মানবসভ্যতা প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগ, আধুনিক যুগ পেরিয়ে পদার্পণ করেছে ফেসবুক যুগে! তথ্যপ্রযুক্তির মোড়কবন্দী চলতি যুগটাই তো লাইক, শেয়ার, কমেন্ট ও লগ-ইনের। চিরস্থায়ী লগ-আউট বলে কিছু নেই। মানুষ ফেসবুকে ফিরে আসে, কী এক অজানা সম্মোহনী শক্তির শিকার হয়ে, বারবার। কিন্তু কেন?
ফেসবুকে লাইক, পোস্ট, কমেন্ট, শেয়ার এমনকি শুধু বাকিদের পোস্ট দেখে যাওয়ার ব্যক্তির মানসিকতা নিয়েও গবেষণা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। বেশির ভাগই নির্দিষ্ট কিছু ধারা মেনে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার ও পোস্ট করে থাকেন বলে ধারণা গবেষকদের। এ ছাড়া ফেসবুক যে আমাদের চুম্বকের মতো টানে, তার নেপথ্যেও রয়েছে নানা ধরনের মানসিকতা।
মস্তিষ্কের রসায়ন
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে থাকার সময় আমাদের মস্তিষ্কে ঠিক কী ধরনের প্রতিক্রিয়া ঘটে—গবেষকেরা অনেক দিন ধরেই এ প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন। সাম্প্রতিক এ গবেষণায় জানা গেছে, ফেসবুক এবং মানুষের মস্তিষ্কের ‘রিওয়ার্ড সেন্টার’-এর মধ্যে আসলে নিবিড় এক সম্পর্ক রয়েছে। মস্তিষ্কের এ ‘রিওয়ার্ড সেন্টার’-এর নাম ‘নিউক্লিয়াস অ্যাকুম্বেনস’, যা আসলে আমাদের মনের নানা রকম অনুভূতিকে পুরস্কার দিয়ে থাকে। যেমন: আমরা অর্থ, যৌনতা, খাদ্য ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পছন্দ করি—আমাদের ‘নিউক্লিয়াস অ্যাকুম্বেনস’ এসব অনুভূতিকে ছাড়পত্র দিয়ে থাকে।
ঠিক একই রকমভাবে, ফেসবুকে আমরা ইতিবাচক ফিডব্যাক পেলে ‘নিউক্লিয়াস অ্যাকুম্বেনস’ সাড়া দেয়। ইতিবাচক ফিডব্যাক যত বেশি হবে, মস্তিষ্কের পুরস্কার বিতরণী কেন্দ্রের প্রভাবে আমরা তত বেশি সময় আঠার মতো লেগে থাকব ফেসবুকে। আসলে ‘নিউক্লিয়াস অ্যাকুম্বেনসে-এর জন্যই আমরা ফেসবুককে এতটা ভালোবেসে থাকি।
আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে একাত্মতা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের জীবন নিয়ে গবেষণা করেছে ওয়াশিংটন ডিসির পিউ রিসার্চ সেন্টার। তাদের মতে, ৪৪ শতাংশ মানুষই দিনে অন্তত একবার তার পরিচিতদের পোস্টে ‘লাইক’ দিয়ে থাকে। ২৯ শতাংশ মানুষ এ কাজটা দিনে কয়েকবার করে থাকে। আসলে ফেসবুকে মানুষের আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ‘লাইক’ অপশন। এ বস্তুতে ‘ক্লিক’ করলেই তার সঙ্গে আপনার মতামত কিংবা ইচ্ছা মিলে গেল।
‘সাইকোলজি টুডে’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে গবেষকদের অভিমত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে যারা অধিক সময় কাটায়, ভার্চ্যুয়াল জগতে মানুষের আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে তাদের একাত্মতা প্রকাশের শক্তি অনেক বেশি। ভার্চ্যুয়াল জগতের এ সামর্থ্যটুকু প্রভাব ফেলে তাদের বাস্তব জীবনেও। তবে ফেসবুকের ‘লাইক’ হলো খুচরো পয়সার মতো। যত খুশি খরচ করতে পারো, কিন্তু বিনিময়ে খুব বেশি প্রত্যাশা না থাকাই ভালো।
মন্তব্য করি কেন?
স্ট্যাটাস দেওয়ার নেপথ্যে…
অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানিয়েছেন, ফেসবুকে যেকোনো ধরনের স্ট্যাটাস আমাদের চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। স্ট্যাটাস দিয়ে আমরা ভার্চ্যুয়াল জগতে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করে থাকি। গবেষকদের মতে, ফেসবুকে যারা বেশি বেশি স্ট্যাটাস দিয়ে থাকে, তারা কম একাকিত্বে ভুগে থাকে। সেটা স্ট্যাটাসে কোনো লাইক কিংবা মন্তব্য না পেলেও! তবে যারা কম কম স্ট্যাটাস দিয়ে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। স্ট্যাটাসে লাইক কিংবা মন্তব্য না পড়লে তারা ভেবে নেন যে সমাজে হয়তো তাদের কোনো অবস্থান কিংবা গ্রহণযোগ্যতা নেই।
শেয়ার দিই কেন?
নিউইয়র্ক টাইমসের গবেষণা অনুযায়ী, মজাদার কিংবা শিক্ষামূলক কোনো কিছু আমরা ভাগ নেওয়ার স্বার্থেই শেয়ার দিয়ে থাকি। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশই নিজেদের মানসিকতা ও ব্যক্তিত্ব বোঝাতে শেয়ার দিয়ে থাকেন। কারণ, আপনি কী ধরনের পোস্ট শেয়ার দিচ্ছেন, তার ওপর ভিত্তি করে আপনাকে যাচাই করেন বাকিরা। এ ছাড়া যোগাযোগ ধরে রাখা কিংবা আত্মতৃপ্তির জন্যও আমরা শেয়ার দিয়ে থাকি। এ ছাড়া কোনো সামাজিক ইস্যুতে সচেতনতা গড়ে তুলতে আমরা শেয়ার দিয়ে থাকি নানা রকম পোস্ট।
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
ভালো ভালো নাটক মুভি গান পেতে ভিজিট করুন JUWELBD.COM
5 thoughts on "ফেসবুকে লাইক দেয়ার আসল কারন এবং বাস্তবতা!"