আমাদের দেশে রাস্তার বাঁদিক দিয়ে গাড়ি চলার নিয়ম। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, মূলত যেসব দেশ একসময় ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল, যেগুলো এখন কমনওয়েলথভুক্ত দেশ, সেখানে রাস্তার বাঁদিক দিয়ে গাড়ি চলাচলের নিয়ম রয়েছে। কারণটা ওই ব্রিটিশ সভ্যতার সঙ্গেই যুক্ত। প্রাচীনকালে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তো বটেই, এমনকি নিজ দেশেরই বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারি-কাটাকাটি লেগেই থাকত। সে যুগে যুদ্ধ হতো ঘোড়ায় চড়ে। যুদ্ধ ছাড়াও রাস্তায় সাধারণভাবে ঘোড়ায় চড়ে চলাফেরার সময় সবাইকে সাবধানে থাকতে হতো। কারণ, যেকোনো সময় কোনো শত্র“র মুখোমুখি হলে লড়তে হতে পারে। রাস্তায় চলাফেরার সময় প্রতিপক্ষকে মোকাবিলায় নিজে যেন সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা সম্ভব হয়, সেজন্য সবাই যার যার বাঁয়ে চলাফেরা করত। এতে বাড়তি সুবিধা হলো বিপরীত দিক থেকে আগত প্রতিপক্ষকে ডান হাতে তলোয়ার বা সড়কি নিয়ে আক্রমণ বা আত্মরক্ষা করা যায়। রাস্তার ডান দিকে চললে সে সুবিধাটুকু পাওয়া যায় না। কারণ সাধারণত ডান হাতটাই বেশি চলে, বাঁ হাতের দক্ষতা বিরল। এসব সেই আদি যুগের কথা। এরপর ইউরোপ সভ্য হয়েছে, মারামারির সংস্কৃতি থেকেও তারা বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু সেই রাস্তার বাঁদিক দিয়ে চলার প্রথাটি রয়ে গেছে। কালক্রমে ব্রিটেন বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্য বিস্তার করে এবং উপনিবেশগুলোতেও একই প্রথা চালু হয়। তবে আমেরিকা, জার্মানি, ফ্রান্স রাশিয়াসহ অন্য অনেক দেশ সাধারণত ব্রিটেনের রীতিনীতি মানতে চায় না, তারা রাস্তার ডান দিক দিয়ে গাড়ি চলাচলের নিয়ম চালু করে। এই বাম-ডানের কারণে চালকের আসনও গাড়ির ডান-বামে স্থাপন করতে হয়। একেক দেশে একেক নিয়মে অভ্যস্ত হতে গাড়ি চালকেরও বেশ বেগ পেতে হয়। আন্তর্জাতিক অনেক বিষয়ে অভিন্ন রীতির প্রচলন করা হলেও রাস্তায় গাড়ি চলাচলের বাম-ডানের কোনো বিহিত আজও হয়নি।
(সূত্র: বিজ্ঞানের রাজ্যে রহস্যভেদ, আব্দুল কাইয়ুম)