সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন শুধু
পরস্পরের মধ্যে সংযোগ স্থাপনই
করছে না, বরং চাকরি, কর্মক্ষেত্র
থেকে শুরু করে ব্যবসা–রাজনীতি
সবকিছুর ওপর প্রভাব ফেলেছে। সুতরাং
এটা এখন শুধু আপনার ব্যক্তিগত
জীবনের অংশই না, এটা আপনার পেশা
জীবনেরও অংশ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যতম
জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক। আর এই
মাধ্যমকে কাজে লাগাতে পারেন যদি না
আপনি নিচের কাজগুলো অনুসরণ
করেন।

১. আপনার প্রকৃত নাম পরিবর্তন করবেন
না

ফেসবুকে অনেক সময় অনেকে
নকল নাম বা রূপক নাম ব্যবহার করে
থাকেন। এমনটি উচিত নয়। কেউ যদি
আপনার নাম জিজ্ঞেস করে আপনি
নিশ্চয় বলবেন না, আপনার নাম নীল
দরিয়ার মাঝি, সাগর পাড়ের কন্যা, আমি
কষ্টে আছি অথবা উড়ন্ত ছেলে। কারণ
এগুলো আপনার নাম নয়। একজন চাকরিদাতা
বা ব্যবসায়ী যদি আপনার সম্পর্কে ধারণা
নিতে সার্চ ইঞ্জিনে আপনাকে
খোঁজেন তবে এমন নাম তাদের
আপনার সম্পর্কে ভালো ধারণা দেবে
না। এমন নামকরণ ফেসবুকের নীতিমালার
বাইরে। যে কেউ অভিযোগ করলে
আপনার অ্যাকাউন্টটি তারা বন্ধ করে দিতে
পারে। তাই নাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে
যদি নাম দুই অংশের হয় তবে প্রথম ও
শেষ নাম ব্যবহার করুন। যদি তিন অংশের
হয় তবে মধ্য নামও ব্যবহার (মধ্য নামের
initial ব্যবহার করতে পারেন) করুন। নিজ
ভাষা অথবা ইংরেজিতে নাম লিখতে
পারেন, কিন্তু এমন অক্ষর ব্যবহার
করবেন না যেটা বুঝতে অসুবিধা হয়।

২. শিরোনাম ব্যতীত ছবি পোস্ট
করবেন না

এমনটি হতে পারে আপনি বোনের
সঙ্গে ছবি পোস্ট করছেন কিন্তু
কোনো শিরোনাম লেখেননি।
আপনার বন্ধুরা হয়তো আপনাকে
চেনে, কিন্তু আপনার বোনকে
চেনে না। এ রকমের ছবিতে আপনার
বন্ধুদের মন্তব্য আপনাকে বিব্রত
করতে পারে। এ জন্য এ ধরনের ছবি
পোস্ট করার আগে অবশ্যই শিরোনাম
যোগ করবেন। এতে ছবি পোস্টের
উদ্দেশ্য বোঝা সহজ হয়। ছবি নিজেই
যদি শিরোনাম হিসেবে কাজ করে
তাহলে হয়তো শিরোনামের
প্রয়োজন নেই।

৩. শুধু লাইক পাওয়ার জন্য কাউকে সংযুক্ত

করবেন না

শুধু লাইক পাওয়ার জন্য এমন কাউকে ছবি বা
পোস্টে সংযুক্ত করবেন না যিনি এর
সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নন। আপনি জানেন
না এতে তিনি আনন্দিত হবেন, না বিরক্ত
হবেন। যদি সংযুক্ত করা জরুরি মনে
করেন তবে পূর্ব অনুমতি নিয়ে
নেবেন।

৪. ব্যক্তিগত কথাবার্তা ওয়ালে পোস্ট
করবেন না

ব্যক্তিগত কথাবার্তা আদানপ্রদানের জন্য
ফেসবুক অথবা অন্যান্য সোশ্যাল
মিডিয়াতে মেসেজ অপশন আছে। এ
জন্য ব্যক্তিগত কথাবার্তা ওয়ালে পোস্ট
না করে মেসেজ করবেন। যেমন;
আপনি আপনার বন্ধুর কাছে টাকা পাবেন,
আপনি এই টাকাটা চাওয়ার জন্য তার ওয়ালে
লিখতে যাবেন না। প্রয়োজনে কল
অথবা মেসেজ করবেন।

৫. চেইন স্ট্যাটাস পোস্ট করবেন না
আপনিও হয়তো এমন ইমেইল পেয়ে
থাকবেন—

কেউ আপনাকে নির্দিষ্ট
ইমেইল পাঠিয়ে বলল, এই ইমেইলটি
আরও ১০ জনকে পাঠাতে হবে অন্যথায়
আপনার ভয়ানক বিপদ হবে। সেরকম
ফেসবুকের নিউজ ফিডে কিছু ছবি বা
লেখা দিয়ে বলা হলো আপনাকে লাইক
ও শেয়ার করতে হবে, না হলে বিপদ
হবে। অথবা বলা হলো আপনি যদি
মুসলমান/হিন্দু বা অন্য কিছু হন, লাইক করুন,
আমিন লিখুন, শেয়ার করুন। এ রকম চেইন
স্ট্যাটাস পোস্ট করবেন না। এটা
একরকম মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা।
যদি সামাজিক সচেতনতা বিষয়ক কিছু হয়
তবে মানুষকে সাধারণ অনুরোধ
করবেন।

৬. অপরিচিত লোকদের বন্ধু হওয়ার
অনুরোধ করবেন না

অনেকের হয়তো এমন ধারণা আছে
যে, ফেসবুকে বন্ধুর সংখ্যা যার যত
বেশি তার জনপ্রিয়তার তত বেশি। এ কথা
হয়তো সত্য, বাস্তব জীবনে যত
বেশি মানুষ আপনাকে চেনে আপনি তত
বেশি পরিচিত। কিন্তু ফেসবুকে সম্পূর্ণ
অজানা মানুষকে যোগ করার মাঝে নয়।
যদি কাউকে কোনো না
কোনোভাবে চেনেন এবং মনে
করেন তার সঙ্গে যোগ হলে উভয়ই
উপকৃত হতে পারেন তবে ব্যক্তিগত
অনুরোধ করবেন।

৭. ভুয়া সংবাদ পোস্ট করবেন না

ফেসবুক হলো ভুয়া সংবাদের অন্যতম
উৎস। এখানে সবাই সাংবাদিক। এখানে সংবাদ
পরিবেশনে সবাই মুক্ত। তাই
যেকোনো সংবাদভিত্তিক পোস্টের
আগে যাচাই করে নেবেন সংবাদটি সঠিক
উৎস থেকে আসছে কিনা। মনে
রাখবেন একটি ভুল সংবাদ ১০টি স্বাভাবিক

জীবনের ওপর ক্ষতি বয়ে আনতে
পারে।

৮. ভুল ব্যক্তিগত তথ্য প্রধান করবেন না

ধরুন, একটি চাকরির জন্য আপনার
জীবনবৃত্তান্ত চাইল, আপনি নিশ্চয়
আপনার জীবনবৃত্তান্তে ভুল তথ্য
প্রধান করবেন না। অনেক চাকরি আছে
যেগুলো ফেসবুকের আইডি দিয়ে
লগইন করে আবেদন করতে হয়। সুতরাং
আপনার তথ্য যদি ভুল থাকে তবে
চাকরিদাতা আপনার সম্পর্কে ভুল তথ্য
পাবে যেটা আপনার জন্য কক্ষনোই
মঙ্গলজনক নয়। এ ছাড়া ভুল তথ্য
মানুষকে আপনার সম্পর্কে খারাপ ধারণা
দেবে। তাই সকল তথ্য (পেশাগত,
শিক্ষাগত, ব্যক্তিগত) সঠিক ও সমসাময়িক
রাখুন।

৯. অশালীন মন্তব্য করবেন না

হয়তো ফেসবুক মন্তব্যের জন্য
উন্মুক্ত এক জায়গা। কিন্তু মনে রাখবেন
আপনার মন্তব্য আপনার ব্যক্তিত্বের
পরিচায়ক। আপনার মন্তব্য থেকে মানুষ
আপনার সম্পর্কে ধারণা নেবে। কথা
বলার স্বাধীনতার ও সীমাবদ্ধতা আছে।
আপনার মন্তব্য যদি কাউকে ব্যথা দেয়
কিংবা কারও সম্মানহানির কারণ হয় সে দিকে
নজর রাখবেন। মোট কথা ফেসবুকে
আপনার সকল কার্যক্রম আপনার আচার–
ব্যবহারেরই পরিচয় বহন করে,
সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।

১০. ১৩ বছর বয়সের আগে ফেসবুক
অ্যাকাউন্ট নয়

১৩ বছর বয়সের আগে ফেসবুক
অ্যাকাউন্ট খোলা ফেসবুকের
নীতিমালার বাইরে। এটা তাদের মানসিক ও
শারীরিক অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব
ফেলতে পারে। এমনকি বড়দেরও
অধিক ফেসবুক ব্যবহার মানসিক, শারীরিক
ও সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করে। সাধারণত
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে
অভিভাবকের অসচেতনতার কারণে
অনেক শিশুই ফেসবুকে আসক্ত হয়ে
পড়ে যা তাদের লেখাপড়া ও সামাজিক
বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সুতরাং
আপনার পরিচিত কেউ যদি এমনটি করে
তাকে বুঝিয়ে অ্যাকাউন্টটি মুছে দিন
অথবা ফেসবুকে রিপোর্ট করুন।

পরুনঃ প্রতি রাতে বাবা আমাকে ঔষধ খাইয়ে ধর্ষণ
করতো!

One thought on "ফেসবুক অ্যাকাউন্টের জন্য ১০টি ‘ না’"

  1. HR Habibur Author says:
    ভাই প্রথম আলো আমরাও পড়ি

Leave a Reply