একটা সময় ছিল যখন এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে যেকোন ধরনের ফাইল স্থানান্তর করার জন্য পেনড্রাইভ বা সিডি/ডিভিডি এর ব্যবহার করা হতো। বর্তমান সময়ে এসে সেই দিনগুলি এখন চলে গেছে বললেই চলে। কেননা বর্তমান সময় হচ্ছে ডিজিটালাইজেশনের সময়। এখন অনলাইনে অনেক ফাইল শেয়ারিং পরিষেবা রয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে অন্যজনের সাথে সহজে ফাইল শেয়ার করা যায় এবং যেকোন ডিভাইসে যেকোন জায়গায় থেকে অ্যাক্সেস করা যায়। যেমন OneDrive, Google Drive, Dropbox, ইত্যাদি। এইগুলোর মাধ্যমে আপনি চাইলে যে কারো সাথে আপনার যেকোন ধরনের ফাইল শেয়ার করে সেগুলোর লিংক দিলে তিনি সহজে সেগুলিতে অ্যাক্সেস করতে পারবেন। ইন্টারনেট জগতে এইগুলো ছাড়াও আরও বেশকিছু ফ্রি এবং প্রিমিয়াম ফাইল শেয়ারিং বা স্থানান্তর পরিষেবা মূলক ওয়েবসাইট রয়েছে। যা নিয়ে আমরা আজকের টপিকে আলোচনা করব। মূলত আমি এইরকম জনপ্রিয় ফাইল শেয়ারিং পরিষেবার মোট ১০টি ওয়েবসাইটের তালিকা করেছি যেগুলো নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। যেগুলোর মাধ্যমে আপনি ছোট থেকে বড় সাইজের যেকোন ধরনের ফাইল শেয়ার করতে পারবেন।

বড় ফাইল পাঠাতে ফ্রি ফাইল শেয়ারিং ওয়েবসাইটের তালিকা:
নিম্নলিখিত এই ১০টি বেশ জনপ্রিয় এবং সেরা ফাইল-শেয়ারিং বা স্থানান্তর ওয়েবসাইট। যেগুলো আপনাকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোন ধরনের ফাইল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করতে সহায়তা করবে।

WeTransfer
TransferNow
Wormhole
TransferKit
TransferXL
Send Anywhere
Smash
File Transfer
SurgeSend
Filemail

এইবার চলুন উপরোল্লিখিত প্রত্যেকটি অনলাইন ফাইল শেয়ারিং ওয়েবসাইটগুলির সুযোগ-সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে আলাদা আলাদাভাবে বিস্তারিত তথ্য জানা যাক।

WeTransfer:


WeTransfer হল সবচেয়ে জনপ্রিয় ফাইল শেয়ারিং ওয়েবসাইটগুলির মধ্যে একটি। এটিতে বিনামূল্যে এবং অর্থ প্রদানের উভয় পরিষেবা রয়েছে। বিনামূল্যে পরিষেবার মাধ্যমে আপনি ০২ জিবি পর্যন্ত যেকোন ধরনের ফাইল পাঠাতে পারবেন। যার ডাউনলোডের সময়কাল বা মেয়াদকাল থাকবে ০৭ দিন। অর্থাৎ আপনি যদি কাউকে এর মাধ্যমে ফাইল শেয়ার করে থাকেন। তাহলে তাকে ০৭ দিনের মধ্যেই সেই ফাইলটি ডাউনলোড করে নিতে হবে। আপনি যদি ০২ জিবি এর থেকে আরো বড় সাইজের ফাইল পাঠাতে চান বা কারো সাথে শেয়ার করতে চান তাহলে আপনাকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী উক্ত সাইট থেকে পেইড প্ল্যানের সদস্যতা নিতে হবে। এছাড়াও আপনি যে ব্যক্তির কাছে ফাইল পাঠাচ্ছেন তার একটি ইমেইল অ্যাড্রেস আপনার প্রয়োজন পড়বে এবং পাশাপাশি ফাইল পাঠাতে আপনার ব্যক্তিগত একটি ইমেইল থাকতে হবে।

TransferNow:


TransferNow হল আরেকটি ফাইল শেয়ারিং ওয়েবসাইট যা ব্যবহার করে আপনি একবারে ০৫ জিবি করে ১০ জনকে একসাথে যেকোন ফাইল পাঠাতে পারবেন। আপনার পাঠানো ফাইল ফ্রিতে ডাউনলোড করার সময়কাল বা মেয়াদকাল থাকবে ০৭ দিন। সাত দিনের অতিরিক্ত হয়ে গেলে পরে ফাইলটি বিনামূল্যের প্ল্যানে অ্যাক্সেসযোগ্য হবে না। আপনি যদি এই সাইটে ০৫ জিবি থেকেও বড় ফাইল আপলোড করতে চান, সে ফাইলকে ১০ জনেরও অধিক লোকের কাছে পাঠাতে চান এবং তাদের প্রাপ্যতার সময়কাল বা মেয়াদকাল বাড়াতে চান তবে আপনাকে অর্থপ্রদানের পরিকল্পনায় আপগ্রেড করতে হবে৷ অর্থাৎ ফ্রি প্লান থেকে প্রিমিয়াম প্লানে আপগ্রেড করতে হবে।

Wormhole:


Wormhole হল অন্যান্য ফাইল-শেয়ারিং পরিষেবাগুলির মধ্য থেকে একদম আলাদা। কারণ এটি ব্যবহার করার জন্য কোনও ইমেলের প্রয়োজন হয় না৷ এটি একটি সুরক্ষিত অনলাইন ফাইল-শেয়ারিং ওয়েবসাইট, যা আপনাকে যেকোন সময় আপনার আপলোডকৃত ফাইল মুছার বা ডিলেট করার সুযোগ দেয়। এটি একটি বিনামূল্যের পরিষেবা যা ব্যবহার করে আপনি ১০ জিবি পর্যন্ত ফাইল পাঠাতে পারবেন। অন্যান্য ফাইল শেয়ারিং সাইটগুলোতে যেমন ইমেইলের মাধ্যমে আপলোডকৃত ফাইলের লিংক শেয়ার করতে হয়। কিন্তু এটিতে আপনাকে অন্যদের সাথে যেকোন মাধ্যমে লিংক শেয়ার করতে হবে যেহেতু এখানে সরাসরি মেইলের মাধ্যমে করা হচ্ছে না। আপনি লিংক শেয়ার করার জন্য ইমেইল অথবা অন্যকোন মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে। এটিতে আপনার আপলোডকৃত ফাইলটির মেয়াদকাল থাকবে শুধুমাত্র ২৪ ঘন্টা এবং সর্বোচ্চ ১০০ বার ডাউনলোড করা যাবে। মজার ব্যাপার হলো এখানে মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় পরিবর্তন করার জন্য কোন প্রিমিয়াম প্ল্যান নেই।

TransferKit:


TransferKit হল একটি ক্লাউড-শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম যা একটি বিকেন্দ্রীভূত নেটওয়ার্কে ফাইল সংরক্ষণ করে। এটি একটি বিনামূল্যের পরিষেবা যা ব্যবহার করে আপনি কোনো সমস্যা ছাড়াই ৩২ জিবি পর্যন্ত যেকোনো ধরনের ফাইল আপলোড করে শেয়ার করতে পারবেন। এখানে আপনার শেয়ার করা ফাইল বিকেন্দ্রীভূত নেটওয়ার্কে চিরতরে সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়াও ফাইল এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্ট করা থাকে।

TransferXL:


TransferXL হল আরেকটি ফ্রি এবং প্রিমিয়াম ফাইল-শেয়ারিং পরিষেবা যা আপনাকে ০৫ জিবি পর্যন্ত যেকোনো ধরনের ফাইল শেয়ার বা আপলোড করার সুযোগ দিবে। আপনার উক্ত শেয়ার করা ফাইল যদি ফ্রি প্ল্যানের আওতায় হয় তাহলে তা ০৭ দিন পর্যন্ত ডাউনলোড করার সুযোগ দিবে। আপনি এক দিনে ১০ জিবি পর্যন্ত ফাইল শেয়ার করতে এই পরিষেবাটি ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি ০৩ মাস পর্যন্ত বৃহত্তর সময়ের জন্য বড় ফাইল পাঠাতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই প্রিমিয়াম প্ল্যান নিতে হবে।

Send Anywhere:


Send Anywhere হল একটি সুরক্ষিত ফাইল-শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম যা রিয়েল-টাইমে ফাইল পাঠাতে ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কিছু সময়ের মধ্যে যেকোন ফাইল শেয়ার করতে পারবেন। এখানে আপনাকে ফাইল আপলোড করার পর একটি ০৬ সংখ্যার কী বা কোড দেওয়া হবে। যেটা আপনি আপনার ফাইল গ্রহীতাকে দিলে তিনি সে কোড ব্যবহার করে ফাইল ডাউনলোড করে নিতে পারবে। অর্থাৎ ফাইলটি ডাউনলোড করার জন্য আপনার কোন লিংক তাকে দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। শুধুমাত্র আপনার গ্রাহককে ফাইল আপলোড করার পর যে কোডটি পাবেন সেটি দিয়ে দিবেন এবং তিনি উক্ত সাইটটিতে প্রবেশ করে কোডটি ব্যবহার করে ফাইল ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

Smash:


Smash হল একটি ফ্রি এবং প্রিমিয়াম ফাইল-শেয়ারিং পরিষেবা। এটির বিশেষত্ব হচ্ছে এটিতে কোন ফাইল সাইজের সীমাবদ্ধতা নেই। অর্থাৎ আপনি যেকোন সাইজের ফাইল ফ্রি প্লানেও আপলোড বা পাঠাতে পারবেন। আপলোডকৃত ফাইলের ডাউনলোডের মেয়াদকাল থাকবে ০৭ দিন তবে এটা হলো ফ্রি প্ল্যানে। আপনি চাইলে প্রিমিয়াম প্ল্যানের মাধ্যমে এর মেয়াদকাল বাড়াতে পারেন।

File Transfer:


File Transfer এর মধ্যে ফাইল শেয়ার করার জন্য কোন ইমেল এর প্রয়োজন পড়বে না। এখানে ০৬ জিবি পর্যন্ত আপলোড করতে পারবেন। আপলোডের ফাইলের স্থায়ীত্বকাল ২১ থোকে ৫১ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে। অন্যান্য ফাইল-শেয়ারিং পরিষেবাগুলির থেকে এর পার্থক্য হল আপনি চাইলে ফাইল ট্রান্সফারে আপনার ফাইল-শেয়ারিং লিংককে মনিটাইজ করতে পারবেন।

SugeSend:


SugeSend তার ব্যবহারকারীদের জন্য ফাইল-শেয়ারিংয়ের পাশাপাশি ফাইল স্টোরেজ বৈশিষ্ট্যগুলি অফার করে থাকে। আপনি SurgeSend-এ আপনার ফাইলগুলি সংরক্ষণ করার জন্য ০৫ জিবি পর্যন্ত স্পেস পাবেন এবং ০৩ জিবি পর্যন্ত একটি ফাইল আপলোড করতে পারবেন। প্রিমিয়াম প্ল্যানগুলির সাথে, আপনি আরও স্টোরেজ সুবিধা, আরও ফাইলের সাইজের পাশাপাশি আপনার ফাইলের জন্য পাসওয়ার্ড সুরক্ষাও দিতে পারবেন।

FileMail


FileMail অন্য একটি ফাইল-শেয়ারিং পরিষেবা যা দুর্দান্ত গতি রয়েছে আপলোড এবং ডাউনলোড করার। এটিতে আপনি ইমেল বা একটি নিরাপদ লিংক ব্যবহার করে ফ্রি প্ল্যানে ০৫ জিবি পর্যন্ত ফাইল আপলোড বা পাঠাতে পারবেন। এটি একটি ফ্রি এবং প্রিমিয়াম ফাইল-শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম। প্রিমিয়াম প্ল্যানে আরও অনেক ধরনের ফিচার এবং অতিরিক্ত সাইজের বা আকারের ফাইল আপলোড বা পাঠানোর সুযোগ রয়েছে।

অবশেষে আমার কথা অনুযায়ী আমি আপনাদের সাথে উপরে জনপ্রিয় ১০টি অনলাইন ফাইল শেয়ারিং সাইট সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এখন আপনার এখান থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে অনলাইনের মাধ্যমে ফাইল শেয়ারের জন্য আপনার জন্য কোনটি উপযুক্ত। আমার মতে উপরে উল্লেখিত সবকটিই একটা একটা এক এক কারণে সেরা। তাই আপনি যেকোনটিই চাইলে ব্যবহার করতে পারেন।

তবে আমি বলব আপনার যদি ফাইলের আকৃতি বা সাইজ বড় হয়ে থাকে অর্থাৎ ১০ জিবি বা ২০ জিবি প্লাস হয়ে থাকে তাহলে TransferKit প্লাটফর্মটি ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এটিতে ৩২ জিবি পর্যন্ত ফ্রিতে যেকোন ফাইল আপলোড বা শেয়ার করতে পারবেন। আর এইছাড়াও এটিতে আপনার ফাইল বেশ সুরক্ষিত থাকবে।

আশা করি অনলাইনে ফাইল শেয়ারিংয়ের এই টপিকটি আপনাদের কাজে বা উপকারে আসবে। এতে করে আর পেনড্রাইভ বা অন্যকোন স্টোরেজ এর প্রয়োজন পড়বে না। আবার আপনি যেকোন জায়গায় থেকে অর্থাৎ দূরদূরান্ত থেকে যেকোন ধরনের ফাইল এবং যেকোন সাইজের ফাইল যে কারো সাথে সহজে শেয়ার করতে পারবেন।

আপনাদের সুবিধার্থে আমি আমার টিপস এন্ড ট্রিকসগুলি ভিডিও আকারে শেয়ার করার জন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেছি। আশা করি চ্যানেলটি Subscribe করবেন।

সৌজন্যে : বাংলাদেশের জনপ্রিয় এবং বর্তমান সময়ের বাংলা ভাষায় সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ক টিউটোরিয়াল সাইট – www.TutorialBD71.blogspot.com নিত্যনতুন বিভিন্ন বিষয়ে টিউটোরিয়াল পেতে সাইটটিতে সবসময় ভিজিট করুন।

5 thoughts on "ফাইল স্থানান্তরের জন্য পেনড্রাইভ এর দিন শেষ, অনলাইনের মাধ্যমে ফাইল শেয়ারিং বা স্থানান্তর করার সেরা ১০ ওয়েবসাইট।"

  1. Aubdulla Al Muhit Contributor says:
    Wow via. Thank you so much. Amar khub proyojon chilo.
    1. Mahbub Pathan Author Post Creator says:
      wlc
  2. Levi Author says:
    সুন্দর।
    1. Mahbub Pathan Author Post Creator says:
      ধন্যবাদ
    2. Levi Author says:
      স্বাগতম।

Leave a Reply