেলে পুরাটাই রুবার সাথে কথা বলে খরচ করে।
আমি সব কথাই শুনি। দুজনেই কোনো সিরিয়াস কথা না বললেও আমি বুঝি দুজনে দুজনের কত কাছে চলে আসছে। মানবজাতি একে হয়ত প্রেম বলে।
একদিন সোহাগের মা শুনতে পায় তার ছেলে কার সাথে যেন রাতে কথা বলে। তার মা সোহাগকে ধরে ফেলে এবং সোহাগের কাছ থেকে আমাকে ছিনিয়ে নেয়। তিনি যেভাবে আমাকে ছিনিয়ে নিলেন, মনে হয় কোনো ছিনতাইকারিরাও হয়ত এর চেয়ে আস্তে ছিনিয়ে নিত।
আমাকে ফেলে রাখল আলমারিতে। চাবি দিয়ে বন্ধ করল আলমারিটা। চারপাশ শুধু অন্ধকার। আলমারির ঐপাশ থেকে সোহাগকে গালাগালি করার কোনো শব্দ আসছে না।
সোহাগ হয়ত মায়ের বকুনির হাত থেকে বেঁচে গেল। অন্য কারও মা হলে খুব বকত। সোহাগকে সবাই খুব ভালবাসে।
এরপর ৩ দিন কেটে গেল। চতুর্থ দিন রাতে আলমারি খোলা হল।একটা কাল হাত ( অন্ধকারে) আমাকে খুঁজে নিয়ে বের করল। অন্ধকারে মুখ না দেখা গেলেও বুঝলাম সোহাগ। আমাকে নিয়ে সে রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে রুবার সাথে কথা বলে। এর পর রোজ আমাকে লুকিয়ে ফেলার খেলা চলে।
মা আসলে লুকায়, বাব আসলে লুকায়। কখনো বারান্দায় কখনো বা বাথরুমে আমাকে নিয়ে যেয়ে কথা বলত রুবার সাথে।
***********
বার্ষিক পরীক্ষার ১ মাস বাকি। সোহাগের কিছুই পড়া হয়নি। পরীক্ষার জন্য রুবার সাথে কথাটাও কম বলছে। মাথ ঘুরছে তার। আমার দিকে তাকাচ্ছে, কিন্তু হাতে নিচ্ছে না। আবার যখন নিচ্ছে ১ ঘন্টা পর আবার রেখে দিচ্ছে। অথচ আগে ১ ঘন্টার জন্যও আমাকে ফেলে রাখত না। হয়ত পরীক্ষার সময় সবারই এরকম হয়।
এমন সময় রুবা ফোন দিল, আবার শুরু হলো কথা। থামার নাম নেই। পড়াশোনাও আর হলো না।
একটা কথা বলা হয়নি, রুবার সাথে সোহাগের কোনোদিন সামনাসামনি দেখা হয়নি, ফেসবুক প্রোফাইলে ছবি দেখেছে। ভারি মিষ্টি মেয়ে। কিন্তু তার পুরো নাম, বাবার নাম, বাড়ির ঠিকানা কিছুই জানে না সোহাগ। তার কাছে দুটা জিনিসই জানা। একটা রুবা ও তার ফোন নাম্বার।
পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। পুরো ক্লাসে শুধু সোহাগ দুটো বিষয়ে ফেল করেছে।আর কেউ কোনো বিষয়ে ফেল করেনি । ক্লাস এইট ফেল করার মত ক্লাস না।
সোহাগ ফেল করেছে। বাবা মা রাগ করে আছেন এমন নয়। বাবা মা খুব কষ্টে আছেন। তারা জানেনও না যে আমাকে কিনে তার ছেলেকে দেওয়ার জন্য এই অবস্থা।
ঐদিকে রুবা কি করে জানি জেনে গেছে। সোহাগ ফেল করেছে এ নিয়ে তার বাবা-মা তাকে না বকলেও, খুব বকল রুবা। রুবা মেসেজ দিল সে আর কোনো দিন সোহাগের সাথে কথা বলবে না।
সোহাগ কল দিল, সে ধরল না। মেসেজ দিল, সে রিপ্লাই দিল না। ফেসবুকে নক করল, রেন্সপন্স দিল না।
সোহাগের মাথা ঠিক নেই। দুটো বিষয়ে ফেল করার পর সে ভাবেনি প্রেম নামক বিষয়েও সে ফেল করবে। সোহাগ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। গেমও খেলছে না, আগের মত ফোন ঘাটছেও না। শুধু তাকিয়ে আছে। বুঝেছি রুবার কলের জন্যই তার এই অপেক্ষা।
অপেক্ষা চলল বেশ কদিন। তারপর সে মনমরা হয়ে পড়ে রইল। বাড়িতে কেউ তার সাথে কথা বলে না, যার জন্য সে ফেল করল সে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্যও তাকে কল দিল না। সে লজ্জায় মুখ তুলতে পারে না। সারাদিন কি যেন ভাবে। আমাকে দেখেও না, তুলেও নেয় না। আমিও মন খারাপ করে আছি।
পরদিন আমাকে তুলে নিলো সোহাগ। কি যেন দেখল, তারপর ফেসবুকে রুবাকে মেসেজ দিলঃ আমি যাচ্ছি, আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি চিরদিনই তোমারই থাকব।
আমি যাচ্ছি কথাটার মানে যে অত সহজ নয়, বুঝতে পারলাম আমি। সোহাগ আমাকে ফেলে কাগজে কি যেন লিখল। দূরে থাকায় পড়তে পারলাম না। এরপর এমন কিছু ঘটল যা ঘটারই ছিল। আমি মোবাইল না হলে আমিও তাই করতাম ঐ পরিস্থিতিতে। বাঁচাতেও পারলাম না আমার সোহাগকে। চোখের সামনে ঝুলছে সে।
এখন কে খেলবে আমাকে নিয়ে, কে কথা বলবে?- এসব ভাবছি না। মোবাইল মানুষের মত স্বার্থপর না, রুবার মতও না। তবে সোহাগ মোবাইলকেও শিক্ষা দিয়ে গেল। শিক্ষা দিয়ে গেল ঘরের বাকি সব আসবাবপত্র কে। তারা শিক্ষা পেল।
শিক্ষা পেল না অন্য মানুষ, শিক্ষা পেল না রুবা। রুবা হয়ত অন্য সোহাগকে খুঁজে নিবে। আমি এসব ভাবতে ভাবতেই ঘরভরতি হয়ে গেলো।
এলো অ্যাম্বুলেন্স, এলো পুলিশ, বাবা, মা, পাশের বাড়ির আন্টি,কাজের মেয়ে, দারোয়ান কাকা, সব আত্মীয়। এলোনা শুধু রুবা। সে জানেই না আসবে কি করে। আর এসেও কি হবে।
রুবা হয়ত কিছুদিন পর ফেসবুকে দেওয়া মেসেজটা পড়বে। ভাববে “চলে যাচ্ছি” বলে সোহাগ হয়ত কোথাও বেড়াতে যাচ্ছে। সে কিছু মনে নাও করতে পারে, আবার তাকে না নিয়ে যাওয়ায় সোহাগের উপর রাগটা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। আজব মানুষ।
নিজেকে নিয়ে এখন আগের চেয়ে বেশি গর্ব করছি। মানুষ হয়ে তো জন্মাইনি। আবার গর্ব কমেও যাচ্ছে, মানুষই তো আমায় তৈরি করেছে। এইজন্যই মানুষরা আজব।
সোহাগ ঠিক করেছে এটা আমি বলছি না। আবার এটা বলছি যে, তার বাবা-মা, রুবা সবাই ভুল করেছে। কিন্তু সব কিছুরই যোগফলে শাস্তি হলো সোহাগের।
ভিড়ের ভিতর থেকে কে যেন আমাকে তুলে নিল,লুকিয়ে ফেলল পকেটে। মুখটাও দেখতে পারলাম না। চুরি করে নিল বোঝাই যাচ্ছে।
যখন বের করলো দেখি ছোটখাট একটা মোবাইলের দোকানে। আমাকে দরদাম করা হচ্ছে। যে চুরি করছিল সে কে? বললে মানুষ জাতির মনে হয়ত আঘাত লাগবে। সোহাগের লাশ পরীক্ষার জন্য যে পুলিশ এসেছিল সে । সে একজন পুলিশ, কেউ তাকে মোবাইলটা নিতে দেখলেও কিছু বলত না। ভাবত ইনভেস্টিগেশনের জন্য হয়ত নিচ্ছে।
তবুও লুকিয়ে নেওয়ার মানেটা কি! আবার বলতে বাধ্য হলাম – আজব মানুষ।
দাম ৮০০ টাকায় ফিক্স হয়ে গেল। আমাকে দোকানদার রেখে দিল ময়লা একটা শো কেসে। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম আরও একজন সোহাগের জন্য।
============================================
কাহিনীটা মাথায় হুট করে চলে আসল। দেরি না করে লিখে ফেললাম। যারা আমার পোস্ট রেগুলার পড়েন, তারা বুঝেই ফেলেছেন এটা আমারই লেখা।
কাহিনীটা উদ্ভাসের – ” নিরন্তর ” এর জন্য লেখা। আপনাদের না বুঝলেও চলবে। আপনারা শুধু কমেন্টে জানান কেমন হইছে লেখাটা।
pdf – http://downade.wapqu.com/site-download.html?to-id=90
পোস্ট টা পড়ে আমার রিয়েকশন কি হয়া উচিত বুঝতে পারছি না।
আপনার এই পোস্ট করে সবার চোখ খুলে দিয়েছেন।
Keep it up!
You copied this post from your mind!
Ha ha ha… Anyway nice post.
কিছু লাইন আর কয়টা শব্দ ঠিক করলে ফাস্ট ক্লাস হত।
গুড লাক।…..
সাল ২০১৪।
আমার জন্ম হলো।জম্ম নেওয়ার কিছু সময় পর বুঝতে পারলাম আমি মোবাইল। আরও জানতে পারলাম ১৯৮৩ সালে মোবাইল নামের এক ধরনের যন্ত্র
বাজারে আসে। আরও জানতে পারলাম স্যামসাং (Samsung) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ইন্জিয়ার টিম আমাকে তৈরি করেছে। আমাকে তৈরি করার পর এক প্যাকেটে মুড়িয়ে রাখা হয়। প্যাকেটে ঢুকানোর সময় লক্ষ্য করলাম গায়ে স্যামসাং এর লোগো লাগনো।
প্যাকেট দেখে মনে হলো নিশ্চয় বড় কোনো প্রতিষ্ঠান।…
Ami o 8 a pori bt i dont want any girl friend . I use my pc as my close friend . I play games bcuz i loves games, amar result mid(not gd,not bad). Bt i realy like your post. & if u can give any pc trick than it would be very gd.