বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন র্যাংক ও নিয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান? এই আর্টিকেলটিতে আমরা বাংলাদেশ পুলিশের র্যাংক, তাদের দায়িত্ব এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বাংলাদেশ পুলিশের র্যাংকসমূহ
বাংলাদেশ পুলিশের র্যাংক সাধারণত তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত:
- উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা (Superior Officers)
- নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা (Subordinate Officers)
- কনস্টেবল পর্যায় (Constable Level)
(১) উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা (Superior Officers)
এই পর্যায়ের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পান। তাদের মধ্যে রয়েছেন:
- ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (IGP) – বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা বা প্রধান।
- এডিশনাল আইজি (Additional IGP) – IGP-এর পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ র্যাংক। সাধারণত পুলিশ হেড কোয়াটার্স, মেট্রোপলিটন এর প্রধান, পুলিশের বিভিন্ন সেক্টর এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
Additional IGP - ডিআইজি (Deputy Inspector General – DIG) – পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জ বা বিভাগের দায়িত্বে থাকেন।
DIG - এডিশনাল ডিআইজি (Additional DIG) – Additional DIG’গণ সাধারণত পুলিশের বিভিন্ন ছোট ইউনিটের প্রধান হিসেবে কাজ করে থাকেন, এছাড়াও পুলিশের বিভাগীয় সদর দপ্তরের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
Additional DIG - এসপি (Superintendent of Police – SP) – জেলা পুলিশের প্রধান কর্মকর্তা। এছাড়াও জেলার PBI, CID, টুরিস্ট পুলিশসহ ইত্যাদির জেলা কর্মকর্তা হিসেবে এই র্যাংকের অফিসার’রা দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
SP - এডিশনাল এসপি (Additional SP) – সাধারণত একটি জেলার সেক্সেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
Additional SP - সিনিয়র এএসপি (Senior ASP) – ASP আর সিনিয়র ASP এর দায়িত্ব প্রায় একই। ASP প্রমোশন পেয়ে সিনিয়র ASP হন।
Senior ASP - এএসপি (Assistant Superintendent of Police – ASP) – বাংলাদেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার অন্যতম প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো পুলিশ প্রশাসন। এই প্রতিষ্ঠানের এন্ট্রি লেভেলের সর্বোচ্চ পদ হলো অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ (এএসপি)। এ পদে সাধারণত দুইটি পথের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়—প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নিয়োগ হয় বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের মাধ্যমে, আর বাকি এক-তৃতীয়াংশ পদে পদোন্নতি পেয়ে আসেন অভিজ্ঞ ও যোগ্য পুলিশ পরিদর্শকগণ। বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই সরাসরি এএসপি পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। নিয়োগের কিছুদিন পরই নতুন এএসপিরা সরকারি বডিগার্ড ও গাড়ির সুবিধা পেয়ে থাকেন, যা এই পদটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। এ কারণেই বিসিএস পরীক্ষার্থীদের মধ্যে পুলিশ ক্যাডার সবসময়ই অন্যতম জনপ্রিয় ও কাঙ্ক্ষিত পছন্দ হিসেবে বিবেচিত হয়। পুলিশ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও সম্মানের কারণে এ পদে দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিদের মর্যাদা এবং কর্তৃত্ব উভয়ই উল্লেখযোগ্য। একজন এ এস পি সাধারণত কয়েকটি থানা নিয়ে একটি সার্কেল এর মনিটরিং বা সুপারভাইজর অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকে।
ASP
![]() |
IGP |
(২) নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা (Subordinate Officers)
এই পর্যায়ের কর্মকর্তারা সাধারণত পদোন্নতির মাধ্যমে উপরের র্যাংকে উন্নীত হন। এবং এসাই নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে নতুনরা পুলিশে যুক্ত হন।
- ইন্সপেক্টর (Inspector) – থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা বিশেষ ইউনিটের প্রধান। একটি থানায় একাধিক ইন্সপেক্টর থাকতে পারে, কিন্তু তাদের মধ্যে যাকে থানার চার্জ দেয়া হয় তথা দায়িত্বভার দেয়া হয়, তাকে ওসি বা অফিসার ইনচার্জ বলা হয়।
Inspector - সাব-ইন্সপেক্টর (SI – Sub-Inspector) – অপরাধ তদন্ত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মূল দায়িত্বে থাকেন। সাধারণত এসআই নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে তারা নিয়োগপ্রাপ্ত হন । এছাড়াও পুলিশের ASI থেকে প্রমোশন পেয়েও SI হওয়া যায়। তাদের সাধারণত পুলিশের মেরুদন্ড বলা হয়ে থাকে। কেননা পুলিশের মাঠ পর্যায়ের যাবতীয় তদন্তের কাজ গুলো সাব ইন্সপেক্টর দ্বারা সম্পন্ন হয়ে থাকে।
Sub-Inspector - সার্জেন্ট (Sergeant) – সাধারণত সার্জেন্টরা ট্রাফিক সিগনাল গুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন এবং যা্নবাহন এর কাগজ যাচাই সংক্রান্ত দায়িত্বগুলো পালন করে থাকেন।
Sergeant - অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর (ASI – Assistant Sub-Inspector) – সাধারণত কনস্টেবল’রা একটা নির্দিষ্ট সময় পরে প্রমোশন পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে এএসআই পদ পেয়ে থাকেন। তারা সাধারণত বিভিন্ন তদন্তের কাজে সাব-ইন্সপেক্টরকে সহায়তা করেন।
ASI
(৩) কনস্টেবল পর্যায় (Constable Level)
- নায়েক (Nayek) – কোনো পুলিশ সদস্যের কাঁধে যদি দুটি লাল ফিতা দেখতে পান, তাহলে তিনি একজন নায়েক পদমর্যাদার পুলিশ সদস্য। সাধারণত তারা কনস্টেবলদের মধ্যে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। নায়েকরা সাধারণত কয়েকজন কনস্টেবল নিয়ে একটি ডিউটি পার্টির ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
Nayek - কনস্টেবল (Constable) – পুলিশের সবচেয়ে প্রাথমিক স্থরের সদস্য, যারা সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন। যে সকল সদস্যের কাঁধে থাকা র্যাংক ব্যাজটি একদম ফাঁকা থাকবে। অর্থাৎ সেখানে কোনো রকম ধাতব স্টার বা অন্যকিছু থাকবেনা, তবে তিনি পুলিশের কনস্টেবল পদমর্যাদার একজন সদস্য।
Constable
বাংলাদেশ পুলিশের নিয়োগ পদ্ধতি
বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পদে নিয়োগ পেতে হলে নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।
(১) বিসিএস ক্যাডার (ASP হিসেবে নিয়োগ)
- বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (BPSC) বিসিএস পরীক্ষানিয়ে থাকে।
- লিখিত, মৌখিক ও মেডিকেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।
- নির্বাচিত হলে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে হয়।
- প্রশিক্ষণ শেষে Assistant Superintendent of Police (ASP) পদে যোগ দেওয়া যায়।
(২) সাব-ইন্সপেক্টর (SI) নিয়োগ
- ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা: স্নাতক (Bachelor’s Degree)
- শারীরিক যোগ্যতা:উচ্চতা, ওজন ও দৃষ্টিশক্তির মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হয়।
- লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করতে হয়।
- নির্বাচিত হলে নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ শেষে দায়িত্ব পালন শুরু করা যায়।
(৩) কনস্টেবল নিয়োগ
- যোগ্যতা: মাধ্যমিক (SSC) পাস।
- নিয়োগ প্রক্রিয়া: জেলা পুলিশ লাইনসে শারীরিক পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।
- নির্বাচিত হলে প্রশিক্ষণের পর চাকরিতে যোগ দেওয়া যায়।
বাংলাদেশ পুলিশের চাকরির সুযোগ ও ক্যারিয়ার গাইড
বাংলাদেশ পুলিশে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে আপনাকে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে:
- শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখা – বিশেষ করে SI ও কনস্টেবল পদের জন্য।
- বিসিএস বা সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া – ASP বা SI পদে চাকরির জন্য।
- প্রশিক্ষণকালীন কঠোর পরিশ্রমে অভ্যস্ত হওয়া – কারণ বাংলাদেশ পুলিশের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।
- আইন ও সংবিধান সম্পর্কে জ্ঞান রাখা – পুলিশ কর্মকর্তাদের আইন সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হয়।
উপসংহার
বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন র্যাংক ও নিয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর, আপনি যদি এই বাহিনীতে যোগ দিতে চান, তবে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। বিসিএস ক্যাডার হিসেবে ASP হওয়ার সুযোগ রয়েছে, আবার সরাসরি SI বা কনস্টেবল পদেও যোগ দিতে পারেন। নিয়মিত আপডেটের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট পরিদর্শন করুন।
আপনি কি পুলিশে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন? কমেন্টে জানান!