ঈমান/আকীদা সম্পর্কীত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর।
প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা, আকীদা বিষয়ক ১২টি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং কুরআন, সহীহ হাদীস ও বিশ্ববরেণ্য ওলামাগণের ফাতওয়ার আলোকে সেগুলোর উত্তর প্রদান করা হল। আমাদের বিশ্বাসকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এবং সঠিক আকীদার উপর চলারজন্য এ প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা খুব জরুরী। আসুন, আমরা প্রশ্নগুলো পড়ি এবং সেগুলোর উত্তর জানার চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদেরকে পরিশুদ্ধ আকীদা ও বিশ্বাস সহকারে সঠিক পথে চলার তাওফীক দানকরেন।
প্রশ্ন-১: আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো নামে কি কসম বা শপথ করা যায়?
উত্তর: আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো নাম নিয়ে শপথ করা জায়েজ নয়।নবী সাল্লাল্লাহু বলেন, সাবধান, নিশ্চয় আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে তোমাদের বাপ-দাদাদের নাম নিয়ে কসম করতে নিষেধ করছেন। কেউ যদি কসম করতে চায় তবে সে যেন আল্লাহ্র নাম নিয়েকরে অন্যথা যেন নীরব থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা স্বীয় বাপ-দাদা বা মা-দাদী-নানী প্রভৃতির নামে কসম করবে না। আর সত্য বিষয় ছাড়া আল্লাহ্র নামে কসম করবে না। (আবূ দাঊদ, নাসাঈ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করবে সে কুফরী করবে অথবা শিরক করবে। (মুসনাদ আহমাদ)
প্রশ্ন-২: মৃত বা অনুপস্থিত কোন ব্যক্তির নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা তাদের থেকে উদ্ধার কামনা করা কি বড় ধরণের কুফরী বিষয়?
উত্তর: নিশ্চয়। মৃত বা অনুপস্থিত কোন ব্যক্তির নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা- তাদের থেকে উদ্ধার কামনা করা বড় ধরণের শির্কী কাজ। যে ব্যক্তি এরূপ করবে সে ইসলাম ধর্ম থেকে বহিষ্কৃত হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ্ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে অন্য কাউকে মবূদ হিসেবে আহ্বান করে যে ব্যাপারে তার কাছে কোন প্রমাণ নেই। তার হিসাব তার পালনকর্তার কাছে আছে। নিশ্চয় কাফেররা সফলকাম হবে না। (সূরা মুমিনূন-১১৭) আল্লাহ্ আরও বলেন, ইনি তোমাদের প্রভু, রাজত্ব তাঁরই। তাঁকে ছেড়ে তোমরা যাদেরকে আহ্বান কর, তারা খেজুরের আঁটির উপর পাতলা আবরণেরও অধিকারী নয়। যখন তোমরা তাদেরকে ডাক তখন তারা তোমাদের ডাক শুনে না। শুনলেও তোমাদেরডাকে সাড়া দেয় না। কিয়ামত দিবসে তারা তোমাদের শিরক অস্বীকার করবে। বস্তুত: আল্লাহ্র ন্যায় তোমাকে কেউ অবহিতকরতে পারে না। (সূরা ফাতের ১৩- ১৪)
প্রশ্ন-৩: জ্যোতির্বিদ, গণক, হস্তরেখা বিদ, যাদুকর প্রভৃতির কাছে যাওয়া বা তাদের কথা বিশ্বাস করার বিধান কি?
উত্তর: কোন জ্যোতির্বিদ, গণক, হস্তরেখা বিদ, যাদুকর প্রভৃতির কাছে যাওয়া বা তাদের কথা বিশ্বাস করা বৈধ নয়। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি কোন গণৎকারের কাছে গিয়ে কোন কিছু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবুল করা হবে না। (ছয় শতাধিক মুসলিম) গণৎকার বলতে ভাগ্য গণনাকারী দৈবজ্ঞ, জ্যোতিষী, যাদুকর সকলেই উদ্দেশ্য। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেন, যে ব্যক্তি কোন জ্যোতির্বিদের কাছে যাবে, অত:পর সে যা বলে তা বিশ্বাস করবে, সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বীনেরসাথে কুফরী করবে। (মুসনাদ আহমাদ ও সুনান গ্রন্থ সমূহ)
প্রশ্ন-৪: যদি কোন ব্যক্তি এরূপ বিশ্বাস করে যে আল্লাহ্ তাআলা আকাশ-পৃথিবী সর্বাস্থানে সবকিছুতে বিরাজমান। এ লোকের পিছনে কি ছালাত আদায় করা যাবে?
উ: আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদাহ্ বিশ্বাস হল, আল্লাহ্ তাআলা সমগ্র সৃষ্টি জগতের ঊর্ধ্বে সর্বোচ্চ স্থান আরশে অবস্থা করেন। তিনি স্বীয় সত্বার সাথে সামঞ্জস্য শীল অবস্থায় সুমহান আরশে উন্নীত। একথার দীলল হচ্ছে, আল্লাহ্ বলেন, (الرحمن على العرش استوى)দয়াময় আল্লাহ্ আরশে সমাসীন। (সূরা ত্বাহা- ৫) তিনি আরও বলেন, তিনি সর্বোচ্চ সুমহান। (বাক্বারা-২৫৫) তিনি ঈসা (আ:) সম্পর্কে বলেন, তিনি তাকে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন। (নিসা-১৫৮) তিনি আরও এরশাদ করেন, তিনি আকাশের অধিবাসীদের মাবূদ এবং জমিনের অধিবাসীদের মাবুদ। (যুখরুফ-৮৪) তিনি সপ্তাকাশের উপর আরশে আযীমে অবস্থান করা সত্বেও তাঁর জ্ঞান,দৃষ্টি, তত্বাবধান প্রভৃতি আমাদের সাথেই রয়েছে। তিনি এরশাদ করেন, তোমরা যেখানেই থাকনা কেন তিনি তোমাদের সাথেই রয়েছেন। (হাদীদ-৪) এরপরও কেউ যদি বিশ্বাস করে যে আল্লাহ্ স্বসত্বায় জমিনে বা সর্বাস্থানে বিরাজমান, তবে তা হবে কুরআন-সুন্নাহ্ ও এজমার বিরোধী। অজ্ঞতার কারণে কেউ যদি এরূপ বিশ্বাস করে তবে তাকে সঠিক জ্ঞান দান করতে হবে। তারপরও যদি ঐ বিশ্বাস রাখে তবে সে কাফের হয়ে যাবে- যার পিছনে ছালাত আদায় করা জায়েজ হবে না। -(সঊদী আরব স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড)
প্রশ্ন-৫: কোন নবী বা ওলী বা সৎ লোকের কবর যিয়ারতের নিয়তে সফর করার হুকুম কি? এধরণের যিয়ারত কি শরীয়ত সম্মত হবে?
উত্তর: কোন নবী বা ওলী বা সৎ লোকের কবর যিয়ারতের নিয়তে সফর করা জায়েজ নয়। বরং তা বিদআত। একথার দলীল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ হাদীছ। তিনি বলেন, (ইবাদতের উদ্দেশ্যে) তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও সফর করা যাবেনা। মসজিদে হারাম, আমার মসজিদ এবং মসজিদে আক্বছা। (বুখারী ও মুসলিম) তিনি ৎ আরও বলেন, যে ব্যক্তি এমন আমল করবে, যে ব্যাপারে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই, তবে তা প্রত্যাখ্যাত। (বুখারী ও মুসলিম) তবে সফর না করে তাদের কবর যিয়ারত করা সুন্নাত। রাসূল ৎ বলেন, তোমরা কবর যিয়ারত করতে পার, কেননা উহা তোমাদেরকে আখেরাতের কথা স্মরণ করাবে। (মুসলিম)
প্রশ্ন-৬: ওলীদের কবর দ্বারা সাহায্য প্রার্থনা করার বিধান কি? অনুরূপভাবে তাদের কবর তওয়াফ করা, তাদের নামে নযর-মানত করা, কবরের উপর ঘর উঠানো এবং আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের জন্য তাদেরকে অসীলা বা মাধ্যম নির্ধারণ করার বিধান কি?
উত্তর: কোন নবী বা ওলীর কবর দ্বারা সাহায্য প্রার্থনা করা, তাদের নামে নযর-মানত করা, আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের জন্য তাদেরকে অসীলা বা মাধ্যম নির্ধারণ করা হচ্ছে বড় ধরণের শিরক। একারণে ব্যক্তি ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত হয়ে যাবে। আর এ অবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে চিরকাল জাহান্নাম বাসী হবে। কিন্তু কবরের তওয়াফ তার উপর ঘর উঠানো প্রভৃতি কাজ হচ্ছে বিদআত। যা গাইরুল্লাহ্র ইবাদত করার একটি অন্যতম মাধ্যম। অবশ্য একাজের মাধ্যমে ব্যক্তি যদি কবর বাসী থেকে কোন উপকারপাওয়া বা বিপদ দূরীভূত হওয়ার কামনা করে বা তওয়াফের মাধ্যমেমৃত ব্যক্তির নৈকট্য উদ্দেশ্য করে তবে তা হবে বড় শিরক। -(সঊদী আরব স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড)
কথিত আহলে হাদীস সম্প্রদায় প্রচার করে থাকে, আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমান নয়। তারা দলিল হিসেবে পেশ করে থাকে সূরা হাদীদের ৩ নং আয়াত। যেখানে ঘোষিত হয়েছে আল্লাহ তায়ালা আরশে সমাসিন। ওরা একটি আয়াত দিয়ে আরো অসংখ্য আয়াতকে অস্বিকার করে নাউজুবিল্লাহ। যেই সকল আয়াত দ্বারা বুঝা যায় আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমান।
এক আয়াতকে মানতে গিয়ে আরো ১০/১২টি আয়াত অস্বিকার করার মত দুঃসাহস আসলে কথিত আহলে হাদীস নামী ফিতনাবাজ বাতিল ফিরক্বাদেরই মানায়।
অসংখ্য আয়াতে কারীমাকে অস্বিকার করে আল্লাহ তায়ালাকে কেবল আরশে সীমাবদ্ধ করার মত দুঃসাহস ওরা দেখাতে পারলেও আমরা পারি না। আমরা বিশ্বাস করি-আল্লাহ তায়ালা আরশেও আছেন, আছেন জমিনেও, আছেন পূর্বেও। আছেন পশ্চিমেও। আছেন উত্তরেও। আছেন দক্ষিণেও। উপরেও আছেন। নিচেও আছেন। আল্লাহর গোটা রাজত্বের সর্বত্র তার সত্তা বিরাজমান।
কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকা দেহধারী সত্তার বৈশিষ্ট। আল্লাহ তায়ালার মত নিরাকার সত্তার জন্য এটা শোভা পায় না। এই আহলে হাদীস বাতিল ফিরক্বাটি এতটাই বেয়াদব যে, আল্লাহ তায়ালার দেহ আছে বলে বিশ্বাস করে। দেহ থাকাতো সৃষ্টির বৈশিষ্ট। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সকল সৃষ্টির স্রষ্টার জন্য দেহ সাব্যস্ত করা এক প্রকার সুষ্পষ্ট শিরক। এই শিরকী আক্বিদা প্রচার করছে ইংরেজ সৃষ্ট কথিত আহলে হাদীস সম্র্যদায়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই ভয়াবহ মারাত্মক বাতিল ফিরক্বার হাত থেকে আমাদের দেশের সরলমনা মুসলমানদের হিফাযত করুন। বক্ষমান প্রবন্ধে আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমান নিয়ে একটি দলিল ভিত্তিক আলোচনা উপস্থাপন করা হল। পরবর্তী প্রবন্ধে আল্লাহ তায়ালা যে দেহ থেকে পবিত্র, আল্লাহ তায়ালার দেহ সাব্যস্ত করা সুষ্পষ্ট শিরকী, এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা প্রকাশ করা হবে ইনশআল্লাহ।
১-
ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ
অতঃপর তিনি আরশে সমাসিন হন {সূরা হাদীদ-৩}
২-
قوله تعالى {وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ}
আর যখন আমার বান্দা আমাকে ডাকে, তখন নিশ্চয় আমি তার পাশেই। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে ডাকে। {সূরা বাকারা-১৮৬}
৩-
قوله تعالى {وَنَحنُ أَقرَبُ إِلَيهِ مِن حَبلِ الوَرِيدِ} [ق 16]
আর আমি বান্দার গলদেশের শিরার চেয়েও বেশি নিকটবর্তী। {সূরা কাফ-১৬}
৪-
فَلَوْلا إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُومَ (83) وَأَنْتُمْ حِينَئِذٍ تَنْظُرُونَ (84) وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْكُمْ وَلَكِنْ لا تُبْصِرُونَ (85)
অতঃপর এমন কেন হয়না যে, যখন প্রাণ উষ্ঠাগত হয়। এবং তোমরা তাকিয়ে থাক। এবং তোমাদের চেয়ে আমিই তার বেশি কাছে থাকি। কিন্তু তোমরা দেখতে পাওনা {সূরা ওয়াকিয়া-৮৩,৮৪,৮৫}
৫-
{ وَللَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ فَأَيْنَمَا تُوَلُّواْ فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ وَاسِعٌ عَلِيمٌ } [البقرة-115]
পূর্ব এবং পশ্চিম আল্লাহ তায়ালারই। সুতরাং যেদিকেই মুখ ফিরাও, সেদিকেই রয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বব্যাপী সর্বজ্ঞাত {সূরা বাকারা-১১৫}
৬-
قوله تعالى { وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَمَا كُنتُمْ } [ الحديد – 4 ]
তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের সাথে আছেন {সূরা হাদীদ-৪}
৭-
وقال تعالى عن نبيه : ( إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا (التوبة من الآية40
যখন তিনি তার সাথীকে বললেন-ভয় পেয়োনা, নিশ্চয় আমাদের সাথে আল্লাহ আছেন {সূরা হাদীদ-৪০}
৮-
قوله تعالى مَا يَكُونُ مِن نَّجْوَى ثَلاثَةٍ إِلاَّ هُوَ رَابِعُهُمْ وَلا خَمْسَةٍ إِلاَّ هُوَ سَادِسُهُمْ وَلا أَدْنَى مِن ذَلِكَ وَلا أَكْثَرَ إِلاَّ هُوَ مَعَهُمْ أَيْنَ مَا كَانُوا ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا عَمِلُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ( المجادلة – 7 )
কখনো তিন জনের মাঝে এমন কোন কথা হয়না যাতে চতুর্থ জন হিসেবে তিনি উপস্থিত না থাকেন, এবং কখনও পাঁচ জনের মধ্যে এমন কোনও গোপন কথা হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি উপস্থিত না থাকেন। এমনিভাবে তারা এর চেয়ে কম হোক বা বেশি, তারা যেখানেই থাকুক, আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকেন। অতঃপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে অবহিত করবেন তারা যা কিছু করত। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু জানেন {সূরা মুজাদালা-৭}
৯-
وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ
আল্লাহ তায়ালার কুরসী আসমান জমিন ব্যাপৃত {সূরা বাকারা-২৫৫}
আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান হলে আকাশের দিকে কেন হাত উঠিয়ে দুআ করা হয়
আদবের জন্য। যদিও আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমান। তিনি ডান দিকেও আছেন, বাম দিকেও আছেন, উপরেও আছেন, নিচেও আছেন। সামনেও আছেন। বাম দিকেও আছেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার শান হল উঁচু, তাই আদব হিসেবে উপরের দিকে হাত উঠিয়ে দুআ করা হয়।
যেমন কোন ক্লাশরুমে যদি লাউডস্পীকার ফিট করা হয়। চারিদিক থেকে সেই স্পীকার থেকে শিক্ষকের আওয়াজ আসে। তবুও যদি কোন ছাত্র শিক্ষকের দিকে মুখ না করে অন্যত্র মুখ করে কথা শুনে তাহলে শিক্ষক তাকে ধমক দিবেন। কারণ এটা আদবের খেলাফ। এই জন্য নয় যে, অন্য দিক থেকে আওয়াজ শুনা যায় না। তেমনি আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমান থাকা সত্বেও উপরের দিকে মুখ করে দুআ করা হয় আল্লাহ তায়ালা উুঁচু, সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই আদব হিসেবে উপরের দিকে হাত তুলে দুআ করা হয়।
জিবরাঈল উপর থেকে নিচে নেমে আসেন মানে কি
এর মানে হল-যেমন পুলিশ এসে কোন অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে কারণ বলে যে, উপরের নির্দেশ। এর মানে কি পুলিশ অফিসার উপরে থাকে না সম্মান ও ক্ষমতার দিক থেকে যিনি উপরে তার নির্দেশ তাই বলা হয় উপরের নির্দেশ তেমনি আল্লাহ তায়ালা ফরমান নিয়ে যখন জিবরাঈল আসেন একে যদি বলা হয় উপর থেকে এসেছেন, এর মানেও সম্মানসূচক ও পরাক্রমশালীর কাছ থেকে এসেছেন। তাই বলা হয় উপর থেকে এসেছেন। এই জন্য নয় যে, আল্লাহ তায়ালা কেবল আরশেই থাকেন।
আল্লাহ তায়ালা কি সকল নোংরা স্থানেও আছেন নাউজুবিল্লাহ
এই উদ্ভট যুক্তি যারা দেয় সেই আহমকদের জিজ্ঞেস করুন। তার কলবে কি দু’একটি কুরাআনের আয়াত কি সংরক্ষিত আছে যদি বলে আছে। তাহলে বলুন তার মানে সীনায় কুরআনে কারীম বিদ্যমান আছে। কারণ সংরক্ষিত সেই বস্তুই থাকে, যেটা বিদ্যমান থাকে, অবিদ্যমান বস্তু সংরক্ষণ সম্ভব নয়। তো সীনায় যদি কুরআন বিদ্যমান থাকে, সেটা নিয়ে টয়লেটে যাওয়া কিভাবে জায়েজ? কুরআন নিয়েতো টয়লেটে যাওয়া জায়েজ নয়। তখন ওদের আকল থাকলে বলবে-কুরআন বিদ্যমান, কিন্তু দেহ থেকে পবিত্র কুরআন। তেমনি আমরা বলি আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমান। কিন্তু তিনি দেহ থেকে পবিত্র। সেই হিসেবে সর্বত্র বিরাজমান। সুতরাং কুরআন যেমন সীনায় থাকায় সত্বেও টয়লেটে যেতে কোন সমস্যা নেই। কুরআনে কারীমের বেইজ্জতী হয়না, সীনায় সংরক্ষিত কুরআনের দেহ না থাকার কারণে, তেমনি আল্লাহ তায়ালার দেহ না থাকার কারণে অপবিত্র স্থানে বিদ্যমান থাকাটাও কোন বেইজ্জতীর বিষয় নয়।
যেই সকল নির্বোধের দল আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমানতাকে অস্বিকার করে আল্লাহ তায়ালাকে নির্দিষ্ট স্থানে সমাসিন বলে আল্লাহ তায়ালার সত্তার বেয়াদবী করছে ওদের অপপ্রচার থেকে, বাতিল আক্বিদা থেকে আমাদের আল্লাহ তায়ালা রক্ষা করুন। আমীন।
Collected