আসসালামু আলাইকুম
বর্তমান প্রজন্মে ইন্টারনেট আমাদের সকলের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। এখন ছোট থেকে বৃদ্ধ সবাইকেই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেখা যায়। ইন্টারনেট এখন সকলের জন্য এক আশির্বাদ হয়ে উঠেছে। যেকোনো কাজের জন্যই মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করা শুরু করেছে। তবে এর সাথে সাথে বেড়েছে সাইবার হুমকির ঝুঁকিও।
হ্যাকিং, ফিশিং আক্রমণ ও তথ্য চুরির মতো ঘটনা এখন যেন আগের তুলনায় আরো বেশি বেশি হচ্ছে যা আমাদের ব্যক্তিগত ও আর্থিক নিরাপত্তাকে এক প্রকার হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। তাই অনলাইনে নিজের নিরাপত্তা নিজে নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে এখন।
অনেকেই জানেন কিভাবে অনলাইনে নিজের নিরাপত্তা নিজে প্রোভাইড করবেন। তবে এখনো অনেকেই এ বিষয়ে অবগত নয়। তাই এখানে অনলাইনে নিরাপত্তা রক্ষার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা সবার মেনে চলা উচিত।
অনলাইনে নিরাপদ থাকার প্রথম ধাপ বা উপায় এটি। অনলাইনে আপনি যখনই প্রবেশ করেন তখন আপনাকে কোনো না কোনো একাউন্ট খুলতেই হয়। যেমন ফেসবুক ব্যবহার করলে ফেসবুক একাউন্ট, ইন্সট্রাগ্রাম ব্যবহার করলে ইন্সট্রাগ্রাম একাউন্ট ইত্যাদি। আবার আপনারা যে ব্রাউজার ব্যবহার করছেন সেখানেও একটা না একটা হলেও জি-মেইল একাউন্ট লগ ইন আছে। আর সেই জি-মেইল একাউন্ট ও কিন্তু আপনাকে অনলাইনে ব্রাউজ করার জন্যই খুলতে হয়েছে।
তাই যেকোনো একাউন্ট খুলতে হলে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা প্রথম উপায় অনলাইনে নিরাপদ থাকার জন্য। অনেকেই সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন (যেমন: জন্ম সাল দেন, কিংবা মোবাইল নাম্বার ইত্যাদি), যা হ্যাকারদের জন্য কাজ সহজ করে দেয়। তাই আপনাদের উচিত কঠিন বা শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। এখন কথা হলো শক্তিশালী পাসওয়ার্ড কিভাবে তৈরি করবেন।
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করতে পাসওয়ার্ডে সবসময় সর্বনিম্ন একটি ইংরেজি বড় হাতের অক্ষর (যেমন: ABC), ছোট হাতের অক্ষর (যেমন: abc), সংখ্যা (যেমন: 123) এবং বিশেষ চিহ্ন (যেমন: @#%) যোগ করুন।
এই সিস্টেমটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সিস্টেম। টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন আপনাকে একটি অতিরিক্ত নিরাপত্তা দিবে অনলাইনে। যদি এটা অন থাকে আপনার একাউন্টে, তাহলে আপনার একাউন্ট এর ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড কেউ জানলেও আপনার পার্মিশন ছাড়া প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি আপনি নিজেও পারবেন না যতক্ষণ আপনি কনফার্ম না করছেন
এখন প্রশ্ন হলো আপনি কনফর্ম করবেন কিভাবে? এটা খুবই সহজ। যখন আপনি টু-ফ্যাক্টর অন করতে যাবেন তখন আপনাকে কয়েকটি অপশন দিবে যে, আপনি কোন উপায় সেটি অন করতে চান। সেখানে SMS, Email, Fingerprint ইত্যাদি (বিভিন্ন যায়গায় বিভিন্ন অপশন থাকে) অপশন থাকবে।
সেখান থেকে আপনি SMS সিলেক্ট করলে আপনার একটা নাম্বার দিয়ে ভেরিফাই করা লাগবে, যেখানে পরবর্তী লগ ইন এর সময় (আপনি সঠিক পাসওয়ার্ড দিলেও) তারা কোড পাঠাবে, যেটা আপনার কনফার্ম করা লাগবে। আর ইমেইল, ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর সিস্টেমও আশা করি বুঝেছেন ইতিমধ্যে আপনারা।
মাঝে মাঝে আমরা যখন বাসার বাইরে থাকি, তখন অনেক সময় দেখা যায় যে কোনো পাবলিক ওয়াইফাই এভেইলএবল রয়েছে। আমরাও আবার একটু লোভে পড়ে সেটা কানেক্ট করে ব্যবহার করতে থাকি। কিন্তু এটা হতে পারে আরো একটি বড় ভুল।
পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারের সময় সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। কেননা হ্যাকাররা প্রায়ই পাবলিক ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে কানেকটেড ফোনের ডেটা চুরি করে থাকে। কোনো ব্যক্তিগত কাজের জন্য পাবলিক ওয়াইফাই ভুলেও ব্যবহার করবেন না। এছাড়াও ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করে কোথাও লগ ইন করবেন না। (অনেক ফ্রি ভিপিএন তথ্য চুরি করে)
পুরোনো সফটওয়্যার গুলো প্রায়ই সাইবার আক্রমণের জন্য দুর্বল পয়েন্ট হয়ে থাকে। পুরোনো সফটওয়্যার এ সহজেই ভাইরাস এটাক করতে পারে এবং ডেটা চুরি করতে পারে। তাই আপনার ডিভাইস এবং ডিভাইসে ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশনগুলো সর্বদা আপডেট করে রাখুন। যদি এমন হয় যে এপ আপডেট করতে বার বার ভুলে যান, তাহলে অটোমেটিক আপডেট ফিচারটি চালু করে রাখতে পারেন।
ফিসিং শব্দের সাথে আশা করি আপনারা পরিচিত আছেন। লিংক হলো ফিসিং এর জন্য এক প্রকার ফাদ। দেখা যায় অনলাইনে প্রায়ই কিছু না কিছু লিংক আমাদের সামনে আসে। আমরাও না বুঝে সেখানে ক্লিক করি। এটাও একটা বড় ভুল। সন্দেহজনক লিংক হলে সেখানে প্রবেশ করবেন না।
এছাড়াও প্রায়ই দেখবেন ই-মেইল এ এমন কিছু মেইল আসে যে “You have won 100$, grab it” , “Create a account and claim 50$” ইত্যাদি ইত্যাদি। এসবই কিন্তু ফেইক। হতে পারে এসব যায়গায় লগ ইন করলে আপনার ডেটা চুরি হয়ে গেলো কিংবা কোনো সমস্যায় পড়লেন। তাই আপনার ইমেইল অ্যাকাউন্টের স্প্যাম ফিল্টারটা অন করে রাখবেন, এতে ফিসিং লিংক গুলো অটো ডিটেক্ট করে সেগুলো স্প্যাম এ নিয়ে যাবে। আর আপনারাও লিংক ক্লিক এ সতর্ক থাকবেন।
বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট গুলো ছাড়া অন্য কোথাও নিজের ব্যাক্তিগত তথ্য দিয়ে সাইন আপ করবেন না। এটা আপনার ডেটা চুরির ফাদ হতে পারে। অপরিচত ওয়েবসাইট কিংবা এপস এ একাউন্ট ক্রিয়েট করতে গেলে ফেইক ইনফরমেশন দিয়ে একাউন্ট খুলবেন। আর একাউন্ট খুলার সময় যদি ইমেইল চায় তাহলে সেখানে Tempmail গুলো ব্যবহার করবেন।
আবার অনেক সময় মোবাইলে কল দিয়ে নানা লোভনীয় অফার দেয়, যেমন আপনার নাম্বারে লাকি ড্র হয়েছে। আপনি ৫০ হাজার টাকা পেয়েছেন। আপনার বিকাশ / নগদ / রকেট ইত্যাদি তে একটা কোড যাবে সেটা দিন আমরা টাকা ট্রান্সফার করবো। এইরকম ফাদে কেউ পা দিবেন না। যখন আপনি কোনো লটারি কাটেন নি তাহলে আপনার নাম্বারে কিভাবে তারা লাকি ড্র করে?
আবার বিকাশ / রকেট / নগদ একাউন্ট অফ হয়ে যাবে বলেও তারা কোড নিয়ে থাকে। এইসব ফাদে পা দেওয়া থেকে এড়িয়ে থাকবেন। এবং বাসার বয়জেষ্ঠ দেরও অবগত করবেন। কারণ কোনো একাউন্ট অফ হবে শুনে তারা অনেকটা বিভ্রান্ত হয়ে যায় এবং তাদের ফাদে পা দিয়ে দেয়।
বর্তমানে সাইবার হ্যাকিং জিনিসটা এতই বেড়েছে যে নিজের নিরাপত্তা নিজে রক্ষা করা যেন সকলের একটা প্রাথমিক ধাপ হয়ে দাড়িয়েছে। তাই এই যায়গায় আপনার নিজের রক্ষা নিজেকেই করতে হবে। অনলাইনে নিরাপদ থাকতে হলে আপনাকে আগে এই কয়েকটা বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
যদি এই বিষয়গুলো আপনি ঠিকঠাক মেনে চলেন তাহলে আপনি অনলাইনে অনেকটাই নিরাপদ থাকবেন। তো আজকের পোস্ট এ পর্যন্তই। দেখা হবে পরবর্তী পোস্টে। সে পর্যন্ত নিজে নিরাপদ থাকুন, আপনার অনলাইন একাউন্ট নিরাপদে রাখুন। আল্লাহ হাফেজ।
You must be logged in to post a comment.
Valo na