বর্ত্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি পেশা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। বর্ত্তমানে প্রায় সারে ছয় লাখ বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সার বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কাজ করছে। এর মধ্যে অনেকেই আছে যারা মার্কেটপ্লেসের বাইরে ক্লাইন্টদের কাজ করছে। তারপরেও দক্ষ লোকের অভাবে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। সে তুলনায় ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তান অনেক এগিয়ে আছে। দেখা গেছে ইউরোপ আমেরিকার আফিসিয়াল কাজের প্রায় বিশ শতাংশ কাজ তারা অনলাইনে করিয়ে নিচ্ছে। সুতরাং এই সেক্টরে সঠিক গাইড লাইন এবং প্রশিক্ষণ দিলে অনেক ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশর অনেকেই এই পেশায় আগ্রহী হলেও সঠিক গাইড লাইন এবং ভাল প্রশিক্ষণের অভাবে সফলতার মুখ দেখছে না। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকারও বিভিন্ন প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। তো আজকে আমি আপনাদের যে গাইড লাইন দেব তা দিয়ে আপনার ফ্রিল্যান্সিং শুরু করাটা অনেক সহজ হবে।
ফ্রিল্যান্সিং কি?
ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে মুক্ত পেশা যেখানে কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নাই। আর্থাৎ সাধারণত আমরা চাকুরী করতে গেলে একটা নির্দিষ্ট নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে চলতে হয় কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে কোন নিয়ম শৃঙ্খলা না মেনেই আপনার নিজের খুশী মত আপনি কাজ করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে কি কি লাগে?
১। আপনার নিজস্ব একটি কম্পিউটার থাকতে হবে।
২। কম্পিউটার চালানোর বেসিক জ্ঞান থাকতে হবে এবং ইন্টারনেট চালানোর দক্ষতা থাকতে হবে।
৩। ইংলিশে যোগাযোগ করার মত ইংলিশ জানতে হবে।
মোটামুটি এই তিনটি বিষয় আপনার থাকলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার উপযোগী। কিন্তু অনেকেই আছে আবার কম্পিউটার চালানো বলতে শুধু কম্পিউটার অন অফ করা এবং গান সিনেমা দেখাকেই বুঝায়। নিন্তু না কম্পিউটার চালান বলতে কম্পিউটারের খুঁটিনাটি বিষয় গুলো জানা। যেমন- কিভাবে সফটওয়্যার ইন্সটল দেয়, কিভাবে সফটওয়্যার অনলাইন থেকে ডাউনলোড দেয়া যায়, উইন্ডোজ সমস্যা হলে কিভাবে নিজে নিজেই উইন্ডোজ দেওয়া যায় ইত্যাদি বিষয় গুলো। আর ইন্টারনেট চালানো বলতে শুধু ফেসবুক চালান আর ইউটিউবের ভিডিও দেখা বুঝি। কিন্তু না আপনাকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনার বিভিন্ন সমস্যা কিভাবে সমাধান করবেন এটা জানতে হবে। যেমন- ধরুন দেখলেন হঠাৎ আপনার মোবাইল থেকে অটোমেটিক টাকা কেটে নিচ্ছে কিন্তু আপনি বন্ধ করার কোনো অপশন পাচ্ছেন না। এটা বন্ধ করার অপশন গুগোলে সার্চ দিয়ে বের করার দক্ষতা থাকতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার স্টেপ গুলো কি?
১। মাইন্ড সেটআপ করা
২। নির্দিস্ট একটি বিষয় বাছাই করা
৩। বিষয়টি সম্পর্কে প্রশিক্ষন নেয়া
৪। প্রশিক্ষনের পর কয়েকটি প্রজেক্ট প্রাক্টিস করা
৫। মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে জানা
৬। মার্কেটপ্লেসে অ্যাাকাউন্ট তৈরি করা ও বিড করা
৭। বায়ারের চাহিদা অনু্যায়ী কাজ করে দেওয়া এবং জমা দেওয়া
৮। মার্কেটপ্লেস থেকে টাকা ঊঠানো
এবার বিস্তারিত
১। মাইন্ড সেটআপ করা
মাইন্ড সেটআপ করা বলতে বুঝায় আপনার মনটাকে ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য তৈরি করা। আথবা এভাবে বলা যেতে পারে আপনি কি বিষয় নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে চাচ্ছেন সেটা নিয়ে একটু চিন্তা করা। এমন না যে ওমুকে ওয়েব ডিজাইন করে ফ্রিল্যান্সিং করছে আমিও ওয়েব ডিজাইনার হব। এভাবে সিদ্ধন্ত নিলে ভুল হবে। কারন অমুকের ওয়েব ডিজাইন করতে ভালোলাগে কিন্তু আপনাকে ভাল নাও লাগতে পারে। এতে আপনি ওয়েব ডিজাইন শুরু করার কিছুদিন পর দেখা যাবে ছেড়ে দিয়েছেন। তাই আপনাকে ভালোলাগে এমন একটি বিষয় বাছাই করতে হবে। আপনাকে যদি আঁকাআঁকি ভালোলাগে তাহলে আপনি গ্রাফিক ডিজাইন করতে পারেন, আপনাকে যদি কোডিং করতে ভালোলাগে তাহলে আপনি ওয়েব ডিজাইন করতে পারেন, আপনাকে যদি ভিডিও বানাতে ভালোলাগে তাহলে আপনি ভিডিও ইডিটিং করতে পারেন অথবা আপনাকে যদি লেখালেখি ভালোলাগে তাহলে আপনি কন্টেন্ট রাইটিং করতে পারেন। এছাড়াও আরো অনেক বিষয় আছে অনলাইনে কাজ করার জন্য। এগুলো আপনারা গুগোলে সার্চ দিয়ে দেখে নিতে পারেন।
২। নির্দিস্ট একটি বিষয় বাছাই করা
এভাবে একটু ঘাটাঘাটি এবং চিন্তা করে বের করা কোন জিনিসটি আপনাকে ভালো লাগে। অতঃপর সেই জিনিসটির উপর একটি নির্দিস্ট বিষয় বাছাই করা যেটি ভালোভাবে শিখে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করবেন।
৩। বিষয়টি সম্পর্কে প্রশিক্ষন নেয়া
একটি নির্দিস্ট বিষয় বাছাই করার পর ওই বিষয়ের উপর আপনাকে প্রশিক্ষন নিতে হবে। প্রশিক্ষনের ব্যাপারে আমি বলবো সবচেয়ে ভাল এবং সহজ উপায় হচ্ছে ইউটিউব। এছাড়াও অনলাইনে আরো অনেক পেইড কোর্স আছে আথবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডিভিডি অনলাইনে অর্ডার দিয়ে নিতে পারেন। এগুলোর কোনোটিই যদি আপনাকে ভাল না লাগে তাহলে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স করে নিতে পারেন।
৪। প্রশিক্ষনের পর কয়েকটি প্রজেক্ট প্রাক্টিস করা
আপনার শেখা শেষ হলে আপনি ওই বিষয়ের উপর নিজে নিজেই কয়েকটি প্রজেক্ট প্রাকটিস করবেন। আমি বলব কমপক্ষে পাঁচটি প্রজেক্ট আপনি নিজে নিজে করুন। এমন না যে আপনি আপনার কোর্সের সোর্স ফাইল দেখে দেখে কয়েকটি প্রজেক্ট তৈরি করলেন। আপনাকে না দেখে ভিন্নধর্মী প্রজেক্ট তৈরি করতে হবে। প্রজেক্টটি ঠিক হল কিনা সেটা যাচাই করার জন্য ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপের হেল্প নিতে পারেন।
৫। মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে জানা
এভাবে কয়েকটি প্রজেক্ট শেষ করতে পারলে আপনি মার্কেটপ্লেসে কাজ করার জন্য তৈরি। এখন আপনাকে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে ধারনা নিতে হবে। কোন মার্কেটপ্লেস কেমন, কোন মার্কেটপ্লেস কিভাবে কাজ করে, কিভাবে মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়, কিভাবে গিগ তৈরি করতে হয়, কিভাবে বিড করতে হয়, কিভাবে কভার লেটার লিখতে হয়, কিভাবে কাজ জমা দিতে হয় ইত্যাদি বিষয় গুলে জানতে হবে। এই প্রত্যেকটি বিষয় গুগোল-ইউটিউবে সার্চ দিয়ে জেনে নিতে হবে।
৬। মার্কেটপ্লেসে অ্যাাকাউন্ট তৈরি করা ও বিড করা
৭। বায়ারের চাহিদা অনু্যায়ী কাজ করে দেওয়া এবং জমা দেওয়া
কাজ পাওয়ার পর আপনাকে বায়ারের চাহিদা অনু্যায়ী কাজ করে এবং জমা দিতে হবে। এজন্য কাজের বিবরনিটা ভাল করে পরে নিবেন। না বুঝলে বারবার পড়বেন। পুরোপুরি বোঝার পর আপনি কাজ শুরু করবেন এবং নির্দিস্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। কাজ শেষ হলে তা জমা দিতে হবে।
৮। মার্কেটপ্লেস থেকে টাকা ঊঠানো
এভাবে কাজ শেষ করে জমা দিলে বায়ার কাজটি গ্রহন করলে একটি নির্দিস্ট সময় পর টাকা আপনার মার্কেটপ্লেসের অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাবে। এরপর আপনি সেখান থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে উইথড্র দিতে পারবেন। কি ভাবে উইথড্র দিবেন সেটার জন্য গুগোল-ইউটিউবে সার্চ দিয়ে জেনে নিতে পারবেন। তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে মার্কেটপ্লেস থেকে টাকা ঊঠানো কিন্ত অনেক সহজ তাই এটা নিয়ে আগেই মাথ না ঘামালেও চলবে। আপনি টাকা ইনকাম কতে পারলে টাকা উঠাতে পাবেনই এটানিয়ে টেনশনের কিছু নেই।
উপরের স্টেপগুলো মেনে চললে আশকরি অবশ্যই একজন বেক্তি ভাল ফ্রিল্যান্সার হতে পারবে এবং সফলতা আসবে। পোস্টটি ভাল লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন ধন্যবাদ।
কোন কোন ক্যাটাগরি নিয়ে কাজ করবো??
৬বছর ধরে ইন্টারনেট জগতে আছি
মুবাইল নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ অনেক জানি কম্পিউটার নাই +শিখাও নাই তবে বিশ্বাস দ্রুত শিখতে পারবো
সম্ভব হলে আপ্নার ফেসবুক আইডির লিংক্টি দিয়েন