আসসালামু আলাইকুম, সকলের সুস্থতা কামনা করে এবং সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের আর্টিকেল শুরু করছি। আশা করি সকলেই অনেক ভাল অাছেন। আজকে আপনাদের সাথে পদার্থবিজ্ঞানের তড়িৎ প্রবাহ নিয়ে আলোচনা করবো।

১.তড়িৎ প্রবাহ (A), ২.বিভব পার্থক্য(V), ৩.ওয়াট(W),

ঝর্ণা পছন্দ নয় এমন মানুষ খুব একটা নেই । বন্ধুরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম কোথাও বেড়াতে যাব । এক এক জন এক এক রকম সাজেশন দিল । শেষ পর্যন্ত পাহাড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হল । আমার খুব একটা পাহাড় পছন্দ না…. তবে ঝর্ণা পছন্দ…..
সেখানে একটা সুন্দর ঝর্ণা আছে জানতে পেরে যাওয়ার ব্যাপারে আমি আগ্রহী…..
যথা সময়ে সেখানে পৌঁছলাম । আর ভাল লাগা গুলোকে আলিঙ্গন করতে লাগলাম । ঝর্ণার সৌন্দর্য বা ভাল লাগা অন্য রকম.. এটা ঘটা করে বলার মত কোন ঘটনা নয় । প্রত্যেকেই এই ঘটনা গুলো জানেন ।
ঝর্ণা কি আসলে পাহাড়ের কান্না….? আচ্ছা এই পানি গুলো আসে কোথায় থেকে… আবার যায় কোথায়….? ঝর্ণার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার মাঝখানে কারো মনে কি এরকম প্রশ্ন গুলো জেগেছে…..?
এই পানি কোথা থেকে আসে এটা আজকের বিষয় বস্তুর অংশ নয়…. তবে কোথায় যায় সেটাই আজকের বিষয় বস্তু…. পর্যবেক্ষক হৃদয়টাকে একটু প্রসারিত করুন….
পানি গুলো ঝর্ণা বেয়ে ছোট ছোট খালে বিভক্ত হয়ে শেষে নদীতে গিয়ে পড়ে । আর নদী সেই স্রোত ধারা বয়ে নিয়ে যায় সাগরে । একটু খেয়াল করলে দেখবেন যে ঝর্ণা থেকে নিদিষ্ট পরিমাণ পানি নদীতে গিয়ে পড়ে… আর তার কারণে নদীতে স্রোত তৈরি হয় । আচ্ছা যদি নদীর প্রশস্ততা কমিয়ে দেই
তাহলে কি ঝর্ণা থেকে আসা এই নিদিষ্ট পরিমাণ পানির জন্য নদীর স্রোতের গতি বাড়বে নাকি কমবে….. অবশ্যয় নদীর প্রশস্ততা কমিয়ে দিলে নিদিষ্ট পরিমাণ পানির জন্য নদীর স্রোতের গতি বাড়বে । সংক্ষেপে… নদীর প্রশস্ততা কমিয়ে দিলে
স্রোতের গতি বাড়বে বলা যায়…. আবার নদীর প্রশস্ততা বাড়িয়ে দিলে স্রোতের গতি কমবে । এটা বুঝা গুরুত্বপূর্ণ তবে খুব যে গুরুত্বপূর্ণ তা নয় । এখানে দুটি কথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ –

1.নদীর প্রশস্ততা বা দুই পাড়ের দূরত্ব….

2. নদীর স্রোত বা প্রবাহ ।

বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার সাথে এটার খুব মিল…….
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তিনটি বিষয় দিয়ে আমরা বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাকে প্রকাশ করি । এগুলো হল
(1.)ভোল্টেজ (2.)ওয়াট (3.)অ্যাম্পিয়ার…. কিন্তু খুবই অদ্ভুত ব্যাপার হল তিনটাই আমাদের কাছে একি । আমি কিন্তু অনেকের মনের কথাই বলে ফেলেছি….।
সবকিছু কিন্তু দুটো তারের মধ্যেই ঘটছে… একটা তার নেগেটিভ অন্যটা পজিটিভ ।
আলু যেমন কেজি দিয়ে বা তেল যেমন লিটার একক দিয়ে মাপে তেমনি বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার মধ্যে প্রত্যেকটি বিষয়কে মাপার জন্য আলাদা আলাদা একক আছে । আমরা আসলে যেটাকে ভোল্টেজ বলি সেটা হল মূলত “বিভব পার্থক্য” যার একক হল “ভোল্ট”
অর্থাৎ একে মাপা হয় “ভোল্ট” দিয়ে এবং একে “V” দ্বারা প্রকাশ করা হয় । যেটাকে আমরা ওয়াট বলি এটা মূলত “ক্ষমতা”…. যার একক হল ওয়াট…অর্থাৎ যে কোন কিছুর ক্ষমতাকে ওয়াট দিয়ে মাপা হয় এবং
একে W দ্বারা প্রকাশ করা হয় । আবার আমরা যেটাকে অ্যাম্পিয়ার বলি সেটা মূলত “তড়িৎ প্রবাহমাত্রা” । “তড়িৎ প্রবাহমাত্রার” একক হল “অ্যাম্পিয়ার” অর্থাৎ “তড়িৎ প্রবাহমাত্রা” কে “অ্যাম্পিয়ার” দিয়ে মাপা হয় এবং একে A দিয়ে প্রকাশ করা হয় ।

সংক্ষেপে যদি বলি
(1)”বিভব পার্থক্য” -“ভোল্ট”(V)
(2) “তড়িৎ প্রবাহমাত্রা” – “অ্যাম্পিয়ার”(A)
(3)”ক্ষমতা” – “ওয়াট”(W)

“ক্ষমতা” – “ওয়াট”(W) এর কথা পরে হবে,,,, এবার নদীতে ফিরে আসি… এবার একটু কল্পনা করুন.. নদীর প্রশস্ততা বা দুই পাড়ের পার্থক্য এবং “বিভব পার্থক্য” – “ভোল্ট”(V) এগুলো সব একি কথা….। আবার নদীর স্রোত ধারা বা পানির প্রবাহ মাত্রা এবং
“তড়িৎ প্রবাহমাত্রা” – “অ্যাম্পিয়ার”(A) সমান
কল্পনা করি । মিল গুলো খেয়াল করুন.. নদীর দুইটা পাড়ের মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে আবার বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার দুটি তারের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ বা চার্জ প্রবাহিত হচ্ছে……
তাহলে বিদ্যুতের দুই তার মানে নদীর দুই পাড়…..বিদ্যুতের দুই তারের পার্থক্যই হল “বিভব পার্থক্য” বা ভোল্ট(V)….. আবার নদীর দুই পাড়ের পার্থক্য হল নদীর প্রশস্ততা…. অর্থাৎ নদীর দুই পাড়=ভোল্ট(V)

তারপর বিদ্যুতে চার্জের স্রোত মানে হল নদীতে পানির স্রোত…. বিদ্যুতে চার্জের স্রোত অর্থাৎ “প্রবাহমাত্রা” বা “অ্যাম্পিয়ার”(A) =নদীতে পানির প্রবাহমাত্রা….

পার্থক্য শুধু এতটুকু… নদীর ব্যবস্থা টুকু আমরা দেখতে পাই কিন্তু বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা দেখা যায় না । এবার আপনার কল্পনা শক্তি দিয়ে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাকে দেখা যায় কিনা দেখুন…..

এখন প্রশ্ন ওয়াট কি….?

মোটা দাগে বলতে গেলে ওয়াট হল

ভোল্ট(V) ও অ্যাম্পিয়ার(A) এর গুণফল…
ওয়াটের আরেক নামVA…..অর্থাৎV×A ……

তবে বৈদ্যুতিক অপচয়ের কারণে VA এর 80% কে ওয়াট ধরা হয় ।

আপনি নিশ্চয় IPS দেখেছেন..(Funকরলাম)
আপনার IPS কত VA…? আমি ধরে নিলাম 600VA…তাহলে কত ওয়াট হয়…? উত্তর : 600 × 80% = 480ওয়াট….। VA মানে হল ভোল্ট,অ্যাম্পিয়ার একসাথে
। এটাকে আলাদা করে ভোল্ট বা আলাদা করে অ্যাম্পিয়ার বলা যাবে না । এটা মূলত ওয়াট বা ওয়াটের একটা রূপ…… এর পর কখনো ঝট করে বলে দিবেন না… আপনার IPS 600 ভোল্টের….. তাহলে আমার হার্টএটাক করা ছাড়া উপায় থাকবে না ।
এখন প্রশ্ন আপনার IPS এর ভোল্ট কত….? আপনার বাসায় যে সব যন্ত্রপাতি গুলো চলে যেমন ফ্যান, লাইট, ফ্রিজ, ইস্ত্রি মেশিন, মোবাইল চার্জার ইত্যাদি… সব গুলোতে 220 ভোল্ট এর প্রয়োজন হয় ।
তাহলে বলা যায় আপনার বাসার বিদ্যুৎ লাইনে 220 ভোল্ট আছে । এই যন্ত্র গুলো ভাল ভাবে চলার জন্য 220 ভোল্ট প্রয়োজন । এর বেশি হলে যন্ত্র পেট বাষ্ট হয়ে অকেজো হবে…. আর কম হলে খিদায় অকেজো
হবে । তাই বলা যায় যে আপনার IPS থেকেও 220 ভোল্ট আউটপুট হচ্ছে ।

এখন একটা মোবাইল চার্জার হাতে নিন…. ওখানে এক কোনায় ছোট্ট করে কি লিখা আছে…..?

অনেকটা এই রকম…. Input : 100-240V, 50/60Hz, 60mA
এবং Output : 5V, 1000mA…. এর অর্থ কি…?

এখানে,
Input প্রান্ত হল মোবাইল চার্জারের যে দুই পিন বৈদ্যুতিক চকেটে ঢুকানো হয় তা…. এবং 100 থেকে 240 ভোল্ট পর্যন্ত এই মোবাইল চার্জারে Input ভোল্টেজ দেওয়া যাবে (নদীর দুই পাড়ের কথা
কল্পনা করুন) ।

50/60Hz – এটা সম্পর্কে জেনেনি
Hz বা কম্পাঙ্ক :
1. প্রতি সেকেন্ডে যতগুলো পূর্ণ তরঙ্গ সৃষ্টি
হয় তাকে তরঙ্গের কম্পাঙ্ক বলে।

2. তরঙ্গ সৃষ্টি হয় কম্পনশীলবস্তু থেকে।
3. কম্পনশীল বস্তুর কম্পাঙ্ক তরঙ্গের
কম্পাঙ্কের সমান।
4. কম্পাঙ্কের একক হার্জ (Hz)।
5. স্পন্দনশীল কোনো বসতুকণা এক
সেকেন্ডে একটি পূর্ণ স্পন্দন সম্পন্ন করলে তার কম্পাঙ্ককে 1 Hz বলে।
6. একে f দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
7. কম্পাঙ্ক ও পর্যায়কালের সম্পর্ক হলো f = 1/T

অর্থাৎ 50/60Hz বলতে বোঝায় ঐ চার্জার এর ১ সেকেন্ডে ৫০ বা ৬০ টি পুর্ন স্পন্দন সম্পন্ন করবে।

60mA এর অর্থ 60 মিলি অ্যাম্পিয়ার । এটা অ্যাম্পিয়ারের ছোট একক । যে রকম 1000 মিলি লিটারে এক লিটার হয় তেমনি 1000 মিলি অ্যাম্পিয়ারে এক অ্যাম্পিয়ার হয় । Input 60mA মানে হল মোবাইল চার্জারের দুই পিন দিয়ে নদীতে
পানি প্রবাহের মত 60mA মানের চার্জ প্রবাহিত হবে ।
Output : 5V এর অর্থ হল যে জ্যাক বা পিনটি আমরা মোবাইলে ঢুকাই সেই জ্যাকের দুই তারের বিভব পার্থক্য (অনুরূপ নদীর দুই পাড়ের পার্থক্য)… । আর।1000mA এর অর্থ হলো দুই তারের মধ্যে দিয়ে বা দুই পাড়ের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত চার্জের মান 1000mA
বা 1 অ্যাম্পিয়ার ।

প্রত্যেকেরই এই বিষয় গুলো জেনে রাখা ভাল…. এই বিষয় গুলোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আরো বড় এবং।বিষদ….. কিন্তু এটাকে সাধারণ মানুষের বুঝা বা
জানার সুবিধার্থে প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে মিল করে সংক্ষিপ্ত আকারে ব্যাখ্যা করা হয়েছে । আমার পদার্থ বিজ্ঞানের বন্ধুদেরকে এটা উৎসর্গ করলাম

কোনো প্রকার সমস্যা হলে ফেসবুকে যোগাযোগ করুন।
ফেসবুকে আমি

6 thoughts on "গল্পে গল্পে তড়িৎ প্রবাহ বিজ্ঞানের ছাএরা অবশ্যই দেখবেন"

  1. Sohel Rana Contributor says:
    Share korar jonno thanks
    1. ওয়েলকাম
  2. Root X Boy Contributor says:
    অসাধারন পোস্ট!
    f=1/T এর প্রমান:

    *আমরা জানি, স্পন্দনশীল বস্তুকণা ১ সেকেন্ডে যতটা স্পন্দন সম্পন্ন করে তাকে কম্পাঙ্ক বলে। কম্পাঙ্ক কে f দ্বারা প্রকাশ করা হয়। আর পর্যায়কাল্কে T দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
    T সেকেন্ডে স্পন্দনের সংখ্যা = 1 টিই
    অত এব, ১ সেকেন্ডে স্পন্দনের সংখ্যা = 1/T টি
    ১ সেকেন্ডে এই স্পন্দন সংখ্যাই হচ্ছে কম্পাঙ্ক(f). সুতরাং, f=1/T .
    [প্রমানিত]

    1. অসংখ্য ধন্যবাদ
  3. MD Shakib Hasan Contributor says:
    valo কিন্তু আমি এগুলা অনেক আগে থেকেই জানি। ভালো করেছেন পোষ্টা করে
  4. Soyeb Khan Author says:
    আমার মনে হয় পোস্ট এ অনেক বড় ভুল করা হয়েছে l
    আপনি পোস্ট এ যেটা বলেছেন,
    নদীর দুই পারের দূরত্বকে বিদ্যুতিক তারের দুপ প্রান্তের বিভব পার্থক্যের সাথে তুলনা করেছেন l
    আর বিদ্যুতের প্রবাহ মাত্রাকে নদীর স্রোতের প্রবাহ মাত্রার সাথে তুলনা করেছেন l
    আসলে ভুল এখানেই l
    আমরা যদি বিজ্ঞানের সুত্র দেখতে যাই,
    তাহলে, ওহমের সুত্র অনুসারে প্রবাহ মাত্রা দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যের সমানুপাতিক l
    অর্থাৎ বিভব পার্থক্য বৃদ্ধি পেলে প্রবাহ মাত্রা বৃদ্ধি পাবে l
    আর নদীর দুই পারের দূরত্বের ক্ষেত্রে আপনি নিজেই বলেছেন এবং সত্য ঘটনা এটাই যে দুই পারের দূরুত্ব বৃদ্ধি পেলে স্রোতের প্রবাহ মাত্রা কমে l
    আপনি এই সম্পর্ক গুলো সহজ ভাষায় বোঝানোর শ্রেষ্ঠা করেছেন ঠিক আছে l
    কিন্তু আপনি নিজেই যদি একটু মনোযোগ দিয়ে পুরেন তাহলে আপনি নিজেই ভাবতে বসবেন আপনি এসব গাঁজাখুরি গল্প ক্যামনে লিখলেন l
    আমি তো শুধু একটা মাত্র ভুল ধরাই দিলাম,
    সবগুলো ভুল দেখাতে গেলে আপনার আর্টিকেলের থেকেও বেশী লিখতে হবে l

Leave a Reply