শুরুতেই বলে রাখি, আমি এখানে বিস্তারিত ও ব্যাসিক কিছু জ্ঞান দিবো ক্রিপ্টোগ্রাফি সম্পর্কে, তাই যারা এ সম্পর্কে অনেক বেশি জানেন, তারা আবার কমেন্ট করে নিজেদের মেধা দেখিয়ে সময় অপচয় করবেন না।
যেকোনো কিছুতেই সর্বজ্ঞানী হওয়া সম্ভব নয়, আর আমি আমার নিজের জ্ঞানটুকু বিলাতে এসেছি, হাজার বছরের রিসার্চ তুলে ধরতে আসিনি। ?
আর এই ক্রিপ্টোগ্রাফি আমরা নিজেদের বাস্তব জীবনেও অনেক ব্যবহার করি, কিন্তু অনেকেই জানতাম না যে সেটাকে ক্রিপ্টোগ্রাফি বলা হয়।
যাইহোক,
Cryptography কী?
Cryptography কে Cryptology ও বলা হয়। একই জিনিস, পরে বুঝাচ্ছি কীভাবে দুইটা একই।
কোনো তথ্য কে লুকানোতেই সেটার নিরাপত্তা সম্পুর্ন রুপে রক্ষিত হয় না, সেটাকে আরো এক ধাপ বেশি নিরাপদ করতে এটা গোপন করা প্রয়োজন। এখানে লুকানো আর গোপন ভিন্ন ভিন্ন। লুকানো বলতে ৩য় চোখের আড়াল করা, কিন্তু গোপন করা হলো ৩য় চোখ এটা দেখেও দেখতে পারবে না। অর্থাৎ, কোনো ব্যাক্তি যার কাছ থেকে আপনি তথ্য গোপন করতে চান, সে আপনার তথ্য দেখলেও সেটা বুঝতে বা পড়তে পারবে না, এমন গুপ্ত করার পদ্ধতিই হলো ক্রিপ্টোগ্রাফি বা তথ্যগুপ্তবিদ্যা।
(আমি এর এক লাইনের কোনো সংজ্ঞা জানি না, নিজে যা বুঝি সেটাই লিখলাম)
সাধারণত ক্রিপ্টোগ্রাফি ইংরেজি ভাষাতে ব্যবহার করা হয়, বাংলা তেও ব্যবাহার করা যায় যেটা তুলনা মুলক বেশি কঠিন এবং সময় অপচয়কারী।
উদাহরণঃ
ধরুন, আমি ঈর্ষা এমন এক যুগে বা পরিস্থিতি তে রয়েছি যেখানে কোনো ইন্টারনেট বা কোনো ডিভাইস নেই। আমি তাকে কাগজে লিখে একজনের মাধ্যমে অন্যজনের কাছে পৌছাতে হবে। এখন, আমি আমার বন্ধু সাইফ কে বলতে চাই যে- “ছোট ঘরটার এক সিন্দুকে ১০ লাখ টাকা আছে” যেটার ইংরেজি “There is 1M taka in a box in the small room”.
কিন্তু আমি যদি এটা লিখে সাইফের কাছে এটা লিখে পাঠাই, তাহলে সবাই জেনে যাবে। তো আমি যেটা করবো সেটা হলো কাগজে লিখলাম-
“Uifsf jt 2N ublb jo b cpy jo uif tnbmm sppn”
এবার এটা পড়ে বলুন আপনার কী বুঝলেন?
আমি শিওর আপ্নারা 2 লেখা দেখেই বুঝে গেছেন যে আমি কী করেছি। হ্যা, আমি সব গুলো অক্ষরকে ১ ঘর এগিয়ে দিয়েছি। অর্থাৎ,
a এর বদলে b
b এর বদলে c
c এর বদলে d
d এর বদলে e
এভাবেই দেখুন There=Uifsf হয়।
এটাই হলো ক্রিপ্টোগ্রাফি। মজার না?
আমার কাছে খুব মজা লাগে ক্রিপ্টোগ্রাফিতে।
এই উদাহারণটি হলো ক্রিপ্টোগ্রাফি র সবচেয়ে ব্যাসিক উদাহারণ। আমি যদি ঐখানে 2 না দিয়ে 1 রেখে দিতাম, তাহলে আপ্নারা কি মুহুর্তের মধ্যেই ধরে ফেলতে পারতেন? না, আপনাদের কে তখন বেশ সময় নিয়ে অব্জার্ভ করতে হতো। তাহলে ভাবুন, সবচেয়ে ব্যাসিক লেভেলের ক্রিপ্টোগ্রাফি তেই আপনার মাথার শ্রম বাড়িয়ে দিচ্ছে, তাহলে এডভান্স লেভেলে গেলে কী কতটা মস্তিষ্কের ব্যবহার করতে হবে।
(পরের পর্বে আরো শেখাবো। আজ শুধু ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করবো।)
কোথা থেকে এসেছে এই শব্দ?
Cryptography বা Cryptology (তথ্যগুপ্তিবিদ্যা) শব্দ এসেছে প্রাচীন গ্রীক শব্দ “kryptós” ও “graphein” বা “kryptós” ও “logia” থেকে।
এখানে,
kryptós এর মানে Hidden Secret বা লুকায়িত গোপন
graphein এর মানে To write বা লিখতে
logia এর মানে Study বা পড়া
তো স্বাভাবিক দৃষ্টিতে অর্থগত দিক থেকে Cryptography ও Cryptology আলাদা আলাদা হয় (লুকায়িত গোপন তথ্য লেখা ও লুকায়িক গোপন তথ্য পড়া) কিন্তু দুটি একই জিনিস কে রিজেম্বল করে, “গোপন তথ্য”, তাই একে বাংলায় তথ্যগুপ্ত বিদ্যা বলা হয় এই কনফিউশন কে দূর করতে, যেটার মানে লেখা বা পড়া দুইটাই বুঝায়।
যে ক্রিপ্টোগ্রাফি করবে সে অবশ্যই ক্রিপ্টোলজি করতে সক্ষম। একটি পারলে অপরটিও পারবেই, তাই এটা কে আলাদা আলাদা না বিবেচনা করে একত্রে বিবেচনা করা হয়।
এর ইতিহাস কী?
সর্বপ্রথম কে ক্রিপ্টোগ্রাফি র আবিষ্কার করেছিল তার একদম সঠিক কোনো তথ্য গবেষকদের কাছে নেই। কারণ, লিখিত ও চিত্র ভাষা চালু হয়েছে হাজার হাজার বছর আগে।
তবে বেশিরভাগই একটা নাম কে নিয়ে বেশি গবেষণা দেখায় সে নাম হলো “হায়ারোগ্লিফিক”। এনিই সর্বপ্রথম চিত্র তে ক্রিপ্টোগ্রাফির ব্যবহার করেছেন বলে ইতিহাস বিদ দের দাবী এবং এটা প্রায় ৪০০০ বছর আগের। তবে জাতীয় পর্যায়ে এর প্রথম ব্যবহার করেন মিশরের এক সম্রাট জুলিয়াস সিজার, সেটাও প্রায় ২০০০বছর আগে। তিনি এটা ব্যাবহার করেন তার নিরাপত্তা বাহিনী এর সাথে নিজের কথপকথন গোপন রাখতে।
এছাড়াও গ্রিক সভ্যতায় এর সবচেয়ে বেশি ব্যাবহার ঘটে। গ্রিক সভ্যতায় তথ্য গোপন করতে দূত (যারা বার্তা পাঠায়) দের হাতে একটি ভুয়া চিঠি দিতো এবং তাদের মাথা ন্যাড়া করে হিট মার্কার দিয়ে তথ্য লিখতো এবং নতুন করে চুল উঠলে তারপর সে তথ্য পাঠানো হতো।
ইন্ডিয়াতেও এর বিস্তার আছে। প্রায় ২০০০বছর পুরোনো “মল্লনাগ বাৎস্যায়ন” এর লেখা “কামাসুত্রা” তেও ২ ধরণের সাইফার ব্যাবহার করা হয়েছিল।
মুসলিম লেখক “ইবনে আল নাদিম” এর মতে “সস্যনিদ” নামক রাজত্বেও দুই ধরণের স্ক্রীপ্ট ব্যবহার করা হয়েছিল যার একটি “শাহ দাবিরিয়া” এবং অপরটি “রাজ শাহারিয়া”।
এরকম বহু বহু সময়কালে ও রাজত্বে ক্রিপ্টোগ্রাফি র ব্যবহার ছিল, সব তো আমি জানি না। তবে আমার যতোগুলো মাথায় আছে, সেগুলা লিখতে গেলেও আরো ২টা পর্ব হয়ে যাবে। ? আপ্নারা বিস্তারিত জানতে ইন্টারনেট বা বই এর সহয়তা নিতে পারেন।
যাইহোক, তবে বিশ্বজুড়ে ক্রিপ্টোগ্রাফি র সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এর ব্যবহার থেকে। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও এর ব্যাবহার ঘটেছিল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রটর মেশিন ব্যাবহার করে তথ্য লুকানো হতো।
আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার কলোসাস কম্পিউটার ব্যবহার করে গুপ্তসংকেত তৈরী ও ব্যবহার করে।
যাইহোক, আজ এ পর্যন্তই।
সবশেষে আপনাদের জন্য একটা মুভি রেখে গেলাম।
The Da Vinci Code
বিশ্বজুড়ে অন্যতম বেস্টসেলার বই হলো ” the da vinci code” এই নভেল নিয়েই এই মুভি নির্মিত হয়েছিল নিচে আমি এর হিন্দি ডাব ও ইংলিশ এর লিংক দিলাম।
এই মুভিটা এই ক্রিপ্টোগ্রাফি সংশ্লিষ্ট। আশা করি মজা পাবেন।
Quality: 480p
Size: 547 MB
Link: MEGA
আগামী পর্বে আপনাদের শেখাবো কীভাবে ক্রিপ্টোগ্রাফি করবেন উদাহারন সহ ব্যাখ্যা দিবো।
পরে আর তেমন কিছুই জানতে পারি নি বা আগ্রহ হারিয়েছিলাম।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এটা নিয়ে লেখার জন্য। ❤️
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
ইউটিউবেও বাংলায় পরিপুর্ন কোনো গাইডলাইন নেই বা ফ্রী কোর্স নেই।
যাই হোক পোস্ট মাশাল্লাহ মানসম্মত ♥️
আমি জানতাম না যে ট্রিকবিডিতে লেখিকাও আছে ?। কারণ টেকনলজির বিষয়ে মেয়েদের আগ্রহ কম থাকে। যেহেতু আপনি ব্যতিক্রম, তাই লেগে থাকুন।